আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
يُوفُونَ بِالنَّذْرِ وَيَخَافُونَ يَوْمًا كَانَ شَرُّهُ مُسْتَطِيرًا
‘‘তারা মানত পূর্ণ করে এবং সেদিনকে ভয় করে, যেদিনের অনিষ্ট হবে সুদূর প্রসারী’’। (সূরা দাহারঃ ৭)
ব্যাখ্যাঃ ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা ইসলামী শরীয়তের মাধ্যমে যেসব বিষয় তাদের উপর ওয়াজিব করেছেন, তারা ঐসব বিষয়ের মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত করে এবং মানতের মাধ্যমে নিজেদের উপর যা আবশ্যক করে নিয়েছে, তা পূর্ণ করার মাধ্যমেও তারা আল্লাহর এবাদত করে।
আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেনঃ
وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ نَفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُمْ مِنْ نَذْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُهُ
‘‘তোমরা যা কিছু খরচ করেছ আর যে মানত মেনেছ, তা আল্লাহ জানেন’’। (সূরা বাকারাঃ ২৭০)
ব্যাখ্যাঃ ইমাম ইবনে কাছীর এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ আল্লাহ তাআলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, মানুষেরা যা কিছু খরচ করে এবং তারা যে মানত করে, আল্লাহ তাআলা সেগুলো সম্পর্কে পূর্ণ অবগত আছেন। আর আল্লাহ তাআলা যেহেতু তাদের আমল সম্পর্কে অবগত আছেন, তাই যারা তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়তে আমল করবে তাদেরকে পূর্ণরূপে বদলা দিবেন।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ মানত যেহেতু একটি এবাদত তাই মূর্তি, চন্দ্র, সূর্য, কবর-মাজার এবং অনুরূপ অন্যান্য বস্ত্তর জন্য উহা করা শির্ক। তিনি আরো বলেনঃ যে ব্যক্তি কবর বা মাজারকে আলোকিত করার জন্য বাতি মানত করল এবং মুশরিকদের ন্যায় বলল যে অমুক কবর বা মাজার মানত কবুল করে, সকল উম্মতের ঐক্যমতে এই মানত পাপ কাজের মানতের অন্তর্ভূক্ত। এ মানত পূর্ণ করা জায়েয নয়। এমনি যে ব্যক্তি কবর ও মাজারের খাদেমদের জন্য কিংবা তাতে অবস্থানকারীদের জন্য টাকা-পয়সা মানত করল, সেও পাপের কাজ করল। কেননা কবর ও মাজারের খাদেমদের মধ্যে এবং লাত, মানাত ও উয্যার খাদেমদের মধ্যে এক বিরাট সাদৃশ্য রয়েছে। পূর্বযুগে লাত, মানাত ও উয্যার খাদেমরা অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করতো এবং লোকদেরকে আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখতো। এমনি বর্তমান কালের মাজারের খাদেমদের মধ্যে ঐ সমস্ত লোকদের সাদৃশ্য রয়েছে, যাদের ব্যাপারে ইবরাহীম (আঃ) বলেছিলেন,
مَا هَذِهِ التَّمَاثِيلُ الَّتِي أَنْتُمْ لَهَا عَاكِفُونَ قَالُوا وَجَدْنَا آَبَاءَنَا لَهَا عَابِدِينَ
‘‘এই মূর্তিগুলো কী, যাদের তোমরা এবাদত করছো? তারা বললঃ আমরা আমাদের বাপ-দাদাকে এদের এবাদত করতে দেখেছি’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ৫২-৫৩) সুতরাং কবর ও মাজারের খাদেম এবং তাতে অবস্থানকারীদের জন্য মানত করা গুনাহ্র কাজ। এমনি কবর ও মাজারের খাদেমদের জন্য মানত করা খৃষ্টানদের গীর্জার পরিচর্যাকারীদের এবং তথায় অবস্থানকারীদের জন্য মানত করার মতই।
যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর জন্য মানত করে, সে কেবল আল্লাহর কাছেই আশা-ভরসা করে। কেননা সে জানে যে, আল্লাহ তাআলা যা চান, তাই হয়। তিনি যা চান না, তা সংঘটিত হয়না। তিনি যা প্রদান করেন, তা প্রতিহত করার কেউ নেই। আর তিনি যা প্রতিহত করেন, কেউ তা প্রদান করার ক্ষমতা রাখেনা। এটিই হচ্ছে توحيد القصد তাওহীদুল কাস্দ। বস্ত্ততঃ তাওহীদুল কাস্দ আর তাওহীদুল ইবাদাহ একই বিষয়। যেহেতু তাওহীদুল কাস্দ হচ্ছে অন্তর দিয়ে আল্লাহর জন্য ইখলাসের নিয়ত করা এবং আল্লাহর কাছেই বান্দার প্রয়োজন পূর্ণ করার প্রার্থনা করা, সে হিসাবে এটি তাওহীদুল উলুহীয়াতের অন্তর্ভূক্ত। এ জন্যই বান্দা আল্লাহর আনুগত্য ও এবাদতের নিয়তে মানত করলে তা পূর্ণ করা জরুরী।
আর যেসব কাজ এবাদতের অন্তর্ভূক্ত, সেগুলো আল্লাহ ব্যতীত অন্যের জন্য সম্পাদন করা হলে আল্লাহর সাথে শির্ক করা হবে।[1] কেননা সে যা আশা করে অথবা যা থেকে ভয় করে, সে বিষয়ে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের দিকে মনোনিবেশ করেছে। যার দিকে সে মনোনিবেশ করেছে, তাকে সে এবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর শরীক বানিয়ে ফেলেছে। শুধু তাই নয়; বরং কালেমায়ে তায়্যেবা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর মাধ্যমে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের এবাদতের যেই অস্বীকৃতি হয়েছিল, সে তা সাব্যস্ত করে দিল এবং এ কালেমার মাধ্যমে আল্লাহর জন্য যেই ইখলাস সাব্যস্ত হয়েছিল, সে তা সাব্যস্ত করেনি।
পূর্বে যেসব অধ্যায় অতিক্রম করেছে তার সবগুলোই প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি কাস্দ ও তলবের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে শরীক করল, সে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ দ্বারা সাব্যস্ত বিষয়কে বাতিল করল এবং এই কালেমাটি যে বিষয়ের প্রমাণ করে, তার বিপরীত করল। সেই সঙ্গে কালেমাটি যা অস্বীকার ও প্রত্যাখ্যান করেছে, সে তা সাব্যস্ত করল। আর যে তাওহীদকে সাব্যস্ত করেছে, তা প্রত্যাখ্যান করলো। এটিই হচ্ছে শির্ক। শাইখ মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব (রঃ) পূর্বের অধ্যায়ে ‘তাওহীদ ও লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর ব্যাখ্যা’ নামক শিরোনামে বলেছেন, সামনের অধ্যায়গুলোতে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা আসবে। সে অধ্যায়গুলোতে তিনি তাওহীদের ব্যাখ্যা করেছেন। তার উক্ত কথার তাৎপর্য এটিই।
যে শির্ক পূর্বে সংঘটিত হয়েছে অথবা আগামীতে যে শির্ক সংঘটিত হবে, তা কালেমায়ে ইখলাস এবং তাওহীদের পরিপন্থী।
শরহুল মিনহাজে ইমাম আয্রায়ী (রঃ) বলেনঃ অলী-আওলীয়া বা পীরদের কবরের উপর যে সমস্ত সমাধি বানানো হয়েছে অথবা যেখানে কোনো অলী বা সৎ লোক বসবাস অথবা আসা-যাওয়া করেছিল- এ ধারণায় সেই অলীর নামে সেখানে যে মাজার বানানো হয়েছে, তার উদ্দেশ্যে মানত করা হলে অথবা মানতকারী যদি সে স্থান বা মাজার বা মাজারের কোনো এক পার্শ্বকে সম্মান করার নিয়ত করে, তাহলে সেই মানত বাতিল। এমনি মানতকারী যদি এমন যমীনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিয়তে মানত করে, যেখানে কোনো অলীকে দাফন করা হয়েছে অথবা ঐ যমীনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নিয়তে মানত করে, যেখানে কোন অলীর দিকে নিসবত করা হয়েছে অথবা যে অলীর নামে কোনো শহর নির্মাণ করা হয়েছে, তার জন্য যদি মানত করে, তাহলে সেই মানত বাতিল বলে গণ্য হবে। কেননা যারা এ সমস্ত স্থানে মানত করে, তারা বিশ্বাস করে যে, এ স্থানগুলোর বিশেষ ফযীলত রয়েছে। তারা আরো মনে করে, এসব স্থানে মানত করার মাধ্যমে বালা-মসীবত দূর হয়, এর মাধ্যমে নেয়ামত ও বরকত হাসিল হয় এবং রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এরূপ মন্দ আকীদাহ পোষণকারী লোকেরা পাথরের জন্যও মানত পেশ করে থাকে। এ ব্যাপারে যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন তারা বলেঃ এ পাথরের উপর আল্লাহর এক সৎ বান্দা বসেছিল অথবা এতে হেলান দিয়েছিল। এরা কোন কোন কবরের উপর চেরাগ, মোমবাতি এবং তেল মানত করে। তারা বলে উমুক কবর এবং উমুক স্থান মানত কবুল করে এবং তাতে মানত করলে কবুল হয়। তাদের কথার ব্যাখ্যা এভাবে করে থাকে যে, এখানে মানত করলে উদ্দেশ্য হাসিল হয় এবং মনের আশা পূর্ণ হয়। এসব স্থানে রোগী ভাল হওয়ার মানত, হারানো লোক ফেরত পাওয়ার মানত, ধন-সম্পদ নিরাপদ থাকার মানত এবং আরও অনেক প্রকার মানত করা হয়। নিজ নিজ উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য এ সমস্ত স্থানে লোকেরা মানত করে। এ প্রকারের সকল মানতই নিঃসন্দেহে বাতিল। কবর ও মাজারের জন্য মোমবাতি, তেল এবং অনুরূপ অন্যান্য বস্ত্ত মানত করা সম্পূর্ণ বাতিল।
ইবরাহীম খলীল (আঃ) এবং অন্যান্য নবী-অলীদের কবরের জন্য বড় বড় মোমবাতি মানত করাও বাতিল। কেননা এগুলোতে মানতকারী স্বীয় মানতের দ্বারা কবরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তা থেকে বরকত লাভের নিয়ত ব্যতীত অন্য কোন নিয়ত করেনা। সে এটিকে এবাদত ও নৈকট্যের কাজ মনে করে। তার এ কাজ বাতিল হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। এভাবে কবরে বাতি জ্বালানো হারাম। এ বাতির আলো থেকে কেউ উপকৃত হোক বা না হোক- তাতে কিছুই আসে যায়না।
শাইখ কাসেম আল-হানাফী শারহু দুরারিল বিহার নামক গ্রন্থে বলেনঃ অধিকাংশ মূর্খ লোক যে সমস্ত মানত করে থাকে, তার ধরণ হচ্ছে, যেমন কারো কোন আত্মীয় হারিয়ে গেল কিংবা অসুস্থ হয়ে গেল অথবা অন্য কোন প্রয়োজন দেখা দিল, তখন সে কোন সৎ লোকের কবরের কাছে যায় এবং বলেঃ ইয়া সায়্যেদী! আল্লাহ তাআলা যদি আমার হারানো ব্যক্তিকে ফেরত দেন বা আমার রোগী যদি ভাল হয় অথবা আমার প্রয়োজন যদি পূর্ণ হয়, তাহলে তোমার জন্য এই পরিমাণ র্স্বণ অথবা রূপা অথবা এই পরিমাণ খাদ্য, পানীয়, মোমবাতি, তেল ইত্যাদি দান করবো। এ ধরণের মানত উম্মতে মুহাম্মাদীর সকল আলেমের ঐক্যমতে নিম্ন বর্ণিত কারণে বাতিলঃ
(১) এ মানত হচ্ছে সৃষ্টির জন্য। সৃষ্টির জন্য মানত করা জায়েয নেই। কেননা মানত হচ্ছে এক প্রকার এবাদত। আর এবাদত কোন সৃষ্টির জন্য হতে পারেনা।
(২) যার জন্য মানত করা হচ্ছে, সে যদি মৃত ব্যক্তি হয়ে থাকে তাহলে সে কারো উপকার করার ক্ষমতা রাখেনা।
(৩) মানতকারী ধারণা করে, যার সন্তুষ্টির জন্য মানত করা হচ্ছে, সে আল্লাহ ব্যতীতই অনেক কর্ম সম্পাদন করতে পারে। এ রকম বিশ্বাস করা কুফরী। শাইখ কাসেম আল-হানাফী আরো বলেনঃ তুমি যখন এটি বুঝতে সক্ষম হবে, তখন জানতে পারবে যে, কবর ও মাজারে দাফনকৃত অলীদের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যেসব টাকা-পয়সা, মোমবাতি, তেল এবং অন্যান্য বস্ত্ত প্রেরণ করা হয়, তা মুসলিমদের ঐক্যমতে সম্পূর্ণ হারাম।
ইবনু নুজাইম ‘আল-বাহরুর রায়িক’ গ্রন্থে এবং শাইখ মুরশিদী তার ‘তাযকিরাহ’ নামক গ্রন্থে এবং অন্যান্য আলেমগণ তাদের কিতাবসমূহে শাইখ কাসেম আল-হানাফীর উপরোক্ত কথা নকল করেছেন।
যারা অলীদের জন্য যবেহ ও মানত করাকে জায়েয মনে করে, তাদের জবাবে শাইখ সুনউল্লাহ আল-হালাবী আলহানাফী (রঃ) বলেনঃ যবেহ ও মানত যে কারো নামেই হোক, তা আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্যের জন্যে হওয়ার কারণে বাতিল। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
وَلَا تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ
‘‘যেসব জন্তুর উপর আল্লাহ্র নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করোনা; এ ভক্ষণ করা গুনাহ্’’। (সূরা আনআমঃ ১২১) আল্লাহ তাআলা সূরা আনআমের ১৬২ ও ১৬৩ নং আয়াতে আরও বলেনঃ
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ (162) لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
‘‘তুমি বলোঃ আমার নামায, আমার কোরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহ্রই জন্য। তার কোনো শরীক নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম আনুগত্যশীল। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য মানত করা তিনি ছাড়া অন্যের জন্য যবেহ করার মতই শির্ক।
সহীহ বুখারীতে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
«مَنْ نَذَرَ أَنْ يُطِيعَ اللَّهَ فَلْيُطِعْهُ، وَمَنْ نَذَرَ أَنْ يَعْصِيَهُ فَلا يَعْصِهِ»
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যের কাজে মানত করে, সে যেন তা পূরা করার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মান্নত করে সে যেন তাঁর নাফরমানী না করে’’। অর্থাৎ মানত যেন পূরণ না করে।[2]
ব্যাখ্যাঃ আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা হলেন উম্মুল মুমিনীন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রী। তিনি ছিলেন ইসলামের প্রথম খলীফা আবু বকর সিদ্দীক রাযিয়াল্লাহু আনহুর কন্যা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীছ ও সুন্নাত সম্পর্কে তিনি মহিলাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ছিলেন। সাত বছর মতান্তরে ছয় বছর বয়সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। নয় বছর বয়সে তিনি তাঁর সাথে বাসর করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পবিত্র স্ত্রীদের মধ্যে খাদীজার পরে তিনি ছিলেন সর্বাধিক উত্তম। খাদীজা রাযিয়াল্লাহু আনহার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে উত্তম কথা হচ্ছে, না খাদীজাকে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার চেয়ে উত্তম বলা হবে এবং না আয়েশাকে খাদীজা রাযিয়াল্লাহু আনহার চেয়ে উত্তম বলা হবে।
সঠিক কথা হচ্ছে, অহী নাযিল হওয়ার প্রথম পর্যায়ে খাদীজা রাযিয়াল্লাহু আনহার এমন অনেক ফযীলত ছিল, যা আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার ছিলনা। খাদীজা রাযিয়াল্লাহু আনহা সর্বপ্রথম ঈমান আনয়ন করেছেন এবং ইসলামের প্রথম দিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য ও সহযোগিতা করেছেন। সহীহ বুখারী এবং অন্যান্য কিতাবে এ বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ঈমান, আমল ও ইসলামের সহযোগিতার উপর বহাল ছিলেন। তিনি হিজরতের পূর্বে ইন্তেকাল করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীছ এবং শরীয়তের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার এমন জ্ঞান ছিল, যা খাদীজা রাযিয়াল্লাহু আনহার ছিলনা। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সমস্ত অবস্থা, আহকামের আয়াতসমূহ নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট এবং হালাল ও হারামের বিবরণ সম্পর্কে সর্বাধিক অবগত ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর মৃত্যুর পর সাহাবীগণ যখন কোনো হাদীছ বা মাস্আলা সম্পর্কে সমস্যায় পড়তেন, তখন তারা আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার নিকট গমণ করতেন। তিনি ৫৭ হিজরী সালে ইন্তেকাল করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণীঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করার মানত করবে, সে যেন তার মানত পূর্ণ করে। কেননা সে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মানত করেছে। সুতরাং তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। কেননা এটি এবাদতে পরিণত হয়েছে।
আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, কোন ব্যক্তি যদি বিশেষ কোন উদ্দেশ্য পূর্ণ হওয়ার শর্তে এবাদত ও আনুগত্যের মানত করে, যেমন বললঃ আমার রোগী ভাল হলে আমি এত টাকা দান করবো কিংবা অনুরূপ কথা বলল, তখন যে উদ্দেশ্য পূরণ হওয়ার শর্তে মানত করেছিল তা হাসিল হওয়ার পর মানত পূরণ করা জরুরী। তবে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এই মাসআলায় দ্বিমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেনঃ কেবল সেসব এবাদতের মানত করলেই পূরণ করা জরুরী হবে, যা মূলত ইসলামী শরীয়তে ওয়াজিব। যেমন রোযা এবং অন্যান্য এবাদত। যেসব কাজ ইসলামী শরীয়তে ওয়াজিব নয়, তা করার মানত করলে তা পূরণ করা জরুরী নয়।
যে ব্যক্তি আল্লাহর নাফরমানী করার মানত করল, সে যেন তার মানত পূর্ণ না করে। ইমাম তাহাবী (রঃ) আরও বাড়িয়ে বলেনঃ সে যেন তার শপথের (মানতের) কাফফারা প্রদান করে।
আলেমগণ একমত যে, পাপকাজের মানত পূর্ণ করা জায়েয নয়। তাতে কাফফারা ওয়াজিব হবে কি হবেনা, তাতে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) থেকে দু’ধরণের মত পাওয়া যায়। তাঁর একমতে পাপকাজের মানত করলেও তাতে কাফফারা ওয়াজিব। এটিই তার মাজহাব। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ এবং আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে এটিই বর্ণিত হয়েছে। আর এটিই হচ্ছে ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এবং তাঁর শিষ্যদের মত। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ
১) নেক কাজের মানত পূরণ করা ওয়াজিব।
২) মানত যেহেতু আল্লাহর এবাদত হিসেবে প্রমাণিত, তাই আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্য মানত করা শির্ক।
৩) আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত পূরণ করা জায়েয নয়।
[2] - নামায, রোযা, সাদকাহ্ ইত্যাদি সৎ আমল করার মানত করলে তা পূর্ণ করা জরুরী। আর পাপ কাজের মানত যেমন কবরে বাতি জ্বালানো বা কোন মাজারে পশু যবাই করার মানত করলে তা থেকে বিরত থাকা জরুরী।