আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
অর্থাৎ, নিশ্চয় আল্লাহ ও তার ফিরিস্তাবর্গ নবী (সা.)র কথা স্মরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমারও নবী (সা.)র জন্য দরূদ পাঠ কর এবং উত্তমরূপে সালাম পাঠাও। (সূরা আহযাব ৫৬ আয়াত)
ইমাম বুখারী বলেন, আবুল আলিয়্যাহ বলেছেন, আল্লাহ তাআলা দরূদ পড়েন, অর্থাৎ তিনি তাঁর ফিরিস্তাবর্গের নিকট নবী (সা.)-এর প্রশংসা করেন। আর ফিরিস্তারা দরূদ পড়েন, অর্থাৎ তারা তাঁর জন্য দুআ করেন।” ইবনে আব্বাস বলেন, 'দরূদ পড়েন; অর্থাৎ বৰ্কতের দুআ করেন।”
অত্র আয়াতের সারমর্ম, যেমন ইবনে কাসীর তার তফসীরে উল্লেখ করেছেনঃ “সর্বোচ্চ ফিরি-সভায় আল্লাহর নিকট তাঁর বান্দা, নবী ও বন্ধুর মর্যাদা কত, সে প্রসঙ্গে তিনি তাঁর বান্দাদেরকে অবহিত করেন। যেমন, ফিরিস্তাবর্গের নিকট তিনি তার প্রশংসা করেন এবং ফিরিশ্যামন্ডলীও তার জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করেন। অতঃপর তিনি নিম্ন-বিশ্বের অধিবাসীকে তার উপর দরূদ পাঠ করতে আদেশ করেন, যাতে তার উপর সারা বিশ্ব-জগদ্বাসীর প্রশংসা একত্রিত হয়ে যায়।”
১। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে আদেশ করেন যে, আমরা যেন রসূল (সা.) এ-এর জন্য দুআ করি এবং তার প্রতি দরূদ পাঠ করি। আর এ নয় যে, আমরা যেন আল্লাহর পরিবর্তে তাঁরই নিকট দুআ করি অথবা তার জন্য ফাতেহাখানী করি; যেমন কিছু লোক তা করে থাকে ।
২। রসূল (সা.)-এর উপর দরূদের শ্রেষ্ঠ শব্দবিন্যাস - যা তিনি তার সাহাবার্গকে শিখিয়েছিলেন তা নিম্নরূপঃ
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيد ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آل مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيد
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরের উপর দরূদ বর্ষণ কর যেমন তুমি ইব্রাহীম ও তার বংশধরের উপর দরূদ (করুণা ও শান্তি) বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত, গৌরবান্বিত। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ ও তার বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ কর যেমন। তুমি ইব্রাহীম ও তার বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছিলে। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত, গৌরবান্বিত। (বুখারী ও মুসলিম)।
৩ এই দরুদ এবং নির্ভরযোগ্য হাদীস ও ফিকহ-এর গ্রন্থসমূহে উল্লেখিত অন্যান্য দরূদে ‘সাইয়িদিনা’ শব্দটির উল্লেখ নেই; যেমন বহু মানুষ দরূদে তা অতিরিক্ত সংযোজন করে থাকে।
অবশ্য একথা বিদিত যে, রসূল (সা.) সাইয়িদুনা’ (আমাদের সর্দার)। কিন্তু তবুও রসূলের মুখ-নিঃসৃত বাণী ও শব্দবিন্যাসের পূর্ণ অনুসরণ করা এবং তার ব্যতিক্রম না করাই আমাদের জন্য ওয়াজেব। আর ইবাদতের ভিত্তি হল নকল (শুদ্ধ বর্ণনা), আকল (কারো বিবেক) নয়।
৪ রসূল (সা.) বলেন, “মুআযযিনকে আযান দিতে শুনলে তোমরাও ওর অনুরূপ বল। অতঃপর আমার উপর দরূদ পাঠ কর। কেননা, আমার উপর যে একবার দরূদ পাঠ করবে, আল্লাহ তার উপর দশবার অনুগ্রহ বর্ষণ করবেন। অতঃপর আমার জন্য আল্লাহর নিকট অসীলা প্রার্থনা কর। যেহেতু ‘অসীলা’ জান্নাতের এক এমন স্থান যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে মাত্র একজন বান্দার জন্যই উপযুক্ত। আর আমি আশা করি যে, আমিই সেই বান্দা। সুতরাং যে। ব্যক্তি আমার জন্য অসীলা প্রার্থনা করবে তার জন্য আমার সুপারিশ অবধার্য হয়ে যাবে।” (মুসলিম)
রসূল (সা.) কর্তৃক বর্ণিত অসীলার দুআ যা আযানের পর ইবরাহীমী দরূদ পাঠ করে নিঃশব্দে পাঠ করতে হয় তা নিম্মরূপঃ
اللهم رب هذه الدعوة التامة، والصلاة القائمة، آت محمدًاالوسيلة والفضيلة، وابعثه مقامًامحمودًاالذي وعدته
অর্থাৎ, হে আল্লাহ! হে এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠা লাভকারী নামাযের প্রভু! তুমি মুহাম্মাদকে অসীলাহ (জান্নাতের এক মর্যাদাপূর্ণ স্থান) ও ফযীলাহ (মর্যাদা) দান কর এবং তাকে তুমি সেই প্রশংসিত স্থানে প্রেরণ কর যার প্রতিশ্রুতি তুমি তাকে প্রদান করেছ। (বুখারী)
৫৷ দুআ ও প্রার্থনা করার সময়ও নবী (সা.)-এর উপর দরূদ বাঞ্ছনীয়। কারণ তিনি বলেন, “নবীর উপর দরূদ না পড়া পর্যন্ত প্রত্যেক দুআ অন্তরিত থাকবে।” (অর্থাৎ কবুল করা হবে না)। (হাসান, বায়হাকী)
তিনি আরো বলেন, “পৃথিবীতে আল্লাহর ভ্রমণরত বহু ফিরিশতা রয়েছেন, যারা আমার উম্মতের নিকট হতে আমাকে সালাম পৌঁছে দেন।” (সহীহ মুসনাদে আহমদ)
নবী (সা.)-এর উপর দরূদ এক বাঞ্ছনীয় কর্ম। বিশেষ করে জুমআর দিন তার উপর দরূদ পাঠ করা উচিত। দরূদ নৈকট্যদানকারী শ্রেষ্ঠ আমলসমুহের অন্যতম। দুআর সময় দরূদকে অসীলা করাও বিধেয়, কারণ তা এক সৎকর্ম। সুতরাং আমরা দুআয় বলতে পারি যে, হে আল্লাহ! তোমার নবীর উপর আমার দরূদের অসীলায় আমার সঙ্কট দূর করে দাও--- ইত্যাদি। অসাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ, অআলা আ-লিহী অসাল্লাম।