উত্তরঃ কুরআন প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর কালাম বা বাণী। অক্ষরসমূহ এবং তার অর্থ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ হতে এসেছে। এ নয় যে, আল্লাহর কালাম বলতে শুধু কুরআনের শব্দগুলোকে বুঝায়। এমনিভাবে শব্দ ব্যতীত শুধু অর্থগুলোর নাম আল্লাহর কালাম নয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মাধ্যমে কথা বলেছেন এবং তাঁর নবীর উপর অহী আকারে তা নাযিল করেছেন। মু’মিনগণ তা বিশ্বাস করেছে।
সুতরাং আঙ্গুলের মাধ্যমে কুরআন লিখা, জবানের মাধ্যমে তা তেলাওয়াত করা, অন্তরের মাধ্যমে তা মুখস্থ করা, কান দিয়ে তা শুনা এবং চোখ দিয়ে দেখলেই তা আল্লাহর কালাম হওয়া থেকে বের হয়ে যায়না। আঙ্গুল, কালি, কলম এবং কাগজ এগুলোর সবই আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু এ সব দিয়ে যা লেখা হয়েছে তা সৃষ্টি নয়। ঠিক তেমনি জবান এবং আওয়াজ আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু জবান দিয়ে যা তেলাওয়াত করা হচ্ছে তা মাখুলক তথা সৃষ্টি নয়। বক্ষসমূহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু তাতে যে কুরআন সংরক্ষিত আছে, তা মাখলুক নয়। কানসমূহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু কান দিয়ে কুরআন আমরা শুনছি, তা মাখলুক নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ * فِي كِتَابٍ مَكْنُونٍ
‘‘নিশ্চয়ই এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে’’। (সূরা ওয়াকিয়াহঃ ৭৭-৭৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
بَلْ هُوَ آيَاتٌ بَيِّنَاتٌ فِي صُدُورِ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَمَا يَجْحَدُ بِآيَاتِنَا إِلاَّ الظَّالِمُونَ
‘‘বস্ত্ততঃ যাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছে, তাদের অন্তরে এটা স্পষ্ট নিদর্শন। যালিমরা ব্যতীত কেউ আমার নিদর্শন অস্বীকার করে না’’। (সূরা আনকাবুতঃ ৪৯) আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেনঃ
وَاتْلُ مَا أُوحِيَ إِلَيْكَ مِنْ كِتَابِ رَبِّكَ لاَ مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ
‘‘এবং আপনার প্রভুর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি অহী স্বরূপ যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা আপনি তেলাওয়াত করুন। আল্লাহর বাক্যসমূহ পরিবর্তন করার কেউ নেই’’। (সূরা কাহ্ফঃ ২৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَإِنْ أَحَدٌ مِنَ الْمُشْرِكِينَ اسْتَجَارَكَ فَأَجِرْهُ حَتَّى يَسْمَعَ كَلاَمَ اللَّهِ
‘‘আর যদি মুশরিকদের মধ্য হতে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দান কর, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়’’। (সূরা তাওবাঃ ৬)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেনঃ ‘‘তোমরা সর্বদা কুরআনের মধ্যে গবেষণা কর’’।[1] এ ব্যাপারে আরো অনেক দলীল রয়েছে। সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে কুরআন বা কুরআনের কোন অংশ মাখলুক সে কাফের। তার কুফরী এত বড় যে, তাকে সম্পূর্ণরূপে ইসলাম থেকে বের করে দিবে। কেননা কুরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম। তা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহর কাছে তা পুনরায় ফেরত যাবে। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতের অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং যে বলবে আল্লাহর কোন সিফাত বা গুণ মাখলুক, সে কাফের ও মুরতাদ। তাকে পুনরায় ইসলামে ফেরত আসতে বলা হবে। ফিরে আসলে তো ভাল, অন্যথায় তাকে কাফের হিসাবে হত্যা করা হবে। মুসলমানদের যেসমস্ত হক ও আহকাম রয়েছে তাতে তার কোন অংশ নেই।[2]
[2] - এ ব্যাপারে আরো জানতে চাইলে লেখকের আরেকটি অনন্য গ্রন্থ ‘মাআরেজুল কবুল’ প্রথম খন্ড ১৮৮ থেকে ২০৩ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পাঠ করুন।