উত্তরঃ আমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর পরিবার ও তাঁর সাহাবীর ব্যাপারে আমাদের জবান ও অন্তর পবিত্র রাখব। তাদের ফজীলত ও মর্যাদা বর্ণনা করব, তাদের মন্দ দিকগুলো থেকে জবানকে আটকিয়ে রাখবো এবং তাদের মধ্যে যে মতবিরোধ ও কলহ সংঘটিত হয়েছে সে ব্যাপারে আমরা চুপ থাকবো। তাদের ফজীলত বর্ণনায় কোন ত্রুটি করব না। আল্লাহ্ তা’আলা তাওরাত ও ইঞ্জিল ও কুরআনে তাদের ফজীলত বর্ণনা করেছেন। তাদের ফজীলতে হাদীছের মূল প্রসিদ্ধ ও অন্যান্য কিতাবসমূহে অনেক সহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ تَرَاهُمْ رُكَّعًا سُجَّدًا يَبْتَغُونَ فَضْلاً مِنَ اللَّهِ وَرِضْوَانًا سِيمَاهُمْ فِي وُجُوهِهِمْ مِنْ أَثَرِ السُّجُودِ ذَلِكَ مَثَلُهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَمَثَلُهُمْ فِي الإِنْجِيلِ كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَى عَلَى سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ مِنْهُمْ مَغْفِرَةً وَأَجْرًا عَظِيمًا
‘‘মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। আর যারা তাঁর সাথে আছে তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর সহানুভূতিশীল। আল্লাহর সস্ত্তষ্টি ও অনুগ্রহ কামনায় আপনি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় অবনত দেখবেন। তাদের মুখমণ্ডলে সিজদার চিহ্ন দেখতে পাবেন। তাদের এ গুণাবলী তাওরাত ও ইঞ্জিলে অনুরূপভাবেই রয়েছে। তাদের দৃষ্টান্ত ঐ শস্য ক্ষেতের ন্যায়, যার চারা গাছগুলো অঙ্কুরিত হয় পরে সেগুলো শক্ত হয় ও পুষ্ট হয়। অতঃপর স্বীয় কান্ডের উপর দৃঢ়ভাবে দাঁড়ায়, যা চাষীকে আনন্দিত করে। (আল্লাহ্ এভাবে মুমিনদের শক্তি বৃদ্ধি করেন) যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য আল্লাহ্ ক্ষমা ও মহা পুরস্কার তৈরী করে রেখেছেন’’। (সূরা ফাত্হঃ ২৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেনঃ
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوْا وَنَصَرُوا أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ مَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ
‘‘আর যারা ঈমান আনয়ন করেছে, হিজরত করেছে এবং আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করেছে আর যারা মুমিনদেরকে আশ্রয় দিয়েছে এবং সাহায্য করেছে তাঁরাই হল প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা সম্মানজনক জীবিকা’’। (সূরা আনফালঃ ৭৪) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ
وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنْ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘‘যারা সর্বপ্রথম হিজরতকারী ও আনসারদের মাঝে পুরাতন এবং যারা উত্তমভাবে তাদের অনুসরণ করেছে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তাদের জন্য প্রস্ত্তত রেখেছেন এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নদীসমূহ। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটাই হল মহান সফলতা’’। (সূরা তাওবাঃ ১০০) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنْ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا
‘‘আল্লাহ ঐ সমস্ত মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন যারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে বায়আত করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন’’। (সূরা ফাতহঃ ১৮) আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ
‘‘আল্লাহ্ অনুগ্রহ করলেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা নবীর আনুগত্য করেছিলেন সংকট মুহূর্তে’’। (সূরা তাওবাঃ ১১৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
لِلْفُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِنْ دِيارِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ يَبْتَغُونَ فَضْلًا مِنْ اللَّهِ وَرِضْوَانًا وَيَنْصُرُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُوْلَئِكَ هُمْ الصَّادِقُونَ وَالَّذِينَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّونَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُوْلَئِكَ هُمْ الْمُفْلِحُونَ
‘‘এই ধন-সম্পদ দেশ ত্যাগী নিঃস্বদের জন্যে, যারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি লাভের আশায় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাহায্যার্থে নিজেদের বসতভিটা ও ধন-সম্পদ থেকে বহিস্কৃত হয়েছে, তারাই সত্যবাদী। যারা মুহাজিরদের আগমণের পূর্বে মদীনায় বসবাস করেছিল এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, তারা মুহাজিরদেরকে ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ষাপোষণ করেনা এবং নিজেরা অভাবগ্রস্ত হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে। যারা অন্তরের কার্পণ্য থেকে মুক্ত তারাই সফলকাম’’। (সূরা হাশরঃ ৮-৯) এছাড়া সাহাবীদের ফজীলত বর্ণনায় আরো অনেক আয়াত বর্ণিত হয়েছে।
আমরা জানি ও বিশ্বাস করি যে, বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে আল্লাহ্ তাআ’লা বলেছেনঃ
(اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ)
‘‘তোমাদের মন যা চায়, তাই আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি’’।[1] তাদের সংখ্যা ছিল তিনশত তেরজন। আমাদের বিশ্বাস এই যে, যারা বৃক্ষের নীচে বায়আতে রিযওয়ানে অংশ গ্রহণ করেছিলে তাদের কেউ জাহান্নামে প্রবেশ করবে না। তাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়েছেন তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট। তাদের সংখ্যা ছিল একহাজার চারশত বা পাঁচশত। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنْ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا
‘‘আল্লাহ ঐ সমস্ত মু’মিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন যারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে বায়আত করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন’’। (সূরা ফাতহঃ ১৮)
আমরা সাক্ষ্য দেই যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর মধ্যে সাহাবীদের যুগ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ। তাদের পরের যুগের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণও খরচ করে তাদের একজনের এক মুষ্টি বা অর্ধ মুষ্টি পরিমাণ দান করার সমানও হবেনা’’।[2] তবে আমরা এও বিশ্বাস করি যে, তারা মাসুম তথা একেবারে নিষ্পাপ ছিলেন না। তাদের দ্বারা ভুল হওয়া সম্ভব। তারা ছিলেন মুজতাহিদ। তাদের কারো ইজতিহাদ সঠিক হলে দ্বিগুণ পুরস্কার পাবেন। আর ইজতিহাদ ভুল হলে ইজতিহাদের কারণে একটি পুরস্কার প্রদান করা হবে। তবে তাদের ভুল ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
সাহাবীদের এত মর্যাদা, সৎকর্ম ও ফজীলত রয়েছে, যার কারণে তার দ্বারা কোন অন্যায় কাজ হয়ে থাকলেও উক্ত সৎকর্মগুলো সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি মোচন করে দিবে। বিশাল সাগরের মধ্যে সামান্য অপবিত্র জিনিষ পড়লে তা কি সাগরের পানিকে পরিবর্তন করতে পারে? আল্লাহ্ তাদের উপর সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করুন।
এমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর স্ত্রী ও আহলে বাইতের ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাস। তাদের থেকে আল্লাহ্ তাআলা অপবিত্রতাকে দূর করে দিয়েছেন এবং তাদেরকে উত্তমভাবে পবিত্র করে দিয়েছেন।
যারা অন্তরের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর আহলে বাইত বা তাদের কাউকে অথবা তাঁর সাহাবীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে অথবা জবানের মাধ্যমে তাদেরকে কষ্ট দেয় তাদের সাথে আমরা সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা প্রদান করি। আল্লাহ্ তাআলাকে সাক্ষী রেখে আমরা ঘোষণা করছি যে, আমরা তাদেরকে ভালবাসি এবং তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখি। সাধ্যানুযায়ী আমরা তাদের উপর থেকে অন্যায় ও অপবাদ প্রতিরোধ করতে বদ্ধ পরিকর। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমর্মে আমাদেরকে ওসীয়ত করে বলেনঃ
(لَا تَسُبُّوا أَحَدًا مِنْ أَصْحَابِي الله الله في أصحابي)
‘‘তোমরা আমার কোন সাহাবীকে গালি দিওনা। আমার সাহাবীদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর’’।[3] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
(وَإِنِّي تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللَّهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِهِ وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللَّهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي)
‘‘আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি গুরত্ব ও মর্যাদাবান জিনিষ রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব। এটিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমার আহলে বাইত। আমার আহলে বাইতের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় কর’’।[4]
[2] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু ফাযায়েলে সাহাবাহ।
[3] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু ফাযায়েলে সাহাবাহ।
[4] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু ফাযায়েলে সাহাবাহ।