মুসলিম ব্যক্তি মনে করে— ঘুম অন্যতম নিয়ামত, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দগণের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَمِن رَّحۡمَتِهِۦ جَعَلَ لَكُمُ ٱلَّيۡلَ وَٱلنَّهَارَ لِتَسۡكُنُواْ فِيهِ وَلِتَبۡتَغُواْ مِن فَضۡلِهِۦ وَلَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ

“তিনিই তাঁর দয়ায় তোমাদের জন্য করেছেন রাত ও দিন, যেন তাতে তোমরা বিশ্রাম করতে পার এবং তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। আরও যেন তোমরা কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করতে পার।”[1] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

وَجَعَلۡنَا نَوۡمَكُمۡ سُبَاتٗا

“আর তোমাদের ঘুমকে করেছি বিশ্রাম।”[2] কারণ, দিনের কর্মব্যস্ততার পর রাতের বেলায় বান্দার বিশ্রাম তার শারীরিক প্রাণচাঞ্চল্যতা, প্রবৃদ্ধি ও উদ্যমের জন্য সহায়তা করে, যাতে সে তার কর্তব্য পালন করতে পারে, যার জন্য তাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এ নি‘য়ামতের কৃতজ্ঞতার বিষয়টি মুসলিম ব্যক্তির কাছে জরুরি ভিত্তিতে দাবি করে, সে যাতে তার ঘুমানোর ব্যাপারে নিম্নোক্ত আদবসমূহের প্রতি লক্ষ্য রাখে:

১. ‘ইলমী আলোচনা, অথবা মেহমানের সৌজন্যে কথপোকথন, অথবা পরিবারের দেখাশুনার মত কোন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এশার সালাতের পর তার ঘুমকে বিলম্বিত না করা; কেননা, আবূ বারযা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হাদিস বর্ণনা করেন:

« إنَّ رسولَ الله صلى الله عليه وسلم كان يكرهُ النَّومَ قَبْلَ العِشَاءِ والحَديثَ بَعْدَهَا » . (متفق عليه)

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার সালাতের পূর্বে ঘুমানো এবং তার (এশার সালাতের) পরে কথা বলা অপছন্দ করতেন।”[3]

২. অযু করা ছাড়া না ঘুমানোর চেষ্টা করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

« إِذَا أَتَيْتَ مَضْجِعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءكَ للصَّلاةِ » . (متفق عليه)

“যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন অযু করে নাও, যেমনিভাবে তুমি সালাত আদায়ের জন্য অযু করে থাক।”[4]

৩. ঘুমানোর শুরুতে তার ডান কাতে শুয়ে পড়া এবং তার ডানপাশকে বালিশরূপে ব্যবহার করা; আর পরবর্তীতে (ডান কাত থেকে) নিজেকে বাম কাতে পরিবর্তন করাতে কোন দোষ নেই। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

« إِذَا أَتَيْتَ مَضْجِعَكَ فَتَوَضَّأْ وُضُوءكَ للصَّلاةِ ، ثُمَّ اضْطَجعْ عَلَى شِقِّكَ الأَيمَنِ » . (متفق عليه)

“যখন তুমি ঘুমাতে যাবে, তখন অযু করে নাও, যেমনিভাবে তুমি সালাত আদায়ের জন্য অযু করে থাক। অতঃপর ডান কাতে শুয়ে পড়ো।”[5] তিনি আরও বলেন:

« إِذَا أَوَيْتَ إِلَى فِرَاشِكَ وَأَنْتَ طَاهِرٌ فَتَوَسَّدْ يَمِينَكَ » . (رواه أبو داود)

“তুমি যখন পবিত্র অবস্থায় তোমার বিছানা গ্রহণ করবে, তখন তুমি তোমার ডানপাশকে বালিশরূপে গ্রহণ কর।”[6]

৪. রাতে অথবা দিনে ঘুমানোর সময় উপুড় হয়ে না শোয়া; কেননা, হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« إِنَّهَا ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ » . (رواه ابن ماجه)

“এটা জাহান্নামীদের শোয়া।”[7] তিনি আরও বলেন:

« إِنَّهَا ضِجْعَةُ لَا يُحِبُّهَا اللَّهُ عزَّ وجلَّ » . (رواه أحمد ، والترمذى ، والحاكم)

“এটা এমন শোয়া, যা আল্লাহ তা‘আলা পছন্দ করেন না।”[8]

৫. হাদিসে বর্ণিত যিকির বা দে‘য়াসমূহ পাঠ করা; যেমন—

(ক) তেত্রিশ বার « سُبْحَانَ اللهِ ؛ وَالحَمْدُ للهِ ؛ وَاللهُ أكْبَرُ » (আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহ সবচেয়ে মহান) বলবে; অতঃপর বলবে: « لا إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ ؛ وَلَهُ الحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ » (আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং সকল প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান)। কেননা, ফাতেমা ও আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তাদেরকে ঘরের কাজে সহযোগিতা করার জন্য একজন খাদেমের আবদেন করলেন, তখন তিনি তাঁদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:

« أَلاَ أُعَلِّمُكُمَا خَيْرًا مِمَّا سَأَلْتُمَا ؟ إِذَا أَخَذْتُمَا مَضَاجِعَكُمَا أَنْ تُكَبِّرَا اللَّهَ أَرْبَعًا وَثَلاَثِينَ ، وَتُسَبِّحَاهُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ ، وَتَحْمَدَاهُ ثَلاَثًا وَثَلاَثِينَ ، فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمَا مِنْ خَادِمٍ » . (رواه مسلم).

“তোমরা যা আবেদন করেছ, আমি কি তোমাদেরকে তার চেয়ে উত্তম কিছু শিখিয়ে দিব না? তোমরা যখন শোয়ার জন্য বিছানা গ্রহণ করবে, তখন চৌত্রিশ বার ‘আল্লাহু আকবার’ (اللهُ أكْبَرُ) বলবে, তেত্রিশ বার ‘সুবহানাল্লাহ’ (سُبْحَانَ اللهِ) বলবে এবং তেত্রিশ বার ‘আলহামদুলিল্লাহ’ (الحَمْدُ للهِ) বলবে; কারণ, এটা তোমাদের জন্য খাদেমের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম।”[9]

(খ) সূরা আল-ফাতিহা, সূরা আল-বাকারার প্রথম আয়াত থেকে " المفلحون "পর্যন্ত, আয়াতুল কুরসি এবং সূরা আল-বাকারার শেষ অংশ— " لله ما في السموات "থেকে সূরার শেষ পর্যন্ত। কারণ, এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে হাদিস বর্ণিত আছে।[10]

(গ) শোয়ার সময় সর্বশেষ এ দে‘য়াটি পাঠ করবে, যা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত:

« بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ وَضَعْتُ جَنْبِي ، وَ بِاسْمِكَ أَرْفَعُهُ ، اللَّهُمَّ إِنْ أَمْسَكْتَ نَفْسِي فَاغْفِرْ لَهَا ، وَإِنْ أَرْسَلْتَهَا فَاحْفَظْهَا بِمَا تَحْفَظُ بِهِ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ . اللَّهُمَّ إنِّي أَسْلَمْت نَفْسِي إلَيْك ، وَفَوَّضْت أَمْرِي إلَيْك ، وَأَلْجَأْت ظَهْرِي إلَيْك ، أَسْتَغْفِرُك وَأَتُوبُ إلَيْك آمَنْت بِكِتَابِك الَّذِي أَنْزَلْت ، وَبِنبِيِّكَ الَّذِي أَرْسَلْت فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ ، وَمَا أَخَّرْتُ ، وَمَا أَسْرَرْتُ ، وَمَا أَعْلَنْتُ ، و مَا أَنْتَ أعْلَمُ به مِنِّيْ ، أنْتَ المُقدِّمُ وَ أنتَ المُؤخِّرُ ، لَا إلَهَ إلَّا أَنْتَ ، رَبِّ قِنِي عَذَابَك يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَك » .

“হে আল্লাহ! তোমার নামে আমি পার্শ্বদেশ বিছানায় রাখলাম এবং তোমার নামেই তাকে উঠাবো। হে আল্লাহ! যদি তুমি আমার প্রাণ নিয়ে নাও, তাহলে তাকে ক্ষমা করে দিও; আর যদি তাকে ছেড়ে দাও, তাহলে তুমি তাকে হেফাযত কর সেই জিনিস থেকে, যা থেকে তুমি তোমার নেক বান্দাদেরকে হেফাযত করে থাক। হে আল্লাহ! আমার প্রাণ তোমার নিকট সঁপে দিয়েছি, আমার কাজ তোমার কাছে সোপর্দ করেছি এবং আমার পিঠকে তোমার আশ্রয়ে দিয়েছি; আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকট তাওবা করছি; আমি তোমার ঐ কিতাবের প্রতি ঈমান এনেছি, যা তুমি নাযিল করেছ এবং তোমার সেই নবীর প্রতি ঈমান এনেছি, যাঁকে তুমি প্রেরণ করেছ; সুতরাং তুমি আমাকে সেসব বিষয়ে ক্ষমা করে দাও, যা আমি আগে ও পরে করেছি এবং যা আমি গোপনে ও প্রকাশ্যে করেছি এবং যে বিষয়ে তুমি আমার চেয়ে বেশি ভাল জান; তুমি প্রথম ও তুমি শেষ, তুমি ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্য ইলাহ নেই; হে আমার রব! তুমি আমাকে তোমার সে দিনের আযাব থেকে রক্ষা কর, যে দিন তুমি তোমার বান্দাদেরকে পুনরায় জীবিত করবে।”[11]

(ঘ) ঘুমের মাঝখানে যখন সে জেগে উঠবে, তখন বলবে:

« لا إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ ؛ وَلَهُ الحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . سُبْحَانَ اللهِ ؛ وَالحَمْدُ للهِ ؛ وَلاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ ، وَاللهُ أكْبَرُ و لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ » .

(আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং সকল প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহ সবচেয়ে মহান; আর অসৎকাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারও ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া )। আর সে যেন তার ইচ্ছামতো দো‘য়া করে; ফলে তার দো‘য়া কবুল করা হবে। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« مَنْ تَعَارَّ مِنَ اللَّيْلِ فَقَالَ حِينَ يَسْتَيْقِظُ : لا إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ ؛ وَلَهُ الحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . سُبْحَانَ اللهِ ، وَالحَمْدُ للهِ ، وَلاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ ، وَاللهُ أكْبَرُ و لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ ، ثُمَّ دَعَا اسْتُجِيبَ لَهُ ، فَإِنْ قَامَ فَتَوَضَّأَ ، ثُمَّ صَلَّى قُبِلَتْ صَلاَتُهُ » . (رواه البخاري و أبو داود).

“যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়, সেই ব্যক্তি জেগে উঠার সময় বলবে:

« لا إلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ ؛ وَلَهُ الحَمْدُ ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ . سُبْحَانَ اللهِ ؛ وَالحَمْدُ للهِ ؛ وَلاَ إلهَ إِلاَّ اللهُ ، وَاللهُ أكْبَرُ و لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ » .

(অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্য ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই এবং সকল প্রশংসাও তাঁর; আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ পবিত্র, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহ সবচেয়ে মহান; আর অসৎকাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারও ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া); অতঃপর দো‘য়া করবে, তার দো‘য়া কবুল করা হবে। আর যদি সে রাত জাগে, তাহলে অযু করবে, তারপর সালাত আদায় করবে, তবে তার সালাত কবুল করা হবে।”[12] অথবা সে (রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে) বলবে:

« لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ ، سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ ، أَسْتَغْفِرُكَ لِذَنْبِى ، وَأَسْأَلُكَ رَحْمَتَكَ ، اللَّهُمَّ زِدْنِى عِلْمًا ، وَلاَ تُزِغْ قَلْبِى بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنِى ، وَهَبْ لِى مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً ، إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ » . (رواه أبو داود).

“তুমি ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্য ইলাহ নেই; হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র; আমি তোমার কাছে আমার গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তোমার নিকট তোমার রহমত চাই; হে আল্লাহ! তুমি আমার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে দাও; আর তুমি আমাকে হেদায়াত দান করার পর আমার অন্তরকে বক্র করে দিয়ো না; আর তোমার নিকট থেকে আমাকে রহমত দান কর; নিশ্চয়ই তুমি দানশীল।”[13]

৬. ঘুমন্ত ব্যক্তি যখন সকাল বেলায় উপনীত হবে, তখন নিম্নোক্ত যিকির বা দো‘য়াসমুহ পাঠ করবে:

(ক) ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে বিছানা থেকে উঠার পূর্বে বলবে:

« الْحَمْدُ للهِ الَّذِي أحْيَانَا بَعْدَمَا أمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُشُورُ »

“সকল প্রশংসা সে আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে মৃত্যু দান করার পর পুনরায় জীবন দান করেছেন; আর তাঁরই নিকট (আমাদেরকে) ফিরে যেতে হবে।”[14]

(খ) যখন সে তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করার জন্য ঘুম থেকে উঠবে, তখন সে আকাশের দিকে তাকাবে এবং " إن في خلق السموات و الأرض "থেকে সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করবে; কেননা, আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:

« لَمَّا بِتُّ عِنْدَ خَالتِيْ مَيْمُونَةَ زَوْجِ الرَّسُوْلِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذَا انْتَصَفَ اللَّيْلُ أَوْ قَبْلَهُ بِقَلِيلٍ ، أَوْ بَعْدَهُ بِقَلِيلٍ ، اسْتَيْقَظَ ، فَجَعَلَ يَمْسَحُ النَّوْمَ عَنْ وَجْهِهِ بِيَدَيْهِ ، ثُمَّ قَرَأَ الْعَشْرَ الآيَاتِ الخَوَاتِمَ مِنْ سُورَةِ آلِ عِمْرَانَ ، ثُمَّ قَامَ إِلَى شَنٍّ مُعَلَّقَةٍ ، فَتَوَضَّأَ مِنْهَا ، فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ ، ثُمَّ قَامَ يُصَلِّي » .

“যখন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী আমার খালা মাইমুনা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার নিকট রাত্রি যাপন করি, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্ধরাত্রি কিংবা এর সামন্য পূর্ব অথবা সামান্য পর পর্যন্ত ঘুমালেন। তারপর তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হলেন এবং দুই হাত দিয়ে মুখ থেকে ঘুমের আবেশ মুছতে লাগলেন; অতঃপর সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করলেন। তারপর ঝুলন্ত একটি পুরাতন মশকের কাছে গেলেন এবং তা থেকে সুন্দরভাবে অযু করলেন। এরপর সালাতে দাঁড়িয়ে গেলেন।”[15]

(গ) চারবার এ দো‘য়া পাঠ করবে:

« اللهمَّ إني أصبَحتُ بِحَمْدكَ أُشْهِدكَ وأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ ، وَمَلائِكَتَكَ ، وَجَمِيعَ خَلْقِكَ أَنَّكَ أَنْتَ اللهُ لا إِله إلا أنتَ ، وأَنَّ مُحمَّدا عَبْدُكَ ورَسولُكَ » .

(হে আল্লাহ! আমি তোমার প্রশংসাসহ সকাল বেলায় উপনীত হয়েছে, আমি সাক্ষী বানিয়েছি তোমাকে, তোমার আরশ বহনকারী ফেরেশ্তাদেরকে, তোমার সকল ফেরেশ্তাকে এবং তোমার সকল সৃষ্টিকে; নিশ্চয়ই তুমি আল্লাহ, তুমি ছাড়া উপাসনার যোগ্য কোনো সত্য ইলাহ নেই; আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমার বান্দা ও রাসূল)। কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« مَنْ قالها مَرَّةً أَعتَقَ اللهُ رُبُعَهُ مِنَ النارِ ، ومن قالها مَرَّتَين أَعتَقَ اللهُ نِصْفَه مِنَ النَّارِ ، فَمن قالها ثلاثا أَعْتَقَ اللهُ ثلاثةَ أربِاعِهِ مِنَ النَّارِ ، فَإِنْ قَالَهَا أَرْبَعًا أَعْتَقَهُ اللَّهُ مِنَ النَّارِ » . (رواه أبو داود).

“যে ব্যক্তি তা (উপরিউক্ত দো‘য়াটি) একবার পাঠ করবে, আল্লাহ তার এক-চতুর্থাংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি তা তিনবার পাঠ করবে, আল্লাহ তার তিন-চতুর্থাংশ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দিবেন; আর যে ব্যক্তি তা চারবার পাঠ করবে, আল্লাহ তাকে পুরাপুরিভাবে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দিবেন।”[16]

(ঘ) ঘর থেকে বের হওয়ার জন্য যখন সে দরজার চৌকাঠে পা রাখবে, তখন বলবে:

« بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلتُ عَلَى اللهِ ، لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ » .

(আল্লাহর নামে বের হচ্ছি এবং তাঁর উপর ভরসা করছি। আর অসৎকাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারও ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া)। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« إِذَا قَالَ العَبْدُ هذَا ، قِيْلَ لَهُ : هُدِيتَ وَكُفِيتَ » . (رواه الترمذي).

“যখন কোনো বান্দা (উপরিউক্ত) এই দো‘য়াটি পাঠ করবে, তখন তাকে বলা হবে: ‘তোমাকে হেদায়াত দেয়া হয়েছে এবং তোমাকে যথেষ্ট দেয়া হয়েছে।”[17]

(ঙ) যখন দরজার চৌকাঠ ছেড়ে যাবে, তখন বলবে:

« اللَّهُمَّ إِنِّي أعُوذُ بِكَ أنْ أضِلَّ أَوْ أُضَلَّ ، أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ ، أَوْ أظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ ، أَوْ أجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ »

(হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই যেন আমি পথভ্রষ্ট না হই অথবা আমাকে পথভ্রষ্ট করা না হয়; অথবা আমি যেন দীন থেকে সরে না যাই অথবা আমাকে দীন থেকে সরিয়ে দেয়া না হয়; অথবা আমি যেন কারও উপর যুলুম না করি অথবা আমার উপর যুলুম করা না হয়)। কারণ, উম্মু সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:

« مَا خَرَجَ رسولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِنْ بَيْتِى قَطُّ إِلاَّ رَفَعَ طَرْفَهُ إِلَى السَّمَاءِ وَ قَالَ : « اللَّهُمَّ إِنِّي أعُوذُ بِكَ أنْ أضِلَّ أَوْ أُضَلَّ ، أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ ، أَوْ أظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ ، أَوْ أجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ » . (رواه أبو داود).

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমার ঘর থেকে বের হতেন, তখন তিনি আকাশের দিকে তাকাতেন এবং বলতেন:

« اللَّهُمَّ إِنِّي أعُوذُ بِكَ أنْ أضِلَّ أَوْ أُضَلَّ ، أَوْ أَزِلَّ أَوْ أُزَلَّ ، أَوْ أظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ ، أَوْ أجْهَلَ أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ »

(অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই যেন আমি পথভ্রষ্ট না হই অথবা আমাকে পথভ্রষ্ট করা না হয়; অথবা আমি যেন দীন থেকে সরে না যাই অথবা আমাকে দীন থেকে সরিয়ে দেয়া না হয়; অথবা আমি যেন কারও উপর যুলুম না করি অথবা আমার উপর যুলুম করা না হয়)।”[18]

>
[1] সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ৭৩

[2] সূরা আন-নাবা, আয়াত: ৯

[3] বুখারী ও মুসলিম।

[4] বুখারী ও মুসলিম।

[5] বুখারী ও মুসলিম।

[6] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫০৪৯

[7] ইবনু মাজাহ, হাদিস নং- ৩৭২৪

[8] আহমাদ, তিরমিযী ও হাকেম।

[9] মুসলিম, হাদিস নং- ৭০৯০

[10] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৮৮

[11] আবূ দাউদ ও অন্যান্য মুহাদ্দিস প্রমুখ হাদিসটি ‘সহীহ’ সনদে বর্ণনা করেছেন।

[12] বুখারী, হাদিস নং- ১১০৩; আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫০৬২

[13] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫০৬৩

[14] বুখারী।

[15] বুখারী, হাদিস নং- ১৮১, ১১৪০ ও ৪২৯৫

[16] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫০৭১

[17] তিরমিযী এবং তিনি হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।

[18] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৫০৯৬