জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«لاَ يُسْأَلُ بِوَجْهِ اللَّهِ إِلاَّ الْجَنَّةُ»
‘‘আল্লাহর চেহারার উসীলা দিয়ে একমাত্র জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুই চাওয়া যাবেনা’’। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।[1]
ব্যাখ্যাঃ লেখক এই অধ্যায়ে জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহুর হাদীছ বর্ণনা করেছেন। হাদীছটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলার উসীলা দিয়ে শুধু জান্নাতই চাওয়া উচিত।
এখানে একটি প্রশ্ন উঠে। সেটি হচ্ছে, তায়েফ বাসীরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মিথ্যাবাদী বলল, তখন তিনি ফেরার পথে যে দুআ করেছিলেন, তা হচ্ছেঃ
«اللَّهُمَّ إِلَيْكَ أَشْكُو ضَعْفَ قُوَّتِى وَقِلَّةَ حِيلَتِى وهَوَانى عَلَى النَّاس، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ، أَنْتَ رَبُّ المُسْتَضْعَفِينَ، وأَنْتَ رَبَّى، إلَى مَنْ تَكِلَنِى، إِلَى بَعِيدٍ يَتَجَهَّمُنِى؟ أوْ إلى عَدوٍّ مَلَّكْتَهُ أَمْرِى، إنْ لَمْ يَكُنْ بِكَ غَضَبٌ عَلَىَّ فَلاَ أُبَالِى، غَيْرَ أَنَّ عَافِيتَكَ هِى أَوْسَعُ لى، أَعُوذُ بِنُورِ وَجْهِكَ الَّذِى أَشْرَقَتْ لَهُ الظُّلُمَاتُ، وَصَلُحَ عَلَيْهِ أَمْرُ الدُّنيا وَالآخِرَةِ، أَنْ يَحِلَّ عَلَىَّ غَضَبُكَ، أوْ أَنْ يَنْزِلَ بى سَخَطُك، لك العُتبى حَتَّى تَرْضَى، وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلا بِكَ»
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে স্বীয় দুর্বলতা, আমার কলা-কৌশলের স্বল্পতা এবং মানুষের কাছে আমার মূল্যহীনতার অভিযোগ করছি। হে সর্বাধিক দয়ালু! তুমি দুর্বলদের প্রভু, আমারও প্রভু। তুমি আমাকে কার কাছে ন্যস্ত করছ? তুমি কি আমাকে দূরের এমন অচেনা কারও হাতে ন্যস্ত করছ, যে আমার সাথে কঠোর ব্যবহার করবে? নাকি কোনো শত্রুর হাতে সোপর্দ করছ, যাকে তুমি আমার সব বিষয়ের মালিক করে দিয়েছো? তুমি যদি আমার উপর রাগান্বিত না হও তাহলে আমি কোনো কিছুই পরওয়া করিনা। তবে নিঃসন্দেহে তোমার ক্ষমা আমার জন্য সর্বাধিক প্রসারিত। আমি তোমার সেই চেহারার আলোর আশ্রয় চাই, যা দ্বারা অন্ধকার দূরিভূত হয় এবং যা দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতের সকল বিষয় সংশোধন হয়। আমার উপর তোমার ক্রোধ নেমে আসা হতে অথবা আমার উপর তোমার অসন্তুষ্টি নাযিল হওয়া থেকে তোমার আশ্রয় চাই। তোমার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যই আমার সকল প্রচেষ্টা। তোমার সাহায্য ব্যতীত অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয় এবং তোমার তাওফীক ও শক্তি ছাড়া তোমার আনুগত্য করা অসম্ভব’’।[2] কিতাবুল আযকারে এই হাদীছ এসেছে যে,
«اللَّهُمَّ أَنْتَ أَحَقُّ مَنْ ذُكِرَ وَأَحَقُّ مَنْ عُبِدَ»
‘‘হে আল্লাহ! তোমার সর্বাধিক স্মরণ হওয়া আবশ্যক এবং তুমি এবাদতের সর্বাধিক হকদার’’। এই হাদীছের শেষের দিকে রয়েছে,
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بنورِ وَجْهِكَ الَّذِي أَشْرَقَتْ لَهُ السَّمَاوَاتُ وَالأَرْضُ»
‘‘হে আল্লাহ! আমি তোমার সেই চেহারার আলোর উসীলায় তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, যার আলো আসমান-যমীনকে আলোকিত করে রেখেছে’’। এ বিষয়ে আরো অনেক মারফু হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ উপরোক্ত হাদীছগুলোতে আল্লাহর চেহারার উসীলা দিয়ে জান্নাত ব্যতীত অন্যান্য বিষয়ও চাওয়া হয়েছে। অতএব এই অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছের সাথে ব্যাখ্যায় উল্লেখিত হাদীছের যে বিরোধ রয়েছে, তার সমাধান কী?
উক্ত প্রশ্নের জবাব হচ্ছে আল্লাহর চেহারার উসীলা দিয়ে বান্দার নিকট অকল্যাণ ও অপছন্দনীয় বস্ত্ত হতে আশ্রয় চাওয়া হয়েছে। প্রিয় ও পছন্দনীয় বস্ত্ত চাওয়া হয়নি। অন্যান্যভাবে উপরোক্ত প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব। আল্লাহই ভাল জানেন।[3] এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) আল্লাহর চেহারার উসীলা দিয়ে সর্বোচ্চ মাকসুদ ব্যতীত অন্য কিছু চাওয়া যাবেনা।
২) এই অধ্যায়ে বর্ণিত দলীল দ্বারা আল্লাহর ‘চেহারা’ সিফাত সাব্যস্ত হয়।
[2] - সীরাতে ইবনে হিশাম। ইমাম আলবানী (রঃ) এই বর্ণনাটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ ফিকহুস্ সীরাতঃ (১/১২৫)।
[3] - শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব (রঃ) অত্র অধ্যায়ে জাবের (রাঃ)এর যে হাদীছ বর্ণনা করেছেন, তা যঈফ। এই হাদীছকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করে এ কথা বলা ঠিক নয় যে, আল্লাহ রাববুল আলামীনের উসীলা দিয়ে জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু চাওয়া নিষেধ। সেই সাথে ব্যাখ্যাকার যেই দু’টি হাদীছ উল্লেখ করেছেন, তাও দুর্বল। প্রথম হাদীছকে শাইখ আলবানী (রঃ) ফিকহুস সিরাত-এর টিকায় (১৩২ পৃষ্ঠায়) যঈফ বলেছেন। আর ফিকহুল আযকারের হাদীছটি যঈফ হওয়ার ব্যাপারে মুহাদ্দিছীনে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন।