জাহান্নামে জাহান্নামীরা চিরস্থায়ী বসবাস করবে। অবশ্য যদি কোন পাপের কারণে কোন মু’মিন জাহান্নামে যায়, তাহলে এক দিন না একদিন আল্লাহর দয়া ও ক্ষমায় অথবা কারো সুপারিশে অথবা পাপফল ভোগ করার শেষে সেখান থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে যাবে। হৃদয়ে তওহীদ থাকলে অর্থাৎ, শির্ক না করে থাকলে পাপী মুসলিমকে জাহান্নাম থেকে বের করা হবে।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, “(পরকালে) আল্লাহ বলবেন, সেই ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে বের কর, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে যবের দানা পরিমাণ মঙ্গল (ঈমান) আছে। সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে গমের দানা পরিমাণ মঙ্গল (ঈমান) আছে। আর সেই ব্যক্তিকেও জাহান্নাম থেকে বের কর, যে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে এবং তার হৃদয়ে অণু পরিমাণ মঙ্গল। (ঈমান) আছে।” (আহমাদ ৩/২৭৬, তিরমিযী ২৫৯৩নং, এ হাদীসের মুল রয়েছে সহীহায়নে)
বাকী যাদের ঈমান নেই, সেই বেঈমানরা চিরদিন সেখানে আযাবের মধ্যে বসবাস করবে। তাদের শাস্তি ক্ষমা করা হবে না, লাঘব করা হবে না এবং তারা বা জাহান্নাম ধ্বংস হয়ে যাবে না। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন,
وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ, যারা (কাফের) অবিশ্বাস করে ও আমার নিদর্শনকে মিথ্যাজ্ঞান করে, তারাই অগ্নিবাসী সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (বাক্বারাহঃ ৩৯)
وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থাৎ, যারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা মনে করেছে এবং অহংকারে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারাই দোযখবাসী; সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। (আরাফঃ ৩৬)
إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ
অর্থাৎ, অবশ্যই যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলে এবং অহংকারে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদের জন্য আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা বেহেশ্তেও প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না সুচের ছিদ্রপথে উট প্রবেশ করে। এরূপে আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি। (আরাফঃ ৪০)
إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي عَذَابِ جَهَنَّمَ خَالِدُونَ (74) لَا يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ (75)
অর্থাৎ, নিশ্চয় অপরাধীরা স্থায়ীভাবে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। ওদের শাস্তি লাঘব করা হবে না এবং ওরা তাতে (শাস্তি ভোগ করতে করতে) হতাশ হয়ে পড়বে। (যুখরুফঃ ৭৪-৭৫)
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَىٰ عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُم مِّنْ عَذَابِهَا ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ
অর্থাৎ, যারা অবিশ্বাস করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। ওদের মৃত্যুর আদেশ দেওয়া হবে না যে, ওরা মরবে এবং ওদের জন্য জাহান্নামের শাস্তিও লাঘব করা হবে না। এভাবে আমি প্রত্যেক অবিশ্বাসীকে শাস্তি দিয়ে থাকি। (ফাত্বিরঃ ৩৬)
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَمَاتُوا وَهُمْ كُفَّارٌ أُولَٰئِكَ عَلَيْهِمْ لَعْنَةُ اللَّهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ (161) خَالِدِينَ فِيهَا ۖ لَا يُخَفَّفُ عَنْهُمُ الْعَذَابُ وَلَا هُمْ يُنظَرُونَ (162)
অর্থাৎ, নিশ্চয় যারা অবিশ্বাস করে (কাফের) এবং অবিশ্বাসী (কাফের) থাকা অবস্থায় মারা যায়, তাদের উপর আল্লাহ, ফিরিশ্তাগণ এবং সকল মানুষের অভিসম্পাত। তারা চিরকাল তাতে (অভিসম্পাত ও দোযখে) অবস্থান করবে, তাদের শাস্তিকে লঘু করা হবে না এবং তারা কোন অবকাশও পাবে না। (বাক্বারাহঃ ১৬১-১৬২)
يُرِيدُونَ أَن يَخْرُجُوا مِنَ النَّارِ وَمَا هُم بِخَارِجِينَ مِنْهَا ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ مُّقِيمٌ
অর্থাৎ, তারা আগুন থেকে বের হতে চাইবে, কিন্তু তারা তা থেকে বের হতেই পারবে না এবং তাদের জন্য স্থায়ী শাস্তি রয়েছে। (মাইদাহঃ ৩৭)।
ثُمَّ قِيلَ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
অর্থাৎ, অতঃপর যালেমদেরকে বলা হবে, চিরস্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে থাকো, তোমাদেরকে তো তোমাদের কৃতকর্মের প্রতিফলই দেওয়া হচ্ছে।' (ইউনুসঃ ৫২)।
মৃত্যুকে দুম্বার আকারে নিয়ে এসে যবেহ করা হবে এবং বলা হবে, হে জান্নাতীগণ! তোমরা চিরকাল বাস কর, আর কোন মৃত্যু নেই। হে জাহান্নামীগণ! তোমরা চিরকাল বাস কর, আর কোন মৃত্যু নেই।” (বুখারী, মুসলিম)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ
অর্থাৎ, (হে রসূল!) তুমি তাদেরকে সতর্ক করে দাও পরিতাপের দিন সম্বন্ধে, যেদিন সকল সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে যাবে; অথচ (এখন) তারা উদাসীন আছে এবং তারা বিশ্বাস করে না। (মারয়্যামঃ ৩৯)