জানাযা দর্পণ কবর যিয়ারত আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

‘আমার সমাধি দুয়ারে বারে দাঁড়াও পান্থর,

জগৎ ছাড়িয়া আসিয়া আমি কি হয়েছি এমন পর।

জাগতিক জীবনের মূল্যহীনতা প্রসঙ্গে ধারণা ও উপদেশ গ্রহণ, মৃত্যু, আখেরাত বা পরকালকে স্মরণ এবং মৃতব্যক্তির জন্য দুআ করার উদ্দেশ্যে কবর যিয়ারত বিধেয়। তবে এর জন্য শর্ত হচ্ছে যে, সেখানে গিয়ে এমন কথা বলা হবে না যাতে আল্লাহ তা'আলা অসন্তুষ্ট হন; যেমন, মৃতব্যক্তির নিকট ফরিয়াদ করা, তার কাছে কিছু চাওয়া, তার মিথ্যা প্রশংসা করা, সে জান্নাতী’ বলে পাক্কা ধারণা করা ইত্যাদি। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “(কবরের ধারে-পাশে এবং মৃতদেরকে নিয়েই শির্ক ও মূর্তিপূজা শুরু হয়েছে বলে) আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। সুতরাং এখন তোমরা কবর যিয়ারত করতে পার। কারণ, তা তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়।” (মুসলিম ৯৭৭, আবু দাউদ ৩২৩৫নং, আহমাদ ৫/৩৫০-৩৫৫) “তোমাদের কবর যিয়ারত যেন তোমাদের কল্যাণ বৃদ্ধি করে।” (আহমাদ ৫/৩৫০-৩৫৫ প্রমুখ) “সুতরাং যে ব্যক্তি যিয়ারত করার ইচ্ছা করে সে করতে পারে; তবে যেন (সেখানে) তোমরা অশ্লীল ও বাজে কথা বলো না।” (নাসাঈ ২০৩২নং)। তিনি আরো বলেন, “আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। শোনো! এখন তোমরা যিয়ারত করতে পার। কারণ, কবর। যিয়ারত হৃদয় নম্র করে, চক্ষু অশ্রুসিক্ত করে এবং পরকাল স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে (যিয়ারতে গিয়ে) বাজে কথা বলো না।” (হাকেম ১/৩৭৬ আহমাদ ৩/২৩৭-২৫০)।

মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারত বিধেয় নয়। কারণ, তাদের এমনিতেই ধৈর্য ও সহ্য শক্তি কম। তাছাড়া তারা শরীয়ত-বিরোধী কাজ অধিক করতে পারে যিয়ারতে গিয়ে। যেমন; চেঁচামেচি ও উচ্চস্বরে কান্না করবে, পর্দাহীনতার সাথে যিয়ারতে যাবে, অভ্যাসগতভাবে কবরস্থান বেড়াতে যাবে। (পার্ক মনে করে নেবে।) সেখানে বসে ফালতু আড্ডা দিয়ে বাজে কথাবার্তা বলবে। কিছু মুসলিম দেশে এর বাস্তব উদাহরণ বর্তমান। তাই তো পিয়ারা নবী (ﷺ) অধিক কবর যিয়ারতকারিনী মহিলাদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। (তিরমিযী ১০৫৬, ইবনে মাজাহ ১৫৭৪নং)

অবশ্য সকল প্রকার আদবের সাথে মহিলারা কখনো কখনো কবর যিয়ারত করতে পারে। তাতে বহু উলামার নিকট অনুমতি রয়েছে এবং তার দলীলও বর্তমান। তবে বেশী করলে তারা অভিসম্পাতে শামিল হবে। (দেখুন, আহকামুল জানাইয ১৮০- ১৮৭ পৃঃ) কেবল উপদেশ গ্রহণের উদ্দেশ্যে অমুসলিমের কবর যিয়ারত করা বৈধ। আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, একদা নবী (ﷺ) তার আম্মার কবর যিয়ারত করতে গিয়ে তিনি কেঁদে ফেললেন এবং তাঁর আশে-পাশে সকলকে কাঁদিয়ে তুললেন। (কারণ, জিজ্ঞাসা করা হলে) তিনি বললেন, “আমি আল্লাহর নিকট আমার আম্মার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলাম। কিন্তু তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন না। অতঃপর আমি তার নিকট তার কবর যিয়ারত করতে অনুমতি চাইলে তিনি তাতে অনুমতি দিলেন। সুতরাং তোমরা কবর যিয়ারত কর। কারণ, তা মরণকে স্মরণ করিয়ে দেয়।” (মুসলিম ৯৭৬, আবু দাউদ ৩২৩৪, নাসাঈ ২০৩৩, ইবনে মাজাহ ১৫৭২নং)

বলা বাহুল্য, তার জন্য দুআ করা বা তাকে সালাম দেওয়া যায় না। বরং কাফেরদের কবরের পাশ দিয়ে গেলেই তাদেরকে নরকের সুসংবাদ দেওয়া বা তারা নরকবাসী হয়েছে এই ধারণা করা উচিত। (ত্বাবারানী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত ১৭৬৩নং)

তদনুরূপ রহমত ও ক্ষমার দুআ করে মাইয়্যেতকে উপকৃত করাও কবর যিয়ারতের এক মহান উদ্দেশ্য। তবে দুআ হবে কেবল মুসলিমদের জন্য।।

মা আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী (ﷺ) বাকীর দিকে বের হতেন এবং (সেখানকার) কবরবাসীর জন্য দুআ করতেন।

এ ব্যাপারে মা আয়েশা (রাঃ) তাঁকে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে বললেন, “তাদের জন্য দুআ করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি।” (আহমাদ ৬/২৫২)