তিন প্রকার শির্ক দূর না করে আল্লাহর সহিত শির্ক দূর করা সম্পন্ন ও সম্ভব হবে নাঃ
১। প্রতিপালকের কর্মসমূহে শির্কঃ এই বিশ্বাস যে, আল্লাহর সহায়ক কোন ভিন্ন সৃষ্টিকর্তা অথবা নিয়ন্তা আছে। যেমন কিছু সুফীপন্থী মনে করে যে, আল্লাহ তাআলা কিছু বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ-ভার তার কিছু আওলিয়া ও কুতুবকে সমর্পণ করেছেন! যে বিশ্বাসের বিশ্বাসী প্রাক, ইসলাম যুগের মুশরিকরাও ছিল না। তাই তাদেরকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেও তারা ওদের মত উত্তর দেয়নি। আল্লাহ বলেন,
وَمَن يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۚ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ
অর্থাৎ, কে সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে? তারা বলবে, আল্লাহ।' (সূরা ইউনুস ৩১ আয়াত)
এক সুফী লেখকের বই ‘আলকা-ফী ফিরদ্দি আলাল অহহা-বীতে পড়েছি, লেখক বলেন, 'আল্লাহর এমন অনেক বান্দা আছে যারা কোন কিছুর উদ্দেশ্যে হও’ বললে সাথে সাথে তা হয়ে যায়! অথচ কুরআন তার এই কথার মিথ্যায়ন ও খন্ডন করে। আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَن يَقُولَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
অর্থাৎ, তিনি যখন কিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন (তার প্রতি ইঙ্গিত করে) কেবল হও’ বললে তা হয়ে যায়। (সূরা ইয়াসীন ৮২ আয়াত)
অন্যত্রে তিনি বলেন, (أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ) অর্থাৎ জেনে রাখ, সৃষ্টি করা ও নির্দেশ দান কেবল তারই কাজ। (সূরা আরাফ ৫৪ আয়াত)
২। ইবাদত ও দুআতে শির্কঃ আল্লাহর ইবাদত করা ও তাকে ডাকার সাথে সাথে অন্যান্য আম্বিয়া আওলিয়া ও সালেহীনদেরকেও ডাকা। যেমন তাদের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা বিপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে তাদেরকে আহবান করা। দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, এই শির্ক বর্তমান উম্মাহর মাঝে বহুল প্রচলিত। এই মহাপাপের অধিকাংশ বহন করবেন সেই পীর বুযুর্গ ও আলেমরা যারা অসীলার নামে এই ধরনের শির্ককে সমর্থন করে থাকেন এবং তাকে ভিন্ন নামে অভিহিত করে থাকেন। যেহেতু অসীলা মানা হল কাউকে মাধ্যম করে আল্লাহরই নিকট প্রার্থনা করা। কিন্তু ওরা যা করে থাকে তা তো সরাসরি গায়রুল্লাহর নিকটেই প্রার্থনা করা। যেমন ওরা বলে, মদদ ইয়া রাসূলাল্লাহ!’ ‘মদদ ইয়া জীলানী! অথবা মদদ ইয়া বদবী!’ (মদদ ইয়া খাজা! মদদ ইয়া আলী!) আর এই যাচনাই হল গায়রুল্লাহর উপাসনা। যেহেতু তা দুআ ও ফরিয়াদ। আর নবী (সা.) বলেন, “দুআই তো ইবাদত (উপাসনা)।” (তিরমিযী, এব তিনি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। পক্ষান্তরে মদদ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নিকট চাওয়া বৈধ নয়। তিনি বলেন,
وَيُمْدِدْكُم بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ
অর্থাৎ, তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দ্বারা মদদ (সমৃদ্ধ) করবেন। (সূরা নূহ ১২ আয়াত)
৩ শাসন ও বিচারের শির্কঃ ইবাদতের শির্কের পর্যায়ভুক্ত যদি শাসক বা বিচারক অথবা শাসনাধীন বা বিচারাধীন ব্যক্তি আল্লাহর বিধান ও কানুনকে অচল মনে করে অথবা তার বিধান ও কানুন ব্যতীত অন্য বিধান ও কানুন অনুযায়ী শাসন ও বিচার বৈধ মনে করে।
৪। আল্লাহর গুণাবলীতে শির্কঃ
আল্লাহর কোন কোন সৃষ্টি যেমন আম্বিয়া, আওলিয়া প্রভৃতিকে আল্লাহ আযযা অজাল্লার বিশিষ্ট কোন কোন গুণ দ্বারা গুণান্বিত করা। যেমন উদাহরণ স্বরূপ, গায়েবী খবর জানা।
এই প্রকার শির্ক সূফীপন্থী এবং এদের দ্বারা প্রভাবান্বিত লোকদের মাঝে ব্যাপক প্রচলিত। যেমন বুসীরী নবী (সা.) প্ল-এর প্রশংসা করে বলেছে, ‘হে নবী (সা.) পৃথিবী ও তার অফুরন্ত সম্পদ তোমার বদান্যতারই অংশ, লওহে মাহফুয ও কলমের ইলমও তোমার অগাধ ইলমের অন্তর্ভুক্ত!! এখান হতেই কিছু ধর্মজী দাজ্জালদের ভ্রষ্টতার প্রাদুর্ভাব ঘটে। যারা ধারণা করে যে, তারা রসূল -কে জাগ্রতাবস্থায় দেখে থাকে এবং তাদের। সহচরবর্গকে তাদের কোন কোন বিষয়ে দায়িত্বভার দেবার পূর্বে তাকে ওদের অন্তস্তলের গুপ্ত রহস্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে। অথচ রসূল ঐ তার জীবদ্দশায় এ ধরনের রহস্য জানতে পারতেন না। যেমন তাঁর তরফ থেকে কুরআন বলে,
وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ
অর্থাৎ, আমি যদি গায়েব (অদৃশ্যের খবর) জানতাম, তবে তো আমি প্রভূত। কল্যাণ লাভ করতাম এবং অকল্যাণ আমাকে স্পর্শই করত না। (সূরা আরাফ ১৮৮৮)
সুতরাং ইহকাল ত্যাগ করার পর এবং সুমহান বন্ধুর নিকট চলে যাওয়ার পর তিনি গায়েবের খবর কি রূপে জানতে পারেন? তিনি এক বালিকাকে যখন কবিতায় বলতে শুনলেন, “আমাদের মাঝে এমন নবী (সা.) আছেন; যিনি আগামীকালের অবস্থা জানেন।” তখন তিনি বললেন, “এই কথাটি ছেড়ে দাও (বলো না) বাকী যেগুলি বলছিলে সেগুলি বল।”
অবশ্য আল্লাহ তাআলা তাঁর রসূলগণকে কোন কোন গায়েবী বিষয়ে অবহিত করে থাকেন। যেমন তিনি বলেন,
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا * إِلَّا مَنِ ارْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ
অর্থাৎ, তিনি অদৃশ্যের পরিজ্ঞাতা, তিনি তাঁর অদৃশ্যের (গায়েবী) জ্ঞান। কারো নিকট প্রকাশ করেন না। তার মনোনীত রসূল ব্যতীত। (সূরা জিন ২৬-২৭)