উত্তরঃ كفر عملي তথা আমলের মধ্যে কুফরী বলতে এমন সব পাপের কাজকে বুঝায়, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুফরী বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে উক্ত পাপের কাজে জড়িত ব্যক্তিকে ঈমান থেকে বের করে দেন নি। যেমন তিনি বলেনঃ
(لاَ تَرْجِعُوا بَعْدِي كُفَّارًا يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ)
‘‘আমার পরে তোমরা কুফুরীতে ফেরত গিয়ে পরস্পর মারামারিতে লিপ্ত হয়োনা’’।[1]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْرٌ)
‘‘কোন মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং কোন মুসলিমের সাথে লড়াই করব কুফরী’’।[2] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহকে কুফরী বলে সাব্যস্ত করেছেন এবং যারা তাতে লিপ্ত হবে তাদেরকে কাফের বলেছেন। অথচ আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِنْ فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ (9) إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
‘‘মুমিনদের দুই দল যদি দ্বন্দে লিপ্ত হয়, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। যদি তাদের একদল আরেক দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করে, তবে তোমরা বাড়াবাড়িকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে, যদি তারা ফিরে আসে, তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফয়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও’’। (সূরা হুজরাতঃ ৯-১০)
এই আয়াতের মধ্যে আল্লাহ্ তাআলা যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হওয়া সত্বেও তাদের জন্যে ঈমান ও ঈমানের বন্ধন বলবৎ রেখেছেন। তাদের থেকে ঈমান দূর হয়ে গেছে এ কথা বলেন নি। আল্লাহ্ তাআলা কিসাসের আয়াতে বলেনঃ
فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاءٌ إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ
‘‘কিন্তু কেউ যদি তার ভাই কর্তৃক কোন বিষয়ে ক্ষমা প্রাপ্ত হয়, তবে যেন ন্যায় সঙ্গতভাবে তাগাদা করা হয় এবং সদ্ভাবে তা পরিশোধ করা হয়’’। (সূরা বাকারাঃ ১৭৮) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(لاَ يَزْنِي الزَّانِي حِينَ يَزْنِي وَهُوَ مُؤْمِنٌ ولاَ يَسْرِقُ حِينَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِينَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوضَةٌ بَعْدُ)
‘‘যেনাকারী যখন যেনা করে তখন সে মুমিন থাকে না, এমনিভাবে চোর যখন চুরি করে তখন সে মুমিন থাকে না। একই অবস্থা মদ পানকারীর। সে মদ পান করা অবস্থায় মুমিন থাকে না। এর পরও তার জন্য তাওবার দরজা উন্মুক্ত থাকে।[3] অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘যখন কোন হত্যাকারী কাউকে হত্যা করে, হত্যা করার সময় সে মুমিন থাকে না’’। অন্য বর্ণনায় আছে, ছিনতাইকারী যখন কোন মূল্যবান জিনিনষ ছিনতাই করে নেয়, যার দিকে লোকেরা দৃষ্টি উঁচু করে দেখে তখন সে মুমিন থাকে না’’।[4] আবু যার্ (রাঃ)এর হাদীছে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلاَّ دَخَلَ الْجَنَّةَ قُلْتُ : وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ قَالَ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ عَلَى رَغْمِ أَنْفِ أَبِي ذَرٍّ)
‘‘যে কোন বান্দা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করবে অতঃপর এরই উপর মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবু যার্ (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে। আবু যার্ রা বলেনঃ আমি বললামঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে। আবু যার্ (রা) বলেনঃ আমি বললামঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ যদিও সে যেনা করে, যদিও সে চুরি করে। এতে আবু যার্ অসন্তুষ্ট হলেও।[5]
হাদীছটি প্রমাণ করে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেনাকারী, চোর, মদ্যপায়ী এবং খুনীদেরকে ঈমান থেকে সম্পূর্ণরূপে বের করে দেন নি। বিশেষ করে যখন তাদের ভিতরে তাওহীদের বিশ্বাস বহাল থাকবে। কেননা উপরোক্ত গুনাহ্গুলোতে লিপ্ত ব্যক্তি ঈমান থেকে বের হয়ে গেল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলতেন না যে, ‘‘যে কোন বান্দা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ পাঠ করবে অতঃপর এরই উপর মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’। যদিও সে উক্ত পাপের কাজে লিপ্ত হয়ে থাকে। সুতরাং মুমিন ব্যক্তি ব্যতীত কোন মানুষই জান্নাতে যেতে পারবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কথার মাধ্যমে ঈমানের ত্রুটি উদ্দেশ্য করেছেন ও পরিপূর্ণ মুমিন হওয়াকে অস্বীকার করেছেন। তবে আল্লাহ্ তাআলা যেসমস্ত পাপের কাজে লিপ্ত হওয়া হারাম করেছেন, বান্দা হালাল মনে করে তাতে লিপ্ত হলে, সে অবশ্যই কাফের হয়ে যাবে। কেননা এতে হারামকে হালাল মনে করা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শামিল। শুধু তাই নয়, পাপ কাজে লিপ্ত হওয়াকে হালাল বিশ্বাস করে তাতে লিপ্ত না হলেও কাফের হিসাবে গণ্য হবে। আল্লাহ্ তাআলাই অধিক অবগত।
[2] - বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আশরিবাহ।
[4] - উপরোক্ত তথ্যসূত্র।
[5] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।