বড় শির্ক ও ছোট শির্ক বড় শির্কের প্রকারভেদ মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

হিদায়াতের শির্ক বলতে আল্লাহ্ তা’আলা ছাড়া অন্য কেউ কাউকে হিদায়াত দিতে পারে এমন বিশ্বাস করা অথবা এ বিশ্বাসে কারোর নিকট হিদায়াত কামনা করাকে বুঝানো হয়।

একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার ইচ্ছে ছাড়া কেউ কাউকে ইচ্ছে করলেই সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে না। এমনকি আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও নিজ ইচ্ছায় কাউকে হিদায়াত দিতে পারেননি। একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই যাকে চান হিদায়াত দিতে পারেন। অন্য কেউ নয়।

আল্লাহ্ তা’আলা রাসূল (সা.) কে উদ্দেশ্য করে বলেন:

«لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ»

‘‘তাদেরকে সুপথে আনার দায়িত্ব আপনার উপর নয়। বরং আল্লাহ্ তা’আলা যাকে চান সৎপথে পরিচালিত করেন’’। (বাক্বারাহ্ : ২৭২)

আল্লাহ্ তা’আলা আরো বলেন:

«وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِيْنَ»

‘‘আপনি যতই চান না কেন অধিকাংশ লোকই মু’মিন হওয়ার নয়’’। (ইউসুফ : ১০৩)

তিনি আরো বলেন:

«إِنَّكَ لاَ تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ، وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْـمُهْتَدِيْنَ»

‘‘আপনি যাকে ভালোবাসেন ইচ্ছে করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারেন না। তবে আল্লাহ্ তা’আলা যাকে ইচ্ছে করেন তাকেই সৎপথে আনয়ন করেন। তিনি হিদায়াতপ্রাপ্তদের সম্পর্কে ভালই জানেন’’। (ক্বাসাস্ : ৫৬)

আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী (সা.) ইরশাদ করেন:

يَا عِبَادِيْ! كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُوْنِيْ أَهْدِكُمْ

‘‘(আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর বান্দাহ্দেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন) হে আমার বান্দাহ্রা! তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট। শুধু সেই ব্যক্তিই হিদায়াতপ্রাপ্ত যাকে আমি হিদায়াত দেবো। অতএব তোমরা আমার নিকট হিদায়াত চাও। আমি তোমাদেরকে হিদায়াত দেবো’’। (মুসলিম, হাদীস ২৫৭৭)

মুসাইয়াব (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

لَـمَّا حَضَرَتْ أَبَا طَالِبٍ الْوَفَاةُ جَاءَهُ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَوَجَدَ عِنْدَهُ أَبَا جَهْلٍ ابْنَ هِشَامٍ وَعَبْدَ اللهِ بْنَ أُبَيْ أُمَيَّةَ بْنِ الْـمُغِيْرَةِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لِأَبِيْ طَالِبٍ: يَا عَمِّ! قُلْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ كَلِمَةً أَشْهَدُ لَكَ بِهَا عِنْدَ اللهِ، فَقَالَ أَبُوْ جَهْلٍ وَعَبْدُ اللهِ بْنُ أُمَيَّةَ: يَا أَبَا طَالِبٍ! أَتَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ عَبْدِ الْـمُطَّلِبِ، فَلَمْ يَزَلْ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَعْرِضُهَا عَلَيْهِ وَيَعُوْدَانِ بِتِلْكَ الْمَقَالَةِ حَتَّى قَالَ أَبُوْ طَالِبٍ آخِرَ مَا كَلَّمَهُمْ: هُوَ عَلَى مِلَّةِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ وَأَبَى أَنْ يَّقُوْلَ: لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم: أَمَا وَاللهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ مَا لَمْ أُنْهَ عَنْكَ، فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى فِيْهِ:

«مَا كَانَ لِلنَّبِيِّ وَالَّذِيْنَ آمَنُوْا أَنْ يَّسْتَغْفِرُوْا لِلْمُشْرِكِيْنَ وَلَوْ كَانُوْا أُوْلِيْ قُرْبَى مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُمْ أَنَّهُمْ أَصْحَابُ الْجَحِيْمِ» وَنَزَلَتْ:

«إِنَّكَ لاَ تَهْدِيْ مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللهَ يَهْدِيْ مَنْ يَّشَآءُ»

রাসূল (সা.) এর চাচা আবু তালিব যখন মৃত্যু শয্যায় তখন তিনি [রাসূল (সা.)] তার (আবু তালিব) নিকট এসে দেখতে পেলেন, আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ আবু উমাইয়া তার নিকট বসা। তখন রাসূল (সা.) তাঁর চাচাকে বললেন: হে চাচা! আপনি বলুন: আল্লাহ্ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই। তাহলে আমি আল্লাহ্ তা’আলার নিকট এ ব্যাপারে আপনার জন্য সাক্ষী দেবো। আবু জাহল ও আব্দুল্লাহ্ বললো: হে আবু তালিব! তুমি কি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম ত্যাগ করছো? এভাবে রাসূল (সা.) তাকে কালিমা পাঠ করাতে চাচ্ছিলেন। আর ওরা সে কথাই বার বার বলছিলো। পরিশেষে আবু তালিব আব্দুল মুত্তালিবের ধর্ম নিয়েই ইন্তিকাল করলো এবং কালিমা উচ্চারণ করতে অস্বীকার করলো। এরপরও রাসূল (সা.) বললেন: আল্লাহ্’র কসম! আমি আপনার জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবো যতক্ষণনা তিনি আমাকে নিষেধ করেন। অতঃপর তার সম্পর্কে এ আয়াত নাযিল হলো: ‘‘নবী ও অন্যান্য সকল মু’মিনদের জন্য জায়িয নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য আল্লাহ্ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। যদিও তারা আত্মীয়-স্বজনই বা হোকনা কেন এ কথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা সত্যিকার জাহান্নামী’’। আরো নাযিল হলোঃ ‘‘আপনি যাকে ভালোবাসেন ইচ্ছে করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারেন না। তবে আল্লাহ্ তা’আলা যাকে ইচ্ছে করেন তাকেই সৎপথে আনয়ন করেন’’।

(তাওবা: ১১৩) এবং (ক্বাসাস্ : ৫৬) (বুখারী, হাদীস ১৩৬০, ৩৮৮৪, ৪৬৭৫, ৪৭৭২, ৬৬৮১ মুসলিম, হাদীস ২৪)