উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআ’লা জান্নাত চিরস্থায়ী হওয়ার ব্যাপারে বলেনঃ
خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
‘‘তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটি হচ্ছে বিরাট সফলতা’’। (সূরা তাওবাঃ ১০০) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
وَمَا هُمْ مِنْهَا بِمُخْرَجِينَ
‘‘তাদেরকে সেখান থেকে বের করা হবে না’’। (সূরা হিজরঃ ৪৮) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
عَطَاءً غَيْرَ مَجْذُوذٍ
‘‘ওটা হবে অফুরন্ত দান’’। (সূরা হুদঃ ১০৮) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
لاَ مَقْطُوعَةٍ وَلاَ مَمْنُوعَةٍ
‘‘জান্নাতের ফল শেষ হবে না এবং তা নিষিদ্ধও হবে না’’। (সূরা আল-ওয়াকিয়াঃ ৩৩) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
إِنَّ هَذَا لَرِزْقُنَا مَا لَهُ مِنْ نَفَادٍ
‘‘এটা আমার দেয়া রিযিক। তা কখনও শেষ হবে না’’। (সূরা সোয়াদঃ ৫৪) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٍ(51)فِي جَنَّاتٍ وَعُيُونٍ(52)يَلْبَسُونَ مِنْ سُندُسٍ وَإِسْتَبْرَقٍ مُتَقَابِلِينَ(53)كَذَلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُورٍ عِينٍ(54)يَدْعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ آمِنِينَ(55)لَا يَذُوقُونَ فِيهَا الْمَوْتَ إِلَّا الْمَوْتَةَ الْأُولَى
‘‘নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে। বাগান ও ঝর্ণার মধ্যে। তাঁরা পরিধান করবে চিকন ও মোটা রেশমী পোষাক এবং তারা মুখোমুখী হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে। এবং তাদেরকে সঙ্গীনি দিব বড় বড় চক্ষু বিশিষ্ট পরমা সুন্দরী। সেখানে তারা প্রশান্ত চিত্তে বিবিধ ফল-মূল আনতে বলবে। প্রথম মৃত্যুর পর তারা সেখানে আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না’’। (সূরা দুখানঃ ৫১-৫৫) এছাড়া আরো আয়াত রয়েছে, যাতে আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের চিরস্থায়ী হওয়ার কথা বলেছেন। এও বলেছেন যে, জান্নাতের নেয়ামত তাদের থেকে কখনও শেষ হবে না এবং তারা জান্নাত থেকে কখনও বেরও হবে না।
জাহান্নামের ক্ষেত্রেও একই কথা। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَظَلَمُوا لَمْ يَكُنْ اللَّهُ لِيَغْفِرَ لَهُمْ وَلَا لِيَهْدِيَهُمْ طَرِيقًا إِلَّا طَرِيقَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا
‘‘নিশ্চয়ই যারা অবিশ্বাস করেছে এবং যুলুম করেছে, আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে সুপথ প্রদর্শন করবেন না। জাহান্নামের পথ ব্যতীত। সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৮-১৬৯) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
إِنَّ اللَّهَ لَعَنَ الْكَافِرِينَ وَأَعَدَّ لَهُمْ سَعِيرًا * خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا لاَ يَجِدُونَ وَلِيًّا وَلاَ نَصِيرًا
‘‘আল্লাহ্ কাফেরদেরকে লা’নত করেছেন এবং তাদের জন্যে প্রস্ত্তত রেখেছেন জ্বলন্ত অগ্নি। সেখানে তারা চিরস্থায়ী থাকবে এবং তারা কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী পাবে না’’। (সূরা আহজাবঃ ৬৪-৬৫) আল্লাহ্ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا
‘‘যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরোধীতা করে, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’’। (সূরা জিনঃ ২৩) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ
‘‘তারা জাহান্নাম থেকে উদ্ধার পাবে না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৭) আল্লাহ্ তাআ’লার বাণীঃ
(لاَ يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ
‘‘তাদের আযাব হালকা করা হবে না। তারা সেখানে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে’’। (সূরা যুখরুফঃ ৭৫) আল্লাহ্ তাআলা’র বাণীঃ
وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ
‘‘আর যারা কুফরী করে তাদের জন্যে আছে জাহান্নামের আগুন। তাদের মৃত্যুর ফয়সালা হবে না যে, তারা মরবে এবং তাদের জন্য জাহান্নামের শাস্তি লাঘব হবে না। এভাবে আমি প্রত্যেক কাফেরকে শাস্তি দিয়ে থাকি’’। (সূরা ফাতিরঃ ৩৬) আল্লাহ্ তাআলার বাণীঃ
إِنَّهُ مَنْ يَأْتِ رَبَّهُ مُجْرِمًا فَإِنَّ لَهُ جَهَنَّمَ لاَ يَمُوتُ فِيهَا وَلاَ يَحْيَا
‘‘যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের নিকট অপরাধী হয়ে উপস্থিত হবে, তার জন্য তো আছে জাহান্নাম। তাতে সে মরবেও না, বাঁচবেও না’’। (সূরা তোহাঃ ৭৪) এছাড়া আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
আল্লাহ্ তাআলা উপরোক্ত আয়াত এবং অনুরূপ অন্যান্য আয়াতে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, যারা জাহান্নামের আসল বাসিন্দা তাদের জন্যই জাহান্নাম সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদেরকেও জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। সুতরাং আল্লাহ্ তা’আলা তাদের বের হওয়াকে নাকচ করে বলেনঃ (وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنَ النَّارِ) ‘‘তারা জাহান্নাম থেকে উদ্ধার পাবে না’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৭) তাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি মুলতবী বা হালকা করা হবে না। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ (لاَ يُفَتَّرُ عَنْهُمْ وَهُمْ فِيهِ مُبْلِسُونَ) ‘‘তাদের থেকে আযাব হালকা করা হবে না। তারা সেখানে নিরাশ হয়ে পড়ে থাকবে’’। (সূরা যুখরুফঃ ৭৫) জাহান্নামে তারা মরবেও না। আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ لاَ يَمُوتُ فِيهَا وَلاَ يَحْيَا)) ‘‘তাতে সে মরবেও না, বাঁচবেও না’’। (সূরা তোহাঃ ৭৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(أَمَّا أَهْلُ النَّارِ الَّذِينَ هُمْ أَهْلُهَا فَإِنَّهُمْ لاَ يَمُوتُونَ فِيهَا وَلاَ يَحْيَوْنَ)
‘‘যারা জাহান্নামের আসল বাসিন্দা তারা তাতে মরবেও না, বাঁচবেও না’’।[1] ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
(إِذَا صَارَ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلَى الْجَنَّةِ وَأَهْلُ النَّارِ إِلَى النَّارِ جِيءَ بِالْمَوْتِ حَتَّى يُجْعَلَ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ثُمَّ يُذْبَحُ ثُمَّ يُنَادِي مُنَادٍ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ لَا مَوْتَ وَيَا أَهْلَ النَّارِ لَا مَوْتَ فَيَزْدَادُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَرَحًا إِلَى فَرَحِهِمْ وَيَزْدَادُ أَهْلُ النَّارِ حُزْنًا إِلَى حُزْنِهِمْ)
‘‘যখন জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে চলে যাবেন এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন (সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের ভেড়ার আকৃতিতে) মৃত্যুকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি স্থানে রেখে যবেহ করে ঘোষণা করা হবেঃ হে জান্নাতবাসীগণ! তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। এখানে তোমরা অনাদিকাল পর্যন্ত অবস্থান করবে। ওহে জাহান্নামীরা! তোমরা চিরকাল এ কঠিন আযাব ভোগ করবে। তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। একথা শুনে বেহেশতবাসীদের আনন্দ ও খুশী আরও বেড়ে যাবে এবং জাহান্নামীদের দুঃখ ও পেরেশানী আরও বৃদ্ধি পাবে।[2] অন্য বর্ণনায় আছে প্রত্যেকেই আপন আপন অবস্থায় চিরকাল থাকবে। অন্য বর্ণনায় আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ
وَأَنْذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لاَ يُؤْمِنُونَ
‘‘আপনি তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে ভয় দেখান। যেদিন সকল বিষয়ের ফয়সালা হবে। তারা গাফেল হয়ে পড়ে আছে। তাই তারা ঈমান আনছে না’’। (সূরা মারইয়ামঃ ৩৯)[3] উল্লেখিত হাদীছগুলো ব্যতীত এবিষয়ে আরো হাদীছ রয়েছে।
[2] -বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।
[3] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।