প্রিয় পাঠক! আল্লাহ আপনাকে তওফীক দিন। জানলেন যে, বিগত সলফ তথা মুমিনদের পথ অনুসরণ করা ওয়াজেব। আর এরই উপর ভিত্তি করে বলা যায়, তাদের সাথে সম্পর্ক জোড়া (এবং নিজেকে ‘সালাফী’ বলা) আপনার জন্য মর্যাদা ও সম্মানের বিষয়।

ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,[১] যে ব্যক্তি সলফের মযহাব প্রকাশ করে, তাদের সাথে সম্পর্ক জোড়ে এবং তাদের প্রতি সম্পৃক্ত হয়, তাহলে তাতে তার কোন দোষ হয় না। বরং তার নিকট থেকে সেটা গ্রহণ করা ওয়াজেব। যেহেতু সলফের মযহাব হক বৈ নয়।

সুপ্রিয় পাঠক! আপনি যদি ইমামগণের উপদেশ-অনুদেশাবলী নিয়ে ভেবে দেখেন, তাহলে দেখতে পাবেন, তারা সলফে সালেহর পথ অবলম্বন ও অনুসরণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিছু উপদেশ নিম্নরূপঃ

১। শামবাসীদের ইমাম, ইমাম আওযায়ী বলেছেন, সুন্নাহর উপর নিজেকে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখো। (সলফ) গোষ্ঠী যেখানে থেমেছেন, সেখানে থেমে যাও। তুমি তাই বল, যা তারা বলেছেন। তুমি সেই জিনিস থেকে নিজেকে বিরত রাখো, যে জিনিস থেকে তারা নিজেদেরকে বিরত রেখেছেন। তুমি তোমার সলফে সালেহর পথের পথিক হও। যেহেতু তা তোমার জন্য যথেষ্ট হবে, যেমন তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।[২]

২। তিনি আরো বলেছেন, 'তুমি সলফদের আষার অবলম্বন করে। থেকো, যদিও লোকেরা তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে। আর ব্যক্তিগত রায়সমূহ থেকে দূরে থেকো, যদিও তোমার জন্য উক্তিকে সুশোভিত করা হয়। যেহেতু বিষয় যখন স্পষ্ট হওয়ার তখন স্পষ্ট হবে। আর সে। বিষয়ে তখন তুমি সরল পথে চলমান থাকবে। [৩]

৩। ইমাম ইসমাঈল স্বাবুনী বলেছেন, '(আসহাবুল হাদীস) নবী - এর অনুসরণ করে এবং তার সাহাবাবর্গের অনুগমন করে, যারা তারকারাজির মতো।---তারা সলফে সালেহীনের অনুগামী দ্বীনের ইমামগণ ও মুসলিমদের উলামাগণের অনুসরণ করে এবং সেই সুদৃঢ় দ্বীন ও স্পষ্ট হক মজবুত সহকারে ধারণ করে, যা তারা মজবুত সহকারে ধারণ করে ছিলেন।[৪]

৪। ইমাম বার্বাহারী বলেন, “যে ভিত্তির উপর জামাআতের প্রতিষ্ঠা, তা হল মুহাম্মাদ -এর সাহাবাগণ। তারাই হলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামাআহ। সুতরাং যে ব্যক্তি তাদের নিকট থেকে (ইলম) গ্রহণ করবে না, সে ভ্রষ্ট হয়ে যাবে, সে বিদআত করবে। আর প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।[৫]

এ মর্মে আমাদের শায়খ আল্লামা যায়দ বিন হাদী আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহু ওয়া রাআ’হ)র একটি সুন্দর ও শক্তিশালী উক্তি উদ্ধৃত করে ইতি টানব। উক্তিটি আসলে একজনের সুদীর্ঘ প্রশ্নের উত্তরে কথিত। তার প্রশ্নের প্রথমাংশে বলা হয়েছে, কিছু লোকে বলে, কেন আমরা “সালাফী” উপাধি গ্রহণ করব? কেন রাসূল (মুহাম্মাদ) (সা.) এর দিকে সম্পর্ক জুড়ে “মুহাম্মাদী” বলা হবে না?

এ প্রশ্নের উত্তরে হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন, আমরা তাকে বলব, যে ব্যক্তি সলফে সালেহর মযহাব প্রকাশ করে এবং তার দিকে সম্পর্ক জুড়ে (নিজেকে সালাফী বলে), তার বিরুদ্ধে তোমার আপত্তি তোলা অন্যায়। এই আপত্তিতে তোমার উদ্বুদ্ধ হওয়ার কারণ হল, হয় তোমার বীভৎস অজ্ঞতা। সঠিক সালাফিয়াত ও সালাফী, কিতাব ও সুন্নাহর ধারক ও বাহক, যারা নবী (সা.)-এর সাহাবা এবং যারা তাদের পথের পথিক, ইলম ও দাওয়াতের ইমাম, যারা শ্রেষ্ঠ শতাব্দীগুলিতে জীবনধারণ করেছেন এবং যাদের শ্রেষ্ঠত্বের সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তোমার অজ্ঞতা।

আর তা না হয় তুমি দ্বীন শিক্ষার্থীদের মাঝে সংশয় সৃষ্টি করতে চাইছ। যে, সালাফিয়াত একটি দল বা সংগঠন, যার প্রতিষ্ঠাতা হল মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব। সুতরাং তার থেকে দুরে থাকতে হবে এবং তার সাথে সম্পর্ক জোড়া বৈধ নয়। সত্য এই যে, যে ব্যক্তি সালাফ বা সালাফিয়াতের দিকে নিজের সম্পর্ক জোড়ে, তার বিরুদ্ধে আপত্তি তোলা কারো জন্য বৈধ নয়। অতএব যে বলবে, আমি সালাফী এবং আমার আকীদাহ সালাফিয়াহ’, তার নিন্দা করা ঠিক নয়। বরং রাব্বানী উলামা ও তাদের ছাত্রদের ঐক্যবদ্ধ মতানুসারে তার নিকট থেকে তা গ্রহণ করা (মেনে নেওয়া) ওয়াজেব। আর তা এই কারণে যে, সলফদের মযহাব হক বৈ নয়। আর সালাফ শব্দের প্রতি সম্বদ্ধ সালাফিয়াত’ এমন নামকরণ, যা মুসলিম উম্মাহ থেকে ক্ষণকালের জন্যও বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। বরং সালাফিয়াত হল মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ। এর বিপরীত হল, বিদআতী সংগঠনসমূহের সাথে সম্পর্ক জোড়া; যেমন ইখওয়ানী দল ও তবলীগী ফিকাহ এবং তাদের সমর্থক দল। যাদের (পরিচিতি) ও মতাদর্শের বিবরণ পূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।

বাকী থাকল সালাফী আকীদাহ ও তাতে বিশ্বাসী সালাফীগণের বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপনকারীর উক্তি, মুহাম্মাদী’ বলা হয় না কেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলব, এ হল তার পক্ষ থেকে মানুষের মাঝে সংশয় সৃষ্টি ও গোলমাল পাকানোর অপচেষ্টা, যা পূর্বোক্ত আপত্তির শ্রেণীভুক্ত। যেহেতু উম্মাহর সকলের জন্য বলা হয়, “উম্মতে মুহাম্মাদিয়্যাহ”। অর্থাৎ, মুহাম্মাদ তার নবী। সে উম্মত আবার দুই ভাগে বিভক্ত; (এক) উম্মতে দাওয়াহ (যাদেরকে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি)। (দুই) উম্মতে ইজাবাহ (যাদেরকে তিনি ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন, আর তারা তা গ্রহণ করেছে)।

এই উম্মতে ইজাবাহ আবার ৭৩ দলে বিভক্ত। যাদের একটি দল ছাড়া বাকীরা জাহান্নামী। আর সে দলটি হল, যেটি সেই মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত, যার উপর নবী করীম ও তার সাহাবাগণ প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। বলা বাহুল্য, নবী (সা.)-এর সাহাবাগণই হলেন সলফ। অতঃপর তাদের পর যারা এসেছেন, তাদের তরীকা অবলম্বন করেছেন এবং তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন, তাদেরকেও তাদের সাথে মিলিত করা হবে এবং বলা হবে, তারা সালাফী এবং তাদের আকীদাহ সালাফিয়্যাহ।[৬]

অবশেষে হে প্রিয়! আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি সুন্নাহর কিতাবসমূহ অধ্যয়ন কর। তাতে তুমি অগণিত সংখ্যক স্পষ্ট উক্তি প্রাপ্ত হবে, যা তোমাকে সেই অসিয়তের ব্যাপারে স্থির-নিশ্চিত করবে, যা আমি সলফের পথ অবলম্বন করা এবং তা হতে দূরে থাকার ব্যাপারে সতর্ক করার লক্ষ্যে উল্লেখ করেছি। আর আল্লাহই তওফীকদাতা।

[১]. মাজমুউ ফাতাওয়া ৪/ ১৪৯

[২]. আশ-শারীআহ, আজুরী ৫৮পৃঃ প্রমুখ।

[৩]. ঐ, আরো দ্রঃ শারাফু আসহাবিল হাদীস, খাত্বীব ৭পৃঃ সহীহ

[৪]. আক্বীদাতুস সালাফ আসহাবিল হাদীস ৮২পৃঃ

[৫]. শারহুস সুন্নাহ ৬৫পৃঃ

[৬]. আল-আজবিবাতুল আযারিয়্যাহ আনিল মাসাইলিল মানহাজিয়্যাহ ৭৭৭৯পৃঃ
[৫].