৩৪০. কোন প্রাণীর মূর্তি ঘরে রাখা ছবি উঠানো কিংবা ঘরে টাঙ্গানো

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ الصُّورَةِ فِي الْبَيْتِ وَنَهَى أَنْ يُصْنَعَ ذَلِكَ

‘‘রাসূল (সা.) ঘরে ছবি রাখতে এবং তা বানাতেও নিষেধ করেছেন’’।[1]

মূলতঃ ছবি তোলাই ছিলো মূর্তিপূজার প্রথম পর্যায়। শয়তান ইবলিস সর্ব প্রথম নূহ (আঃ) এর সম্প্রদায়কে তাদের নেক্কারদের ছবি বা মূর্তি বানিয়ে তাদের মজলিসে স্থাপন করতে পরামর্শ দেয়। যাতে করে তাদেরকে স্মরণ করা যায় এবং ইবাদাতের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা যায়। পরবর্তীতে সে ছবি বা মূর্তিগুলোর পূজা শুরু হয়ে যায় এবং তারা কারোর লাভ বা ক্ষতি করতে পারে এমনও মনে করা হয়। এ পরিণতির কথা চিন্তা করেই রাসূল (সা.) ছবি তুলতে নিষেধ করেছেন এবং ছবি উত্তোলনকারীরাই কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।

’আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

أَشَدُّ النَّاسِ عَذَاباً يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِيْنَ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِ اللهِ

‘‘কিয়ামতের দিন সর্ব কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে ওরা যারা আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু বানাতে চায়’’।[2]

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস’ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَاباً عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُصَوِّرُوْنَ

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সর্ব কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে ওরা যারা (বিনা প্রয়োজনে) ছবি তোলে বা তৈরি করে’’।[3]

’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِيْ النَّارِ ، يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُوْرَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسٌ فَتُعَذِّبُهُ فِيْ جَهَنَّمَ

‘‘প্রত্যেক ছবিকার ও মূর্তি নির্মাতা জাহান্নামী। প্রত্যেক ছবির পরিবর্তে তার জন্য একটি করে প্রাণী ঠিক করা হবে যে তাকে সর্বদা জাহান্নামের মধ্যে শাস্তি দিতে থাকবে’’।[4]

’আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: আমি মুহাম্মাদ (সা.) কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

مَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً فِيْ الدُّنْيَا كُلِّفَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْ يَنْفُخَ فِيْهَا الرُّوْحَ ، وَلَيْسَ بِنَافِخٍ

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন ছবি আঁকে বা মূর্তি বানায় কিয়ামতের দিন তাকে সে ছবি বা মূর্তিতে রূহ্ দিতে বলা হবে। কিন্তু সে কখনোই তা করতে পারবে না’’।[5]

’আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ، يُقَالُ لَهُمْ: أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ ، وَإِنَّ الْـمَلَآئِكَةَ لاَ تَدْخُلُ بَيْتاً فِيْهِ الصُّوْرَةُ

‘‘নিশ্চয়ই এ সকল মূর্তি নির্মাতা ও ছবিকারদেরকে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে: তোমরা যা বানিয়েছো তাতে জীবন দাও। কিন্তু তারা কখনো তা করতে পারবে না। নিশ্চয়ই ফিরিশ্তারা এমন ঘরে প্রবেশ করেন না যে ঘরে ছবি বা মূর্তি রয়েছে’’।[6]

আবু হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা ইরশাদ করেন:

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْقِيْ ، فَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً ، وَلْيَخْلُقُـوْا ذَرَّةً ، وَلْيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً

‘‘সে ব্যক্তির ন্যায় জালিম আর কেউ হতে পারে না? যে আমার সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু বানাতে চায়। মূলতঃ সে কখনোই তা করতে পারবে না। যদি সে তা করতে পারবে বলে দাবি করে তাহলে সে যেন একটি দানা, একটি অণু-পরমাণু এবং একটি যব বানিয়ে দেখায়’’।[7]আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সকলকে উক্ত নিষিদ্ধ কর্ম সমূহ থেকে সর্বদা বেঁচে থাকার তাওফীক দান করুন। আমীন!

>
[1] (তিরমিযী, হাদীস ১৭৪৯)

[2] (বুখারী, হাদীস ৫৯৫৪ মুসলিম, হাদীস ২১০৭ বাগাওয়ী, হাদীস ৩২১৫ নাসায়ী : ৮/২১৪ বায়হাক্বী : ২৬৯)

[3] (বুখারী, হাদীস ৫৯৫০ মুসলিম, হাদীস ২১০৯)

[4] (মুসলিম, হাদীস ২১১০)

[5] (বুখারী, হাদীস ২২২৫, ৫৯৬৩, ৭০৪২ মুসলিম, হাদীস ২১১০ বাগাওয়ী, হাদীস= =৩২১৯ নাসায়ী : ৮/২১৫ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ৮/৪৮৪-৪৮৫ আহ্মাদ্ : ১/২৪১, ৩৫০ ত্বাবারানী/কাবীর, হাদীস ১২৯০০)

[6] (বুখারী, হাদীস ২১০৫, ৫৯৫৭ মুসলিম, হাদীস ২১০৭)

[7] (বুখারী, হাদীস ৫৯৫৩, ৭৫৫৯ মুসলিম, হাদীস ২১১১ বায়হাক্বী : ৭/২৬৮ বাগাওয়ী, হাদীস ৩২১৭ ইবনু আবী শাইবাহ্ : ৮/৪৮৪ আহ্মাদ্ : ২/২৫৯, ৩৯১, ৪৫১, ৫২৭)