উত্তরঃ যাদু বিদ্যা শিক্ষার মতই জ্যোতিষশাস্ত্র শিক্ষা করা হারাম ও নাজায়েয। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُوا بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
‘‘আর তিনিই তোমাদের জন্যে নক্ষত্ররাজিকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা এগুলোর সাহায্যে জলে ও স্থলে পথ পেতে পার’’। (সূরা আনআমঃ ৯৭) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَاءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيحَ وَجَعَلْنَاهَا رُجُومًا لِلشَّيَاطِينِ
‘‘আর আমি দুনিয়ার আকাশকে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছি প্রদীপমালা (তারকারাজি) দ্বারা এবং ওগুলোকে শয়তানদেরকে প্রহার করার উপকরণ করেছি’’। (সূরা মুল্কঃ ৫) আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ
‘‘আর নক্ষত্ররাজিও তাঁর হুকুমের অধীন’’। (সূরা নাহলঃ ১২) নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
مَنِ اقْتَبَسَ عِلْمًا مِنَ النُّجُومِ اقْتَبَسَ شُعْبَةً مِنَ السِّحْرِ زَادَ مَا زَادَ
‘‘যে ব্যক্তি ইলমে নুজুমের বা জ্যোতিষ বিদ্যার একটি শাখা শিক্ষা করল, সে যাদু বিদ্যার একটি শাখা শিক্ষা গ্রহণ করল। যে ব্যক্তি যত বেশী ইলমে নজুম শিক্ষা করল সে তত বেশী যাদু শিক্ষা করল’’।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য একটি সহীহ হাদীছে বলেনঃ
(إنما أخاف على أمتي التصديق بالنجوم والتكذيب بالقدر وحيف الأئمة)
‘‘আমি আমার উম্মাতের মধ্যে ইলমে নুজুমের উপর বিশ্বাস ছড়িয়ে পড়া, তাকদীরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা এবং শাসকদের পক্ষ হতে যুলুম-নির্যাতনের ভয় করছি’’।[2]
যারা أباجاد (আবযাদ)[3] থেকে নাম্বার বের করে এবং আকাশের তারকাসমূহের প্রভাব আছে বলে বিশ্বাস করে তাদের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ্ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেনঃ
(ما أرى من فعل ذلك له عند الله من خلاق)
‘‘যারা এরূপ করে তাদের জন্যে আল্লাহর নিকট কিছু আছে বলে আমি মনে করি না’’।[4] কাতাদা (রঃ) বলেনঃ
(خلق الله هذه النجوم لثلاث زينة للسماء ورجوما للشياطين وعلامات يهتدى بها فمن تأول فيها غير ذلك فقد أخطأ حظه وأضاع نصيبه وتكلف ما لا علم له به)
‘‘আল্লাহ্ তাআলা তিনটি উদ্দেশ্যে এই তারকাগুলো সৃষ্টি করেছেন। আকাশের সৌন্দর্যের জন্যে, শয়তানকে বিতাড়িত করার জন্যে এবং রাতের অন্ধকারে মানুষের পথের নিদর্শন স্বরূপ। যে ব্যক্তি উপরোক্ত তিনটি কারণ ব্যতীত তারকাগুলোর সৃষ্টির অন্য কোন রহস্য বর্ণনা করবে সে নিজেকে ভুলের মধ্যে প্রবেশ করাল, নিজের অংশকে নষ্ট করল এবং এমন বিষয়ের চর্চা করল, যে সম্পর্কে তার কোন জ্ঞান নেই’’।[5]
[2] - মুসনাদে আহমাদ, (৫/৯০), তাবরানী, (১/৯২)। হাদীছটি যঈফ। কারণ হাদীছের সনদে রয়েছে মুহম্মাদ বিন কাসিম আল-আসাদী। আহমাদ বিন হাম্বাল (রঃ) বলেনঃ সে মিথ্যুক। ইবনে আদী বলেনঃ তার বর্ণনাসমূহ অন্য কোন হাদীছ দ্বারা সমর্থিত নয়। দেখুনঃ তাহ্যীব (৯/৪০৭)
[3] - আবাযাদ বলা হয়, এমন কিছু অক্ষরকে যা একটি বৃত্তের ভিতরে লিখা হয়। জ্যোতিষরা অক্ষরগুলোকে নির্দিষ্ট কতিপয় নাম্বারের সংকেত হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। জ্যোতিষরা বিশ্বাস করে যে, উক্ত সাংকেতিক নাম্বারটির মাধ্যমে মহাশূণ্যে লুকায়িত তাকদীর উন্মুক্ত করা সম্ভব। তারা আরো বিশ্বাস করে যে, যমীনের বড় বড় ঘটনাগুলোর উপর আকাশের তারকাসমূহের প্রভাব রয়েছে। এ সবকিছুই মিথ্যা ও ধোকাবাজির অন্তর্ভূক্ত। জিন ও মানব জাতির শয়তানরা এগুলোর মাধ্যমে খেল-তামাশা করে থাকে। হে আল্লাহ! আপনি মুসলমানদেরকে এ সমস্ত মিথ্যুকদের প্রতারণা থেকে হেফাজত করুন। আমীন
[4] - ইবনে আববাসের উক্তিটি ইমাম তাবরানী মারফু সূত্রে বর্ণনা করেছেন। তিনি মাজমাউজ্ যাওয়াদে আছারটি উল্লেখ করে বলেনঃ এর সনদে রয়েছে খালেদ বিন ইয়াযীদ আল-উমারী। সে ছিল একজন মিথ্যুক। দেখুনঃ মাজমাউজ্ যাওয়াদ, কিতাবুত্ তিবব, (৫/১১৭)
[5] - ইমাম বুখারী মুআল্লাক সূত্রে হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। দেখুনঃ কিতাবু বাদ-ইল খাল্ক। তবে হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী ফাতহুল বারীতে বলেনঃ আবদ্ বিন হুমায়েদ হাদীছটি শায়বানের সনদে মুত্তাসেল হিসাবে বর্ণনা করেছেন। দেখুনঃ ফাত্হুল বারী, (৬/২৯৫)।