১। আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
অর্থাৎ-বল, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ কর তাহলেই আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইরান ৩ আয়াত)
২। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি তার নিকট তার পিতা, সন্তান এবং সকল মানুষ অপেক্ষা প্রিয়তম হয়েছি।” (বুখারী)
৩৷ উক্ত আয়াত বিবৃত করে যে, রসূল (সা.)-এর আনীত বিষয়ের অনুসরণ করে এবং তিনি মানুষের জন্য যা বর্ণনা করে গেছেন সেই সহীহ হাদীসসমূহে উল্লেখিত তার আদেশের আনুগত্য করে ও নিষিদ্ধ বর্জন করেই আল্লাহর মহব্বত ও ভালোবাসা লাভ হয়। অন্যথা তার পথ-নির্দেশের অনুগামী না হয়ে এবং তাঁর আদেশ ও আদর্শের অনুবর্তী না হয়ে কেবল টানা-টানা ও ভঙ্গিমাপূর্ণ কথায় (বুলিতে) তার মহব্বত লাভ হয় না।
৪ আর উক্ত সহীহ হাদীস বর্ণনা করে যে, মুসলিমের ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে রসূল (সা.)-কে এমন ভালোবেসেছে, যা তার পিতা সন্তান ও সমস্ত মানুষ, এমনকি নিজেকে যেমন ভালোবাসে তার চেয়েও অধিক গাঢ় ও দৃঢ় হয়; যেমন অন্য এক হাদীসে এর নির্দেশ এসেছে। ভালোবাসার প্রভাব তখনই অভিব্যক্ত হয় যখন রসূল (সা.)-এর আদেশ ও নিষেধ এবং মনের ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও তার পরিবেশের সমস্ত মানুষের ইচ্ছা ও আকাঙ্খা পরম্পর-বিরোধী ও ভিন্নমুখী হয়। সুতরাং সে যদি সত্য প্রকৃত রসূল-প্রেমিক হয়, তাহলে তাঁর আদেশ-পালনকে প্রাধান্য দেয় এবং তার নিজ মন, স্ত্রী-পরিজন, খেয়ালখুশী ও সকল মানুষের বিরোধিতা করে। আর যদি সে কপট ও ভন্ড প্রেমিক হয়, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অবাধ্যাচরণ করে এবং তার শয়তান ও মন-প্রবৃত্তির বাধ্য ও অনুগত দাস হয়।
৫। যদি আপনি কোন মুসলিমকে প্রশ্ন করেন যে, তুমি কি তোমার রসূলকে ভালোবাস? তখন চট করে হয়তো সে আপনাকে বলবে, 'অবশ্যই। আমার জান ও মাল তার জন্য কুরবান (উৎসর্গ) হোক। অতঃপর যদি তাকে প্রশ্ন করেন, তাহলে তুমি তোমার দাড়ি চাছ কেন? আর অমুক অমুক বিষয়ে তুমি তার বাহ্যিক বেশভূষা, চরিত্র, তওহীদ প্রভৃতিতে তার সাদৃশ্য অবলম্বন কর না কেন?” তখন চট করে সে এই বলে আপনাকে উত্তর দেবে, ভালোবাসা তো অন্তরে হয়। আমার অন্তর ভালো। আলহামদু লিল্লাহ!!” কিন্তু আমরা তাকে বলব, তোমার অন্তর যদি ভালো হত, তাহলে তার প্রভাব ও প্রতিকৃতি তোমার দেহে পরিস্ফুট হত। যেহেতু আল্লাহর রসূল (সা.) বলেন, “জেনে রাখ, দেহের মধ্যে এমন এক মাংস-পিন্ড আছে যা ভালো হলে সারা দেহ ভালো হবে। আর তা খারাপ হলে সারা দেহ খারাপ হবে। শোন! তাহল হৃৎপিন্ড (অন্তর)।” (বুখারী ও মুসলিম)*
৬। এক মুসলিম ডাক্তারের ডিপেনসারীতে প্রবেশ করে দেখলাম, দেওয়ালে বহু নারী-পুরুষের ছবি টাঙ্গানো আছে। আমি তাঁকে উপদেশ দিয়ে বললাম যে, আল্লাহর রসূল ধ্র ছবি টাঙ্গাতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বললেন, 'ওরা আমার ইউনিভার্সিটির সহপাঠী ও সহপাঠিনী! অথচ তাদের অধিকাংশই কাফের। বিশেষ করে যুবতীরা যারা তাদের কেশদাম ও সৌন্দর্যকে ছবিতে প্রকাশ করে রেখেছে - আবার তারা সকলেই কমিউনিষ্ট দেশের! এই ডাক্তার দাড়িও চাছতেন। আমি তাকে পুনরায় নসীহত শুরু করলাম। কিন্তু তার আত্মাভিমান তাকে পাপাচরণেই অবিচলিত রাখল। বললেন, তিনি। দাড়ি চেঁছেই মরবেন! অথচ আশ্চর্যের বিষয় যে, রসূলের নির্দেশ-বিরোধী এই ডাক্তার তাঁর মিথ্যা ভালোবাসার দাবী করেন। আমাকে বললেন, 'বলুন, ইয়া রাসূলাল্লাহ আমি আপনার হিফাযতে!” আমি মনে মনেই বললাম, আপনি তার কথার খেলাফ করে তার হিফাযতে ঢুকতে চাচ্ছেন?! রসূল (সা.) কি এই শির্কে। সম্মত হবেন? যেহেতু আমরা এবং রসূল সকলেই একমাত্র আল্লাহর। হিফাযতে ও রক্ষণায়। ৭ রসূল-এর মহব্বত অনুষ্ঠান উদ্যাপনের মাধ্যমে, সৌন্দর্য-বহুল মঞ্চ নির্মাণ করে, অসঙ্গত নাত ও গজল পাঠ করে এবং এ ছাড়া অন্যান্য ভিত্তিহীন বিদআতী আড়ম্বর প্রদর্শন করে অভিব্যক্ত হয় না। বরং তার মহব্বত অভিব্যক্ত হয় তার পথ-নির্দেশ অনুসরণ করে, তার আদর্শ ও সুন্নাহর অনুকরণ করে এবং তাঁর সমূদয় নির্দেশাবলীকে কার্যকর করে। কবি কি সুন্দরই না বলেছেন,
‘তোমার প্রেম যদি সত্য হত, তাহলে অবশ্যই তুমি তার আনুগত্য করতে।
কারণ প্রেমিক তো প্রেমাস্পদের অনুগত হয়।”