অন্ধকূপ থেকে উদ্ধার পাওয়ার পর ব্যবসায়ী কাফেলা তাকে বিক্রির জন্য মিসরের বাজারে উপস্থিত করল। মানুষ কেনা-বেচার সেই হাটে এই অনিন্দ্য সুন্দর বালককে দেখে বড় বড় ধনশালী খরিদ্দাররা রীতিমত প্রতিযোগিতা শুরু করল। কিন্তু আল্লাহ পাক তাকে মর্যাদার স্থানে সমুন্নত করতে চেয়েছিলেন। তাই সব খরিদ্দারকে ডিঙিয়ে মিসরের তৎকালীন অর্থ ও রাজস্বমন্ত্রী ক্বিৎফীর (قطفير) তাকে বহুমূল্য দিয়ে খরিদ করে নিলেন। ক্বিৎফীর ছিলেন নিঃসন্তান।
মিসরের অর্থমন্ত্রীর উপাধি ছিল ‘আযীয’ বা ‘আযীয মিছর’। ইউসুফকে ক্রয় করে এনে তিনি তাকে স্বীয় স্ত্রীর হাতে সমর্পণ করলেন এবং বললেন, একে সন্তানের ন্যায় উত্তম রূপে লালন-পালন কর। এর থাকার জন্য উত্তম ব্যবস্থা কর। ভবিষ্যতে সে আমাদের কল্যাণে আসবে’। বস্ত্ততঃ ইউসুফের কমনীয় চেহারা ও নম্র-ভদ্র ব্যবহারে তাদের মধ্যে সন্তানের মমতা জেগে ওঠে। ক্বিৎফীর তার দূরদর্শিতার মাধ্যমে ইউসুফের মধ্যে ভবিষ্যতের অশেষ কল্যাণ দেখতে পেয়েছিলেন। আর সেজন্য তাকে সর্বোত্তম যত্ন সহকারে রাখার ব্যবস্থা করেছিলেন। মূলতঃ এসবই ছিল আল্লাহর পূর্ব-নির্ধারিত। এ বিষয়ে কুরআনী বক্তব্য নিম্নরূপঃ
وَقَالَ الَّذِي اشْتَرَاهُ مِن مِّصْرَ لاِمْرَأَتِهِ أَكْرِمِيْ مَثْوَاهُ عَسَى أَن يَّنْفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ وَلَداً وَكَذَلِكَ مَكَّنِّا لِيُوْسُفَ فِي الأَرْضِ وَلِنُعَلِّمَهُ مِنْ تَأْوِيْلِ الأَحَادِيْثِ وَاللهُ غَالِبٌ عَلَى أَمْرِهِ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُوْنَ- (يوسف ২১)-
‘মিসরে যে ব্যক্তি তাকে ক্রয় করল, সে তার স্ত্রীকে বলল, একে সম্মানজনকভাবে থাকার ব্যবস্থা কর। সম্ভবতঃ সে আমাদের কল্যাণে আসবে অথবা আমরা তাকে পুত্ররূপে গ্রহণ করে নেব। এভাবে আমরা ইউসুফকে সেদেশে প্রতিষ্ঠিত করলাম এবং এজন্যে যে তাকে আমরা বাক্যাদির পূর্ণ মর্ম অনুধাবনের পদ্ধতি বিষয়ে শিক্ষা দেই। আল্লাহ স্বীয় কর্মে সর্বদা বিজয়ী। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না’ (ইউসুফ ১২/২১)।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, দুনিয়াতে তিন ব্যক্তি ছিলেন সর্বাধিক সূক্ষ্ম দৃষ্টি সম্পন্ন (أفرس الناس ثلاثة)। একজন হ’লেন ‘আযীযে মিছর’ (যিনি ইউসুফের চেহারা দেখেই তাঁকে চিনেছিলেন)। দ্বিতীয় শো‘আয়েব (আঃ)-এর ঐ কন্যা, যে মূসা (আঃ) সম্পর্কে স্বীয় পিতাকে বলেছিল, হে পিতা! আপনি এঁকে আপনার কর্মসহযোগী হিসাবে রেখে দিন। কেননা উত্তম সহযোগী সেই-ই, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত হয়’ (ক্বাছাছ ২৮/২৬)। তৃতীয় হযরত আবুবকর ছিদ্দীক্ব, যিনি ওমর ফারূককে পরবর্তী খলীফা নিয়োগ করেছিলেন’।[18]