আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
‘‘তুমি বলো, আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ সবই আল্লাহ রাববুল আলামীনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। তার কোনো শরীক নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম আনুগত্যশীল’’। (আনআমঃ ১৬২-১৬৩)
ব্যাখ্যাঃ আল্লামা হাফেয ইমাম ইবনে কাছীর (রঃ) বলেনঃ উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আদেশ দিচ্ছেন, যেসব মুশরিক আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের এবাদত করে এবং আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের নামে পশু যবাই করে, তিনি যেন তাদেরকে জানিয়ে দেন যে, তিনি কেবল আল্লাহর জন্যই ইখলাসের সাথে স্বীয় নামায আদায় ও কুরবানী করেন। অপর পক্ষে মুশরিকরা মূর্তি পূজা করে, মূর্তির জন্য যবেহ করে। সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে মুশরিকদের বিপরীত করার আদেশ দিয়েছেন এবং মুশরিকদের শির্ক ও বিভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকার আদেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে আরো আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি যেন খাঁটি নিয়তে এবং ইখলাসের সাথে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করেন।
তাওহীদ ও রেসালাতের সাক্ষ্য দেয়ার পর পাঁচ ওয়াক্ত নামায হচ্ছে ইসলামের সর্ববৃহৎ ফরয এবাদত।
এখানে সালাত দ্বারা ফরয, নফল উভয় প্রকার নামাযই উদ্দেশ্য। সকল নামাযই এবাদতের মধ্যে গণ্য। নামাযের মধ্যে উভয় প্রকার দুআরই সমাহার ঘটেছে। দুআউল মাসআলা এবং দুআউল ইবাদাহ। যে দুআর মধ্যে চাওয়া ও প্রার্থনা থাকে উহাকে দুআউল মাসআলা বলা হয়। আর যে দুআর মধ্যে আল্লাহর প্রশংসা, গুণাগুণ, তাসবীহ, রুকু, সিজদাহ এবং অন্যান্য আরকান ও ওয়াজিব থাকে, তাকে দুআউল ইবাদাহ বলা হয়। এ জন্যই সালাতকে সালাত হিসাবে নাম রাখা হয়েছে। কেননা এতে উভয় প্রকার দুআই রয়েছে। দুআকে আভিধানিক ও পারিভাষিক অর্থে সালাত বলা হয়। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া ও তাঁর ছাত্র ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) সালাত ও দুআর অর্থ এটিই উল্লেখ করেছেন।
ইমাম ছাওরী সুদ্দীর সনদে সাঈদ বিন যুবাইর রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, نسكي অর্থ হচ্ছে আমার কুরবানী। ইমাম যাহ্হাক তাই বলেছেন।
আমার বেঁচে থাকা ও আমার মৃত্যু বরণ করা আল্লাহর জন্যই। অর্থাৎ জীবিত থাকা কালে আমি যে সৎ আমল করি এবং যে ঈমান ও আমল নিয়ে আমি মৃত্যু বরণ করবো, তা সবই আল্লাহ্ রাববুল আলামীনের জন্য। খালেসভাবে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই সম্পাদন করি। তাতে তাঁর কোনো শরীক নেই। আমাকে এ আদেশই করা হয়েছে। আর আমিই সর্বপ্রথম মুসলিম। অর্থাৎ এই উম্মতের সর্বপ্রথম মুসলিম হলাম আমি। এটিই হচ্ছে মুফাসসিরীনে কেরামদের কথা।
মোটকথা, উপরের আয়াতটি প্রমাণ করে যে, বান্দার প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল কথা ও কাজের কোনো অংশই আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা বৈধ নয়। সে যে-ই হোক না কেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এবাদতের কোন অংশ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের জন্য নির্ধারণ করল, সে আল্লাহ্ তাআলা কর্তৃক নিষিদ্ধ শির্কেই লিপ্ত হল। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَأَنْ أَقِمْ وَجْهَكَ لِلدِّينِ حَنِيفًا وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
‘‘তুমি একনিষ্ঠ হয়ে নিজেকে ঠিকভাবে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখো এবং মুশরেকদের অন্তর্ভুক্ত হয়োনা। (সূরা ইউনূসঃ ১০৫) সম্পূর্ণ কুরআনেই এবাদতের ক্ষেত্রে এ তাওহীদকে সাব্যস্ত করা হয়েছে এবং তাতে তাওহীদের পূর্ণ বিবরণ পেশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়; শির্ককে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে এবং শির্কের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা আরো এরশাদ করেছেনঃ
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
‘‘তুমি তোমার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ো এবং কোরবানী করো’’। (সূরা কাউছারঃ ২)
ব্যাখ্যাঃ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা তাঁর নবীকে দুই প্রকার এবাদত করার হুকুম করেছেন। এবাদত দু’টির একটি হচ্ছে নামায আর অন্যটি হচ্ছে কুরবানী। এই দু’টি এমন এবাদত, যা বান্দাকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছিয়ে দেয়, বান্দাকে বিনয়ী করে, আল্লাহর দিকে মুখাপেক্ষী করে, আল্লাহ্ সম্পর্কে ভাল ধারণা করার প্রতি উৎসাহিত করে, বান্দার ইয়াকীনকে মজবুত করে এবং আল্লাহর ওয়াদা বাস্তবায়নের আশ্বাসে বান্দার অন্তর প্রশান্তি লাভ করে। অহংকারী এবং আল্লাহর দ্বীন প্রত্যাখ্যানকারী ও তা থেকে বিমুখরা এর বিপরীত। এরা আল্লাহ্ রাববুল আলামীনের জন্য নামায আদায়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনা এবং দারিদ্রের ভয়ে তারা আল্লাহর জন্য কুরবানী করেনা। এ জন্যই আল্লাহ্ তাআলা উভয় প্রকার এবাদতকে উপরোক্ত আয়াতে একসাথে উল্লেখ করেছেন। সূরা মায়েদার ৩ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ
‘‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস, আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ কৃত পশু, যা কণ্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উঁচুস্থান থেকে পড়ে গিয়ে মারা যায়, যা শিং-এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ্ করেছ, তা হালাল। আর যে জন্তু বেদীমূলে যবেহ্ করা হয়েছে তাও তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে। এ ছাড়া জুয়ার তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য নির্ণয় করাও তোমাদের জন্য জায়েয নয়।
আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি বিষয়ে আমাকে অবহিত করেছেনঃ
«لَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَيْهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ»
‘‘যে ব্যক্তি গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করে তার উপর আল্লাহর লা’নত। যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। যে ব্যক্তি কোনো পাপাচারী কিংবা বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নত। যে ব্যক্তি যমীনের সীমানা পরিবর্তন করে, তার উপর আল্লাহর লা’নত’’।[1]
ব্যাখ্যাঃ আলী রাযিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লমের চাচাতো ভাই। তিনি হলেন ইমাম আলী বিন আবু তালেব আবুল হাসান আল-হাশেমী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কন্যা ফাতেমাকে তাঁর নিকট বিবাহ দেন। তিনি ছিলেন সর্বাগ্রে ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। তিনি বদরের যুদ্ধ ও বাইআতুর রিযওয়ানে শরীক ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তিনি তাদের অন্যতম। খোলাফায়ে রাশেদীনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। তাঁর রয়েছে সুপ্রসিদ্ধ অসংখ্য ফযীলত, যা সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। ৪০ হিজরীর রামাযান মাসে খারেজী আব্দুর রাহমান বিন মুলযিম তাঁকে হত্যা করে।
আবুস সা’দাত (রঃ) বলেনঃ লানত শব্দের অর্থ হচ্ছে আল্লাহর রহমত থেকে বিতাড়িত করা এবং দূরে সড়িয়ে দেয়া।
যে ব্যক্তি আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের জন্য পশু যবেহ করল, তার উপর আল্লাহর লা’নতঃ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমীয়া (রঃ) বলেনঃ আল্লাহর বাণীঃ ‘‘যেসব জন্তু আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের নামে যবেহ করা হয়’’, -এর বাহ্যিক অর্থ হচ্ছে, যেসব জন্তু আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের জন্য যবেহ করা হয়। যেমন যবেহকারী বললঃ এই কুরবানী অমুক ব্যক্তি বা বস্ত্তর জন্য। উদ্দেশ্য যদি তাই হয় অর্থাৎ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যের সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভের জন্য পশুটি যবেহ করা হয় তাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হোক বা না হোক কিছু আসে যায়না। এই যবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ হওয়া ঐ পশুর মাংস খাওয়ার চেয়ে অধিক ভয়াবহ, যা শুধু মাংস খাওয়ার জন্য যবেহ করা হয় এবং যবেহ করার সময় বলা হয়, باسم المسيح ‘ঈসার নামে যবেহ করছি’ অথবা অনুরূপ অন্য কোনো বাক্য উচ্চারণ করা হয়। আমরা যে পশুকে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের নিয়তে যবেহ করি, তা ঐ পশুর চেয়ে অধিক পবিত্র, যাকে শুধু মাংস খাওয়ার জন্য আমরা যবেহ করি এবং যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ্ বলি। ঈসা (আঃ)এর নামে কিংবা জুহরা বা অন্য কোনো নামে যবেহ করা হলে যদি তা হারাম হয়, তাহলে যেটি ঈসা (আঃ)এর জন্য বা জুহরার জন্য যবেহ করা হয় কিংবা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের নিয়তে যবেহ করা হয় তা হারাম হওয়ার অধিক উপযোগী। কেননা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের এবাদত করার কুফরী আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের সাহায্য গ্রহণ করার কুফরীর চেয়ে অধিক ভয়াবহ। এ জন্যই যখন কেউ আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নৈকট্য লাভের জন্য পশু যবেহ করে, তখন সেই পশুর মাংস খাওয়া হারাম হয়। যদিও তা বিসমিল্লাহ বলে যবেহ করা হয়। এই উম্মতের কিছু কিছু মুনাফেক লোক তারকার[2] উদ্দেশ্যে পশু যবেহ করে, সুগন্ধযুক্ত কাঠ জ্বালায় এবং আরো অনেক কান্ড করে থাকে। এ সমস্ত লোক মুরতাদ এবং ইসলামের বাইরে। কোনো অবস্থাতেই এদের যবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়া হালাল নয়। এমনি জিনদের জন্য যবেহকৃত পশুর মাংস খাওয়াও হালাল নয়।
যে ব্যক্তি স্বীয় পিতা-মাতাকে গালি দেয়, তার উপরও আল্লাহর লা’নতঃ পিতার পিতা এবং মাতার পিতাও পিতা-মাতার ক্ষেত্রেও একই কথা। সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ: أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ. قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ؟ قَالَ: يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ، فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُ»
কবীরা গুনাহ্সমূহের মধ্যে অন্যতম বড় কবীরা গুনাহ্ হল কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তার পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা। জিজ্ঞাসা করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসুল! কিভাবে একজন লোক তার পিতা-মাতাকে লা’নত করতে পারে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয়। সেও প্রথমোক্ত ব্যক্তির পিতাকে গালি দেয়। এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাকে গালি দেয়, ফলে অপর ব্যক্তিও তার মাকে গালি দেয়।[3]
যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে আশ্রয় দেয় তার উপর আল্লাহর লা’নতঃ محدثا মুহ্দাসান শব্দের দালের উপর যবর দিয়ে পড়া হয়েছে। এর অর্থ হবে বিদআত। অর্থাৎ যে বক্তি কোনো বিদআতকে আশ্রয় দিলো এবং বিদআতকে নিজের কাছে স্থান দিল, তার উপর আল্লাহর লা’নত।
আবুস্ সাদাত (রঃ) বলেনঃ مُحْدَثاً শব্দটির দালের উপর যবর বা যের উভয় হরকত দিয়েই পড়া জায়েয। যের দিয়ে পড়া হলে অর্থ হবে সাধারণ অপরাধী। সে হিসাবে অর্থ হবে যে ব্যক্তি অপরাধীকে আশ্রয় দিল, তাকে তার শত্রু থেকে আড়াল করে রাখল এবং অপরাধী থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। যবর দিয়ে পড়া হলে অর্থ হবে বিদআতী কাজ-কর্ম। বিদআতকে আশ্রয় দেয়ার অর্থ হচ্ছে, বিদআতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং বিদআতকে সাহায্য করা। যখন কোন মুসলিম বিদআতকে সমর্থন করবে, বিদআতের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে, বিদআতীকে যত্ম করবে এবং তার কোন প্রতিবাদ করবেনা, তখন সে বিদআত ও বিদআতীকে আশ্রয় দিয়েছে বলে গণ্য হবে।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রঃ) বলেনঃ এ কবীরা গুনাহ্টি অর্থাৎ বিদআতের প্রবর্তন ও প্রচলন করার অপরাধটির অনেক স্তর রয়েছে। বিদআতটি যত বড় হবে, তার গুনাহ্ও তত ভয়াবহ হবে।
যে ব্যক্তি যমীনের منار সীমানা চিহ্ন বা নিশানা পরিবর্তন করে তার উপর আল্লাহর লা’নতঃ منار শব্দটির মীম বর্ণের উপর যবর দিয়ে পড়তে হবে। যমীনের সীমানা নির্ধারণ করার জন্য যে আলামত বা চিহ্ন স্থাপন করা হয়, তার নাম মানার। কোনো যমীনের মধ্যে অংশীদারদের অংশ নির্ধারণ করার পর একজনের অংশ অন্যজনের অংশ থেকে আলাদা করার জন্য নিশানা স্থাপন করা হয়, কিতাবুন নিহায়াতে মানারের অর্থ এটিই উল্লেখ করা হয়েছে।
ব্যাখ্যাকার বলেনঃ আমি বলছি, যমীনের নিশানা পরিবর্তন করা বা মিটিয়ে ফেলার ধরণ হচ্ছে, কোনো শরীকের অংশ অন্য শরীকের অংশ থেকে পার্থক্য করার জন্য যে আলামত স্থাপন করা হয়েছে, তা সরিয়ে ফেলা। এর মাধ্যমে সে তার শরীকের হক থেকে কিছু অংশ নিয়ে নেয়। এটি বিরাট যুলুম। হাদীছে রয়েছে,
«مَنْ ظَلَمَ قِيدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ»
‘‘যে ব্যক্তি কারো অর্ধহাত যমীন জবরদখল করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাতটি যমীন ঝুলিয়ে দেয়া হবে।[4] দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষ বড়ই মূর্খ। তাদের মূর্খতা ও যুলুমের কারণেই তারা এমন কাজে লিপ্ত হয়েছে, যা তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য ক্ষতিকর। আর আখেরাত, আমলের হিসাব-নিকাশ, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি ঈমান দুর্বল হওয়ার কারণেই তারা পরস্পর যুলুম করে থাকে। আমরা দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর নিরাপত্তা কামনা করছি। আমীন
তারিক বিন শিহাব হতে বর্ণিত হাদীছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«دخل الجنة رجل فى ذباب ودخل النار رجل فى ذباب قالوا وكيف ذلك يا رسول الله قال: مر رجلان على قوم لهم صنم لا يجوزه أحد حتى يقرب له شيئا فقالوا لاحدهما: قرب قال: ليس عندي شئ أقرب، قالوا له: قرب ولو ذباب فقرب ذباب فخلوا سبيله فدخل النار وقالوا للآخر: قرب، قال ما كنت أقرب شيئا دون الله عز وجل فضربوا عنقه فدخل الجنة»
‘‘এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে। আর এক ব্যক্তি একটি মাছির কারণে জাহান্নামে গিয়েছে। সাহাবীগণ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এটি কিভাবে হলো? তিনি বললেনঃ দু’জন লোক এমন একটি গোত্রের নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, যাদের একটি মূর্তি ছিল। উক্ত মূর্তির জন্য কোন কিছু উৎসর্গ না করে কেউ সে স্থান অতিক্রম করতে পারতোনা। উক্ত কওমের লোকেরা দু’জনের একজনকে বললো, ‘মূর্তির জন্য তুমি কিছু কুরবানী করো’। সে বললো, কুরবানী দেয়ার মত আমার কিছুই নেই। তারা বলল, অন্ততঃ একটি মাছি হলেও কুরবানী দিয়ে যাও’। অতঃপর সে একটা মাছি মূর্তির জন্য কুরবানী দিল। তারা লোকটির পথ ছেড়ে দিল। এর ফলে সে জাহান্নামে গেল। অপর ব্যক্তিকে তারা বললো, মূর্তিকে তুমিও কিছু কুরবানী করো। সে বললঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নৈকট্য লাভের জন্য আমি কারো জন্য কুরবানী দেইনা। এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিল। এতে সে জান্নাতে প্রবেশ করল’’।[5]
ব্যাখ্যাঃ হাদীছের বর্ণনাকারী হলেন আবু আব্দুল্লাহ্ তারিক বিন শিহাব আল-বাজালী আল-আহমাসী। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বলেনঃ তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখেছেন, তবে তাঁর কাছ থেকে কোন হাদীছ শুনেন নি।
হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ তিনি যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সাথে সাক্ষাৎ করে থাকেন অর্থাৎ যদি সাক্ষাৎ করা প্রমাণিত হয়, তাহলে তিনি সাহাবী। এটিও যদি প্রমাণিত হয় যে, সাক্ষাৎ করার পরও তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর কাছ থেকে কোন কিছুই বর্ণনা করেন নি। সুতরাং তিনি যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদীছ বর্ণনা করেন, তাহলে তা সাহাবীর মুরসাল হিসাবে গণ্য হবে। প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত অনুযায়ী সাহাবীর মুরসাল গ্রহণযোগ্য। ইবনে হিববানের বর্ণনা মতে তিনি ৮৩ হিজরী সালে ইন্তেকাল করেন।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রঃ) বলেনঃ ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) স্বীয় সনদে তারিক বিন শিহাব থেকে মারফু হিসাবে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন যে, এক লোক শুধু মাছির কারণে জান্নাতে প্রবেশ করেছে।[6]
সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! এটি কিভাবে সম্ভব হল? সম্ভবতঃ তারা এ আমল তথা মূর্তিকে মাছি না দেয়ার কারণে জান্নাতে যাওয়া এবং মূর্তির জন্য মাছি কুরবানী করার কারণে জাহান্নামী হওয়াতে খুব আশ্চর্যবোধ করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করলেন, যে ব্যক্তি এ কাজ করবে অথবা এর চেয়ে বড় কোন শির্কী কাজ করবে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন অবধারিত হবে।
মূর্তির জন্য মাছি পেশকারী জাহান্নামে প্রবেশ করার কারণ হচ্ছে, সে অন্তর দিয়ে গাইরুল্লাহ্-এর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত করেছিল এবং কাজের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেছিল।
মাছির ঘটনায় মুসলিম শরীফের সেই হাদীছের ব্যাখ্যা রয়েছে, যা জাবের রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। আর সেই হাদীছটি ইতিপূর্বে ‘‘শির্ক হতে ভয়-ভীতি সম্পর্কে’’ নামক শিরোনামে অতিক্রান্ত হয়েছে’’। হাদীছটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«مَنْ لَقِىَ اللَّهَ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارِ»
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যু বরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যু বরণ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’।[7]
যে ব্যক্তি মূর্তির জন্য একটি মাছি কুরবানী করেছিল, তার পরিণতি যদি এমন হয়ে থাকে, তাহলে যে ব্যক্তি উট, গরু এবং ছাগল মোটা তাজা বানায় এবং সেগুলোকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য বস্ত্ত যেমন মৃত অথবা অনুপস্থিত অলী-আওলীয়া, কিংবা তাগুত, মাজার, গাছ, পাথর ইত্যাদির জন্য যবেহ করে অথবা অনুরূপ অন্যান্য বস্ত্তর এবাদত করে এবং তার পরিণতি কেমন হবে? অবশ্যই আরো অধিক ভয়াবহ হবে।
উম্মতে মুহাম্মাদীর আখেরী যামানায় মুসলিম পরিচয় ধারণকারী অনেক মুশরিক রয়েছে, যারা তাদের বাতিল মাবুদদের জন্য পশু যবেহ করাকে ঈদুল আযহার দিন কুরবানীর চেয়ে অধিক উত্তম মনে করে। তাদের কেউ কেউ ঈদুল আযহায় কুরবানী যবেহ করার পরিবর্তে অলী-আওলীয়ার মাজার ও দরগায় পশু যবেহ করাকে যথেষ্ঠ মনে করে। তারা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য যেসব বস্ত্তর এবাদত করে ঐ সকল বস্ত্তর প্রতি তাদের প্রবল আগ্রহ থাকা, সেগুলোকে অত্যাধিক সম্মান করা এবং তাদের কাছ থেকে কল্যাণ কামনার কারণেই এরূপ করে থাকে। শুধু তাই নয়, এর চেয়ে অধিক ভয়াবহ শির্কও বর্তমানে ছড়িয়ে পড়েছে।
অপর ব্যক্তিকে তারা বললো, মূর্তির জন্য তুমিও কিছু কুরবানী দিয়ে যাও। সে বললঃ এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নৈকট্য লাভের জন্য আমি কিছুই কুরবানী দেইনা। এর ফলে তারা তার গর্দান উড়িয়ে দিল। এতে সে জান্নাতে প্রবেশ করলো’’। হাদীছের এ অংশ থেকে জানা যাচ্ছে যে, ঈমানদারদের অন্তরে শির্কের ভয়াবহতা অত্যন্ত বড় বলে অনুভূত হয় এবং তারা শির্ককে অন্তর দিয়ে ঘৃণা করে। ইখলাসের উপর তারা হয়ে থাকেন অত্যন্ত মজবুত। আনাস রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীছ এবং অন্যান্য হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«ثَلاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ وَجَدَ حَلاوَةَ الإِيمَانِ: أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لا يُحِبُّهُ إِلا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ»
তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান থাকবে সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করতে পারবে। (১) যার মধ্যে আল্লাহ এবং রাসূলের ভালবাসা অন্যান্য সকল বস্ত্ত হতে অধিক পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। (২) যে ব্যক্তি কোন মানুষকে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য ভালবাসে। (৩) যে ব্যক্তি ঈমান গ্রহণের পর কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে তেমনই অপছন্দ করে, যেমন অপছন্দ করে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে।[8]
মাছির ঘটনার হাদীছ থেকে আরও জানা গেল যে ঈমানের মধ্যে লোকদের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। কেননা যে ব্যক্তিটি মূর্তির জন্য মাছি উৎসর্গ করেছিল, মূর্তিকে মাছি দেয়ার পূর্বে তার এমন কোনো আমল ছিলনা, যাতে সে জাহান্নামী হতে পারে। মূর্তিকে মাছি দেয়ার কারণেই সে জাহান্নামী হয়েছিল। অন্য কোনো আমলের কারণে নয়। হাদীছের বাহ্যিক অর্থ এটিই প্রমাণ করে।
এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয় গুলো জানা যায়ঃ
১) قل إن صلاتي ونسكي -এর তাফসীর জানা গেল।
২) فصل لربك وانحر -এর তাফসীরও জানা গেল।
৩) অত্র অধ্যায়ে বর্ণিত হাদীছের শুরুতেই আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের উদ্দেশ্যে পশু যবেহকারীর উপর লা’নত বর্ষণ করা হয়েছে।
৪) যে ব্যক্তি নিজ পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয়, তার উপর আল্লাহর লা’নত। এর মধ্যে এ কথাও নিহিত আছে যে, তুমি কোন ব্যক্তির পিতা- মাতাকে অভিশাপ দিলে সেও তোমার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দিবে।[9]
৫) যে ব্যক্তি কোন বিদআতীকে অথবা অপরাধীকে আশ্রয় দেয়, তার উপর আল্লাহর লা’নত। বিদআতী হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন বিষয় আবিস্কার কিংবা এমন অপরাধ করে, যাতে আল্লাহর নির্ধারিত শাস্তি ওয়াজিব হয়ে যায়। এর ফলে সে এমন ব্যক্তির আশ্রয় চায়, যে তাকে উক্ত অপরাধের শাস্তি হতে রেহাই দিতে পারে।
৬) যে ব্যক্তি যমীনের সীমানা নির্ধারণের চিহ্ন, খুটি বা অন্য কোনো আলামত পরিবর্তন করে, তার উপর আল্লাহর লা’নত। এটা এমন আলামত বা নিশানা, যা তোমার এবং তোমার প্রতিবেশীর যমীনের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করে। এটা পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে, নির্ধারিত স্থান থেকে সীমানা এগিয়ে আনা অথবা পিছনে নেয়া।
৭) নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর লা’নত এবং সাধারণভাবে পাপীদের উপর লা’নত করার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।
৮) এ অধ্যায়ে বর্ণিত বিরাট ঘটনাটি মাছির ঘটনা হিসেবে পরিচিত।
৯) মূর্তির, মাজারের বা দর্গার উদ্দেশ্যে একটি মাছি কুরবানী হিসেবে পেশ করার কারণে লোকটি জাহান্নামে প্রবেশ করল। অথচ মূর্তির সন্তুষ্টি কিংবা নৈকট্য অর্জনের ইচ্ছা ছিলনা। মূর্তি বা মাজারের খাদেমদের অনিষ্ট হতে বাঁচার উদ্দেশ্যেই সে মাছিটি মূর্তিকে দিয়ে শির্কী কাজ করেছিল।
১০) এ অধ্যায়ে বর্ণিত মাছির ঘটনা থেকে জানা গেল যে, মুমিনের অন্তরে শির্কের ভয়াবহ পরিণামের কথা সদা জাগ্রত থাকে। এখান থেকে আরো জানা গেল, নিহত ব্যক্তি তাদের দাবির কাছে নতি স্বীকার না করে নিহত হয়ে চরম ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। অথচ তারা তার কাছে কেবলমাত্র বাহ্যিক আমল ছাড়া অন্য কিছুই দাবী করেনি।[10]
১১) মাছির কারণে যে ব্যক্তি জাহান্নামে গিয়েছে সে ছিল একজন মুসলিম। সে যদি কাফের হত তাহলে এ কথা বলা হতনা যে, دخل النار فى ذباب ‘‘একটি মাছির কারণে সে জাহান্নামে প্রবেশ করেছে’’। মূর্তির উদ্দেশ্যে মাছি পেশ করার পূর্বে সে জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য ছিল।
১২) এতে ঐ সহীহ হাদিছের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায়, যাতে বলা হয়েছে,الجنة اقرب إلى أحدكم من شراك نعله والنار مثل ذلك ‘‘তোমাদের কারো জুতার ফিতার চেয়েও জান্নাত অধিক নিকটবর্তী। জাহান্নামও তদ্রুপ নিকটবর্তী।’’
১৩) এটা জেনে নেয়া প্রয়োজন যে, অন্তরের আমলই মূল উদ্দেশ্য। এমনকি মূর্তি পূজারীদের কাছেও এ কথা স্বীকৃত।
[2] - এমনি পীরের নৈকট্য লাভের জন্য, কোন অলী-আওলীয়া কিংবা কোন মাজার ও সমাধির জন্য পশু যবেহ করলেও যবেহকৃত পশুর গোশত খাওয়া হারাম হবে।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কোন ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে গালি দিবেনা।
[4] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাজালিম।
[5] - মুসনাদে আহমাদ।
[6] - দেখুনঃ الداء والدواء পৃষ্ঠা নং- ৫২।
[7] - সহীহ মুসলিম, অধ্যায়ঃ যে ব্যক্তি শির্ক করে মৃত্যু বরণ করল, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
[8] - বুখারী, অধ্যায়ঃ ঈমানের স্বাদ।
[9] - তবে নির্দিষ্ট করে কাউকে লা’নত করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
«وَمَنْ لَعَنَ مُؤْمِنًا فَهُوَ كَقَتْلِهِ. وَمَنْ قَذَفَ مُؤْمِنًا بِكُفْرٍ فَهُوَ كَقَتْلِهِ»
‘‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে লা’নত করল সে যেন তাকে হত্যা করল। আর যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে কাফের বললঃ সে যেন তাকে হত্যা করল’’। সহীহ বুখারী, হাদীছ নং- ৬০৪৭।
[10] - শাইখ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ একটি তুচ্ছ অখাদ্য হওয়া সত্ত্বেও উহা দ্বারা মূর্তির নৈকট্য লাভের নিয়ত করার কারণে সে মুশরিক হয়ে গিয়েছে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করেছে। (দেখুনঃ আলকাউলুল মুফীদ আলা কিতাবিত্ তাওহীদ, পৃষ্ঠা নং- ১৪৫)