ব্যাখ্যাঃ বিপ্লবী সংস্কারক মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রঃ)এর তাওহীদী আন্দোলনের পূর্বে নজদ এবং অন্যান্য অঞ্চলের লোকেরা যে সমস্ত শির্কী কাজ-কর্মে লিপ্ত ছিল লেখক এখানে ঐ সমস্ত শির্কী কাজ-কর্মের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। নজদের লোকেরা তখন তাদের রোগীদের আরোগ্য লাভের জন্য জিনের জন্য পশু যবেহ করত। জিনদের জন্য পশু যবেহ করার জন্য তারা তাদের ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট একটি স্থান নির্ধারণ করে রাখত। শাইখের দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা শির্কের মূলোৎপাটন করেছেন। দ্বীনের এই যুগশ্রেষ্ঠ দাঈ এককভাবে আল্লাহর এবাদতের প্রতি যে দাওয়াত দিয়েছেন, তার বরকতে আরব ভূখন্ড থেকে শির্ক, বিদআত ও আকীদার বিভ্রান্তির অবসান ঘটেছে। এ জন্য আমরা আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং তার কাছেই কৃতজ্ঞতা পেশ করছি।
আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেছেনঃ
لَا تَقُمْ فِيهِ أَبَدًا لَمَسْجِدٌ أُسِّسَ عَلَى التَّقْوَى مِنْ أَوَّلِ يَوْمٍ أَحَقُّ أَنْ تَقُومَ فِيهِ فِيهِ رِجَالٌ يُحِبُّونَ أَنْ يَتَطَهَّرُوا وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُطَّهِّرِينَ
‘‘তুমি কখনো সেখানে দাঁড়াবেনা, প্রথম দিন থেকেই যে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে তাকওয়ার উপর, সেটিই তোমার দাঁড়াবার যোগ্য স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতা অর্জনকে ভালবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন’’। (সূরা তাওবাঃ ১০৮)
ব্যাখ্যাঃ অর্থাৎ মসজিদে যিরারে তুমি কখনো নামাযের জন্য দাঁড়াবেনা। এ আয়াতের পূর্বের আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা মুনাফেকদের মসজিদ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ وَإِرْصَادًا لِمَنْ حَارَبَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ مِنْ قَبْلُ وَلَيَحْلِفُنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا الْحُسْنَى وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
‘‘যারা সত্যের দাওয়াতকে ক্ষতিগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে, কুফরী করার জন্য, মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে এবং ঐ বক্তির জন্য গোপন ঘাটি বানাবার উদ্দেশ্যে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে, যে ইতিপূর্বে আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, তারা অবশ্যই কসম খেয়ে বলবে, ভালো ছাড়া আর কোন ইচ্ছাই আমাদের ছিল না। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা একেবারেই মিথ্যেবাদী’’। (সূরা তাওবাঃ ১০৭) অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ যে মসজিদে প্রথম দিন থেকে তাকওয়ার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল সেই মসজিদটিতে এবাদতের জন্য দাঁড়ানোই তোমার পক্ষে অধিকতর সমীচীন। সেখানে এমন লোক আছে যারা পাক-পবিত্র থাকা পছন্দ করে এবং আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা অর্জনকারীদেরকে ভালবাসেন। এটি হচ্ছে কুবা মসজিদ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা হতে হিজরত করে মদীনায় পদার্পন করেই তাকওয়ার ভিত্তির উপর এ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন।
তাবুক যুদ্ধে বের হওয়ার পূর্বে মুনাফেকরা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য বাহ্যিকভাবে মসজিদে যিরার নির্মাণ করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাবুক যুদ্ধে বের হওয়ার প্রস্ত্ততি গ্রহণ করলেন, তখন মুনাফেকদের একটি দল তাঁর কাছে প্রস্তাব করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! বৃষ্টি ও শীতের রাতে আমাদের দূর্বল ও বৃদ্ধদের পক্ষে আপনার মসজিদে এসে নামায আদায় করা কষ্টকর। তাই আমরা তাদের জন্য আমাদের মহল্লায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছি। আপনি গিয়ে সেখানে নামায পড়ে মসজিদটি উদ্ভোধন করে দিলেই সেটির বৈধতা প্রমাণিত হয়ে যাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনঃ আমি এখন তাবুক যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিয়ে ব্যস্ত আছি। আল্লাহর ইচ্ছায় যখন ফেরত আসব, তখন যাবো। এভাবে মূলতঃ তাদের সাথে একটা মৌখিক অঙ্গীকার হয়ে গেল।
তাবুকের পথে রওয়ানা হওয়ার পর এ মুনাফেকরা উক্ত মসজিদে নিজেদের জোট গড়ে তুলতে এবং ষড়যন্ত্র পাকাতে লাগলো।
এমনকি তারা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল, রোমকদের হাতে মুসলিমদের মুলোৎপাটনের সাথে সাথেই আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের মাথায় রাজ মুকুট পরিয়ে দিবে। কিন্তু তাবুকে যা ঘটলো তাতে তাদের সে আশার গুড়ে বালি পড়লো। ফেরার পথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনার নিকটবর্তী যী আওয়ান নামক স্থানে পৌছলেন এবং মদীনায় প্রবেশ করতে মাত্র একদিনের রাস্তা কিংবা তার চেয়েও কম রাস্তা বাকী থাকল, তখন মসজিদটির আসল খবরসহ অহী আগমণ করল। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে মসজিদটি নির্মাণের আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানিয়ে দিলেন। তিনি তখনই কয়েকজন লোককে মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন। তাদেরকে দায়িত্ব দিলেন, তিনি মদীনায় ফেরত আসার আগেই যেন তারা যিরার মসজিদটি ভেংগে ধুলিসাৎ করে দেন।
শিরোনামের সাথে সূরা তাওবার ১০৭ নং আয়াতের সামঞ্জস্য এভাবে করা হয়েছে যে, যেসব স্থান আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করার জন্য এবং অন্যান্য শির্কী কাজ-কর্মের জন্য প্রস্ত্তত করা হয়েছে, সেখানে আল্লাহর জন্য পশু যবেহ করা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। তেমনি মুনাফেকদের যিরার মসজিদটি যেহেতু আল্লাহর নাফরমানী এবং কুফরীর আড্ডা হিসাবে প্রস্ত্তত করা হয়েছে, তাই সেটি আল্লাহর গযবের স্থানে পরিণত হয়েছে। সুতরাং তাতে নামায পড়া বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে সেখানে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। যদিও আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে নির্দিষ্ট একটি স্থানে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু নিষেধাজ্ঞার হুকুম আম তথা ব্যাপক। সে হিসাবে মাজার, দর্গা ইত্যাদি যেসব স্থান যিরার মসজিদের মত পাপ কাজের জন্য প্রস্ত্তত করা হবে, সেগুলোর হুকুম যিরার মসজিদের অনুরূপ। কেননা পাপকাজ সেই স্থানকে অপবিত্র বানিয়ে ফেলেছে এবং তাতে আল্লাহর এবাদত করা হতেও বারণ করা হয়েছে।
আল্লাহর এবাদতের জন্য তৈরী করা মসজিদগুলো এর বিপরীত। মসজিদগুলো পৃথিবীর পবিত্রতম স্থান। কেননা সেগুলো নির্মাণ করা হয়েছে আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য, তাতে নামায, জুমআ ও জামাআত কায়েম করার জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللَّهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآَصَالِ رِجَالٌ لَا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ يَخَافُونَ يَوْمًا تَتَقَلَّبُ فِيهِ الْقُلُوبُ وَالْأَبْصَارُ
‘‘আল্লাহর চেরাগ-আলো ঐসব ঘরে পাওয়া যায়, যেগুলোকে উন্নীত করা ও যেগুলোর মধ্যে নিজের নাম স্মরণ করার হুকুম আল্লাহ দিয়েছেন। সেগুলোতে এমনসব লোক সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে, যারা ব্যবসায় ও বেচাকেনার ব্যস্ততার মধ্যেও আল্লাহর স্মরণ করা, নামায কায়েম করা ও যাকাত আদায় করা থেকে গাফিল হয়না ৷ তারা সেদিনকে ভয় করে যেদিন হৃদয় ও দৃষ্টি পরিবর্তন হয়ে যাবে’’। (সূরা নূরঃ ৩৬-৩৭)
সুতরাং এটি একটি সুন্দর ও সঠিক কিয়াস। অর্থাৎ মাজার ও শির্কের আস্তানাকে মসজিদে যিরারের উপর কিয়াস করা সঠিক। এ অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যা করার সময় এ ব্যাপারে আরো আলোচনা সামনে আসবে, ইনশা-আল্লাহ।
সাহাবী ছাবিত বিন যাহ্হাক রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
«نَذَرَ رَجُلٌ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَنْحَرَ إِبِلاً بِبُوَانَةَ فَأَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنِّى نَذَرْتُ أَنْ أَنْحَرَ إِبِلاً بِبُوَانَةَ فَقَالَ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم هَلْ كَانَ فِيهَا وَثَنٌ مِنْ أَوْثَانِ الْجَاهِلِيَّةِ يُعْبَدُ قَالُوا لاَ قَالَ هَلْ كَانَ فِيهَا عِيدٌ مِنْ أَعْيَادِهِمْ قَالُوا: لاَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم «أَوْفِ بِنَذْرِكَ فَإِنَّهُ لاَ وَفَاءَ لِنَذْرٍ فِى مَعْصِيَةِ اللَّهِ وَلاَ فِيمَا لاَ يَمْلِكُ ابْنُ آدَمَ»
‘‘এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর যামানায় বুওয়ানা নামক স্থানে একটি উট কোরবানী করার মানত করল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, সেখানে এমন কোনো মূর্তি ছিল কি, জাহেলী যুগে যার পূজা করা হতো? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, না। তিনি বললেন, সেখানে কি তাদের কোনো উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হতো? তারা বললেন, না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার মানত পূর্ণ করো’’। তিনি আরো বলেন, আল্লাহর নাফরমানী মূলক কাজে মানত পূর্ণ করা যাবেনা। আদম সন্তান যা করতে সক্ষম নয় তেমন মানতও পূরা করা আবশ্যক নয়’’।[1]
ব্যাখ্যাঃ হাদীছের বর্ণনাকারী প্রসিদ্ধ সাহাবী ছাবিত বিন যাহ্হাক বিন খলীফা আল-আশহারী। আবু কিলাবা এবং অন্যান্য রাবীগণ তাঁর থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তিনি ৬৪ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন।
বুওয়ানা মক্কার নিম্নভূমিতে ইয়ালামলামের নিকটবর্তী একটি স্থানের নাম। আবুস সাআদাত বলেনঃ এটি হচ্ছে ইয়াম্বু থেকে একটু দূরে অবস্থিত একটি স্থানের নাম।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ সেখানে এমন কোন মূর্তি ছিল কি, জাহেলী যুগে যার পূজা করা হত? এতে বুঝা গেল যে, যেখানে মূর্তি থাকবে, সেখানে মানত পূর্ণ করা নিষিদ্ধ। পরবর্তীতে যদি সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়, তাহলেও জায়েয নয়। শাইখুল ইসলাম আল্লামা মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রঃ) ২ নং মাসআলায় এ কথা বলেছেন। আর এখান থেকেই তিনি শিরোনাম রচনা করেছেন।
সেখানে কি মুশরিকদের কোন ঈদ, উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হত? শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ ঈদ ঐ সাধারণ অনুষ্ঠান ও সম্মেলনকে বলা হয়, যা স্বাভাবিক নিয়মেই নির্দিষ্ট একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। চাই সেটি বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হোক, সপ্তাহে একবার হোক অথবা মাসে একবার কিংবা অনুরূপ অন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়ে হোক। হাদীছে যে ঈদের কথা এসেছে, তা দ্বারা আইয়ামে জাহেলীয়াতের লোকদের সম্মেলন ও মেলাসমূহ উদ্দেশ্য। একাধিক দিন, সময় ও এবাদত ঈদ হিসাবে গণ্য। এগুলো হচ্ছেঃ
(১) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। দু’টি প্রতি বছরই একবার করে আগমণ করে।
(২) জুমআর দিন। এটি সপ্তাহে একবার আসে।
(৩) এমন দিনকেও ঈদ বলা হয়, যাতে লোকেরা একত্রিত হয়।
(৪) নির্দিষ্ট সময়ে যে আমলসমূহ করা হয়, তাও ঈদের অন্তর্ভূক্ত। চাই তা এবাদত হিসাবে করা হোক কিংবা দেশীয় ও সাধারণ রসম-রেওয়াজ হিসাবে করা হোক।
কখনও ঈদকে বিশেষ ও নির্দিষ্ট স্থানের সাথেই খাস করা হয়। আবার কখনো অনির্দিষ্ট হয়ে থাকে। উপরের সকল বস্ত্তই ঈদের সাথে সম্পৃক্ত। সময়ের সাথে যেই ঈদের সম্পর্ক, সে সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِينَ إِنَّ هَذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللَّهُ عِيدًا فَاغْتَسِلُوا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهُ طِيبٌ فَلَا يَضُرُّهُ أَنْ يَمَسَّ مِنْهُ»
‘‘হে মুসলিম সম্প্রদায়! এই জুমআর দিনকে আল্লাহ্ তাআলা তোমাদের জন্য ঈদ হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। সুতরাং যার কাছে সুঘ্রাণ কিংবা আতর জাতিয় বস্ত্ত রয়েছে, সে যেন তা থেকে শরীরে মাখায়’’। [2] সম্মেলন এবং আমলের সাথে যে ঈদের সম্পর্ক সে সম্পর্কে ইবনে আববাস রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ
«شَهِدْتُ الْعِيدَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَبِى بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ رضى الله عنهم فَكُلُّهُمْ كَانُوا يُصَلُّونَ قَبْلَ الْخُطْبَةِ»
‘‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বকর, উমার এবং উছমান রাযিয়াল্লাহু আনহুমের সাথে ঈদে শরীক ছিলাম। তারা সকলেই খুতবার আগে নামায আদায় করতেন’’।[3] স্থানের সাথে যে ঈদকে খাস করা হয়, তার উদাহরণ হচ্ছে যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«لاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا وَلاَ تَجْعَلُوا قَبْرِى عِيدًا وَصَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِى حَيْثُ كُنْتُمْ»
‘‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরে পরিণত করোনা অর্থাৎ কবরস্থানকে যেমন নামাযশুণ্য রাখা হয়, ঠিক তেমনি ঘরে নামায না পড়ে ঘরগুলোকে কবরস্থানের মত করোনা’’।[4] আর তোমরা আমার কবরকে ঈদে পরিণত করোনা। তোমরা আমার উপর দুরূদ পাঠ করো। কেননা তোমরা যেখানে থেকেই আমার উপর দুরূদ পাঠ করনা কেন, তা আমার কাছে পৌঁছে যায়।[5] কখনো আবার বিশেষ কোনো দিন এবং তাতে যেসব আমল করা হয় সেগুলোর সমষ্টিকে ঈদ বলা হয়। অধিকাংশ ঈদ এ রকমই হয়ে থাকে। এর উদাহরণ হচ্ছে, একদা আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহার ঘরে প্রবেশ করে দেখলেনঃ দু’টি আনসারী বালিকা বুআছ যুদ্ধে আনসারদের বীরত্ব গাথা গাইছে। আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু যখন বালিকা দু’টিকে ধমক দিলেন তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
«دعهما يا أبا بكر فإن لكل قوم عيدا»
‘‘হে আবু বকর! তুমি তাদেরকে গাইতে দাও। কেননা প্রত্যেক জাতিরই ঈদ রয়েছে’’।[6]
মুসলিম উম্মতের এসব মুশরিক কবর ও মাজারসমূহের নিকট অসংখ্য ঈদের প্রচলন করেছে এবং আল্লাহর পরিবর্তে সেগুলোর এবাদত করা হচ্ছে। কবরের নিকট এসব এবাদত ও অনুষ্ঠানকে তারা ঈদ হিসাবে নামকরণ করেছে। মিশরে সায়্যেদ বদবী এবং অন্যান্য অলীর জন্ম দিবস উপলক্ষে ঈদ উয্যাপন করা হয়। শুধু ঈদ অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমিত নয়; বরং তাতে শির্ক এবং ভয়াবহ পাপ কাজের চর্চা করা হয়।[7]
গ্রন্থকার এই অধ্যায়ে বর্ণিত ৬ নং মাসআলায় বলেছেনঃ জাহেলী যামানায় যেখানে ঈদ হত, সেখানে মানত পূর্ণ করা নিষিদ্ধ। এমনকি পরবর্তীতে সেখান থেকে মূর্তি সরিয়ে ফেলা হলেও নিষিদ্ধ।
ব্যাখ্যাকার বলেনঃ আমি বলছি, মুশরিকদের এবাদতের স্থানসমূহে মুসলিমদের এবাদতখানা নির্মাণ করা নিষিদ্ধ। কেননা তা আল্লাহ্ তাআলা কর্তৃক হারাম কাজ তথা শির্ক এবং অন্যান্য পাপ কাজের আড্ডায় পরিণত হয়। হাদীছে শুধু মানতের কথা বলা হলেও ঐসব আমলও নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত হবে, যা আল্লাহ্ তাআলার এবাদত হিসাবে গণ্য। তাই এ ক্ষেত্রে নযর বা অন্য কোনো আমলের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং যে সমস্ত অপবিত্র স্থানে আল্লাহ্ তাআলার ক্রোধ জাগ্রতকারী আমল করা হয়েছে, তাতে আল্লাহর এবাদত করা জায়েয নেই।
সুতরাং অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছটি শিরোনামের বিষয় অনুপাতেই হয়েছে। গ্রন্থকার এখানে বিশেষ করে যবেহ করাকেই উদ্দেশ্য করেন নি। বরং তিনি যবেহ করাকে শুধু উদাহরণ স্বরূপ পেশ করেছেন। অন্যথায় সকল প্রকার এবাদতই উদ্দেশ্য।
এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, মুশরিকদের এবাদতের স্থানে যদি মুসলিমদের মসজিদ বানানো নিষিদ্ধ হয়, তাহলে তায়েফে লাত নামক মূর্তির স্থানে মসজিদ নির্মাণ করা হল কিভাবে?
উত্তর হচ্ছে, এই দেশে যদি এ জায়গাটিকে এভাবে ছেড়ে দেয়া হত, তাহলে আশঙ্কা ছিল যে, মূর্খ লোকেরা এ দ্বারা ফিতনায় পড়তে পারে এবং এটিকে পুনরায় মূর্তিতে পরিণত করতে পারে। যেমন করা হয়েছিল ইসলাম আগমণের পূর্বে। অবস্থা যেহেতু এ রকমই, তাই বুঝা গেল মসজিদ নির্মাণ করা হলে লোকেরা সেখানে যেসব শির্কী কাজ করত, তা ভুলে যাবে এবং শির্কের নাম-নিশানা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এ কারণেই এখানের মূর্তির স্থলে মুসলিমদের মসজিদ বানানো হয়েছে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বাণী, তাহলে তোমার মানত পূরণ করোঃ কেননা সেখানে মানত পূর্ণ করার কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।[8]
আল্লাহর নাফরমানীমূলক কাজে মানত পূর্ণ করা যাবেনাঃ উক্ত হাদীছের এ অংশ প্রমাণ করে যে, শির্ক ও পাপ কাজের আস্তানায় আল্লাহর এবাদত করা যাবেনা এবং এ সমস্ত স্থানে মানত করা গুনাহ্র কাজ। কেউ তাতে মানত করলেও তা পূর্ণ করা জায়েয নয়।[9]
আদম সন্তান যা করতে সক্ষম নয় তেমন মানতও পূরা করা আবশ্যক নয়ঃ গ্রন্থকার শারহুল মাসাবীহে উল্লেখ করেছেন যে, কেউ যদি এমন নির্দিষ্ট বস্ত্ত মানত করে, যার সে মালিক নয়, যেমন বললঃ আমার রোগী ভাল হলে আমি অমুকের গোলামটি আযাদ করে দিব।[10] অথবা অনুরূপ কথা বলল। এতে মানত সংঘটিত হবেনা এবং তা পূর্ণ করা জরুরী নয়। কিন্তু নিজের যিম্মায় যদি কোনো জিনিষ আবশ্যক করে নেয়, যেমন বললঃ আমার রোগী ভাল হলে আমি আল্লাহর জন্য একটি গোলাম আযাদ করব। অথচ এ কথা বলার সময় সে কোন গোলাম বা গোলামের মূল্যের মালিক ছিলনা। আল্লাহ তাআলা যখন তার রোগী ভাল করবেন তখন তার যিম্মায় গোলাম আযাদ করা জরুরী হবে।
ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এই হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। হাদীছের সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক। ইমাম আবু দাউদের পূর্ণ নাম হচ্ছে সুলায়মান বিন আশআছ বিন ইসহাক বিন বশীর বিন শাদ্দাদ আল-আয্দী আল-সিজিসতানী। তিনি ছিলেন ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের ছাত্র। তিনি সুনান, মারাসিল এবং অন্যান্য গ্রন্থ রচনা করেছেন। তিনি ছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য ইমাম, হাদীছের হাফেয এবং বড় মাপের আলেম। ২৭৫ হিজরী সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। আল্লাহ তাআলা তাকে স্বীয় রহমত দ্বারা আচ্ছাদিত করুন। এ অধ্যায় থেকে যেসব বিষয় জানা যায় তা নিম্নরূপঃ
১) সূরা তাওবার ১০৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা জানা গেল। যে সমস্ত স্থানে পাপ কাজ হয়, সেখানে আল্লাহর এবাদতের জন্য দাঁড়ানো যাবেনা।
২) যে যমীনে শির্ক এবং অন্যান্য পাপের কাজ করা হয় সে যমীনে পাপ কাজের প্রভাব পড়তে পারে। তেমনি যে যমীনে আল্লাহর আনুগত্যের কাজ করা হয় তাতেও ভাল কাজের প্রভাব পড়ে।
৩) দুর্বোধ্যতা দূর করার জন্য কঠিন বিষয়কে সহজ বিষয়ের দিকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।
৪) প্রয়োজন বোধে মুফতী প্রশ্নকারীর কাছে বিস্তারিত বিবরণ চাইতে পারেন।
৫) মানতের মাধ্যমে কোনো স্থানকে খাস করা কোন দোষের বিষয় নয়, যদি তাতে শরীয়তের কোনো বাধা না থাকে।
৬) জাহেলী যুগের মূর্তি থাকলে তা দূর করার পরও সেখানে মানত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
৭) কোনো স্থানে জাহেলী যুগের উৎসব বা মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকলে, তা বন্ধ করার পরও সেখানে মুসলিমদের মানত করা নিষিদ্ধ।
৮) এসব স্থানের মানত পূরণ করা জায়েজ নয়। কেননা এটা পাপ কাজের মানত।
৯) মুশরিকদের উৎসব বা মেলার সাদৃশ্য করা থেকে সতর্ক থাকতে হবে। যদিও তাদের অনুসরণ করার উদ্দেশ্য না থাকে।
১০) পাপের কাজে কোনো মানত করা যাবেনা।
১১) যে জিনিষ আদম সন্তানের মালিকানাধীন নয়, তা মানত করা সঠিক নয়।
গ্রন্থকার বলেনঃ আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে যিরার মসজিদে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। মুনাফিকরা এটি তৈরী করেছিল। এটি তৈরীর পিছনে উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতি করা, মুমিনদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা, একে কুফরী এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারীদের জন্য একটি ঘাঁটি স্বরূপ ব্যবহার করা। সুতরাং সেটি তৈরী হয়েছিল খিয়ানতের উপর এবং ইসলাম ও মুসলমানদের বিরোধীতার উপর। মসজিদটি যারা নির্মাণ করেছিল, তাদের উদ্দেশ্য ছিল যেহেতু এটিই, তাই তাতে তাদের সাথে যোগ দিয়ে নামায পড়া জায়েয নেই। কেননা তাতে নামায পড়লে তাদের মসজিদের স্বীকৃতি পেয়ে যাবে এবং তাদের দল ভারী করা হবে ও অন্যরাও তাতে নামায পড়ার উৎসাহ পাবে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী এবং মুমিনদেরকে যিরার মসজিদে নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন।
সুতরাং শিরোনামের সাথে আয়াতের সম্পর্ক খুবই স্পষ্ট। আল্লাহ তাআলা তাঁর নবী ও মুমিনদেরকে যিরার মসজিদে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন। এটি জানা বিষয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুমিনগণ যিরার মসজিদে নামায পড়লেও তা হবে একমাত্র আল্লাহর জন্য, তিনি ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। তা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদেরকে সেই মসজিদে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। অথচ তারা ছিলেন মুখলিস, ইসলামের কোন ক্ষতি করার নিয়ত ছিলনা, মুসলমানদের দলে ফাটল ধরানো এবং মানুষকে আল্লাহর দ্বীন থেকে হটানোও তাদের উদ্দেশ্য ছিলনা। সুতরাং মুনাফেকদের সাথে সাদৃশ্য হয়ে যাওয়ার এবং বাহ্যিকভাবে তাদের সাথে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা থাকার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেখানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
এই একই অবস্থা বিদ্যমান ঐ ব্যক্তির কাজের মধ্যে, যে ব্যক্তি এমন স্থানে আল্লাহর জন্য পশু যবেহ করে, যেখানে আল্লাহ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করা হয়। কেননা সেখানে আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু যবেহকারী মুখলিস হলেও সে তার কর্মের মাধ্যমে সেই স্থানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহবান জানায়। যদিও তার উদ্দেশ্য সেটি না হয়।
[1] - সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ মানত পূর্ণ করার আদেশ।
[2] - মুআত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায়ঃ মিসওয়াকের ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আলবানী (রঃ) এই হাদীছকে সিলসিলায়ে সহীহায় উল্লেখ করেছেন। হাদীছ নং- ১৩৯৮।
[3] - সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ঈদের নামাযের পর খুতবা দেয়া।
[4] - গোরস্থানে নামায পড়া নিষেধ। হাদীছে তাতে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সাথে অত্র হাদীছে ঘরে নামায আদায় করার উৎসাহ দেয়া হয়েছে। কবরস্থানের মত ঘরকে নামাযহীন রাখা ঠিক নয়। তবে এখানে নফল নামায উদ্দেশ্য। ফরয নামায মসজিদেই পড়তে হবে।
[5] - সুনানে নাসাঈ, অধ্যায়ঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর দুরূদ পাঠ করা। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ শাইখের তাহকীকসহ মিশকাত, হাদীছ নং- ৯২৬।
[6] - সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ মুসলিমদের ঈদের সুন্নাত।
[7] - আমাদের পাক, ভারত ও বাংলাদেশেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর জন্ম দিবস উপলক্ষে এবং পীর মাশায়েখের জন্ম দিবসে মীলাদ অনুষ্ঠান নামে যে সমস্ত অনুষ্ঠান ও কার্যকলাপ করা হয়, তারও কোন শরঈ ভিত্তি নেই। জাহেলী যুগের মুশরিকদের ঈদগুলোতে যেমন শির্কের চর্চা হত, বর্তমান সময়ে অলীদের কবরের পাশে অনুষ্ঠিত উরস ও মীলাদ অনুষ্ঠানগুলোতেও, অনুরূপ শির্ক ও বিভিন্ন প্রকার পাপাচার সংঘটিত হয়ে থাকে।
[8] - এতে দলীল পাওয়া যায় যে, যে সমস্ত জায়গায় মুশরিকরা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের জন্য পশু যবেহ করে, তাতে অর্থাৎ তাদের উৎসব ও এবাদতের স্থানে আল্লাহর জন্য পশু যবেহ করা পাপের কাজ। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, বুওয়ানা নামক স্থানটিতে কোন মূর্তি বা জাহেলীয়াতের লোকদের কোন ঈদ বা মেলা ছিলনা, তখনই তিনি লোকটিকে সেখানে উট যবেহ করার অনুমতি দিয়েছেন। লোকটি যদি বলত, সেখানে মূর্তি বা জাহেলীয়াতের অনুষ্ঠান ছিল, তাহলে তিনি সেখানে উট যবেহ করার অনুমতি দিতেন না।
[9] - আলেমদের ঐক্যমতে পাপের কাজে মানত করলে তা পূর্ণ করা হারাম। তবে তাতে কাফফারা ওয়াজিব হবে কি না, এ ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ)এর মতে পাপ কাজের মানত করলে তাতে কসমের কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। তা হচ্ছে, দশজন মিসকীনকে খাদ্য দেয়া অথবা তাদেরকে কাপড় দান করা অথবা একটি গোলাম আযাদ করা অথবা তিন দিন রোযা রাখা। এটিই ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এবং তার অনুসারীদের মত। তারা আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছ দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন। আয়েশা (রাঃ) হতে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«لاَ نَذْرَ فِى مَعْصِيَةٍ وَكَفَّارَتُهُ كَفَّارَةُ يَمِينٍ»
‘‘পাপের কাজে কোনো মানত নেই। আর এতে কসমের কাফ্ফারা আবশ্যক’’। ইমাম আহমাদ ও সুনান গ্রন্থকারগণ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।
অন্য একদল আলেমের মতে পাপ কাজের মানত করলে তা পূর্ণ করা যেমন জরুরী নয়, তেমনি তাতে কোন কাফফারাও নেই। তারা এই অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছকে দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। তাতে কাফ্ফারার কথা উল্লেখ নেই।
তাদের উত্তরে বলা যায় যে, আয়েশা (রাঃ)এর হাদীছে কাফ্ফারার কথা এসেছে। সুতরাং কোন হাদীছে কাফ্ফারার কথা উল্লেখ না থাকা তা ওয়াজিব না হওয়ার প্রমাণ বহন করে না। অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছটি হচ্ছে একটি আম হাদীছ। আর আয়েশা (রাঃ)এর হাদীছ হচ্ছে খাস। খাস কখনো আমের বিরোধী হয়না। বরং আম হাদীছকে খাস হাদীছের সাথে মিলিয়ে বুঝতে হবে।
[10]- যেহেতু অন্যের গোলাম মুক্ত করা তার অধীকারের বাইরে, তাই এভাবে মানত করলে তা সংঘটিত হবে না। ফলে তা পূর্ণ করাও জরুরী নয়।