রসূল (সা.)-এর জীবন-চরিত ও তার জিহাদ বিষয়ক ইতিহাস পাঠ করলে তার জীবনে নিম্নলিখিত পর্যায় দেখতে পাবেনঃ
১৷ তওহীদের পর্যায়ঃ রসূল (সা.) মক্কায় ১৩ বছর অবস্থানকালে আপন সম্প্রদায়কে উপাসনা, প্রার্থনা, বিচার-ভার প্রভৃতিতে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি এবং শির্কের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতি ততদিন আহবান করলেন যতদিনে এই বিশ্বাস তার সহচরদের মন-মুলে সুদৃঢ়ভাবে স্থান করে নিল এবং দেখা গেল যে, তারা এখন নির্ভীক বীরদলরূপে প্রস্তুত হয়েছেন; যারা আল্লাহ ব্যতীত আর কারো ভয়ে মোটেই ভীত নন। তাই ইসলামের দাওয়াত পেশকারীদের জন্য তওহীদের প্রতি আহবান এবং শির্ক হতে সাবধান করার মাধ্যমেই তাঁদের দাওয়াত আরম্ভ করা ওয়াজেব। যাতে তারা এই কর্মে রসূল (সা.)-এর অনুসারী হন।
২। ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন পর্যায়ঃ সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিম সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি মক্কা ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করলেন। সেখানে সর্বাগ্রে তিনি এক মসজিদ নির্মাণ করলেন। যাতে মুসলিমরা ঐ মসজিদে তাদের প্রতিপালকের ইবাদত আদায়ের জন্য সমবেত হতে পারে এবং তাদের জীবনকে সময় ও নিয়মানুবর্তী করার লক্ষ্যে প্রত্যহ পাঁচবার সমাবেশ করার সুযোগ লাভ হয়। অতঃপর শীঘ্রই তিনি মদীনাবাসী আনসার এবং সম্পদ ও গৃহত্যাগী মক্কাবাসী মুহাজেরীনদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব-বন্ধন স্থাপন করে দিলেন। এতে আনসারগণ মুহাজেরীনকে তাঁদের নিজস্ব সম্পদ দান করলেন এবং তাঁদের প্রয়োজনীয় যাবতীয় বস্তু তাঁদের সেবায় উৎসর্গ করে দিলেন।
মদীনাবাসীদের দুটি গোত্র; আওস ও খরজ। তিনি দেখলেন ঐ দুই গোত্রের মাঝে প্রাচীন শত্রুতা বর্তমান। তাই এদের মাঝে সন্ধি স্থাপন করলেন, তাদের অন্তর থেকে বিদ্বেষ ও বৈরিতা মুছে ফেললেন এবং ঈমান ও তওহীদে পরস্পর সম্প্রীতিশীল ভাই-ভাই রূপে গড়ে তুললেন। যেমন হাদীসে বর্ণিত, “মুসলিম মুসলিমের ভাই--- ”
৩৷ প্রস্তুতিঃশত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে কুরআন কারীম মুসলিমকে আদেশ করে,
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ
অর্থাৎ, এবং তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য যথাসাধ্য শক্তি প্রস্তুত (সঞ্চয়) কর।” (সূরা আনফাল ৬০ আয়াত) ঐ শক্তির ব্যাখায় রসূল (সা.) বলেন, “জেনে রাখ, ক্ষেপণই হল শক্তি।”
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিমের জন্য যথাযথভাবে অস্ত্র-ক্ষেপণ শিক্ষা করা ওয়াজেব। কামান, ট্যাংক ও বোমারু-বিমান প্রভৃতি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সময় যে ক্ষেপণ-জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ দরকার তা অর্জন করা সকলের জন্য অত্যাবশ্যক। হায়! যদি স্কুল-কলেজের ছাত্ররা ঐ ক্ষেপণ-জ্ঞান লাভ করত এবং এতে তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত করত, তাহলে তাদের দ্বীন ও পবিত্র স্থানসমূহের প্রতিরক্ষা করতে অবশ্যই সমর্থ হত। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, ছাত্ররা শুধু বল খেলা এবং তার ম্যাচ অনুষ্ঠান করে নিজেদের মূল্যবান সময় বরবাদ করে, আর তাতে তারা নিজেদের উরু উন্মুক্ত করে লোককে প্রদর্শন করে। অথচ ইসলাম আমাদেরকে তা আবৃত রাখতে আদেশ করেছে। অনুরূপ ঐ সমস্ত খেলায় বহু নামাযও (যথা সময়ে না পড়ে। বিনষ্ট করে; যার হিফাযত করতে আল্লাহ আমাদেরকে বিশেষভাবে আদেশ করেছেন।
৪। যখন আমরা তওহীদের বিশ্বাসের প্রতি সকলে প্রত্যাবর্তন করব, তখন। আমরা পরস্পর সম্প্রীতিবদ্ধ ভাই-ভাই হব এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে অস্ত্র হস্তে শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে প্রস্তুত হব, তখন ইনশাআল্লাহ মুসলিমদের বিজয়স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হবে, যেমন রসূল (সা.) এবং তার পর তার সাহাবাবৃন্দের জন্য বিজয় অনিবার্য হয়েছিল। আল্লাহ পাক বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن تَنصُرُوا اللَّهَ يَنصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহর (মনোনীত দ্বীন প্রতিষ্ঠায়) সাহায্য কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদ সুদৃঢ় করবেন। (সূরা মুহাম্মদ ৭ আয়াত)
৫৷ পুর্বোক্ত পর্যায়-অনুক্রমের অর্থ এই নয় যে, প্রত্যেক পর্যায়কে পৃথকপৃথকভাবে অতিবাহিত হবে। অর্থাৎ এ নয় যে, তওহীদের পর্যায়ের সহিত ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের পর্যায় একই সাথে সংঘটন ও অতিক্রম সভব নয়। বরং পর্যায়গুলি এক অপরের সাথে সংযুক্তভাবেও অতিক্রম করতে পারে।।