উত্তরঃ কবীরা গুনাহ্ থেকে বিরত থাকলে এবং সৎকাজে নিয়োজিত থাকলে সগীরা গুনাহ্ মোচন হয়ে যায়। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُمْ مُدْخَلاً كَرِيمًا
‘‘তোমরা যদি সেই কবীরা গুনাহ্সমূহ থেকে বিরত হও, যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলেই আমি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিব এবং তোমাদেরকে একটি সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব’’। (সূরা নিসাঃ ৩১) আল্লাহ তায়া’লা আরও বলেনঃ
وَأَقِمْ الصَّلَاةَ طَرَفِي النَّهَارِ وَزُلَفًا مِنْ اللَّيْلِ إِنَّ الْحَسَنَاتِ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ
‘‘আর দিনের দুই প্রান্তেই নামায প্রতিষ্ঠিত করবে, এবং রাত্রের প্রান্তভাগেও। সৎ কাজ অবশ্যই পাপ দূর করে দেয়। (সূরা হুদঃ ১১৪) আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, কবীরা গুনাহ্ থেকে বিরত থাকা এবং সৎকাজে নিয়োজিত থাকার মাধ্যমে সগীরা গুনাহ্ মোচন হয়ে যায়। হাদীছেও অনুরূপ কথা এসেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(وَاَتْبِعِ السَّيِّئَةَ الْحَسَنَةَ تَمْحُهاَ)
‘‘অন্যায় কাজ হয়ে গেলে পরক্ষণেই নেকীর কাজ করবে, যেন সে অন্যায়ের পাপ মোচন হয়ে যায়’’।[1]
এমনিভাবে অনেক সহীহ হাদীছে এসেছে যে, কষ্ট হলেও পরিপূর্ণ রূপে অযু করা, বেশী বেশী মসজিদে গমণ করা, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করা, এক জুমআ থেকে অন্য জুমআ পর্যন্ত, এক রামাযান থেকে অন্য রামাযান পর্যন্ত, রামাযান মাসে কিয়াম করা, লাইলাতুল কদরের কিয়াম এবং আশুরার রোজা ইত্যাদি সৎকাজ সগীরা গুনাহ্গুলোকে মোচন করে দেয়। তবে অধিকাংশ বর্ণনাতে কবীরা গুনাহ্ থেকে বিরত থাকার শর্তারোপ করা হয়েছে। আর যে হাদীছগুলোতে কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার শর্তারোপ করা হয়নি; বরং সাধারণভাবেই সৎকাজ সগীরা গুনাহ্ মোচনের মাধ্যম বলে উল্লেখিত হয়েছে, সেই হাদীছগুলোকে শর্তযুক্ত হাদীছগুলোর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে হবে। যাতে করে কবীরা গুনাহ্ থেকে বিরত থেকে সৎকাজে লিপ্ত থাকা বা না থাকা সগীরা গুনাহ্এর কাফ্ফারা হয়ে যায়।
অতএব নামায এবং অজু পাপ মোচনের এবং ক্ষমা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম, এ ব্যাপারে অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়। এব্যাপারে অনেক দলীল রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ ‘‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমআ থেকে অপর জুমআ এবং এক রামাযান থেকে অন্য রামাযানের মধ্যে কৃত পাপ মোচন হয়ে যায় যদি ব্যক্তি কবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে’’।[2]
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘আমি কি তোমাদেরকে এমন কাজের সন্ধান দিব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ্ পাপসমূহ মিটিয়ে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করেন? সাহাবাগণ বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ বলুন। তিনি বললেন, কষ্ট হলেও পূর্ণরূপে অজু করা। বেশী বেশী মসজিদের পথে চলা। এক নামাযের পর অন্য নামাযের জন্য অপেক্ষা করা। ইহাই আমাদের জন্য সীমান্তে পাহারা দেয়ার মত মর্যাদা তুল্য’’।[3] এমনিভাবে প্রতিদানের আশায় রামাযানের ছিয়াম পালন করা এবং রাতে কিয়াম করা এবং লাইলাতুল কদরের এবাদতও গুনাহ্ ক্ষমার মাধ্যম।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি রামাযানের সিয়াম পালন করবে ঈমানের সাথে এবং প্রতিদানের আশায়, তার পূর্বকৃত যাবতীয় পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে। এমনিভাবে যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং প্রতিদানের আশায় রামাযান মাসে কিয়াম করবে, তার পূর্বকৃত যাবতীয় পাপসমূহ ক্ষমা করা হবে এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও প্রতিদান পাওয়ার আশায় লাইলাতুল কদরে দাঁড়িয়ে ইবাদত করবে তার পূর্বকৃত যাবতীয় পাপরাশী ক্ষামা করা হবে।[4] এই ভাবে হজ্জও পাপ মার্জনা এবং উহা মিটিয়ে ফেলার অন্যতম মাধ্যম।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ পালন করে অতঃপর স্ত্রী মিলনে লিপ্ত হয় না এবং পাপের কাজে জড়িত হয় না, সে ফিরে আসে এমন দিনের মত নিস্পাপ হয়ে, যে দিন তার মাতা তাকে ভূমিষ্ঠ করেছিল।[5]
এ ছাড়া আরো প্রমাণ পাওয়া যায় যা থেকে বুঝা যায় যে, পাপসমূহ মার্জনা হওয়া ও উহা বিলুপ্ত হওয়ার মাধ্যম হলো সৎকর্ম।
[2] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাহারাত, অনুচ্ছেদঃ পাঁচ ওয়াক্ত নামায, হাদীছ নং- ৩৪৪।
[3] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাহারাত, অনুচ্ছেদঃ কষ্ট সত্বেও উত্তমরূপে অজু করা। হাদীছ নং- ৩৬৯
[4] - বুখারী, অধ্যায়ঃ সালাতুত্ তারাবীহ, অনুচ্ছেদঃ লাইলাতুল কদরের ফজীলত। হাদীছ নং- ১৮৭৫। মুসলিম, অধ্যায়ঃ মুসাফিরের নামায, অনুচ্ছেদঃ রামাযান মাসে তারাভীর নামাযের প্রতি উৎসাহ প্রদান। হাদীছ নং- ১২৬৮।
[5] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হজ্জ, অনুচ্ছেদঃ কবূল হজ্জের ফজীলত, হাদীছ নং- ১৪২৪। মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হাজ্জ, অনুচ্ছেদঃ হাজ্জ ও ওমরার ফজীলত, হাদীছ নং- ২৪০৪।