প্রশ্নঃ (৯৯) অন্যান্য নবীর তুলনায় আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর বৈশিষ্ট কী?

উত্তরঃ আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক বৈশিষ্ট রয়েছে। এ বিষয়ে স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করা হয়েছে। তাঁর বৈশিষ্ট হচ্ছে, তিনি সর্বশেষ নবী। যেমন আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি।

তিনি সমস্ত আদম সন্তানের সর্দার। নিম্নের আয়াতের তাফসীরে এ কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِنْهُمْ مَنْ كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ

‘‘এই সকল রাসূল-আমি তাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা দিয়েছি। তাদের মধ্যে আল্লাহ কারো সাথে কথা বলেছেন এবং কাউকে পদ মর্যাদায় সমুন্নত করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ وَلاَ فَخْرَ)

‘‘আমি আদম সন্তানের নেতা। তবে এটি কোন অহংকারের কথা নয়’’।[1]

আমাদের নবীর অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে, তিনি সমস্ত মানব জাতি ও জিন জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছেন। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا

‘‘হে নবী! আপনি বলুনঃ আমি তোমাদের সকলের প্রতি আল্লাহ্ প্রেরিত রাসূল’’। (সূরা আ’রাফঃ ১৫৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ كَافَّةً لِلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا

‘‘আমি আপনাকে সমগ্র মানব জাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি’’। (সূরা সাবাঃ ২৮) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেনঃ

(أُعْطِيتُ خَمْسًا لَمْ يُعْطَهُنَّ أَحَدٌ قَبْلِي نُصِرْتُ بِالرُّعْبِ مَسِيرَةَ شَهْرٍ وَجُعِلَتْ لِيَ الأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا فَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِي أَدْرَكَتْهُ الصَّلاَةُ فَلْيُصَلِّ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْمَغَانِمُ وَلَمْ تَحِلَّ لأَحَدٍ قَبْلِي وَأُعْطِيتُ الشَّفَاعَةَ وَكَانَ النَّبِيُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً)

‘‘আমাকে এমন পাঁচটি জিনিষ প্রদান করা হয়েছে, যা পূর্বের কোন নবীকে দেয়া হয়নি। (১) এক মাসের দূরত্ব পর্যন্ত শত্রু পক্ষের বিরুদ্ধে ভয়ের মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (২) সমগ্র যমীনের মাটি আমার জন্য পবিত্র এবং মসজিদ স্বরূপ করা হয়েছে। অতএব আমার উম্মতের কোন ব্যক্তির নিকট যদি নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তবে সে যেন উহা আদায় করে নেয়। (৩) আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করা হয়েছে। আমার পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি। (৪) আমাকে শাফাআ’তের অধিকার দেয়া হয়েছে। (৫) আমার পূর্বেকার নবীগণ প্রেরিত হতেন তাদের গোত্রের লোকদের নিকট। আর আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানব জাতির জন্য’’।[2] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ

(وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِيٌّ وَلاَ نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ)

‘‘ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, এই উম্মাতের যে কোন ব্যক্তি আমার ব্যাপারে শুনবে, চাই সে ইহুদী হোক বা নাসারা হোক, অতঃপর সে যদি আমার নিয়ে আসা বিষয়ের প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যু বরণ করে, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’’।[3] উপরোক্ত বিষয়গুলো ব্যতীত নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরো অনেক বৈশিষ্ট রয়েছে।

[1] - তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাফসীর, হাদীছ নং- ৩১৪৮। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুশ শাফাআহ, হাদীছ নং- ৪৩৬৩। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ হাদীছটি সহীহ।

[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত, মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।

[3] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।