উত্তরঃ সকল আসমানী কিতাব এবং নবীর সুন্নাতসমূহ এ ব্যাপারে একমত যে, পূর্বেই তাকদীরের লিখন আমলের প্রতিবন্ধক নয়। এমনভাবে তাকদীরের উপর ভরসা করে বসে থাকাও আবশ্যক করে না; বরং চেষ্টা ও পরিশ্রম করার প্রতি এবং সৎআমল করার প্রতি উৎসাহ যোগায়। একারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথীদেরকে পূর্বেই তাকদীর লিখার, তা বাস্তবায়ন হওয়া এবং কলম শুকিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। এগুলো শুনে কোন কোন সাহাবী বলে উঠলেনঃ তাহলে কি আমরা আমল ছেড়ে দিয়ে তাকদীরের লিখার উপর ভরসা করে বসে থাকব না? উত্তরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ না, বরং আমল করতে থাক। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির জন্যে তার আমল সহজ করে দেয়া হবে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
فَأَمَّا مَنْ أَعْطَى وَاتَّقَى
‘‘অতএব, যে দান করে এবং আল্লাহ ভীরু হয়’’। (সূরা লাইলঃ ৫)
সুতরাং আল্লাহ্ তাআলা তাকদীর নির্ধারণ করেছেন এবং তাকদীরের লিখন বাস্তবায়ন করার জন্য অসংখ্য উপকরণ তৈরী করেছেন। দুনিয়া ও আখেরাতের জন্যে কাজ করার পথ সহজ করতে তিনি যে উপকরণ সৃষ্টি করেছেন তাতে তিনি মহা প্রকৌশলী। আল্লাহ্ তাআ’লা তাঁর প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য সেই পথই সহজ করে দিয়েছেন, যার জন্য তাঁকে তিনি সৃষ্টি করেছেন।
বান্দা যখন জানতে পারবে যে, আখেরাতে তার জন্যে নির্ধারিত কল্যাণ অর্জন করতে হলে তাকে অবশ্যই সৎকর্ম সম্পাদন করতে হবে, তখন সৎকাজে তথা আখেরাতের কল্যাণ অর্জনে কঠোর পরিশ্রম করবে। শুধু তাই নয়; বরং দুনিয়ার জীবিকা ও স্বার্থ অর্জনের চেয়ে আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের ক্ষেত্রে অধিক শ্রম ব্যয় করবে।
তাকদীরের হাদীছগুলো শুনে ঐ সাহাবী তাকদীরের বিষয়টি পরিপূর্ণরূপে বুঝতে সক্ষম হয়েছিল, যিনি বলেছিলেনঃ ‘‘আজ থেকে আমি পূর্বের চেয়ে আরো অধিক পরিশ্রম (আমল) করব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ وَاسْتَعِنْ بِاللَّهِ وَلاَ تَعْجَزْ)
‘‘যে বিষয়টি তোমার উপকারে আসবে, তা অর্জনে সচেষ্ট হও, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাও, অপরাগতা প্রকাশ করো না।[1] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে যখন বলা হলঃ আমরা তো ঔষধের মাধ্যমে চিকিৎসা করি এবং ঝাড়-ফুঁক করি। এটা কি তাকদীরের কোন কিছু পরিবর্তন করতে পারে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ
إِنَّهَا مِنْ قَدَرِ اللَّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى
‘‘এটিও অর্থাৎ চিকিৎসা করা ঝাড়-ফুক করাও আল্লাহ্ তাআলার পক্ষ হতে তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে’’।[2] মোট কথা আল্লাহ্ তাআ’লা কল্যাণ-অকল্যাণ সবই নির্ধারণ করেছেন এবং উভয়টি অর্জনের উপকরণ তৈরী ও নির্ধারণ করেছেন।
[2] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তিবব। ইমাম তিরমিযী (রঃ) বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।