উত্তরঃ এ কথা ভালভাবে বুঝে নিন যে, কুরআন ও হাদীছে আল্লাহর যে ইরাদাহ বা ইচ্ছার কথা উল্লেখিত হয়েছে তা দুই প্রকার। যথাঃ
(১) ইরাদাহ কাওনীয়া কাদ্রীয়া (সৃষ্টি ও নির্ধারণ করার ইচ্ছা)। এটি আল্লাহর এমন ইচ্ছা, যা তাঁর ভালবাসা এবং পছন্দকে আবশ্যক করে না। কুফরী, ঈমান, আনুগত্য, পাপাচারিত, সন্তুষ্টি, ভালবাসা, পছন্দনীয় এবং অপছন্দনীয় সবই এ প্রকার ইচ্ছার অন্তর্ভূক্ত। কোন ব্যক্তিই আল্লাহর এ প্রকার ইচ্ছার বাইরে কিছু করতে পারে না এবং তা হতে পালানোর কোন সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
فَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يَهدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلإسْلاَمِ وَمَنْ يُرِدْ أَنْ يُضِلَّهُ يَجْعَلْ صَدْرَهُ ضَيِّقًا حَرَجًا
‘‘অতএব আল্লাহ্ যাকে হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্যে তার অন্তকরণ খুলে দেন। আর যাকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছা করেন, তার অন্তকরণ খুব সংকুচিত করে দেন’’। (সূরা আন-আমঃ ১২৫) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ
وَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ فِتْنَتَهُ فَلَنْ تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللَّهِ شَيْئًا أُولَئِكَ الَّذِينَ لَمْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْ
‘‘আল্লাহ্ যাকে ফিতনায় ফেলতে চান, তার জন্যে আল্লাহর কাছে কিছুই করার নেই। ওরা হল সেই লোক, যাদের অন্তরসমূহকে আল্লাহ্ পবিত্র করার ইচ্ছা পোষণ করেন নি’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৪১) এছাড়াও আরো আয়াত রয়েছে।
(২) ইরাদা শারঈয়া ও দ্বীনিয়া (শরীয়ত গত ইচ্ছা)। আল্লাহর যে ইচ্ছা সন্তুষ্টি ও ভালবাসার সাথে সম্পৃক্ত, তাকে ইরাদাহ শরঈয়া বলা হয়। অর্থাৎ আল্লাহ তাআ’লা কোন জিনিষকে ভালবেসে যে ইচ্ছা পোষাণ করেন তাকে ইরাদাহ শরঈয়া বলা হয়। এ ইচ্ছার কারণেই আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদেরকে আদেশ দিয়েছেন ও নিষেধ করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلاَ يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ
‘‘আল্লাহ্ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের পক্ষে যা কঠিন, তা তিনি চান না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৮৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يُرِيدُ اللَّهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمْ وَيَهْدِيَكُمْ سُنَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَيَتُوبَ عَلَيْكُمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
‘‘আল্লাহ্ তোমাদের জন্য বর্ণনা করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীগণের আদর্শসমূহ প্রদর্শন করতে এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করতে ইচ্ছা করেন। আল্লাহ্ মহাজ্ঞানী ও প্রজ্ঞাময়’’। (সূরা নিসাঃ ২৬) এ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহর এপ্রকার ইচ্ছা তথা শরীয়ত গত ইচ্ছা শুধু তার ক্ষেত্রেই বাস্তবায়িত হবে, যার ক্ষেত্রে সৃষ্টিগত ইচ্ছা বাস্তবায়িত হয়েছে। আনুগত্যকারী মুমিনের মধ্যে ইরাদাহ কাওনীয়া ও শরঈয়া উভয়ই একত্রিত হয়ে থাকে। আর কাফেরের ক্ষেত্রে শুধু আল্লাহর সৃষ্টিগত ইচ্ছাই বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। আল্লাহ্ তাআলা তাঁর সকল বান্দাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের আহবান জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে হতে যাকে ইচ্ছা তাকেই আহবানে সাড়া দেয়ার পথ দেখিয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَاللَّهُ يَدْعُو إِلَى دَارِ السَّلاَمِ وَيَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
‘‘আর আল্লাহ্ তোমাদেরকে শান্তির আবাস্থল তথা জান্নাতের দিকে আহবান করেন এবং যাকে ইচ্ছা সরল পথে চলার ক্ষমতা দান করেন’’। (সূরা ইউনুসঃ ২৫) সুতরাং তিনি সকলকে আহবান জানিয়েছেন, কিন্তু যাকে ইচ্ছা কেবল তাকেই হেদায়াত নসীব করেছেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ اهْتَدَى
‘‘নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালকই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথের উপর রয়েছে’’। (সূরা নাজম ৩০)