بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات، والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين، نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين، وبعد
জানা আবশ্যক যে, দ্বীনে অনুপ্রবিষ্ট অভিনব কর্ম (বিদআত)সমূহ সম্পর্কে অবহিত হওয়া এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেহেতু ঐ বিদআত থেকে মুক্ত না হয়ে মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ সম্ভব হয় না। এই মুক্তিলাভও ততক্ষণ সম্ভবপর নয় যতক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেকটি বিদআত সম্বন্ধে পরিচিতি লাভ না হয়েছে, যদি তার নিয়মাবলী ও মৌলিক সুত্র না জানা থাকে তাহলে। নচেৎ অজান্তে বিদআতে আপতিত হওয়াই স্বাভাবিক। অতত্রব বিদআত সম্পর্কে জ্ঞান রাখা ওয়াজের। কারণ যে জিনিষ ছাড়া কোন ওয়াজেব কোন ওয়াজেব পালন হয় না সে। জিনিষও ওয়াজেব, যেমন ওসুলের উলামাগণ বলেন।
তদনুরূপই শির্ক ও তার বিভিন্ন প্রকারাদিকে জানা। কারণ যে শির্ক না চিনবে সে তাতে নিপতিত হবে। যেমন বহু সংখ্যক মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা। দেখা যায় তারা শির্ক দ্বারা মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করতে চায়। যেমন আউলিয়া ও সালেহীনদের নামে ন্যর মানা, শফথ করা, তাঁদের তওয়াফ করা, তার উপর মসজিদ নির্মাণ করা এবং সেখানে সিজদা করা প্রভৃতি কর্ম যার শির্ক হওয়ার কথা আহলে ইলমের নিকট অবিদিত নয়। এই জন্যই ইবাদত করায় কেবল সুন্নাহ জানার উপর সংক্ষেপ করা যথেষ্ট নয় বরং সাথে তার পরিপন্থী বিদআতকে চেনাও জরুরী। যেমন ঈমানের জন্য কেবল তওহীদ জানাই যথেষ্ট নয় বরং তার সাথে তার পরিপন্থী শিককে চেনাও একান্ত দরকার। এই তথ্যের প্রতিই কুরআন মাজীদে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ
অর্থাৎ, অবশ্যই আমি প্রত্যেক জাতীর মধ্যে রসূল প্রেরণ করেছি (এই নির্দেশ দিয়ে) যে, তোমরা আমারই এবাদত কর এবং তাগুত (পূজ্যমান গায়রুল্লাহ) থেকে দুরে থাক। (সূরা নাহল ৩৬ আয়াত)
তিনি আরো বলেনঃ
وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَىٰ
অর্থাৎ, যারা তাগুতের ইবাদত করা হতে দূরে থাকে এবং আল্লাহর অনুরাগী হয় তাদের জন্য আছে সুসংবাদ। (সুরা যুমার ১৭ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا
অর্থাৎ, সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, নিশ্চয় সে এমন শক্ত হাতল ধারণ করবে যা কখনো ভাঙ্গার নয়।” (সূরা বাকারাহ ২৫৬)
আর এ তথ্যই আল্লাহর রসূল (সা.) স্পষ্ট করে তুলে ধরে বলেন, “যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (আল্লাহ ব্যতীত কেউ সত্য উপাস্য নেই) বলল (স্বীকার করল) এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য পুজিত বাতিল মাবুদসমূহকে অস্বীকার করল, তার মাল ও জান হারাম হয়ে গেল। (অর্থাৎ, সে মুসলিম বলে গণ্য হয়ে গেল)। আর তার (বাকী) হিসাব আল্লাহর উপর।” (মুসলিম)।
সুতরাং তিনি কেবল আল্লাহর তওহীদ স্বীকার করাকেই যথেষ্ট মনে করেননি বরং তার সহিত আল্লাহ ছাড়া অন্য সব পূজ্যমান ব্যক্তি-বস্তুকে অস্বীকার ও বর্জন করাকে একই সুত্রে শামিল করেছেন। অতএব এ তথ্য ও এই নির্দেশ) স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে যে, ঈমান আনার সাথে সাথে কুফরীকে চেনা জরুরী, নতুবা অজান্তে কখন মুমিন। কুফরীতে আপতিত হয়ে যাবে সে তার কোন টেরই পাবে না।
অনুরূপভাবে সুন্নাহ ও বিদআতের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশ; উভয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কারণ, ইসলাম দুই বৃহৎ বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত; প্রথমতঃ আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করব না এবং দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ যা বিধিবদ্ধ করেছেন সে শরীয়ত ছাড়া আর ভিন্ন কোন নিয়ম-পদ্ধতিতে বা নির্দেশে তাঁর ইবাদত করব না। অতএব যে ব্যক্তি এই দুই বুনিয়াদের মধ্যে কোন একটিকে উপেক্ষা করে সে অপরটিকেও বর্জন করে এবং সে আল্লাহ তাআলার ইবাদত করে না। যেহেতু প্রথম ভিত্তি ত্যাগ করলে মুশরিক এবং দ্বিতীয়টি ত্যাগ করলে বিদআতী হয়ে যাবে।
অতএব পুর্বোক্ত আলোচনার মাধ্যমে এ কথাই প্রমাণিত হল যে, বিদআত চেনা অবশ্যই জরুরী। যাতে মুমিনের ইবাদত তা থেকে মুক্ত ও নির্মল হয়ে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য হয়।
পক্ষান্তরে বিদআত সেই অনিষ্টকর বস্তুসমূহের অন্যতম যাকে চেনা ওয়াজেব, তা ত্যাগ করার জন্য নয়, বরং তা থেকে বাঁচার জন্য। যেমন আরবী কবি বলেনঃ
‘মন্দ জেনেছি বাঁচার লাগি নহে মন্দের তরে,
ভালো কি মন্দ চিনে না যে সে মন্দেতে গিয়ে পড়ে।
অবশ্য এর মর্মার্থ হাদীস শরীফ হতে গৃহীত। সাহাবী হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান, বলেন, “লোকেরা রসুল (সা.)-কে ইষ্টকর ও মঙ্গল বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করত আর আমি কবলিত হবার আশংকায় তাঁকে অনিষ্টকর ও অমঙ্গল বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতাম।” (বুখারী ও মুসলিম)।
আর এজন্যই যে সমস্ত বিদআত দ্বীনে অনুপ্রবেশ করেছে তার উপর মুসলিম জাতিকে সতর্ক ও অবহিত করা নিতান্ত জরুরী এবং বিষয়টি এত গুরুত্বহীন নয় যে, কেবল তাদেরকে তাওহীদ ও সুন্নাহ সম্পর্কিত জ্ঞান ও নির্দেশ প্রদান করাই যথেষ্ট এবং শির্ক ও বিদআত প্রসঙ্গে কোন কথা উত্থাপনের প্রয়োজন নেই; বরং এ বিষয়ে চুপ থাকাই ভালো! যেমন, অনেকে এ ধরনের ধ্যান-ধারণা রেখে থাকে। অথচ এটা এক সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির ফল।
যা শির্কের পরিপন্থী তওহীদ এবং বিদআতের পরিপন্থী সুন্নাহর প্রকৃত জ্ঞান স্বল্পতার কারণে সৃষ্টি হয়ে থাকে। আর একই সময়ে এই দৃষ্টিভঙ্গি ঐ ধরনের মানুষদের অজ্ঞতার ইঙ্গিত বহন করে। কারণ, তারা জানে। না যে বিদআতে যে কেউ আপতিত হতে পারে, এমনকি আলেম মানুষও। কেননা, বিদআত করা বা তাতে আপতিত হওয়ার বহু কারণ আছে। যার মধ্যে যয়ীফ ও মওযু (জাল) হাদীসের উপর ভিত্তি করে আমল করাও অন্যতম।
যেহেতু কখনো কিছু উলামার নিকটেও তার কিছু অপ্রকাশ থেকে যেতে পারে। যাকে তাঁরা সহীহ হাদীস মনে করে তার উপর আমল করে থাকেন এবং আল্লাহর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি লাভের আশা করেন। অতঃপর তাঁদের ছাত্ররা ঐ বিষয়ে তাঁদের অনুকরণ করে এবং ধীরে ধীরে জনসাধারণও তাঁদের দেখে নিঃসন্দেহে আমল করতে লাগে। ফলে কিছু দিনের মধ্যেই তা পালনীয় সুন্নাহর আকার ধারণ করে। (আল-আজৰিবাতুন নাফেজাহ ফিল জুমআহ, আলবানী ৬১-৬৩ পৃঃ)।
তাই তো পরে কোন আলেম সে বিষয়ে অবহিত হয়ে তা রদ করতে গেলে বা তার পরিবর্তে সহীহ সুন্নাহর প্রতি পথ-নির্দেশ করতে গেলে ওদের অনেকে বলে থাকে, নতুন হাদীস! ওঁরা কি জানেন না বা জানতেন না? ইত্যাদি।