আলেমগণের মধ্যে মতভেদ কারণ এবং আমাদের অবস্থান পরিশেষে শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ. ১ টি

পরিশেষে, আমি নিজেকে এবং আমার সমস্ত মুসলিম ভাইকে, বিশেষ করে ছাত্রদেরকে নসিহত করব, যখন কারো কাছে কোন মাসআলা আসবে, তখন সে যেন ভালভাবে না জেনে তড়িঘড়ি করে ফাতাওয়া না দেয়। যাতে আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ না করে বসে। কারণ মুফতী মানুষ এবং আল্লাহর মধ্যে মাধ্যম হিসাবে আল্লাহর শরী‘আত প্রচার করে থাকেন। যেমনিভাবে হাদীছে এসেছে- রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আলেমগণ নবীগণের উত্তরাধিকারী’।[1] রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘বিচারক তিন শ্রেণীর। তাঁদের এক শ্রেণীর বিচারক কেবল জান্নাতে যাবেন। আর তিনি হচ্ছেন, যিনি হক্ব জেনেছেন এবং তদনুযায়ী রায় দিয়েছেন’।[2]

অনুরূপভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যখন তোমার কাছে কোন মাসআলা আসবে, তখন তুমি নিজের মনকে আল্লাহর দিকে সোপর্দ করবে এবং তাঁর মুখাপেক্ষী হবে– যাতে তিনি তোমাকে বুঝার ও জানার শক্তি দেন। বিশেষ করে বেশীর ভাগ মানুষের কাছে সুপ্ত থাকে এমন সব গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন বিষয়ে।

আমার কতিপয় উস্তাদ আমাকে বলেছেন, কেউ কোন মাসআলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হলে তার বেশী বেশী ইস্তেগফার করা উচিৎ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু’।[3] কেননা ইস্তেগফার পাপের পরিণাম দূর করার বিষয়টা নিশ্চিত করে– যে পাপ ইলম বিস্মৃত হওয়ার এবং মূর্খতার অন্যতম কারণ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টা বিস্মৃত হয়েছে’।[4]

ইমাম শাফেঈ রহেমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করা হয়, তিনি বলেন,

شكوت إلى وكيع سوء حفظي

فأرشدني إلى ترك المعاصي

وقال إعلم بأن العلم نور

ونور الله لا يؤتاه عاصي

অর্থাৎ: ‘আমি আমার দুর্বল স্মৃতিশক্তির বিষয়ে ওকী‘ রহেমাহুল্লাহ-কে বললে তিনি আমাকে পাপ কাজ ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেন এবং বলেন, জেনে রাখ! ইল্ম হচ্ছে আল্লাহর নূর। আর আল্লাহর নূর কোন পাপীকে দেওয়া হয় না’।

অতএব, ইস্তেগফার নিঃসন্দেহে আল্লাহ কর্তৃক মানুষকে জ্ঞানদানের অন্যতম কারণ।

আল্লাহর কাছে আমার নিজের জন্য এবং আপনাদের জন্য তওফীক্ব ও সঠিকতা প্রার্থনা করছি। তিনি আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কালেমায়ে ত্বাইয়্যেবাহ-এর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। হেদায়েত দানের পর তিনি যেন আমাদের অন্তঃকরণকে বিপথগামী না করেন এবং আমাদেরকে তিনি যেন তার পক্ষ থেকে রহমত দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি মহান দাতা।শুরুতে ও শেষে সবসময় মহান রব্বুল আলামীনের জন্য যাবতীয় প্রশংসা। আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও ছাহাবীবর্গের উপর দরূদ ও সালাম বর্ষণ করুন।

>
[1] . বুখারী, ‘ইলম’ অধ্যায়, অনু্চ্ছেদ নং ১০; আবু দাঊদ, ‘ইলম’ অধ্যায়, হা/৩৬৪১; ইবনু মাজাহ, ভূমিকা, হা/২২৩।

[2] . আবু দাঊদ, ‘বিচার’ অধ্যায়, হা/৩৫৭৩; ইবনু মাজাহ, ‘বিচার’ অধ্যায়, হা/২৩১৫।

[3] . সূরা আন-নিসা ১০৫-১০৬।

[4] . সূরা আল-মায়েদাহ ১৩।