১। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, “সর্বকালে আমার উম্মতের একটি দল হকের সাথে বিজয়ী থাকবে, তাদেরকে যারা উপেক্ষা করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর আদেশ (কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্ত) এসে উপস্থিত হবে।”(মুসলিম)
২। তিনি আরো বলেন, “শামবাসী অসৎ হয়ে গেলে তোমাদের মধ্যে কোন মঙ্গল নেই। আর চিরকালের জন্য আমার উম্মতের একটি দল সাহায্য প্রাপ্ত থাকবে, কিয়ামত কায়েম হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে উপেক্ষাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারবে না।” (সহীহ, মুসনাদে আহমদ)
৩। ইবনুল মুবারক বলেন, 'আমার মতে তারা হলেন আসহাবুল হাদীস।”
৪। ইমাম বুখারী বলেন, আলী ইবনুল মাদানী বলেছেন, তাঁরা হলেন আসহাবুল হাদীস।”
৫। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, 'এই সাহায্যপ্রাপ্ত দলটি যদি আসহাবুল হাদীস না হয় তবে জানি না তারা কারা ?”
৬। আহলে হাদীসরাই যেহেতু সুন্নাহ এবং তার আনুষঙ্গিক সকল বিষয়ের অধ্যয়নে বিশেষজ্ঞ তাই তারাই সকল মানুষের চেয়ে তাদের নবী (সা.)-এর সুন্নাহ, আদর্শ, পথনির্দেশ, চরিত্র, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং এর সম্পৃক্ত যাবতীয় বিষয়ে অধিক জ্ঞান রাখে।
৭। ইমাম শাফেয়ী ইমাম আহমাদকে সম্বোধন করে বলেন, আপনারা আমার চেয়ে অধিক হাদীস জানেন। অতএব আপনাদের নিকট শুদ্ধভাবে কোন হাদীস এলে সে বিষয়ে আমাকে খবর দেবেন, আমি তা সংগ্রহের জন্য যাত্রা করব -চাহে তা হিজায, কুফা অথবা বসরায় হোক।
সুতরাং আহলে হাদীস আল্লাহ আমাদের হাশর তাদের সহিত করেন - কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিশেষের পক্ষপাতিত্ব করে না -তাতে সে ব্যক্তি যতই শীর্ষস্থানীয় এবং সম্মানাই হন না কেন। পক্ষপাতিত্ব করে শুধু মুহাম্মাদ এর। পক্ষান্তরে অন্যান্য লোকেরা যারা আহলে হাদীস ও হাদীসের উপর আমলে সংযুক্ত ও সম্পৃক্ত নয়, তারা তাদের ইমামগণের উক্তির পক্ষপাতিত্ব করে -অথচ এমনটি করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা তাদের পক্ষপাতিত্ব করে থাকে; যেমন আহলে হাদীসগণ তাদের নবী (সা.) এর উক্তির পক্ষপাতিত্ব করে। সুতরাং বিস্ময়ের কিছু নয় যে, তারাই হল সাহায্য প্রাপ্ত এবং মুক্তি প্রাপ্ত দল বা জামাআত।
৮। খতীব বাগদাদী তার শারাফু আসহাবিল হাদীস (আহলে হাদীসের মর্যাদা) নামক গ্রন্থে বলেন, 'রায় ওয়ালা’ (মনগড়া মতকে প্রাধান্যদাতা) যদি ফলপ্রসু ইলম অন্বেষণে ব্যাপৃত হত এবং বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের রসূলের সুন্নাহসমূহ অনুসন্ধান করত, তবে সে সেই জিনিস অর্জন করতে পারত যা অন্যান্য থেকে তাকে অমুখাপেক্ষী করত। যেহেতু হাদীসে রয়েছে। তওহীদের মৌলনীতি সমূহের পরিজ্ঞান, আগত বিভিন্নমুখী অঙ্গীকার ও তিরস্কারের বিবৃতি, বিশ্বজগতের প্রতিপালকের গুণাবলী, জান্নাত ও জাহান্নামের আকৃতি বিষয়ক সংবাদ; তাতে সংযমী ও দুষ্কৃতীদের জন্য আল্লাহ কি প্রস্তুত রেখেছেন তার খবর এবং আল্লাহ পৃথিবীসমুহে ও আকাশমন্ডলীতে কি সৃষ্টি করেছেন তারও খবর।
আর হাদীসে রয়েছে আম্বিয়াগণের কাহিনী, যাহেদ (সংসার-বিরাগী) ও আওলিয়াগণের বৃত্তান্ত, বাশ্মীদের ওয়ায, ফকীহগণের উক্তি, রসূলের খুতবা এবং তার মু’জিযা (অলৌকিক ঘটনাবলী)। এতে রয়েছে কুরআন আযীম এবং তাতে উল্লেখিত মহাসংবাদ ও প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশের ব্যাখ্যা ও সাহাবাদের নিকট হতে আহকামে (কর্মাকর্মে) সংরক্ষিত তাঁদের বাণী।
আল্লাহ আহলে হাদীসকে শরীয়তের রুকন (স্তম্ভ) করেছেন এবং তাদের দ্বারা প্রত্যেক নিকৃষ্ট বিদআতকে চিহ্নিত করেছেন। সুতরাং তারা সৃষ্টিজগতে আল্লাহর আমানতদার নবী (সা.) ও তার উম্মতের মাঝে মাধ্যম, তাঁর গ্রন্থের মূল পাঠ সংরক্ষণে প্রয়াসী। তাদের আলোক প্রদীপ্ত, তাদের মর্যাদা সমুন্নত, আসহাবে হাদীস ব্যতীত প্রত্যেক দলই ঐ সমস্ত খেয়াল খুশীর আশ্রয় নেয়, যার প্রতি তারা রুজু করে এবং যে রায়কে পছন্দ ও ভালো মনে করে, আর তার উপর তারা নির্বিচল থাকে।
কিতাব (কুরআন) তাদের সরঞ্জাম ও হাতিয়ার, সুন্নাহ তাদের হুজ্জত (অকাট্য দলীল), রসূল (সা.) তাদের স্বীয় দল; তার প্রতিই তাদের সম্বন্ধ। তারা রায়ের (মনগড়া মতের) প্রতি দৃকপাত করে না। যারা তাদের বিরুদ্ধাচরণ করে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেন এবং যারা তাদের প্রতি শত্রুতা করে আল্লাহ তাদেরকে উপেক্ষা করেন।
হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে আহলে হাদীসের দলভুক্ত কর। হাদীসের উপর আমল, তার অনুসারীদের প্রতি ভালোবাসা এবং তার নির্দেশ অনুযায়ী আমলকারীদের সহায়তা করার তওফীক দান কর। (আমীন)