প্রশ্নঃ (৬৬) আল্লাহ তা’আলা উপরে আছেন- হাদীছ থেকে এ কথার দলীল দিন

উত্তরঃ আল্লাহ্ তাআলা উপরে আছেন-হাদীছ শরীফে এ ব্যাপারে অগণিত দলীল রয়েছে।

(১) আওআলের হাদীছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(والعرش فوق ذلك والله فوق العرش وَهُوَ يَعْلَمُ مَا أَنتُمْ عَليْهِ)

‘‘তার উপর আল্লাহর আরশ। আর আল্লাহ্ আরশের উপরে। তিনি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন’’।[1]

আওআলের হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, আববাস বিন আব্দুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেনঃ আমরা একদা নবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে খোলা ময়দানে বসা ছিলাম। তখন আমাদের মাথার উপর দিয়ে একটি মেঘখন্ড অতিক্রম করার সময় তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান এটি কী? আমরা বললামঃ এটি একটি মেঘের খন্ড। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা কি জান আকাশ ও পৃথিবীর মাঝখানের দূরত্ব কতটুকু? আমরা বললামঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ উভয়ের মধ্যে রয়েছে পাঁচশত বছরের দূরত্ব। এমনি প্রত্যেক আকাশ ও তার পরবর্তী আকাশের মধ্যবর্তী দূরত্ব হচ্ছে পাঁচশত বছরের পথ। এভাবে সপ্তম আকাশের উপর রয়েছে একটি সাগর। সাগরের গভীরতা হচ্ছে আসমান ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। সাগরের উপরে রয়েছে আটটি ওয়া-ইল (পাহাড়ী পাঠা বা পাঠার আকৃতিতে আটজন ফেরেশতা)। তাদের হাঁটু থেকে পায়ের খুর পর্যন্ত দূরত্ব আসমান ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। তারা আল্লাহর আরশ পিঠে বহন করে আছেন। আরশ এত বিশাল যে, তার উপরের অংশ থেকে নীচের অংশের দূরত্ব হচ্ছে আসমান ও যমীনের মধ্যবতী দূরত্বের সমান। আর আল্লাহ্ তাআলা হচ্ছেন আরশের উপরে।

(২) সা’দ বিন মুআয যখন বনী কুরায়যার ব্যাপারে ফয়সালা দান করলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেনঃ তুমি তাদের ব্যাপারে সেই ফয়সালা করেছ, যা সাত আসমানের উপর থেকে আল্লাহ্ তা’আলা করেছেন’’।[2]

(৩) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদা জনৈক দাসীকে বললেনঃ আল্লাহ্ কোথায়? দাসী বললঃ আকাশে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন দাসীর মালিককে বললেনঃ তুমি তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ সে মু’মিন’’।[3]

(৪) আল্লাহ্ তা’আলা আকাশের উপরে। মি’রাজের ঘটনায় বর্ণিত হাদীছগুলো তার সুস্পষ্ট দলীল।

(৫) পালাক্রমে ফেরেশতাদের দুনিয়াতে আগমণের হাদীছেও আল্লাহ্ তাআলা আকাশের উপরে বিরাজমান হওয়ার দলীল রয়েছে। হাদীছের বিস্তারিত বিবরণ এই যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(يَتَعَاقَبُونَ فِيكُمْ مَلَائِكَةٌ بِاللَّيْلِ وَمَلَائِكَةٌ بِالنَّهَارِ وَيَجْتَمِعُونَ فِي صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ يَعْرُجُ الَّذِينَ بَاتُوا فِيكُمْ فَيَسْأَلُهُمْ وَهُوَ أَعْلَمُ بِهِمْ كَيْفَ تَرَكْتُمْ عِبَادِي فَيَقُولُونَ تَرَكْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ وَأَتَيْنَاهُمْ وَهُمْ يُصَلُّونَ)

‘‘তোমাদের নিকট রাতে একদল ফেরেশতা এবং দিনে একদল ফেরেশতা পালাক্রমে আগমণ করে থাকে। তারা ফজর ও আসরের নামাযের সময় একসাথে একত্রিত হয়। অতঃপর তোমাদের কাছে যে দলটি ছিল, তারা উপরে উঠে যায়। মহান আল্লাহ জানা সত্ত্বেও তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ আমার বান্দাদেরকে কি অবস্থায় ছেড়ে এসেছ? তাঁরা বলেনঃ আমরা তাদেরকে নামায অবস্থায় ছেড়ে এসেছি এবং যখন তাদের কাছে গিয়েছিলাম, তখন তারা নামাযেই ছিল।[4] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ

(مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ وَلَا يَصْعَدُ إلَى اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الْجَبَلِ)

‘‘যে ব্যক্তি বৈধভাবে উপার্জিত সম্পদ হতে একটি খেজুর পরিমাণ সম্পদ দান করে, আর আল্লাহর নিকট তো পবিত্র ব্যতীত কোন কিছুই উর্ধ্বমুখী হয় না, আল্লাহ্ ঐ দান স্বীয় ডান হাতে গ্রহণ করেন। অতঃপর তিনি তা দানকারীর জন্য প্রতিপালন করতে থাকেন। যেভাবে তোমাদের কেউ নিজের ঘোড়ার বাচ্চাকে প্রতিপালন করে থাকে। শেষ পর্যন্ত ঐ দান পাহাড় সমুতল্য হয়ে যায়’’।[5] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

(إِذَا قَضَى اللَّهُ الأَمْرَ فِي السَّمَاءِ ضَرَبَتِ الْمَلاَئِكَةُ بِأَجْنِحَتِهَا خُضْعَانًا لِقَوْلِهِ كَالسِّلْسِلَةِ عَلَى صَفْوَانٍ)

‘‘আল্লাহ তা’আলা যখন আকাশে কোন বিষয়ে ফয়সালা করেন, তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর উক্ত ফয়সালার প্রতি অনুগত হয়ে তাদের পাখাসমূহ এমনভাবে নাড়াতে থাকেন যার ফলে শক্ত পাথরে শিকল দিয়ে প্রহার করলে যে ধরণের আওয়াজ হয় সে রকম আওয়াজ হতে থাকে’’।[6] আল্লাহ তাআ’লা আকাশের উপরে- জাহমীয়া ফির্কা ব্যতীত কেউ তা অস্বীকার করেনি।

[1] - তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর, মুসনাদে আহমাদ, (১/২০৬)। আলেমগণ হাদীছটি সহীহ ও যঈফ হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ করেছেন। ইমাম ইবনে তাইমীয়া এবং তাঁর ছাত্র ইবনুল কাইয়্যেম হাদীছটি সহীহ বলেছেন। ইমাম তিরমিজী বলেনঃ হাদীছটি হাসান গরীব। ইমাম আলবানী হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে যঈফা, হাদীছ নং- ১২৪৭। যঈফ হওয়া সত্ত্বেও আলেমগণ আসমানের উপর আল­াহর সমুন্নত হওয়া প্রমাণ করতে গিয়ে হাদীছটিকে উলে­খ করেছেন। তবে আল­াহ্ তাআলা উপরে হওয়ার বিষয়ে অনেক বিশুদ্ধ দলীল-প্রমাণ থাকার পরও এ ধরণের যঈফ হাদীছ দ্বারা দলীল না গ্রহণ করাই উত্তম।

এখানে আরেকটি কথা বিশেষভাবে উলে­খযোগ্য। তা এই যে, أوعال (আওআল) শব্দটি وعل এর বহুবচন। এর অর্থে আলেমগণ থেকে একাধিক উক্তি পাওয়া যায়। কেউ কেউ বলেছেনঃ এরা হচ্ছেন বিশাল আকারের ফেরেশতা। কুরআনে ফেরেশতা কর্তৃক আরশ বহনের কথা সুস্পষ্ট করেই বলা হয়েছে।

আবার কেউ কেউ বলেছেনঃ আওআল হচ্ছে আল্লা­াহর বিশেষ এমন এক সৃষ্টি, যার প্রকৃত রূপ আল­াহ তাআলা ব্যতীত কেউ জানেনা। কেউ কেউ বলেছেনঃ আওআল হচ্ছে বিশাল আকারের ষাঁাড়। আবার কেউ বলেছেনঃ বিরাট আকৃতির শকুন। মোট কথা এগুলো পৃতিবীর কোন পরিচিত কোন প্রাণী নয়। (আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন)


[2] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাগাযী।

[3] - মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।

[4] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ।

[5] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওহীদ, মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত।

[6] - বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাফসীর।