তাওহীদ পন্থীদের নয়নমণি ৭ম অধ্যায় - ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে (باب ما جاء في الرقى والتمائم) শাইখ আব্দুর রাহমান বিন হাসান বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রহঃ) ১ টি
ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ সম্পর্কে যা বর্ণিত হয়েছে

আবু বাশীর আনসারী রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে,

«أَنَّهُ كَانَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي بَعْضِ أَسْفَارِهِ وَالنَّاسُ فِي مَبِيتِهِمْ فَأَرْسَلَ رَسُولُ اللَّه صلى الله عليه وسلم رَسُولاً أَنْ لا يَبْقَيَنَّ فِي رَقَبَةِ بَعِيرٍ قِلادَةٌ مِنْ وَتَرٍ أَوْ قِلادَةٌ إِلا قُطِعَتْ»

‘‘একদা তিনি কোন এক সফরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলেন। লোকেরা তখন নিজ নিজ বাসস্থানে ছিল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন সংবাদ বাহক পাঠিয়ে তাদেরকে নির্দেশ দিলেন, কোনো উটের গলায় যেন ধনুকের রশি বা হার বাঁধা না থাকে। থাকলে যেন অবশ্যই তা কেটে ফেলা হয়’’।[1]

ব্যাখ্যাঃ আবু বাশীর রাযিয়াল্লাহু আনহুর পূর্ণ নাম কাইস বিন উবাইদ। ইবনে সা’দ তার কিতাব ‘তাবাকতে ইবনে সা’দে এই কথা উল্লেখ করেছেন। ইবনে আব্দুল বার্ (রঃ) বলেনঃ আবু বাশীর (রঃ)এর সঠিক নাম সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা যায়নি। তিনি ছিলেন একজন সাহাবী। তিনি খন্দকের যুদ্ধে শরীক ছিলেন। শতাধিক বছর বয়সে উপনীত হয়ে ৬০ হিজরী সালে ইন্তেকাল করেন।

ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ থেকে যা নিষিদ্ধ, এই অধ্যায়ে তা বর্ণনা করা হয়েছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে লোকটিকে পাঠিয়েছিলেন, তার নাম ছিল যায়েদ বিন হারেছা। জাহেলী যামানার লোকদের অভ্যাস এই ছিল যে, ধনুকের রশি যখন পুরাতন হয়ে যেত, তখন সেটি বদলিয়ে ফেলত এবং পুরাতন রশিটি দিয়ে মালা বানিয়ে পশুর গলায় ঝুলিয়ে দিত। তাদের বিশ্বাস ছিল, এই মালাটি পশুকে বদনযর থেকে বাঁচাবে। এই বাতিল আকীদাহ পোষণ করার কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উটের গলায় লটকানো হার বা মালা কেটে ফেলার আদেশ দিয়েছেন।

ইমাম বগবী (রঃ) শারহুস্ সুন্নায় বলেনঃ পশুর গলার রশি বা মালা কেটে ফেলার আদেশের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ইমাম মালেক (রঃ) বলেনঃ বদনযর লাগার ভয়ে পশুর গলায় মালা বা হার পরানো হত। জাহেলী যামানার লোকেরা পশুর গলায় ধনুকের পুরাতন রশি, তাবীজ, মালা বা হার ঝুলিয়ে দিত। তাদের বিশ্বাস ছিল এগুলো তাদেরকে বিপদাপদ হতে বাঁচাবে। এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কাজ থেকে নিষেধ করেছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, রশি বা এ ধরণের অন্য কোনো বস্ত্ত আল্লাহর নির্ধারিত ফয়সালাকে ঠেকাতে পারবে না।

আবু উবাইদ (রঃ) তার কিতাব গারীবুল হাদীছে বলেনঃ জাহেলী যামানার লোকেরা বদনযরের ভয়ে উটের গলায় মালা পরাতো। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উটের গলা থেকে তা সরিয়ে ফেলার আদেশ দিয়েছেন এবং জানিয়ে দিয়েছেন যে, মালা বা হার অকল্যাণ ঠেকানোর ক্ষমতা রাখেনা।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি,

«إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ»

‘‘ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজ ঝুলানো শির্ক’’।[2]

ব্যাখ্যাঃ আবু দাউদের অন্য এক বর্ণনায় আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের স্ত্রী যায়নাব রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ্ দেখতে পেলেন, তাঁর স্ত্রীর গলায় একটি সূতা বাঁধা রয়েছে। তিনি বললেনঃ এটি কী? যায়নাব বলেনঃ আমি বললামঃ এই সূতায় আমার জন্য ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে। যায়নাব রাযিয়াল্লাহু আনহা বলেনঃ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু সেটা নিয়ে ছিড়ে ফেললেন। অতঃপর বললেনঃ তোমরা আব্দুল্লাহ্-এর পরিবার। তোমরা এ ধরণের শির্কের মুখাপেক্ষী নও। কেননা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ- কবজ ঝুলানো শির্ক’’।

শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব (রঃ) বলেনঃ কুরআনের কোনো আয়াত বা কোনো অংশ লিখে যদি ঝুলানো হয়, তাহলে কোনো কোনো সালাফ এটিকে জায়েয বলেছেন। আর কতক সালাফ এর অনুমতি দেন নি। তারা বলেনঃ কুরআন দিয়ে তাবীজ লিখে ঝুলানোও নিষিদ্ধ। যারা কুরআন দিয়ে তাবীজ লিখে ব্যবহার করা নিষেধ বলেছেন, তাদের মধ্যে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু অন্যতম।

মোট কথা, উপরোক্ত শির্কী বিষয়গুলো যদিও অস্পষ্ট, তারপরও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে তা থেকে সতর্ক করেছেন। অথচ তারা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-এর অর্থ সম্পর্কে পূর্ণ অবগত ছিলেন। যে ব্যক্তি ছোট-বড় এবং কম-বেশী সব ধরণের শির্ক বর্জন করবে অকল্যাণ প্রতিহত কিংবা কল্যাণ অর্জনের বিষয়ে তার অন্তর কখনই আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের সাথে সম্পৃক্ত হবেনা। উপরে বর্ণিত কাজগুলোর চেয়ে বহুগুণ বেশী ভয়াবহ শির্কী কাজ-কর্ম এই উম্মতের পরবর্তী লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। যে ব্যক্তি উপরোক্ত দু’টি অধ্যায়ে বর্ণিত শির্কী কাজসমূহ বুঝতে সক্ষম হবে, সে অবশ্যই জানতে পারবে যে বাস্তবে যা হচ্ছে, তার পরিমাণ আরো অনেক ভয়াবহ।

এই হাদীছ থেকে জানা গেল যে, সাহাবীগণ শির্ক থেকে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় সতর্ক করতেন এবং এর কড়া প্রতিবাদ করতেন। যদিও সেটি শির্কে আসগারের অন্তর্ভূক্ত হত। কেননা শির্কে আসগারও কবীরাহ গুনাহ্র অন্তর্ভুক্ত। এর দলীলগুলো পূর্বের অধ্যায়ে অতিক্রান্ত হয়েছে।

আবদুল্লাহ বিন উকাইম থেকে মারফু হাদীছে বর্ণিত আছে,

«من تعلق شيئا وكل اليه»

‘‘যে ব্যক্তি কোন জিনিষ লটকায় সে উক্ত জিনিষের দিকেই সমর্পিত হয়’’। অর্থাৎ এর কুফল তার উপরই বর্তায়।[3]

ব্যাখ্যাঃ যে ব্যক্তি কোনো জিনিষ ঝুলাল, তাকে সেদিকেই সোপর্দ করে দেয়া হবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি গলা, বাহু বা শরীরের অন্য স্থানে তাবীজ-কবজ, তাগা, রিং, সূতা ইত্যাদি ঝুলালো, তাকে সেই বস্ত্তর হাওলা করে দেয়া হবে। মূলতঃ বাহ্যিকভাবে এগুলো শরীরে ঝুলানো হলেও মূলতঃ এগুলোকে অন্তরের সাথেই ঝুলানো হয়। অতঃপর অন্তর থেকেই এ সম্পর্কিত কথা-বার্তা ও কাজ বের হয়। এর মাধ্যমে অন্তরকে আল্লাহ্ থেকে ফিরিয়ে অন্যান্য এমন জিনিষের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, যার ব্যাপারে বিশ্বাস করা হয় যে, সেই জিনিষটিই তার উপকার করবে কিংবা অকল্যাণ দূর করবে। ইতিপূর্বে বর্ণিত হাদীছসমূহে এবং অত্র অধ্যায়ে ও পূর্বের অধ্যায়ে এর বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাবিজ-কবজ ঝুলানো আল্লাহ্ তাআলার নিম্নের বাণীর পরিপন্থী। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

بَلَى مَنْ أَسْلَمَ وَجْهَهُ لِلّهِ وَهُوَ مُحْسِنٌ فَلَهُ أَجْرُهُ عِندَ رَبِّهِ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ

‘‘হ্যাঁ, যে ব্যক্তি নিজেকে আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে সমর্পণ করেছে এবং সে সৎকর্মশীলও বটে তার জন্য তার প্রভুর কাছে পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবেনা’’। (সূরা বাকারাঃ ১১২) এ কাজটি যদি ছোট শির্কের অন্তর্ভূক্ত হয়, তাহলে তা পরিপূর্ণ তাওহীদের পরিপন্থী হবে। আর যদি এটি বড় শির্কের অন্তর্ভূক্ত হয় যেমন কবর, মাজার ও তাগুতের পূজারীদের এবাদত, তাহলে তা আল্লাহর সাথে কুফরী হিসাবে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি তাতে লিপ্ত হবে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। যতক্ষণ সে তাতে লিপ্ত থাকবে, ততক্ষণ তার কোনো কথা ও আমল কবুল হবেনা।

তাকে তার দিকেই সোপর্দ করে দেয়া হবেঃ অর্থাৎ সে যে জিনিষটি ঝুলিয়ে রেখেছিল, তাকে সে দিকেই সোপর্দ করা হবে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে জিনিষের সাথে অন্তরকে বেঁধে রেখেছিল, আল্লাহ্ তাআলা তাকে সাহায্য না করে সে জিনিষের উপরই হাওলা করে দিবেন। আর যাকে আল্লাহ্ তাআলা ব্যতীত অন্য কারো দিকে হাওলা করে দেয়া হবে, সে ধ্বংস হবে।

ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) স্বীয় সনদে আতা খুরাসানী হতে বর্ণনা করেন যে, আমি ওয়াহাব বিন মুনাবিবহ (রঃ)এর সাথে দেখা করলাম। তিনি তখন কাবার তাওয়াফ করছিলেন। আমি তাঁকে বললামঃ আমাকে তুমি এমন একটি হাদীছ শুনাও, যা তোমার কাছ থেকে আমি মুখস্ত করে রাখব। আর তুমি তা সংক্ষেপে বলবে। ওয়াহাব বললেনঃ হ্যাঁ, শুনাবো। আল্লাহ্ তাআলা দাউদ (আঃ)এর কাছে অহী প্রেরণ করে বললেনঃ ‘‘আমার বড়ত্ব ও মর্যাদার শপথ! আমার যে বান্দা আমার আশ্রয় নিবে, আমার কোনো সৃষ্টির আশ্রয় নিবেনা, আর কে আমার আশ্রয় নিল, আমি তার নিয়ত থেকেই জেনে নেই। সুতরাং আমার আশ্রয় গ্রহণকারী কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে যদি সাত আসমান ও তার মধ্যস্থিত সকল বস্ত্ত এবং সাত যমীন ও তার মধ্যস্থিত সকল জিনিষও ষড়যন্ত্র করে, তারপরও আমি তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করবো’’। আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ ‘‘আমার ইজ্জতের শপথ! আমার কোনো বান্দা যদি আমাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো সৃষ্টির আশ্রয় গ্রহণ করে, আমি তার নিয়ত থেকেই জেনে নেই, আমি তার হাত থেকে আসমানের সকল বন্ধন ছিন্ন করে দিব এবং তার উভয় পায়ের নীচে যমীনকে তার উপর নারাজ করে দিবো। অতঃপর যে কোনো উপত্যকায় গিয়ে সে ধ্বংস হবে, আমি তার ব্যাপারে কোনো পরওয়া করবোনা’’।[4] কুরআন মজীদে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ

وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنَ السَّمَاء فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ

‘‘এবং যে কেউ আল্লাহ্‌র সাথে শরীক করল; সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল, অতঃপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী কোনো স্থানে নিক্ষেপ করল। (সূরা হজ্জঃ ৩১) সুতরাং এ বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা উচিৎ।

تمائم (তাবিজ) হচ্ছে এমন জিনিষ, যা চোখ লাগা বা কু-দৃষ্টি লাগা থেকে বাঁচার জন্য সন্তানদের গায়ে ঝুলানো হয়। ঝুলন্ত জিনিষটি যদি কুরআনের অংশ হয়, তাহলে সালাফে সালেহীনের কেউ কেউ এর অনুমতি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ অনুমতি দেননি বরং এটাকে শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয় বলে গণ্য করেছেন। ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু এ অভিমতের পক্ষে রয়েছেন। আর رقى রুকা বা ঝাড়-ফুঁককে عزائم আযায়েম বা গিরা-বন্ধন ইত্যাদি নামেও অভিহিত করা হয়। যেসব ঝাড়-ফুঁক শির্কমুক্ত, তা দলিলের মাধ্যমে খাস করা হয়েছে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চোখের কু-দৃষ্টি লাগা এবং সাপ বিচ্ছুর বিষ দূর করার জন্য ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন।

تولة (তিওয়ালা) কবজ এমন জিনিষকে বলা হয়, যা তারা তৈরী করত এবং ধারণা করত যে, এটি স্বামীর অন্তরে স্ত্রীর প্রতি এবং স্ত্রীর অন্তরে স্বামীর প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি করে।

সাহাবী রুআইফি রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুআইফিকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ

«يَا رُوَيْفِعُ لَعَلَّ الْحَيَاةَ سَتَطُولُ بِكَ بَعْدِى فَأَخْبِرِ النَّاسَ أَنَّهُ مَنْ عَقَدَ لِحْيَتَهُ أَوْ تَقَلَّدَ وَتَرًا أَوِ اسْتَنْجَى بِرَجِيعِ دَابَّةٍ أَوْ عَظْمٍ فَإِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم مِنْهُ بَرِىءٌ»

‘‘হে রুআইফি! তোমার হায়াত সম্ভবত দীর্ঘ হবে। তুমি লোকজনকে এই কথা জানিয়ে দিয়ো, যে ব্যক্তি দাড়িতে গিরা লাগাবে, অথবা গলায় তাবিজ-কবজ লটকাবে অথবা পশুর গোবর কিংবা হাড় দ্বারা এস্তেঞ্জা করবে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত’’।[5]

ব্যাখ্যাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন সংবাদ দিয়েছেন, ঠিক তাই হয়েছে। রুআইফি দীর্ঘ বয়স পেয়েছিলেন। তিনি ৪৭ হিজরী মতান্তরে ৫৬ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন।

ইমাম খাত্তাবী (রঃ) বলেনঃ দাড়ি বা চুলে জট বাঁধা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি দু’ভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

(১) পূর্বকালে যুদ্ধের সময় লোকেরা এরূপ করত। তারা তাদের দাড়িসমূহ বেঁধে রাখত। এটি ছিল মূলত অনারবদের অভ্যাস। আবুস সাআদাত বলেনঃ তারা অহংকার ও গর্বসহকারে চুল-দাড়ি পেচিয়ে ও বেঁধে রাখত।

(২) এর অর্থ হল চুল বা দাড়িকে ভাজ করা অথবা কোকড়া বানানো।

ব্যাখ্যাকার বলেনঃ আমি বলছি, এ রকমই অনেক লোক মোচ অনেক লম্বা করে এবং এক অংশকে পেচিয়ে রাখে এবং অন্য অংশকে ছেড়ে দেয়। যায়েদ বিন আরকামের হাদীছে রয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘যে ব্যক্তি মোচ ছোট করলনা, সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়’’।[6] সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে,

«خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ وَفِّرُوا اللِّحَى وَأَحْفُوا الشَّوَارِبَ»

‘‘তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করো, মোচ ছোট করো এবং দাড়ি বৃদ্ধি করো।[7] এই হাদীছ মোচ ছোট করা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। ইমাম ইবনে হায্ম মোচ ছোট করা ফরয হওয়ার উপর আলেমদের ইজমা বর্ণনা করেছেন। সুতরাং মোচ অত্যাধিক লম্বা করা এবং তাতে ঝট লাগানো নিষিদ্ধ।

অথবা গলায় হার ঝুলাবেঃ পূর্বোল্লেখিত দলীলসমূহ এবং এই দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এমনটি করা শির্ক। বদনযরের ভয়ে বা কল্যাণ অর্জনের আশায় কিংবা অকল্যাণ প্রতিহত করার নিয়তে তারা পশুর গলায় বা অন্যান্য স্থানে এ ধরণের বস্ত্ত ঝুলাতো।

অথবা পশুর গোবর কিংবা হাড় দ্বারা এস্তেঞ্জা করবে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার থেকে সম্পূর্ণ মুক্তঃ এতে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এ কাজটি এবং পূর্বের কাজটি কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভূক্ত। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা, আমি তার থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত, উপরোক্ত কাজগুলো কবীরা গুনাহ্র অন্তর্ভূক্ত হওয়ার প্রমাণ বহন করে। ইমাম নববী (রঃ) বলেনঃ আমি তার কাজ থেকে মুক্ত। ইমাম নববীর এই ব্যাখ্যা সঠিক নয়। কারণ منه এর মধ্যকার ضمير বা সর্বনামটি পূর্বোল্লেখিত من বা ব্যক্তির দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে। ব্যক্তির فعل বা কাজের দিকে নয়।

গোবর এবং হাড্ডী দিয়ে এস্তেঞ্জা করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে মারফু সনদে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

«لاَ تَسْتَنْجُوا بِالرَّوْثِ وَلاَ بِالْعِظَامِ فَإِنَّهُ زَادُ إِخْوَانِكُمْ مِنَ الْجِنِّ»

‘‘তোমরা গোবর ও হাড্ডী দিয়ে পবিত্রতা হাসিল করোনা। কেননা এ দু’টি তোমাদের ভাই জিনদের খাদ্য’’।[8] ইমাম দারকুতনী ও ইবনে খুযায়মা (রঃ) আবু হুরায়রা হতে মারফু সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

সাঈদ বিন জুবাইর রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেনঃ

«من قطع تميمة من إنسان كان كعدل رقبة»

‘‘যে ব্যক্তি কোনো মানুষের তাবিজ-কবজ ছিড়ে ফেলবে বা কেটে ফেলবে সে একটি গোলাম আযাদ করার ছাওয়াব পাবে’’।[9]

ব্যাখ্যাঃ আলেমদের নিকট এই হাদীছটি মারফু হাদীছের মতই। কেননা কিয়াস বা ইজতেহাদ করে এ ধরণের কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। তবে এই হাদীছকে মুরসাল হিসাবে নাম দেয়া হয়েছে। কেননা সাঈদ ছিলেন তাবেঈ। সুতরাং এ হাদীছ থেকে জানা গেল যে, তাবীজ ঝুলাতে নিষেধ করা আবশ্যক এবং ঝুলন্ত তাবীজ কেটে ফেলার প্রতি উৎসাহ দেয়া জরুরী।

যারা তাবীজ লটকানোকে শির্ক বলেন, এ হাদীছের মধ্যে তাদেরও দলীল রয়েছে। এখান থেকে আরো জানা গেল যে, সালফে সালেহীনগণ শির্কের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন। চাই তা কম হোক বা বেশী হোক। তারা শির্ক থেকে কঠোর ভাষায় নিষেধ করতেন। কিন্তু এ উম্মতের পরবর্তী লোকদের মধ্যে যখন সঠিক ইসলাম অপরিচিত হয়ে গেছে, তখন তাবীজ-কবজ লটকানো এমন কি বড় বড় শির্কের প্রতিবাদ করাও দোষের বিষয়ে পরিণত হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ের এক শ্রেণীর আলেমও শির্কের প্রতিবাদ করাকে অপরাধ বলে মনে করে থাকে।

অকীর পূর্ণ নাম অকী ইবনুল জাররাহ বিন অকী আল-কুফী। তিনি ছিলেন একজন নির্ভরযোগ্য ইমাম। তাঁর অনেক কিতাব রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিতাবুল জামে অন্যতম। ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল এবং তাঁর সমসাময়িক আলেমগণ তার নিকট থেকে হাদীছ বর্ণনা করেছেন। ১৯৭ হিজরী সালে তিনি ইন্তেকাল করেন।

ইবরাহীম নাখঈ (রঃ)[10] বলেন, তারা সব ধরনের তাবীজ-কবজ অপছন্দ করতেন। চাই তা কুরআন থেকে হোক বা অন্য কিছু থেকে হোক।

ব্যাখ্যাঃ ইবরাহীম নাখঈর পূর্ণ নাম ইমাম আবু ইমরান ইবরাহীম বিন ইয়াযীদ আল-নাখঈ আল-কুফী। তিনি ছিলেন বিজ্ঞ ফকীহদের অন্যতম। ৯৬ হিজরীতে ৫০ বছর বা এর কাছাকাছি বয়সে উপনীত হয়ে তিনি ইন্তেকাল করেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের ছাত্র আলকামাহ, আসওয়াদ, আবু ওয়ায়েল, হারেছ বিন সুওয়ায়েদ, উবায়দা আস্ সালমানী, মাসরুক, রাবী বিন খুছাইম, সুওয়ায়েদ বিন গাফালাহ এবং আরো অনেকেই তাবীজ লটকানো অপছন্দ করতেন। উপরের সকলেই ছিলেন নের্তৃস্থানীয় তাবেঈদের অন্তর্ভূক্ত। তাদের সময়ে মাকরুহ কথাটি হারাম অর্থেই ব্যবহৃত হত। এটিই সঠিক কথা।

কুরআন ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে তাবীজ বানিয়ে ঝুলালে তা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। আর কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবীজ তৈরী করে ঝুলানো হলে তিন কারণে তা নিষিদ্ধ।

(১) সকল প্রকার তাবীজ ঝুলাতে নিষেধ করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা থেকে কোন কিছুই বাদ পড়েনি। কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবীজ বানিয়ে ঝুলানো হলে তা জায়েয হবে এমন কোন কথা বলা হয়নি।

(২) কুরআন দিয়ে তাবীজ লটকানো জায়েয বলা হলে লোকেরা কুরআন ছাড়া অন্য বস্ত্ত দিয়েও তাবীজ লটকানোর সুযোগ পেয়ে যাবে। ফলে তাদের প্রতিবাদ করা কঠিন হবে।

(৩) কুরআনের আয়াত দিয়ে তাবীজ লটকালে কুরআনের মর্যাদা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কেননা তাবীজ পরিধানকারী টয়লেটে এবং অন্যান্য অপবিত্র জায়গায় প্রবেশ করলে অবশ্যই কুরআনের অবমাননা হবে।

গ্রন্থকার বলেনঃ رقى (ঝাড়-ফুঁক)এর অপর নাম عزائم (আযায়েম)। যেসব ঝাড়-ফুঁক শির্ক হতে মুক্ত, দলীলের মাধ্যমে সেগুলোকে নিষিদ্ধ ঝাড়-ফুঁক থেকে আলাদা করা হয়েছে। অর্থাৎ তা জায়েয[11]। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদনযর থেকে বাঁচার জন্য এবং বিষাক্ত সাপ, বিচ্ছু ও পোঁকা-মাকড়ের বিষ নামানোর জন্য ঝাড়-ফুঁক করার অনুমতি দিয়েছেন।

তিওয়ালা تولة এমন কাজকে বলা হয়, যার উদ্দেশ্য হচ্ছে স্ত্রীকে তার স্বামীর কাছে প্রিয় করে তোলা এবং স্বামীকে তার স্ত্রীর নিকট প্রিয় করা। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালবাসা তৈরী করাই ছিল তিওয়ালার উদ্দেশ্য।[12]

হাফেয বলেনঃ تولة শব্দের تا বর্ণে যের এবং واو এর উপর যবর দিয়ে পড়তে হবে। এটি হচ্ছে এমন কাজ, যার মাধ্যমে স্ত্রী তার স্বামীর ভালবাসা অর্জন করতো। এটি এক প্রকার যাদু। এ অধ্যায় থেকে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো জানা যায়ঃ

১) ঝাড়-ফুঁক ও তাবিজ-কবজের ব্যাখ্যা জানা গেল।

২) تولة ‘‘তিওয়ালাহ’’এর ব্যাখ্যাও জানা গেল।

৩) উপরোক্ত তিনটি বিষয় যথাক্রমে তাবীজ, কবজ এবং ঝাড়-ফুঁক শির্কের অন্তর্ভূক্ত। এগুলোর কোনোটিকেই শির্কের আওতামুক্ত রাখা হয়নি।

৪) তবে সত্যবাণী ও কুরআনের সাহায্যে বদনযর এবং সাপ বিচ্ছুর বিষ নিরাময়ের জন্য ঝাড়-ফুঁক করা শির্কের অন্তর্ভূক্ত নয়।

৫) তাবিজ কুরআন থেকে হলে তা শির্ক হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

৬) বদনযর থেকে বাঁচার জন্য ধনুকের রশি বা অন্য কিছু ঝুলানো শির্কের অন্তর্ভূক্ত।

৭) যে ব্যক্তি ধনুকের রশি গলায় ঝুলায় তার ব্যাপারে রয়েছে কঠিন শাস্তির ধমকি।

৮) কোনো মানুষের গলায় বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে ঝুলন্ত তাবিজ ছিড়ে ফেলা কিংবা কেটে ফেলার ফযীলত রয়েছে।

৯) কুরআন দিয়ে তাবীজ লটকানো বৈধ হওয়ার ব্যাপারে ইবরাহীম নাখঈর কথা পূর্বোক্ত মতভেদের বিরোধী নয়। কারণ এর দ্বারা আব্দুল্লাহর ছাত্রদেরকেই বুঝানো হয়েছে।

[1] - বুখারী, অধ্যায়ঃ ঘন্টা লটকানোর ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মালেক (রঃ) বলেছেনঃ বদনযর ও উহার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচার জন্য মালা বা পশুর গলায় ঘন্টা লাগানো নিষেধ। কিন্তু শুধু সৌন্দর্যের জন্য হলে কোন অসুবিধা নেই।

[2] - মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে আবু দাউদ। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন, দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ৩৩১।

[3] - তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কোন কিছু ঝুলানোর ব্যাপারে যা বর্ণিত হয়েছে। দেখুনঃ সহীহ সুনানে তিরমিযী, হাদীছ নং- ১৬৯১।

[4] - মুসনাদে ইমাম আহমাদ। ইমাম আলবানী (রঃ) হাদীছটিকে মাউযু বা বানোয়াট বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, হাদীছ নং- ৬৮৮। এর পরিবর্তে ঐ হাদীছ এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাতে এ কথা রয়েছে যে, যদি দুনিয়ার সকল মানুষ একমত হয়ে তোমার কোন উপকার করতে চায়, তবে তারা শুধু এতটুকুই পারবে, যতটুকুর ফয়সালা আল্লাহ তাআলা লিপিবদ্ধ করেছেন। এমনিভাবে সকলে মিলে যদি তোমার কোন ক্ষতি সাধন করতে চায়, তবে কেবল এতটুকুই করতে পারবে, যতটুকু আল্লাহ তাআলা তোমার ভাগ্যে লিপিবদ্ধ করেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং লিপিকা শুকিয়ে গিয়েছে।

[5] - আবু দাউদ, নাসাঈ। হাদীছের সনদ সহীহ। দেখুনঃ সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ৭৭৮৭।

[6] - তিরমিজী, মুসনাদে আহমাদ। হাদীছের সনদ সহীহ। দেখুনঃ সহীহুল জামে, হাদীছ নং- ২৭৬২।

[7] - বুখারী, অধ্যায়ঃ নখ কর্তন করা।

[8] - সুনানে তিরমিজী, অধ্যায়ঃ যে সব বস্ত্ত দিয়ে এস্তেঞ্জা করা মাকরুহ। ইমাম আলবানী (রঃ) এই হাদীছকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ ইরওয়াউল গালীল, হাদীছ নং- ৪৬।

[9]- ইমাম ওয়াকী ইবনুল জার্রাহ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। তবে হাদীছের সনদ দুর্বল।

[10] - তিনি হচ্ছেন ইমাম ইবরাহীম বিন ইয়াজীদ আন্ নাখঈ আলকুফী। তাঁর কুনিয়াত তথা উপনাম ছিল আবু ইমরান। তিনি মুসলিম উম্মার নিকট নির্ভরযোগ্য একজন বড় মাপের ফিক্হবিদ ছিলেন। ৫০ বছর বা এর কাছাকাছি বয়সে তিনি ৯৬ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।

[11] - আলেমগণ বলেনঃ তিন শর্তে ঝাড়-ফুঁক করা জায়েয। (১) ঝাড়-ফুঁক কুরআন-সুন্নাহ অথবা আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে হতে হবে। (২) ঝাড়-ফুঁক আরবী ভাষায় হতে হবে। আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় হলে তার অর্থ বোধগম্য হতে হবে এবং শির্ক থেকে মুক্ত হতে হবে। (৩) ঝাড়-ফুঁক নিজস্ব ক্ষমতা বলেই উপকার করবে- এই বিশ্বাস পোষণ করা যাবে না। বরং ঝাড়-ফুঁককারী এবং যাকে ঝাড়-ফুঁক করা হবে, সে বিশ্বাস করবে যে আল্লাহর নির্ধারণ অনুযায়ীই এটি উপকার করে অথবা অকল্যাণ প্রতিহত করে থাকে। সুতরাং ঝাড়-ফুঁক করা জায়েয। সহীহ হাদীছে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেকে ঝাড়-ফুঁক করেছেন। তিনি অন্যকেও ঝাড়-ফুঁক করেছেন। তাকে ঝাড়-ফুঁক করা হয়েছে মর্মেও সহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। জিবরীল ফেরেশতা তাকে ঝাড়-ফুঁক করেছেন। আয়েশা (রাঃ)ও তাঁকে ঝাড়-ফুক করেছেন। জিবরীল ফেরেশ্তা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঝাড়-ফুঁক করার সময় বলেছেনঃ

«بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيكَ بِاسْمِ اللَّهِ أَرْقِيكَ»

‘‘আমি আপনাকে আল্লাহর নামে ঝাড়-ফুঁক করছি প্রতিটি এমন জিনিষ হতে, যা আপনাকে কষ্ট দেয় এবং প্রত্যেক জীবের অমঙ্গল হতে ও হিংসুকের বদ নজর হতে আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আমি আপনাকে আল্লাহর নামে ঝাড়-ফুঁক করছি’’। (সহীহ মুসলিম)

[12] - জেনে রাখা দরকার যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে ভালবাসা তৈরী হয় তা মূলতঃ আল্লাহর পক্ষ হতেই। কুরআন ও সুন্নাহর অনেক দলীল দ্বারাই ইহা প্রমাণিত।