‘কিতাবুল মোকাদ্দস’-এ আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় নবীগণের বিষয়ে অনেক ঘৃণ্য কথা বিদ্যমান। বাইবেলের ভাষ্যে স্রষ্টা অনেক কিছুই দেখতে বা শুনতে পারেন না। কেউ গাছের আড়ালে গেলে তাকে দেখতে পান না; বরং তাকে ডেকে প্রশ্ন করতে বাধ্য হন যে, তুমি কোথায়? (আদিপুস্তক ৩/৯)। দূরের মানুষদের অবস্থা দেখতে তাকে নিচে নেমে আসতে হয় (আদিপুস্তক ১১/৫)। পৃথিবীর মানুষদের চিৎকার তাঁর কানে পৌঁছালেও তাদের কর্ম তিনি দেখতে পান না (আদিপুস্তক ১৮/২০-২১)। স্রষ্টা না বুঝে কাজ করেন এবং পরে অনুশোচনা করেন। মানুষ সৃষ্টি করার পর যখন মানুষেরা পাপ করতে থাকে তখন তিনি মানুষ সৃষ্টি করে ভুল করেছেন ভেবে আফসোস করেন এবং মনের ব্যথ্যায় কষ্ট পেতে থাকেন। (আদিপুস্তক ৬/৬-৭)। তিনিই তালূত বা শৌলকে ইয়াহূদীদের রাজা বানান এবং তাকে ‘মাসীহ’ হিসেবে অভিষিক্ত করেন। রাজা হয়ে এ ‘মাসীহ’ যে অন্যায় করবে তা তিনি বুঝতে পারেন নি! রাজা হওয়ার পরে তালূত অন্যায় করলে খোদা অনুশোচনায় ভেঙ্গে পড়েন! (১ শমূয়েল ১৫/১১, ৩৫)
কিতাবুল মোকাদ্দসের ভাষ্যে আল্লাহ বিনা অপরাধে শাস্তি দেন! তিনি মানুষের পাপের অপরাধে নিরপরাধ পশু-পাখীকে ধ্বংস করেন (আদিপুস্তক ৬/৬-৭)। তিনি ইয়াহূদীদেরকে তিন নির্দেশ দেন, ইয়াহূদীদের চেয়েও বড় ৭ টি জাতির সকল নারী, পুরুষ, শিশু, কিশোর লক্ষলক্ষ মানুষকে নির্দয়ভাবে গণহত্যা করতে (দ্বিতীয় বিবরণ ৭/২-১৬)। অনুরূপভাবে শমরীয়দের গণহত্যা করতে, বিশেষভাবে ‘শিশুদেরকে আছড়াইয়া খণ্ড খণ্ড’ করতে এবং ‘গর্ভবতী স্ত্রীলোকদের উদর বিদীর্ণ’ করতে নির্দেশ প্রদান করেন (হোশেয় ১৩/১৬)।
বাইবেলের বর্ণনায় দেখা যায় যে, স্রষ্টা অপরাধীর অপরাধের জন্য নিরপরাধকে শাস্তি দেন। পিতার অপরাধের কারণে ৪ পুরুষ পর্যন্ত বংশধরগণ শাস্তি পাবে বলে বিধান দিয়েছেন। (যাত্রাপুস্তক ৩৪/৭) এমনকি ৯/১০ পুরুষ আগের পূর্বপুরুষের অপরাধের কারণে ৪০০ বৎসর পরের উত্তরপুরুষদের প্রতিটি মানুষকে এবং সকল সম্পদকে নির্দয়ভাবে ধ্বংস করতে নির্দেশ দেন। এমনকি “স্ত্রী ও পুরুষ, বালক-বালিকা ও স্তন্যপায়ী শিশু, গরু ও মেষ, উষ্ট্র ও গর্দভ সকলকেই বধ” করতে নির্দেশ দেন। (১ শমূয়েল ১৫/১-৩)
অন্য গল্পে নূহ (আঃ) মদপান করে মাতাল হয়ে উলঙ্গ হন (নাঊযু বিল্লাহ)। তাঁর ছোট ছেলে হাম হঠাৎ পিতাকে উলঙ্গ অবস্থায় দেখে ফেলেন। মাতলামি কাটার পর বিষয়টি জেনে নূহ (আঃ) ক্রুদ্ধ হয়ে হামের ছেলে কনানকে অভিশাপ দেন এবং ঈশ্বর সে অভিশাপ বাস্তবায়নও করেন!!!! (আদিপুস্তক ৯/১৮-২৫)
মাতাল হয়ে উলঙ্গ হওয়ায় নূহের কোনো অপরাধ হলো না কিন্তু অসতর্কভাবে তা দেখে ফেলায় হামের অপরাধ হলো! ভয়ঙ্কর বিষয় হলো অপরাধ করলো হাম কিন্তু অভিশাপ ও শাস্তি পেল হামের এক ছেলে কনান!! অপরাধী হামের চারটি পুত্র ছিল: কূশ, মিসর, পূট ও কনান। (আদিপুস্তক ১০/৬) তাদের মধ্য থেকে শাস্তির জন্য শুধু কনানকে বেছে নেওয়ার কারণটিই বা কী?
অনুরূপ আরেকটি উদ্ভট গল্প! ইসহাক নবীর দুই ছেলে: বড় ছেলে এযৌ ও ছোটে ছেলে ইয়াকুব। ইসহাক তার বড় ছেলে এযৌকে ভালবাসতেন। বৃদ্ধ বয়সে ইসহাক অন্ধ হয়ে যান। তিনি আল্লাহর বিধান মত বড় ছেলে এযৌকে আশীর্বাদ করে “গদ্দীনশীন” করতে চান। কিন্তু ইয়াকূব প্রতারণা করে এযৌ-এর বেশ ধরে পিতার কাছে এসে আশীর্বাদ প্রার্থনা করলে ইসহাক না বুঝে এযৌ মনে করে তাকে আশীর্বাদ করেন। (আদিপুস্তক ২৭ অধ্যায়) মজার কথা, ইসহাক অন্ধ হওয়ার কারণে এযৌ ভেবে ইয়াকুবকে আশীর্বাদ করলেন এবং ঈশ্বরও অন্ধের মতই তা কবুল করে নিলেন! প্রতারককে শাস্তি দেওয়া তো দূরের কথা, ঈশ্বর ঘোষণা দিলেন, কোনো অপরাধ ছাড়াই তিনি এযৌকে ঘৃণা করলেন, শাস্তি দিলেন এবং অপরাধী প্রতারক ইয়াকূবকে প্রেম করলেন (মালাখি ১ম অধ্যায়: ২-৩)
আরেকটি গল্পে আল্লাহ সারা রাত ধরে ইয়াকুবের (আঃ) সাথে রেসলিং বা মল্লযুদ্ধ করেন!! শেষ রাতে ইয়াকুব তাকে ছেড়ে দেন!! এজন্য ইয়াকূবের নাম হলো “ইস্রায়েল” অর্থাৎ আল্লাহর সাথে মল্লযুদ্ধকারী!!! (আদিপুস্তক ৩২/২৪-৩০)