ফির্‌কাহ নাজিয়া তওহীদের গুরুত্ব আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

১। আল্লাহ বিশ্বজগৎ রচনা করেছেন তার ইবাদতের জন্য। তিনি বহু রসূল প্রেরণ করেছেন মানুষকে তার তওহীদ (একত্ববাদের) প্রতি আহবান করার জন্য। কুরআন কারীম তার অধিকাংশ সূরাসমূহে তওহীদের আকীদাহ বর্ণনায় যত্নবান। বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য শির্কের অপকারিতা বিবৃত করেছে, যে শির্ক ইহকালে মানুষের ধ্বংসের এবং পরকালে জাহান্নামে চিরস্থায়ী হওয়ার কারণ।

২। সমস্ত রসূল প্রথমে তওহীদের দিকেই মানুষকে আহবান (দাওয়াত) করতে শুরু করেছেন; যে তওহীদ লোকমাঝে প্রচার ও তবলীগ করার জন্য আল্লাহ তাদেরকে আদেশ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ

অর্থাৎ, আমি তোমার পুর্বে যে রসূলই প্রেরণ করেছি তার প্রতি এই প্রত্যাদেশই করেছি যে, আমি ছাড়া অন্য কোন সত্য উপাস্য নেই। সুতরাং তোমরা আমারই উপাসনা কর।” (সূরা আম্বিয়া ২৫ আয়াত)

আমাদের প্রিয় নবী (সা.) মক্কায় ২৩ বছর অবস্থান করে নিজ সম্প্রদায়কে আল্লাহর তওহীদ এবং সব কিছু ত্যাগ করে কেবল তাকেই ডাকা (ও কেবল তারই নিকট প্রার্থনা করা)র প্রতি আহবান করেন। তাঁর প্রতি আল্লাহর অবতীর্ণ প্রত্যাদেশ ছিল,

قُلْ إِنَّمَا أَدْعُو رَبِّي وَلَا أُشْرِكُ بِهِ أَحَدًا

অর্থাৎ, বল, আমি কেবল আমার প্রতিপালককেই ডাকি এবং তার সহিত কাউকে শরীক করি না।' (সূরা জিন ২০ আয়াত)।

রসূল (সা.) তার অনুসারীবর্গকে শুরু ও শৈশব থেকেই তওহীদের উপর তরবিয়ত ও ট্রেনিং দিতে থাকলেন। তাই তো তিনি কিশোর পিতৃব্য-পুত্র আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস -কে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “যখন তুমি চাইবে তখন আল্লাহর কাছেই চেয়ো এবং যখন তুমি সাহায্য প্রার্থনা করবে তখন আল্লাহর নিকটেই সাহায্য প্রার্থনা করো।” (তিরমিযী)।

এই তওহীদই হল দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিষয় এবং তার বুনিয়াদ। যে। তওহীদ ব্যতিরেকে আল্লাহ অন্য কিছু কারো নিকট হতে গ্রহণ করবেন না।

৩। রসূল (সা.) নিজ সাহাবা ও সহচরবৃন্দকে শিখিয়ে ছিলেন যে, তারা যেন মানুষকে দাওয়াত দেওয়ার সময় তওহীদকে সর্বাগ্রে পেশ করে। তাই মুআয (রাঃ)-কে ইয়ামান প্রেরণ করার সময় বলেছিলেন, “তাদেরকে তোমার দাওয়াতের প্রথম পর্যায় যেন “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই) এর সাক্ষ্যদান হয়।” অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, “(তোমার প্রথম দাওয়াত যেন) আল্লাহর তওহীদের প্রতি হয়।” (বুখারী ও মুসলিম)

৪। “লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদূর রাসুলুল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই, মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল বা দূত) এই বাণীর সাক্ষ্য দানে তওহীদের প্রকৃত রূপ প্রস্ফুটিত হয়। এ বাণীর অর্থ হল, আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আল্লাহর রসূলের আনীত বিষয় ব্যতীত অন্য কিছু ইবাদত বা উপাসনা নয়। এই সেই বাণী ও সাক্ষ্য যার দ্বারা কাফের ইসলামে প্রবেশ করতে পারে। যেহেতু এই কলেমাই হচ্ছে জান্নাতের কুঞ্চিকা। এই কলেমা তার পাঠকারীকে জান্নাতে প্রবেশ করায় যদি সে নিজ কর্ম দ্বারা তা পণ্ড করে তবে।

৫। কুরাইশের কাফের দল রসূল (সা.) এর নিকট তওহীদের দাওয়াত ও মুর্তির বিরুদ্ধে কঠোর মন্তব্য ত্যাগ করার বিনিময়ে রাজ-সিংহাসন, অর্থ, বিবাহের জন্য সুন্দরীশ্রেষ্ঠা রমণী পেশ করেছিল। কিন্তু এতে তিনি সম্মত না হয়ে নিজ দাওয়াতে অটল ও নির্বিচল থাকলেন এবং নিজ সাহাবাবৃন্দ সহ নানা কেশ সহ্য করলেন। অতঃপর ১৩ বছর পরে তওহীদের দাওয়াত বিজয়ী। হল। এর পর মক্কা বিজয় হল এবং প্রতিমা ধ্বংস করা হল; যখন তিনি এই আয়াত পাঠ করেছিলেন,

جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ۚ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا

অর্থাৎ, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে, নিশ্চয় মিথ্যা বিলীয়মান। (সূরা ইসরা’ ৮১ আয়াত)

৬। তওহীদ মুসলিমের জীবনে এক প্রধান কর্ম ও সাধনা। তাই তার জীবন শুরু করে তওহীদ দ্বারা আর তওহীদের মাধ্যমেই জীবনকে বিদায় করে। জীবনে তার ব্রত হল, তওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং তওহীদের প্রতি মানুষকে আহবান। যেহেতু তওহীদই মুমিন সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং তওহীদী বাণীর পতাকাতলে মানুষকে সমবেত করে।।

আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন কলেমা তওহীদকে ইহলোক ত্যাগের সময় আমাদের শেষ বাক্য করেন। (আমীন)।