উত্তরঃ অঙ্গিকার গ্রহণের দিবসে সমগ্র মানব জাতির তাকদীর নির্ধারনের অনেক দলীল রয়েছে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বললঃ হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী থাকলাম’’। (সূরা আরাফঃ ১৭২)
ইসহাক বিন রাহুয়াই বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল! কে কি আমল করবে তা কি নতুনভাবে শুরু হবে? না পূর্বেই ফয়সালা ও নির্ধারিত হয়ে গেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ আল্লাহ্ তাআলা যখন আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তার সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানালেন। অতঃপর তাদের সকলকে স্বীয় হাতের মুষ্ঠিতে নিয়ে বললেনঃ এরা জান্নাতের অধিবাসী আর এরা জাহান্নামের অধিবাসী। সুতরাং জান্নাতবাসীদের জন্য জান্নাতের আমল সহজ করে দেয়া হবে আর জাহান্নামীদের জন্যে জাহান্নামের আমল সহজ করে দেয়া হবে।[1]
মুআত্তা ইমাম মালেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদা উমার ইবনুল খাত্তাবকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলঃ
وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِنْ بَنِي آدَمَ مِنْ ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَى أَنْفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ قَالُوا بَلَى شَهِدْنَا أَنْ تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَذَا غَافِلِينَ
‘‘স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা যখন আপনার প্রতিপালক বনী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের সন্তানদেরকে বের করলেন এবং তাদেরকেই তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বললঃ হ্যাঁ, আমরা সাক্ষী থাকলাম। (এই স্বীকৃতি ও সাক্ষী গ্রহণ এই জন্যে যে) যাতে তোমরা কিয়ামতের দিন বলতে না পার আমরা এবিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম’’। (সূরা আরাফঃ ১৭২) উমার (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেও এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তিনি বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা আদমকে সৃষ্টি করে তাঁর পৃষ্ঠদেশে হাত বুলালেন। অতঃপর তার পৃষ্ঠদেশ হতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করে বললেনঃ আমি এদেরকে জাহান্নামের জন্যে সৃষ্টি করেছি। তবে জাহান্নামীদের আমলের ন্যায়ই এরা আমল করবে।[2]
তিরমিযীতে আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন। তাঁর হাতে ছিল দু’টি কিতাব। তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এ কিতাব দু’টির বিষয় বস্ত্ত কি? তাঁরা বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমরা জানি না, তবে আপনি যদি আমাদেরকে জানিয়ে দিন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ডান হাতের কিতাব সম্পর্কে বললেনঃ এই কিতাবটি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে। তাতে রয়েছে পিতার নাম ও গোত্রের নামসহ সমস্ত জান্নাতবাসীর নাম। অতঃপর তাদের সর্বশেষ নাম লিখার পর যোগফল নামানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কাউকে বাড়ানো বা তাদের মধ্যে হতে কাউকে কমানো হবে না। তারপর বাম হাতের কিতাব সম্পর্কে বললেনঃ এই কিতাবটি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহর পক্ষ হতে। তাতে রয়েছে পিতার নাম ও গোত্রের নামসহ সমস্ত জাহান্নামীর নাম। অতঃপর তাদের সর্বশেষ নাম লিখার পর যোগফল নামানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কাউকে বাড়ানো বা তাদের মধ্যে হতে কাউকে কমানো হবে না। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! ব্যাপারটি যদি এরকমই হয়ে থাকে, তাহলে আমলের প্রয়োজন কি? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তোমরা সঠিক পথের উপর অটল থাক এবং নিকটবর্তী হও। কেননা জান্নাতবাসীর শেষ পরিণতি হবে জান্নাতীদের আমলের মাধ্যমে। এর পূর্বে সে যে আমলই করুক না কেন। আর জাহান্নামীর শেষ পরিণতি হবে জাহান্নামবাসীর আমলের মাধ্যমে। এরপূর্বে সে যে আমলই করুক না কেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাত দিয়ে ইঙ্গিত করলেন এবং কিতাব দু’টি ফেলে দিয়ে বললেনঃ তোমাদের প্রতিপালক বান্দাদের বিষয়টি সমাপ্ত করে ফেলেছেন। একদল জান্নাতী এবং অন্যদল জাহান্নামী।[3]
[2] - ইমাম মালেক (রঃ) হাদিছটি তাকদীর অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযী কিতাবুত্ তাফসীরে উল্লেখ করে বলেনঃ হাদীছটি হাসান। তবে ইমাম আলবানী যঈফ বলেছেন। দেখুন যিলাযল জান্নাহ, হাদীছ নং- ১৯৬।
[3] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল কাদর। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ গরীব। ইমাম আলবানী হাদীছটি সহীহ বলেছেন। দেখুন সিলসিলায়ে সহীহা, (২/৫২৮)