জানাযা দর্পণ রোগীর কর্তব্য আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

কেউ ব্যাধিগ্রস্ত ও অসুস্থ থাকলে প্রত্যেক মুসলিমের উচিত তাকে দেখা করতে যাওয়া এবং বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা, সাহস ও ধৈর্যধারণে উৎসাহ দেওয়া। এটা প্রত্যেক মুসলিমের অপরের নিকট হতে প্রাপ্য অধিকার, যা পালন করলে অজস্র পুণ্য লাভ হয়ে থাকে। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “একজন মুসলিমের অপর মুসলিমের উপর পাঁচটি অধিকার রয়েছে; সালামের জওয়াব দেওয়া, রোগীকে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা, জানাযায় অংশগ্রহণ করা, দাওয়াত কবুল করা এবং হাঁচির জওয়াবে (আলহামদু লিল্লাহ বলা শুনলে) য়্যারহামুকাল্লাহ’ বলা।” (বুখারী ১২৮০নং, মুসলিম ২ ১৬২নং)

“মুসলিম যখন তার কোন মুসলিম (রোগী) ভাইকে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যায় তখন তার নিকট ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের বাগানে অবস্থান। করে।” (মুসলিম ২৫৬৮নং)।

কোন মুসলিম সকালে কোন মুসলিম (রোগীকে) সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭০ হাজার ফিরি তার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে। আর সন্ধ্যা বেলায় সাক্ষাৎ করলে সকাল পর্যন্ত ৭০ হাজার ফিরিশতা তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকে এবং জান্নাতে তার জন্য এক বাগান রচনা করা হয়।” (তিরমিযী, ১৮৩নং, সহীহ ইবনে মাজাহ ১১৮৩নং)

যেমন রোগীর উচিত, আল্লাহর নির্ধারিত তকদীরে সন্তুষ্ট থাকা, নিজের ভাগ্যের মসীবতে ধৈর্য রাখা এবং আল্লাহর প্রতি সুধারণা রাখা যে, আল্লাহর রহমত ও করুণা অসীম, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন ইত্যাদি। কারণ আল্লাহর নবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা রাখা ছাড়া অন্য অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুবরণ না করে।” (মুসলিম ২৮৭৭, ইবনে মাজাহ ৪ ১৬৭ নং)

তবে আল্লাহর ক্ষমা ও রহমতের আশা করার সাথে সাথে স্বকৃত পাপের শাস্তির আশঙ্কা ও ভয় তার মনে অবশ্যই থাকবে। আনাস (রাঃ) বলেন, “একদা নবী (ﷺ) একজন মরণাপন্ন যুবকের নিকট উপস্থিত হয়ে তাকে বললেন, “কেমন লাগছে তোমাকে?” যুবকটি বলল, আল্লাহর কসম; হে আল্লাহর রসূল! আমি আল্লাহর (রহমতের) আশাধারী। তবে স্বকৃত পাপের ব্যাপারেও ভয় হচ্ছে।

আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন, “এহেন অবস্থায় যে বান্দারই হৃদয়ে আল্লাহর রহমতের আশা ও আযাবের ভয় পাশাপাশি থাকে, সে বান্দাকেই আল্লাহ তার আকাঙ্খিত বস্ত্র প্রদান করে থাকেন। আর যা সে ভয় করে তা হতে তাকে নিরাপত্তা দান করেন।” (তিরমিযী ৯৯৪ ইবনে মাজাহ ৪২৬১, সহীহ তিরমিযী ৭৯৫ নং)

রোগ ও পীড়া যত বেশীই যন্ত্রণাদায়ক হোক না কেন তবুও মৃত্যুকামনা করা রোগীর কোনক্রমেই উচিত নয়। কেননা, উম্মুল ফাযল (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহর রসূলের চাচা পীড়িত হলে তিনি তাঁর নিকট এলেন। আব্বাস মৃত্যুকামনা প্রকাশ করলে আল্লাহর রসূল (ﷺ) তাঁকে বললেন, “হে চাচাজান! মৃত্যু কামনা করেন না। কারণ, আপনি নেক লোক হলে এবং হায়াত বেশী পেলে বেশী-বেশী নেকী করে নিতে পারবেন; যা আপনার জন্য মঙ্গলময়। আর গোনাহগার হলে এবং বেশী হায়াত পেলে আপনি গোনাহ থেকে তওবা করার সুযোগ পাবেন, সুতরাং তাও আপনার জন্য মঙ্গলময়। অতএব মৃত্যুকামনা করেন না। ” (হাকেম ১/৩৩৯, আহকামুল জানায়েয, আলবানী ৪ পৃঃ)।

তাই রোগীর উচিত, অধিকাধিক তওবা-ইস্তিগফার করা এবং অনুশোচনার সাথে আল্লাহ-অভিমুখী হওয়া। রোগযন্ত্রণায় ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর নির্ধারিত তকদীর নিয়ে রাজী থেকে এ কথা বিশ্বাসে রাখা যে, রোগজনিত পীড়া ভোগান্তির প্রতিদান সে অবশ্যই লাভ করবে। আর উচিত, যথাসম্ভব শেষ সুযোগে নেক কাজ করতে বেশী প্রয়াসী হওয়া। কিন্তু যদি একান্তই ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গার উপক্রম হয় এবং মরণ চাইতেই হয়, তাহলে এই দুআ বলে চাওয়া উচিত,

اللهم أحيني ما كانت الحياة خيرًا لي، وتوفني إذا كانت الوفاة خيرًا لي

উচ্চারণঃ- আল্লাহুম্মা আহয়িনী মা কা-নাতিল হায়াত খাইরাল লী অতাওয়াফ্‌ফানী ইযা কা-নাতিল অফা-তু খাইরাল লী।

অর্থাৎ, হে আল্লাহ! যতক্ষণ বেঁচে থাকা আমার জন্য কল্যাণকর ততক্ষণ। আমাকে জীবিত রাখ। আর যদি মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয় তবে আমাকে মরণ দাও। (বুখারী ৫৬৭১, মুসলিম ২৬৮০ নং)

উল্লেখ্য যে, পীড়ার তাড়না বা মানসিক যন্ত্রণার চাপে আত্মহত্যা করা মহাপাপ। আত্মঘাতীর জন্য রয়েছে মহাশাস্তির ঘোষণা যে যে ভাবে আত্মহত্যা করবে তাবে ঠিক সেই ভাবেই জাহান্নামে কষ্ট ও শাস্তি ভোগ করতে হবে। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে সর্বদা চিরকাল ধরে অনুরূপ ঝাঁপ দিতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে সর্বদা চিরকাল ধরে হাতে বিষ নিয়ে পান করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি ছুরি দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে ব্যক্তি জাহান্নামের আগুনে সর্বদা চিরকালের জন্য হাতে ছুরি নিয়ে নিজ পেটে আঘাত করতে থাকবে। (বুখারী ৫৭৭৮নং)

মৃত্যুর সময় যখন নিকটবর্তী হয়, তখন বহু মানুষ বুঝতে পারে যে, এবার তার আর সময় নেই। সুতরাং জ্ঞানী ও সৎ সেই ব্যক্তি, যে তা বুঝতে না পারলেও মরণের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। সর্বদা ধ্যানে-মনে রাখে ইবনে উমার (রাঃ) এর এই কথা, সন্ধ্যা হলে তুমি আর সকাল হওয়ার ভরসা করো না এবং সকাল হলে আর সন্ধ্যার ভরসা করো না--- ” (বুখারী, মিশকাত ১৬০৪ নং) বরং পরপারের সেই পরম সুখ ও অনাবিল শান্তির আশায় ও লোভে পথের উৎকৃষ্ট পাথেয় সংগ্রহে ব্যতিব্যস্ত হয়। কারণ, মরণের পর ঈমান ও আমল ছাড়া আর কিছু উপকারে আসতে পারে না। পিয়ারা নবী (ﷺ) বলেন, “তিনটি জিনিস মরণ-পথের পথিকের অনুগমন করে; তার পরিজন, আমল এবং ধন-সম্পদ। কিন্তু দুটি জিনিস (মধ্যপথ হতে) ফিরে আসে এবং অবশিষ্ট একটি তার সঙ্গ দেয়; তার পরিজন ও ধন-সম্পদ ফিরে আসে এবং তার আমল (কৃতকর্ম) তার সাথী হয়।” (বুখারী ৬৫১৪, মুসলিম ২৯৬০নং)

মরণের প্রস্তুতি স্বরূপ কারো কাছে ঋণী থাকলে সম্ভব হলে পরিশোধ করে দেবে। কারো অধিকার ছিনিয়ে থাকলে, কারো হক আত্মসাৎ করে থাকলে অথবা কারো প্রতি কোন অন্যায় ও অত্যাচার করে থাকলে তার অধিকার ফিরিয়ে দেবে এবং তার নিকট ক্ষমা চেয়ে নেবে। নচেৎ সেদিন ভীষণ পস্তানি হবে যেদিন এর পরিবর্তে তার বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগকারী ব্যক্তিকে তার নেকী থেকে প্রাপ্য হক প্রদান করা হবে। আর নেকী নিঃশেষ হলে বা না থাকলে তাদের গোনাহ নিয়ে এই ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া হবে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “সেদিন আসার পূর্বে পূর্বে কারো উপর যদি তার কোন ভায়ের দেহ, সম্ভ্রম বা সম্পদের অধিকার ও যুলুম থেকে থাকে, তবে তা সে। যেন তা আদায় করে প্রতিশোধ দিয়ে দেয় যেদিন দীনার বা দিরহাম (টাকা-পয়সার মাধ্যমে মুক্তিপণ) গ্রহণ করা হবে না। বরং তার (ঐ অত্যাচারীর) কোন নেক আমল থাকলে তা ছিনিয়ে নিয়ে তার প্রতিবাদী (অত্যাচারিত ব্যক্তি)কে প্রদান করা হবে। আর যদি তার কোন নেক আমল না থাকে, তাহলে তার প্রতিবাদীর গোনাহ নিয়ে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হবে।” (বুখারী ২৪৪৯নং, মুসনাদে আহমাদ ২/৫০৬, বাইহাকী ৩/৩৬৯)

কোন অসুবিধার কারণে কারো প্রাপ্য হক পরিশোধ করতে অক্ষম হলে রোগী তার ওয়ারেসীনদের অসিয়ত করে যাবে, যেন তারা তার মৃত্যুর পর তা আদায় করে দেয়। জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, “উহুদ যুদ্ধের সময় উপস্থিত হলে রাত্রিকালে আমার আব্বা আমাকে ডেকে বললেন, 'আমার মনে হচ্ছে যে, নবী (ﷺ) এর সাহাবাবর্গের মধ্যে যারা খুন হবেন তাদের মধ্যে আমি প্রথম। আল্লাহর রসূল (ﷺ) ছাড়া আমার সবচেয়ে প্রিয়তম জিনিস আমি তোমাকেই ছেড়ে যাব। আমার কিছু ঋণ আছে, তা তুমি পরিশোধ করে দিও। আর ভাইদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। অতঃপর সকাল হলে দেখলাম, তিনিই প্রথমে খুন হয়েছেন।” (বুখারী ১৩৫ ১নং)।

প্রয়ােজনীয় অসিয়ত যতশীঘ্র সম্ভব প্রস্তুত করা বা লিখে দেওয়া কর্তব্য। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “কোন মুসলিমের জন্য সমীচীন নয় যে, তার অসিয়ত করার কিছু থাকলে তা লিখে মাথার নিকট প্রস্তুত না রেখে সে দুটি রাত্রিও অতিবাহিত করে।” ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, “আমি যখন থেকে নবী (ﷺ)-এর নিকট উক্ত কথা শুনেছি, তখন থেকে আমার নিকট অসিয়ত প্রস্তুত না রেখে একটি রাত্রি যাপন করিনি। (বুখারী ২৭৩৮, মুসলিম ১৬২৭নং)

যে সকল নিকটাত্মীয় রোগীর মীরাস থেকে বঞ্চিত (যেমন অন্য ছেলের) বর্তমানে মৃত ছেলের ছেলেরা তাদের নামে (উইল) করা ওয়াজেব। কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন,

كُتِبَ عَلَيْكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ إِن تَرَكَ خَيْرًا الْوَصِيَّةُ لِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِينَ بِالْمَعْرُوفِ ۖ حَقًّا عَلَى الْمُتَّقِينَ

অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যখন কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং সে যদি ধনসম্পত্তি রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য ন্যায় সঙ্গত অসিয়ত করার বিধান তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছে। মুত্তাকীদের পক্ষে তা অবশ্য পালনীয়। (সুরা বাকারাহ ১৮০ আয়াত)

কিন্তু মীরাসের আয়াতে যথানির্ধারিত ভাগ পিতা-মাতা এবং অন্যান্য ওয়ারেস আত্মীয়দেরকে প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং এ বিধান কেবল তাদের জন্য বহাল আছে যারা মীরাস থেকে বঞ্চিত। (তফসীরে সা’দী ৬৮ পৃঃ)

তবে উক্ত অসিয়ত যেন রোগীর এক তৃতীয়াংশ জমি সম্পদ থেকে হয়। কারণ, এক তৃতীয়াংশের অধিক মালে অসিয়ত করা বৈধ নয়। বরং তার চাইতে আরো কম হলে সেটাই উত্তম। সা’দ বিন আবী অক্কাস (রাঃ) বলেন, আমি বিদায়ী হজ্জের সফরে নবী (ﷺ) এর সাথে ছিলাম। সেখানে এমন ব্যাধিগ্রস্ত হলাম যাতে আমি নিজেকে মৃত্যুর নিকটবর্তী মনে করলাম। আল্লাহর রসূল (ﷺ) আমাকে দেখা করতে এলে আমি তাকে বললাম, 'হে আল্লাহর রসূল! আমার ধন-মাল তো অনেক বেশী। আর একটি কন্যা ছাড়া আমার আর কেউ নেই। আমি কি আমার দুই তৃতীয়াংশ মাল অসিয়ত করতে পারি?' তিনি বললেন, “না।” আমি বললাম, তবে অর্ধেক মাল?’ বললেন, “না।” তাহলে এক তৃতীয়াংশ?' তিনি বললেন, “হ্যাঁ এক তৃতীয়াংশ করতে পার। তবে এক তৃতীয়াংশও বেশী। হে সা’দ! তুমি তোমার ওয়ারেসীনদেরকে লোকদের নিকট হাত পেতে খাবে এমন দরিদ্র অবস্থায় ছেড়ে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে ধনীরূপে ছেড়ে যাওয়া অনেক ভালো।” (বুখারী ১২৯৫, মুসলিম ১৬২৮নং প্রমুখ)

অসিয়ত করার ব্যাপারে দুইজন দ্বীনদার মুসলিমকে সাক্ষী মানা জরুরী। সেরূপ কোন মানুষ না পেলে ২জন বিশ্বস্ত অমুসলিম ব্যক্তিকেও সাক্ষী রেখে নিতে হবে। যাতে সন্দেহ ও মতবিরোধের সময় তাদের সাক্ষ্য দ্বারা নিশ্চয়তা লাভ সম্ভব হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا شَهَادَةُ بَيْنِكُمْ إِذَا حَضَرَ أَحَدَكُمُ الْمَوْتُ حِينَ الْوَصِيَّةِ اثْنَانِ ذَوَا عَدْلٍ مِّنكُمْ أَوْ آخَرَانِ مِنْ غَيْرِكُمْ إِنْ أَنتُمْ ضَرَبْتُمْ فِي الْأَرْضِ فَأَصَابَتْكُم مُّصِيبَةُ الْمَوْتِ ۚ تَحْبِسُونَهُمَا مِن بَعْدِ الصَّلَاةِ فَيُقْسِمَانِ بِاللَّهِ إِنِ ارْتَبْتُمْ لَا نَشْتَرِي بِهِ ثَمَنًا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ ۙ وَلَا نَكْتُمُ شَهَادَةَ اللَّهِ إِنَّا إِذًا لَّمِنَ الْآثِمِينَ * فَإِنْ عُثِرَ عَلَىٰ أَنَّهُمَا اسْتَحَقَّا إِثْمًا فَآخَرَانِ يَقُومَانِ مَقَامَهُمَا مِنَ الَّذِينَ اسْتَحَقَّ عَلَيْهِمُ الْأَوْلَيَانِ فَيُقْسِمَانِ بِاللَّهِ لَشَهَادَتُنَا أَحَقُّ مِن شَهَادَتِهِمَا وَمَا اعْتَدَيْنَا إِنَّا إِذًا لَّمِنَ الظَّالِمِينَ

অর্থাৎ, হে ইমানদারগণ! তোমাদের কারো যখন মৃত্যুসময় উপস্থিত হয় তখন অসিয়ত করার সময় তোমাদের মধ্যে হতে দুজন ন্যায়পরায়ণ লোককে সাক্ষী রাখবে। তোমরা সফরে থাকলে এবং তোমাদের মৃত্যুরূপ বিপদ উপস্থিত হলে তোমাদের ছাড়া অন্য লোকদের (অমুসলিমদের) মধ্য হতে দুজন সাক্ষী মনোনীত করবে। তোমাদের সন্দেহ হলে নামাযের পর তাদেরকে অপেক্ষমাণ রাখবে। অতঃপর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমরা ওর বিনিময়ে কোন মূল্য গ্রহণ করব না - যদি সে আত্মীয়ও হয় এবং আমরা আল্লাহর সাক্ষ্য গোপন করব না, করলে আমরা নিশ্চয় পাপীদের অন্তর্ভুক্ত হব। তবে যদি এ প্রকাশ পায় যে, তারা দুজন অপরাধে লিপ্ত হয়েছে তবে যাদের স্বার্থহানি ঘটেছে তাদের মধ্য হতে নিকটতম দুজন তাদের স্থলবর্তী হবে এবং আল্লাহর নামে শপথ করে বলবে, আমাদের সাক্ষ্য অবশ্যই তাদের হতে। অধিকতর সত্য এবং আমরা সীমালংঘন করি নি, করলে অবশ্যই আমরা যালেমদের দলভুক্ত হব।” (সূরা মায়েদাহঃ ১০৬-১০৭ আয়াত)

সতর্কতার বিষয় যে, যারা ওয়ারেস হবে তাদের নামে যেমন, পিতা-মাতা পুত্র বা কন্যা অথবা বিবির নামে অসিয়ত করা (জমি-জায়গা লিখা) এবং কোন ওয়ারিস (যেমন, বিবাহিত কন্যা বা স্ত্রী)কে মীরাস থেকে বঞ্চিত করা বৈধ নয়। প্রিয় নবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক হকদারকে তার প্রাপ্য হক প্রদান করেছেন। সুতরাং কোন ওয়ারেসের জন্য অসিয়ত বৈধ নয়।” (আবু দাউদ ২৮৭০, তিরমিযী, ২১২০, সহীহ আবু দাউদ ২৮৯৪নং প্রমুখ। আল্লাহ তাআলা বলেন,

لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِّمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ ۚ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا

অর্থাৎ, মাতা-পিতা এবং আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষের অংশ আছে এবং মাতা-পিতা ও আত্মীয়-স্বজনের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীরও অংশ আছে, তাতে তা অল্পই হোক অথবা বেশীই হোক। প্রত্যেকের জন্য এক নির্ধারিত অংশ রয়েছে। (সুরা নিসা ৭ আয়াত)

আল্লাহ তাআলা মীরাসের আয়াতের শেষ অংশে বলেন,

مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصَىٰ بِهَا أَوْ دَيْنٍ غَيْرَ مُضَارٍّ ۚ وَصِيَّةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَلِيمٌ

অর্থাৎ, --- এ ছাড়া যা অসিয়ত করে তা দেওয়া এবং ঋণ পরিশোধের পর যদি এ কারো জন্য হানিকর না হয়। এ হল আল্লাহ নির্দেশ, বস্তুতঃ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল। (সুরা নিসা ১২ আয়াত)।

সুতরাং কোন ওয়ারেসের জন্য অসিয়ত করা অন্যায় করলেও এমন ইনসাফহীন অসিয়ত বতিলরূপে পরিগণিত হয়। কারণ, নবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীনের) ব্যাপারে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে, ওর অন্তর্ভুক্ত নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী ২৭৯৭, মুসলিম ১৭ ১৮নং, প্রমুখ।

যেহেতু বর্তমান যুগে দ্বীনে বিশেষ করে জানাযায় বহু ভেজাল অনুপ্রবেশ করে বহু বিদআত রচিত হয়ে সুন্নাহর আকার ধারণ করেছে, সেহেতু মরণাপন্ন ব্যক্তির এ অসিয়ত করাও উচিত এবং ওয়াজেব যে, তার কাফন-দাফন ইত্যাদি শেষক্রিয়া যেন সুন্নাহর পদ্ধতি অনুযায়ী হয় এবং এ বিষয়ে কোন প্রকারে বিদআতকে প্রশ্রয় না দেওয়া হয়। এমনি অসিয়ত বহু সলফ তাঁদের ওয়ারেসীনদেরকে করে গেছেন---যেমন ভূমিকায় কিছু উল্লিখিত হয়েছে। তাছাড়া আল্লাহ তাআলার সেই বাণী ও নির্দেশের উপরেও আমল হয়, যাতে তিনি বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ

অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারপরিজনকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যার নিয়ন্ত্রণভার অর্পিত আছে নির্মমহৃদয়, কঠোর-স্বভাব ফিরিশ্তাগণের উপর; যারা আল্লাহ যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদিষ্ট হয়। তাই করে। (সুরা তাহরীম ৬ আয়াত)