(২৯) মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল- এ কথার সাক্ষ্য দেয়ার অর্থ কী?

জবানের উক্তি মোতাবেক অন্তরের গভীর থেকে দৃঢ়ভাবে এ কথা বিশ্বাস করা যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং সমগ্র মানব ও জিন জাতির প্রতি তার প্রেরিত রাসূল। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا وَدَاعِيًا إِلَى اللَّهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُنِيرً

‘‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবায়করূপে ও উজ্জ্বল প্রদীপরূপে’’। (সূরা আহযাবঃ ৪৫-৪৬) সুতরাং তিনি অতীতের যে সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন এবং আগামীতে যেসমস্ত ঘটনা ঘটবে বলে সংবাদ দিয়েছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করা ওয়াজিব। এমনিভাবে তিনি যা হালাল করেছেন তা হালাল হিসাবে মেনে নেয়া এবং যা হারাম করেছেন তা হারাম হিসাবে বিশ্বাস করা, তিনি যা আদেশ করেছেন তা অবনত মস্তকে মেনে নেয়া, যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা, তার শরীয়তের অনুসরণ করা, প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে তার সুন্নাতের অনুসরণ করা, তাঁর ফয়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা আবশ্যক। এ বিশ্বাস রাখা যে, তাঁর আনুগত্য মানেই আল্লাহর আনুগত্য এবং তাঁর নাফরমানীর অর্থই আল্লাহর নাফরমানী। কেননা তিনিই আল্লাহর পক্ষ হতে আল্লাহর রেসালাত মানব জাতির নিকট পৌঁছিয়েছেন। দ্বীনকে তাঁর মাধ্যমে পরিপূর্ণ করার পূর্বে এবং দ্বীনের যাবতীয় আহকাম পরিপূর্ণরূপে পৌঁছানোর পূর্বে আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দান করেন নি। তিনি তাঁর উম্মাতকে এমন একটি সুস্পষ্ট ও পরিস্কার ময়দানে রেখে গেছেন যাতে দিন এবং রাত একই সমান। বদনসীব ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক ব্যতীত অন্য কেউ এই রাজ পথ ছেড়ে অন্যপথে চলতে পারে না।[1] এই অধ্যায়ে আরো মাসআলা রয়েছে। যার বিবরণ সামনে আসবে ইন-শাআল্লাহ।

[1] -লেখক এখানে ইরবায বিন সারিয়া হতে বর্ণিত একটি মারফু হাদীছের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। হাদীছটির বিস্তারিত বিবরণ এই যে, ইরবায বিন সারিয়া বলেনঃ একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এমন একটি নসীহত করলেন, যাতে আমাদের চোখের পানি ঝরে পড়ল এবং আমাদের অন্তর বিগলিত হল। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! মনে হচ্ছে এটি বিদায়ী ভাষণ। সুতরাং আপনি আমাদের কিসের আদেশ দিচ্ছেন? তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এমন একটি সুস্পষ্ট ও পরিস্কার ময়দানে রেখে যাচ্ছি, যাতে দিন এবং রাত একই সমান। বদনসীব ও ক্ষতিগ্রস্ত লোক ব্যতীত অন্য কেউ এই রাজ পথ ছেড়ে অন্যপথে চলতে পারে না। আর জেনে রাখোঃ

فَإِنَّهُ مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّينَ الرَّاشِدِينَ تَمَسَّكُوا بِهَا وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ

‘‘আমার পরে তোমাদের মধ্য থেকে যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাতকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়িয়ে ধরবে। তোমরা দ্বীনের মাঝে নতুন বিষয় আবিষ্কার করা থেকে বিরত থাকবে, কেননা প্রত্যেক নতুন বিষয়ই বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতের পরিণাম গোমরাহী বা ভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম)