উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরী করা হয়েছে এবং তা এখনও প্রস্ত্তত আছে। জান্নাতের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ
‘‘জান্নাত মুত্তাকীদের জন্য তৈরী রাখা হয়েছে’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৩৩) আল্লাহ্ তাআলা জাহান্নামের ব্যাপারে বলেনঃ
أُعِدَّتْ لِلْكَافِرِينَ
‘‘জাহান্নাম কাফেরদের জন্য প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে’’। (সূরাঃ আল-ইমরানঃ ১৩১) আল্লাহ্ তাআলা আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত আদম ও তাঁর স্ত্রীকে জান্নাতে স্থান দিয়েছিলেন। আরো সংবাদ দিয়েছেন যে, কাফেরদেরকে সকাল-বিকালে জাহান্নামের উপর পেশ করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
(اطَّلَعْتُ فِي الْجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الْفُقَرَاءَ وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ)
‘‘আমি জান্নাত দেখলাম। তার অধিকাংশ অধিবাসীকেই দেখলাম যে, তারা গরীব লোক। আর আমি জাহান্নামও দেখলাম। তার অধিকাংশ অধিবাসীই ছিল মহিলা’’।[1] আব্দুল্লাহ্ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
(إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا مَاتَ عُرِضَ عَلَيْهِ مَقْعَدُهُ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ إِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَمِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ وَإِنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَمِنْ أَهْلِ النَّارِ فَيُقَالُ هَذَا مَقْعَدُكَ حَتَّى يَبْعَثَكَ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ)
‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের কেউ যখন মারা যায় তখন সকাল-সন্ধ্যায় তার সামনে তার ঠিকানা পেশ করা হয়। সে জান্নাতের অধিবাসী হলে জান্নাতে আর জাহান্নামী হলে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়। এটিই হচ্ছে তোমার ঠিকানা। কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হওয়ার পর আল্লাহ্ তোমাকে এখানে পাঠাবেন।[2] আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ
(إِذَا اشْتَدَّ الْحَرُّ فَأَبْرِدُوا بِالصَّلَاةِ فَإِنَّ شِدَّةَ الْحَرِّ مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ)
‘‘যখন প্রচন্ড গরম পড়বে তখন তোমরা দেরী করে যোহরের নামায আদায় কর। কেননা গরমের প্রচন্ডতা জাহান্নামের উত্তাপ থেকেই’’।[3] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
وَاشْتَكَتْ النَّارُ إِلَى رَبِّهَا فَقَالَتْ يَا رَبِّ أَكَلَ بَعْضِي بَعْضًا فَأَذِنَ لَهَا بِنَفَسَيْنِ نَفَسٍ فِي الشِّتَاءِ وَنَفَسٍ فِي الصَّيْفِ فَهُوَ أَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنْ الْحَرِّ وَأَشَدُّ مَا تَجِدُونَ مِنْ الزَّمْهَرِيرِ
‘‘জাহান্নামের আগুন তার প্রভুর কাছে অভিযোগ করে বললঃ হে আমার প্রতিপালক! আমার এক অংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলছে। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে দু’টি নিঃশ্বাস ফেলার অনুমতি প্রদান করলেন। একটি শীতের মৌসুমে অন্যটি গরমের মৌসুমে। সুতরাং গরমের মৌসুমে তোমরা প্রচন্ড গরম এবং শীতের মৌসুমে প্রচন্ড শীত অনুভব করে থাক।[4] তিনি আরো বলেনঃ
(الْحُمَّى مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَأَبْرِدُوهَا بِالْمَاءِ)
‘‘জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। সুতরাং পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর’’।[5]
( لَمَّا خَلَقَ اللَّهُ الْجَنَّةَ وَالنَّارَ أَرْسَلَ جِبْرِيلَ إِلَى الْجَنَّةِ فَقَالَ انْظُرْ إِلَيْهَا)
‘‘আল্লাহ্ তাআলা জান্নাত ও জাহান্নাম সৃষ্টি করে জিবরীলকে জান্নাতে পাঠালেন এবং বললেনঃ তুমি যাও এবং তা দেখ’’।[6]
সূর্য গ্রহণের দিন নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট জান্নাত ও জাহান্নাম পেশ করা হয়েছিল। এমনিভাবে মিরাজের রাত্রিতেও তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নাম দেখানো হয়েছিল। জান্নাত ও জাহান্নাম তৈরী আছে এমর্মে আরো অগণিত হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে।
[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।
[3] বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাওয়াকীত।
[4] বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাওয়াকীত।
[5] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তিবব।
[6] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ সিফাতুল জান্নাত। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি হাসান সহীহ।