উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআলা তাঁর কিতাবের অনেক জায়গায় কঠিন শর্তসাপেক্ষে শাফাআতের কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন যে, শাফাআতের একমাত্র মালিক তিনি। তাতে কারো সামান্যতম অধিকার নেই। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
قُلْ لِلَّهِ الشَّفَاعَةُ جَمِيعًا
‘‘হে নবী আপনি বলে দিনঃ সমস্ত সুপারিশ একমাত্র আল্লাহর জন্যই’’। (সূরা যুমারঃ ৪৪) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ
‘‘কে আছে আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার তাঁর অনুমতি ব্যতীত?’’ (সূরা বাকারাঃ ২৫৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَا مِنْ شَفِيعٍ إلاَّ مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ
‘‘আল্লাহর অনুমতির পূর্বে কেউ সুপারিশ করতে পারবে না’’। (সূরা ইউনুসঃ ৩) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَكَمْ مِنْ مَلَكٍ فِي السَّمَوَاتِ لاَ تُغْنِي شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا إِلاَّ مِنْ بَعْدِ أَنْ يَأْذَنَ اللَّهُ لِمَنْ يَشَاءُ وَيَرْضَى
‘‘আকাশে অনেক ফেরেশতা আছে। তাদের সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। যতক্ষণ আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন’’। (সূরা আন-নাজমঃ ২৬) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَلاَ تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ عِنْدَهُ إلاَّ لِمَنْ أَذِنَ لَهُ
‘‘যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়, তার সুপারিশ ব্যতীত আল্লাহর কাছে কারো সুপারিশ ফলপ্রসু হবে না’’। (সূরা সাবাঃ ২৩)
প্রশ্ন রয়ে গেল কে সুপারিশ করবে? আল্লাহ্ যেমন বলেছেন যে, তাঁর অনুমতি ব্যতীত কেউ শাফআত করতে পারবে না, তেমনিভাবে আল্লাহ্ এও বলেছেন যে, সুপারিশের অনুমতি কেবল তাঁর নির্বাচিত ও প্রিয় বন্ধুগণই পাবেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
يَوْمَ يَقُومُ الرُّوحُ وَالْمَلاَئِكَةُ صَفًّا لاَ يَتَكَلَّمُونَ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَقَالَ صَوَابًا
‘‘যেদিন রূহ অর্থাৎ জিবরীল (আঃ) ও ফেরেশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে। দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি দিবেন, সে ব্যতীত অন্য কেউ কথা বলতে পারবে না এবং সে সত্য বলবে’’। (সূরা আন-নাবাঃ ৩৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
لاَ يَمْلِكُونَ الشَّفَاعَةَ إِلاَّ مَنِ اتَّخَذَ عِنْدَ الرَّحْمَنِ عَهْدًا
‘‘যিনি দয়াময় আল্লাহর নিকট হতে প্রতিশ্রুতি নিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবে না’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৮৭)
আরো প্রশ্ন রয়ে গেল যে, সুপারিশ কার জন্যে হবে? আল্লাহ্ তাআলা কুরআন মাজীদে সংবাদ দিয়েছেন যে, যার উপর তিনি সন্তুষ্ট থাকবেন, কেবল তার জন্যেই সুপারিশের অনুমতি দিবেন। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
وَلَا يَشْفَعُونَ إِلَّا لِمَنْ ارْتَضَى
‘‘তারা কেবল তাদের জন্যই সুপারিশ করবেন, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট আছেন’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ২৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
يَوْمَئِذٍ لاَ تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ إِلاَّ مَنْ أَذِنَ لَهُ الرَّحْمَنُ وَرَضِيَ لَهُ قَوْلاً
‘‘দয়াময় আল্লাহ্ যাকে অনুমতি ও যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত কারো সুপারিশ সেদিন কোন কাজে আসবে না’’। (সূরা তোহাঃ ১০৯)
ইহা জানা কথা যে, সঠিক তাওহীদের অনুসারী ব্যতীত আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কারো প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلاَ شَفِيعٍ يُطَاعُ
‘‘যালিমদের জন্যে কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং এমন কোন সুপারিশকারী নেই, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে’’। (সূরা গাফেরঃ ১৮) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَمَا لَنَا مِنْ شَافِعِينَ * وَلا صَدِيقٍ حَمِيمٍ
‘‘পরিণামে আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই এবং কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুও নেই’’। (সূরা শুআরাঃ ১০০-১০১) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
فَمَا تَنْفَعُهُمْ شَفَاعَةُ الشَّافِعِينَ
‘‘সেদিন সুপারিশ কারীদের সুপারিশ তাদের কোন কাজে আসবে না’’। (সূরা মুদ্দাচ্ছিরঃ ৪৮)
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তাঁকে সুপারিশের অনুমতি দেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেছেন যে, তিনি আরশের নীচে সিজদায় পড়ে তাঁর প্রতিপালকের এমন প্রশংসা করবেন, যা সেই সময় বিশেষভাবে তাঁকে শেখানো হবে। তিনি প্রথমেই সুপারিশ করবেন না। যতক্ষণ না তাঁকে বলা হবেঃ আপনি মাথা উঠান। কথা বলুন। আপনার কথা শ্রবণ করা হবে। আপনি প্রার্থনা করুন। আপনাকে প্রদান করা হবে। সুপারিশ করুন। আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে।[1]
তিনি আরো বলেছেন যে, সকল তাওহীদপন্থী গুনাহ্গারদের জন্য তিনি একবারই সুপারিশ করবেন না; বরং তিনি বলেছেনঃ আমার জন্যে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। তাদেরকে আমি জান্নাতে প্রবেশ করাবো।[2] তিনি পুনরায় ফেরত গিয়ে অনুরূপভাবে সিজদায় পড়বেন। পুনরায় তাঁর জন্যে নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এভাবে হাদীছের শেষ পর্যন্ত। আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেনঃ
(مَنْ أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِكَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ: مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ)
‘‘কোন্ ব্যক্তি আপনার শাফাআত পেয়ে সবচেয়ে বেশী ধন্য হবে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি অন্তর থেকে একনিষ্ঠভাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করবে, সেই হবে আমার শাফাআত লাভ করে সবচেয়ে বেশী ধন্য’’।
>[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।