মৃত্যু এ জাগতিক সংসারে এক অবধারিত, অনিবার্য ও ধ্রুব সত্য। 'জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথায় ভবে?’ জীবন-মৃত্যুর সৃষ্টিকর্তার নিজস্ব ঘোষণাঃ

كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ * وَيَبْقَىٰ وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

“ভূপৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই নশ্বর, অবিনশ্বর কেবল তোমার প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা), যিনি মহিমাময় মহানুভব।” (কুঃ ৫৫/২৬-২৭) “আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল, বিধান তো তাঁরই এবং তাঁরই দিকে তোমরা প্রত্যানীত হবে।” (কুঃ ২৮/৮৮) “জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে, আর কিয়ামতের দিন তোমাদের কর্মফল পূর্ণমাত্রায় দেওয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দুরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেই সফলকাম, আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (কুঃ ৩/১৮৫) “জীব মাত্রই মরণশীল; অতঃপর তোমরা আমারই নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে।” (কুঃ ২৯/৫৭) “বল ‘মৃত্যুর ফিরিশ্যা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যানীত হবে।” (কুঃ ৩২/১১) মৃত্যু যন্ত্রণা সত্যসত্যই আসবে, এ তো সেই বস্তু যা হতে তোমরা অব্যাহতি চেয়ে আসছ।” (কুঃ ৫০/১৯) “বল, তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন করতে চাও, তোমাদেরকে সে মৃত্যুর সম্মুখীন হতেই হবে। অতঃপর তোমাদেরকে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতার নিকট প্রত্যাবর্তিত করা হবে। তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে।” (কুঃ ৬২/৮)।

এইভাবে কুরআন মাজীদে বিভিন্ন ভাবভঙ্গিমায় ১৬৪ স্থানে মরণের কথা আলোচিত হয়েছে। সেই সর্বগ্রাসী তিক্তময় সন্ধিক্ষণ। যার আগমনে সন্তান। অনাথ হয়, স্ত্রী বিধবা হয়, পিতামাতা হয় নয়নমণি-হারা এবং বিগলিত হয়। সহস্র অশ্রুধারা। কি সে বিষাদ ও বিরহের মুহূর্ত! যা হতে মানুষ একেবারে উদাসীন ও বিস্মৃত। মহান আল্লাহ বলেন,

أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ * حَتَّىٰ زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ * كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُونَ

“প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে; যতক্ষণ না তোমরা কবরের সম্মুখীন হয়েছে। না, এ সঙ্গত নয়। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে----- ” (কুঃ ১০২/১-২)

অতএব “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় কর এবং মুসলিম না হওয়া পর্যন্ত তোমরা অবশ্যই মৃত্যু বরণ করো না।” (কুঃ ৪/৭৮)

হ্যাঁ, আর এ কথাও জেনে রেখো যে, “তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই। এমন কি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও। ” (কুঃ ৪/৭8) সুতরাং মরণের করাল কবল হতে এবং হিসাবের হাত হতে বাঁচার কোন। উপায়ন্তর নেই। এর জন্য রইল কাল জয়ী চ্যালেঞ্জ, “যদি তোমরা সত্যবাদী। হও তবে তোমরা নিজেদেরকে মৃত্যু হতে রক্ষা কর।” (কুঃ ৩/১৬৮) প্রিয় রসূল (ﷺ) বলেন, “সকল প্রকার সুখ আনন্দ ও সুখহরণ মৃত্যুকে তোমরা অধিকাধিক স্মরণ কর।” (তিরমিযী, নাসাঈ)

“দুনিয়ার সাথে আমার কি সাথ? তাঁর শপথ যার হস্তে আমার প্রাণ আছে! আমার ও দুনিয়ার উপমা তো একজন পথিকের (ও বৃক্ষের) ন্যায়, যে, রৌদ্রতপ্ত দিবসে পথ চলতে একটি বৃক্ষের নিচে ক্ষণেক তার ছায়া গ্রহণ করে। অতঃপর তা ত্যাগ করে প্রস্থান করে।” (আহমাদ, হাকেম)

“যেখানেই তুমি থাক হে মানব যত হও সাবধান,

মৃত্যু তোমাকে ধরে নেবে ঠিক পাবে না পরিত্রাণ।

মিছে ছলনায় বাঁধলি যে ঘর সে তো নয় তোর কভু।

হায়রে অবোধ আজো কি নিজেরে চিনিতে পারিলি তবু?”