ঈসায়ী প্রচারকগণের মিথ্যাচার অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু ধর্ম প্রচারে তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টার প্রশংসা করতে হবে। আমরা কি কুরআন-হাদীসের নির্দেশ মত দাওয়াতের দায়িত্ব পালন করছি? আল্লাহর দীন সহজ, কিন্তু না জেনে আমরা তাকে কঠিন করে ফেলেছি। ফলে সাধারণ মানুষ ইসলাম থেকে বিমুখ হচ্ছেন, তাঁদের ঈমান দুর্বল হচ্ছে এবং সহজেই তাঁরা মুরতাদ হয়ে যাচ্ছেন। প্রত্যেক দীনদার পাঠকের প্রতি আবেদন, আড্ডায় ও চায়ের দোকানে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির জাবর না কেটে প্রতিদিন বা অন্তত প্রতি সপ্তাহে হাটে, বাজারে, চায়ের দোকানে, খেলার মাঠে ধর্মবিমুখ মুসলিমদের সাথে ২০/২৫ মিনিট বসে দীনের কথা বলুন। যতটুকু জানেন ততটুকুই বলুন। তাহলে আল্লাহ আপনার মধ্যে ঈমান, মহব্বত ও জ্ঞান বাড়িয়ে দিবেন। আল্লাহর দীন যে সকল মানুষের জন্যই সহজ তা প্রচার করুন।
- কুরআন-হাদীস থেকে আমরা জানি, মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজ কর্ম আল্লাহর প্রিয় হওয়া। কারণ:
(১) সকল কাজে সফলতার জন্য যোগ্যতার প্রয়োজন। আল্লাহর ওলী হতে কোনো যোগ্যতা লাগে না। তিনি যাকে যতটুকু দিয়েছেন সেটুকুর ভিতরে তাঁকে ডাকলেই তিনি সন্তুষ্ট হন। কারী সাহেবের সুন্দর তিলাওয়াতে তিনি যেমন খুশি, একজন মুর্খ বা বোবা মানুষের অস্পষ্ট দো‘আ-তিলাওয়াতেও তিনি তেমনি খুশি হন।
(২) মানুষকে খুশি করা কঠিন, মহান আল্লাহকে খুশি করা খুবই সহজ; বান্দা তাঁর দিকে হেঁটে এগোলে তিনি তার দিকে দৌড়ে আসেন।
(৩) দুনিয়ার মানুষকে খুশি রাখা কঠিন, কিন্তু মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট রাখা খুবই সহজ। তিনি শত পাপ ও অবাধ্যতার পরেও বান্দার তাওবার জন্য অপেক্ষা করেন। হারানো উটের মালিক উট ফিরে পেয়ে যত খুশি হন মহান আল্লাহ পাপী বান্দার তাওবায় তার চেয়েও বেশি খুশি হন।
(৪) মানুষ মনের কথা জানে না, তাই প্রিয়তম মানুষও সন্দেহ করেন। কিন্তু মহান আল্লাহ মনের কথা জানেন, কাজেই বান্দা সাধ্যমত যতটুকু আমল করে তাতেই আল্লাহ খুশি হন।
- আল্লাহর ওলী হতে শুধু ঈমান ও তাকওয়া জরুরী (সূরা ১০- ইউনুস: ৬২ আয়াত)। অর্থাৎ একমাত্র মহান আল্লাহর ইবাদত করব এবং একমাত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তরীকাতেই তা করব। আমাদের উচিত এবিশ্বাসকে অন্তরের গভীরে অবিচলভাবে গেঁথে নিয়ে সাধ্যমত আল্লাহর হুকুম মানার চেষ্টা করা এবং ভুল-ভ্রান্তি ও পাপের জন্য সর্বদা একান্ত গোপনে আল্লাহর কাছে নিজের ভাষায় আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া।
- নামায আল্লাহর প্রিয়তম এবং মানুষের জন্য সহজতম ইবাদত। সাধ্যের মধ্যে ওযু বা তায়াম্মুম করে, দাঁড়িয়ে বা বসে, সূরা-দো‘আ না জানলে দাঁড়িয়ে, বসে ও রুকু-সাজদায় কয়েকবার ‘আল্লাহু আকবার’ বললেও মুমিনের সালাত আদায় হবে এবং সালাতের মধ্যে ও পরে দো‘আ করলে আল্লাহ তা কবুল করবেন।
- সালাত আদায় ও সাধ্যমত আল্লাহর হুকুম পালনের পাশাপাশি সর্বদা পিতামাতার খেদমত, মানুষকে সাহায্য করা এবং সর্বদা আল্লাহর তাসবীহ-তাহলীল ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য দরুদ-সালাম পাঠ করে মানুষ সহজেই আল্লাহর ওলী হওয়ার মর্যাদা লাভ করতে পারেন।
- দাওয়াতের পাশাপাশি সকলকে বলুন, আজকাল কিছু মানুষ আমাদের নবীর বিরুদ্ধে কথা বলছে। তিনি শাফা‘আত করবেন না, তিনি গোনাহগারের নাজাতের জন্য নন ... ইত্যাদি কথা তারা বলছে। আপনারা কেউ তাদের এ কথা শুনে কেউ নীরব থাকলে ভয়ঙ্কর পাপী হবেন এবং ঈমান নষ্ট হতে পারে। এজন্য তাকে আদব ও ভদ্রতার সাথে দীনের দাওয়াত দিবেন এবং আলেমদের কাছে নিয়ে যাবেন।
- কোনো মুসলিম ভাই বা বোন যদি মুরতাদ বা “ঈসায়ী” হয়ে যায় তাহলে তাকে ভালবেসে হাত-পা ধরে ইসলামের দাওয়াত দিন। তাকে বলুন, তুমি কেন ইসলাম ত্যাগ করছ তা আমাদেরকে বল। তুমি কেন রাহমাতুল্লিল আলামীনকে ছেড়ে অপরিচিত প্রতারকদের কাছে যাচ্ছ? তুমি আমাদের ভাই। আমরা আলিমদের সংবাদ দিচ্ছি, আমাদেরকে বুঝিয়ে পরাজিত করে ধর্মত্যাগ কর। সবাই মিলে অবিরত তাকে দাওয়াত দিতে থাকুন। যতক্ষণ না কোনো ধর্মত্যাগী মুরতাদ তাওবা করে ফিরে আসেন ততক্ষণ তার সাথে সকল প্রকার সামাজিক ও পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন রাখুন। তাদের সাথে কোনো রকম সম্পর্ক রাখলে তাদের পাপে পাপী হতে হবে।
- ঈসায়ী প্রচারকদের চ্যালেঞ্জ করুন। আমরা কোনা মারামারি-হানাহানি চাই না। আমরা তাদের সাথে আন্তরিক পরিবেশে সকল প্রকার বিতর্ক বা আলোচনা করতে প্রস্তুত। তাঁদেরকে মিথ্যাচার পরিত্যাগ করে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত প্রদান করুন।
- মুসলিমদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল খৃস্টান প্রচারকদের জন্য ধর্মান্তকরণকে অত্যন্ত সহজ করেছে। মুসলিমগণ ছোটখাট মতভেদ নিয়ে এমন ভয়ঙ্কর দলাদলি ও শত্রুতায় লিপ্ত যে, চোখের সামনে মুসলিম ভাইবোনগণ মুরতাদ হয়ে যাচ্ছেন কিন্তু কেউ গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অনেক সময় অবস্থা এরূপ যে, মুসলিম খৃস্টান হয় হোক, তবে আমার মত বা আমার দলের কোনো ক্ষতি না হলেই হলো! মুসলিম খৃস্টান হলে কষ্ট লাগে না, কিন্তু অন্য কোনো মুসলিম দল বা মতের অনুসরণ করলে কষ্ট লাগে!! নিজের দলের কেউ অন্য দলে চলে গেলে কষ্ট লাগে। কিন্তু মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মাত মুরতাদ হয়ে অন্য ধর্মে চলে গেলে এবং তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করলে কষ্ট লাগছে না! এটি কি ঈমানের দুর্বলতার লক্ষণ নয়? কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ ও তাঁর মহান নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কিভাবে মুখ দেখাব? কি জবাব দেব? একটু কি ভাবতে হবে না? মতভেদ ও দলাদলি তো থাকবেই। তবে ঈমান রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের সকলকেই সচেতন ও একত্রিত হতে হবে।
- কোনো মুসলিম ঈসায়ী হয়েছেন, অথবা ইঞ্জিল শরীফ বিতরণ করছেন, বলে কোনোভাবে জানতে পারলে তাকে দাওয়াত দিন। অন্তত সমাজের আলিম ও ইমামগণকে তা জানান। মহান আল্লাহ ইসলামের এ মহববতের জন্য আপনাকে পুরস্কার দিবেন।
মহান আল্লাহর মহান রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবী ও অনুসারীদের উপর সালাত ও সালাম। প্রথমে ও শেষে সর্বদা ও সর্বত্র সকল প্রশংসা আল্লাহরই নিমিত্ত।