বড় শির্ক ও ছোট শির্ক ছোট শির্কের প্রকারভেদ (ক . প্রকাশ্য শির্ক) মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

যুগ বা বাতাসকে গালি দেয়া ছোট শির্ক। কারণ, যে ব্যক্তি যুগ বা বাতাসকে গালি দেয় সে অবশ্যই এ কথা বিশ্বাস করে যে, যুগ বা বাতাস এককভাবে কারোর কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে। নতুবা যুগ বা বাতাসকে গালি দেয়ার কোন মানে হয় না।

যুগ বা বাতাসকে দোষারোপ করার চরিত্র শুধু আজকের নয় বরং তা মক্কার মুশরিকদের মধ্যেও বর্তমান ছিলো।

আল্লাহ্ তা’আলা মক্কার মুশরিকদের সম্পর্কে বলেন:

وَقَالُوْا مَا هِيَ إِلاَّ حَيَاتُنَا الدُّنْيَا، نَمُوْتُ وَنَحْيَى، وَمَا يُهْلِكُنَا إِلاَّ الدَّهْرُ، وَمَا لَهُمْ بِذَلِكَ مِنْ عِلْمٍ، إِنْ هُمْ إِلاَّ يَظُنُّوْنَ

‘‘তারা (মুশরিকরা) বলে: একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন। এখানে আমরা মরি ও বাঁচি এবং একমাত্র যুগই আমাদের ধ্বংস সাধন করে। বস্ত্ততঃ এ ব্যাপারে তাদের নিশ্চিত কোন জ্ঞানই নেই। তারা তো শুধু মনগড়া কথা বলে’’। (জাসিয়াহ্ : ২৪)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: يُؤْذِيْنِيْ ابْنُ آدَمَ، يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ، بِيَدِيْ الْأَمْرُ، أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ

‘‘আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: মানুষ আমাকে কষ্ট দেয়। তারা যুগকে গালি দেয়। অথচ আমিই যুগ নিয়ন্ত্রক। সকল বিষয়ের নিয়ন্ত্রণ আমার হাতেই। আমার আদেশেই রাত-দিন সংঘটিত হয়’’।

(বুখারী, হাদীস ৪৮২৬, ৬১৮১, ৭৪৯১ মুসলিম, হাদীস ২২৪৬ আবু দাউদ, হাদীস ৫২৭৪ আহমাদ : ২/২৩৮ ’হুমাইদী, হাদীস ১০৯৬ বায়হাক্বী : ৩/৩৬৫ ইবনু হিব্বান/ইহসান, হাদীস ৫৬৮৫ হা’কিম : ২/৪৫৩)

উবাই বিন্ কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَسُبُّوْا الرِّيْحَ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ مَا تَكْرَهُوْنَ ؛ فَقُوْلُوْا: اللَّهُمَّ! إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيْحِ وَخَيْرِ مَا فِيْهَا، وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيْحِ، وَشَرِّ مَا فِيْهَا، وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ

‘‘তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। তবে তোমরা কোন অসুবিধাকর পরিবেশ দেখলে বলবে: হে আল্লাহ্! আমরা এ বাতাসের কল্যাণ কামনা করি, এ বাতাসে যে কল্যাণ নিহিত রয়েছে এবং এ বাতাসকে যে কল্যাণের আদেশ করা হয়েছে। হে আল্লাহ্! আমরা আপনার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি এ বাতাসের অকল্যাণ হতে, এ বাতাসে যে অকল্যাণ নিহিত রয়েছে এবং এ বাতাসকে যে অকল্যাণের আদেশ করা হয়েছে’’।

(বুখারী/আদাবুল্ মুফরাদ্, হাদীস ১৯ তিরমিযী, হাদীস ২২৫২ নাসায়ী/আমালুল্ ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ্, হাদীস ৯৩৩-৯৩৬ ইবনুস্ সুন্নী/আমালুল্ ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ্, হাদীস ২৯৮ হা’কিম : ২/২৭২ আহমাদ : ৫/১২৩)

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَسُبُّوْا الرِّيْحَ، فَإِنَّهَا مِنْ رَوْحِ اللهِ، تَأْتِيْ بِالرَّحْمَةِ وَ الْعَذَابِ، وَلَكِنْ سَلُوْا اللهَ مِنْ خَيْرِهَا، وَتَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ شَرِّهَا

‘‘তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। কারণ, তা আল্লাহ্’র রহমত। তবে তা কখনো রহমত নিয়ে আসে আবার কখনো আযাব। কিন্তু ব্যতিক্রম কিছু দেখলে আল্লাহ্ তা’আলার নিকট বাতাসের কল্যাণ এবং উহার অকল্যাণ হতে তাঁর আশ্রয় কামনা করবে’’।

(বুখারী/আদাবুল্ মুফরাদ্, হাদীস ৭২০, ৯০৬ নাসায়ী/আমালুল্ ইয়াওমি ওয়াল্লাইলাহ্, হাদীস ৯২৯, ৯৩১, ৯৩২ আবু দাউদ, হাদীস ৫০৯৭ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৩৭৯৫ হা’কিম : ৪/২৮৫ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ১০/২১৬ আহমাদ : ২/২৫০, ২৬৮, ৪০৯, ৪৩৬-৪৩৭, ৫১৮ আব্দুর রাযযাক : ১১/২০০০৪)

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

لاَ تَلْعَنِ الرِّيْحَ ؛ فَإِنَّهَا مَأْمُوْرَةٌ، وَإِنَّهُ مَنْ لَعَنَ شَيْئًا لَيْسَ لَهُ بِأَهْلٍ رَجَعَتِ اللَّعْنَةُ عَلَيْهِ

‘‘বাতাসকে অভিশাপ দিওনা। কারণ, সে আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে আদিষ্ট। আর যে ব্যক্তি অভিশাপের অনুপযুক্ত বস্ত্তকে অভিশাপ দেয় সে অভিশাপ পুনরায় তার উপরই ফিরে আসে’’।

(তিরমিযী, হাদীস ১৯৭৮ আবু দাউদ, হাদীস ৪৯০৮ ত্বাবারানী/কাবীর : ১২/১২৭৫৭ ইবনু হিব্বান, হাদীস ১৯৮৮)

যুগ বা বাতাসকে গালি দেয়ার মধ্যে তিনটি অপকার রয়েছে। যা নিম্নরূপ:

১. গালির অনুপযুক্ত বস্ত্তকে গালি দেয়া। কারণ, যুগ বা বাতাস আল্লাহ্’র সৃষ্টি এবং তারা আল্লাহ্’র আদেশেই পরিচালিত বা নিয়ন্ত্রিত। সুতরাং ওরা গালি খাওয়ার কোনভাবেই উপযুক্ত নয়।

২. ওদেরকে গালি দেয়া শির্ক। কারণ, যে ওদেরকে গালি দেয় সে অবশ্যই এমন মনে করে যে, ওরা আল্লাহ্ তা’আলার আদেশ ছাড়া কারোর কোন লাভ বা ক্ষতি করতে পারে।

৩. ওদেরকে গালি দেয়া মানে পরোক্ষভাবে আল্লাহ্ তা’আলাকেই গালি দেয়া। কারণ, তাঁর আদেশেই সবকিছু হয়ে থাকে।