মুসলিম ব্যক্তি মনে করে যে, পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বাণীর মাধ্যমে নির্দেশ প্রদান করেছেন, তিনি বলেন:
يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ
“হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক গ্রহণ কর। আর খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।”[1] আর আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা বনী আদমের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, তিনি বলেন:
يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسٗا يُوَٰرِي سَوۡءَٰتِكُمۡ وَرِيشٗاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ
“হে বনী আদম! অবশ্যই আমরা তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ও বেশ-ভূষার জন্য। আর তাকওয়ার পোশাক; এটাই সর্বোত্তম।”[2] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
وَجَعَلَ لَكُمۡ سَرَٰبِيلَ تَقِيكُمُ ٱلۡحَرَّ وَسَرَٰبِيلَ تَقِيكُم بَأۡسَكُمۡۚ
“আর তিনি তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের, তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের, তা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে।”[3] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
وَعَلَّمۡنَٰهُ صَنۡعَةَ لَبُوسٖ لَّكُمۡ لِتُحۡصِنَكُم مِّنۢ بَأۡسِكُمۡۖ فَهَلۡ أَنتُمۡ شَٰكِرُونَ
“আর আমরা তাকে তোমাদের জন্য বর্ম নির্মাণ শিক্ষা দিয়েছিলাম, যাতে তা তোমাদের যুদ্ধে তোমাদেরকে রক্ষা করে; কাজেই তোমরা কি কৃতজ্ঞ হবে?।”[4] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাণীর মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি বলেন:
« كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالْبَسُوا وَتَصَدَّقُوا فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلَا مَخِيلَةٍ » . (رواه البخاري).
“তোমরা খাও, পান কর, পোশাক পরিধান কর এবং দান কর; তবে অপচয় ও অহঙ্কার পরিহার করো।”[5] অনুরূপভাবে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৈধ ও অবৈধ পোশাকের বর্ণনা দিয়েছেন এবং বর্ণনা দিয়েছেন পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় পোশাক-পরিচ্ছদের; সুতরাং এ জন্য মুসলিম ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য হল— তার পোশাক-পরিচ্ছদের ব্যাপারে নিম্নোক্ত আদবসমূহ পালন করা:
১. সাধারণভাবে রেশমী পোশাক পরিধান না করা, চাই তা কাপড়ের ক্ষেত্রে হউক, অথবা পাগড়ীতে হউক অথবা অন্য যে কোনো পোশাকেই হউক; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« لاَ تَلْبَسُوا الحَرِيرَ ؛ فَإنَّهُ مَنْ لَبِسَهُ في الدُّنْيَا لَمْ يَلْبَسْهُ في الآخِرَةِ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).
“তোমরা রেশমী পোশাক পরিধান করো না; কারণ, দুনিয়াতে যে ব্যক্তি তা পরিধান করবে, আখেরাতে সে তা পরিধান করা থেকে বঞ্চিত হবে।”[6] তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতে রেশম ও বাম হাতে স্বর্ণ নিয়ে বলেন:
« إنَّ هذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُور أُمّتي » . (رواه أَبُو داود).
“এই দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য (ব্যবহার করা) হারাম।”[7] তিনি আরও বলেন:
« حُرِّمَ لِبَاسُ الحَرِير وَالذَّهَبِ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي ، وَأُحِلَّ لإنَاثِهِمْ » . (رواه الترمذي).
“রেশমের পোশাক ও সোনার জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে এবং তাদের নারীদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে।”[8]
২. তার কাপড়, অথবা পাজামা, অথবা কোট, অথবা চাদর এমন লম্বা না হওয়া, যা তার দুই টাকনুর নীচে চলে যায়; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« مَا أسْفَل مِنَ الكَعْبَيْنِ مِنَ الإزْارِ فَفِي النار » . (رواه البخاري).
“দুই টাকনুর নীচে তহবন্দ যে পরিমাণ স্থান ঢেকে রাখবে, তা জাহান্নামে যাবে।”[9] তিনি আরও বলেন:
« الإسْبَالُ في الإزار ، وَالقَمِيصِ ، وَالعِمَامةِ ، مَنْ جَرَّ شَيْئاً خُيَلاءَ لَمْ ينْظُرِ الله إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ » . (رواه أَبُو داود والنسائي).
“তহবন্দ বা পাজামা, জামা ও পাগড়ীই সাধারণত ঝুলিয়ে দেয়া হয়; আর যে ব্যক্তি অহঙ্কার বশত এরূপ কিছু ঝুলিয়ে দেবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি তাকাবেন না।”[10] তিনি আরও বলেন:
« مَنْ جَرَّ ثَوْبَهُ خُيَلاءَ لَمْ يَنْظُرِ اللهُ إِلَيْهِ يَوْمَ القِيَامَةِ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).
“যে ব্যক্তি অহঙ্কার বশত তার কাপড় ঝুলিয়ে দেবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি তাকাবেন না।”[11]
৩. সাদা পোশাককে অন্যান্য পোশাকের উপর প্রাধান্য দেয়া এবং সকল রঙের পোশাককে বৈধ মনে করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« الْبَسُوا البَيَاضَ ؛ فَإنَّهَا أطْهَرُ وَأطْيَبُ ، وَكَفِّنُوا فِيهَا مَوْتَاكُمْ » . (رواه النسائي والحاكم).
“তোমরা সাদা পোশাক পড়; কারণ, এটাই পবিত্র ও উৎকৃষ্টতর। আর সাদা কাপড়েই তোমরা মৃতদের কাফন দিয়ো।”[12] তাছাড়া বারা ইবন ‘আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« كَانَ رسول الله صلى الله عليه وسلم مَرْبُوعاً ، وَلَقَدْ رَأيْتُهُ في حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مَا رَأيْتُ شَيْئاً قَطُّ أحْسَنَ مِنْهُ » . (رواه البخاري).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের গঠনাকৃতি ছিল মধ্যম গোছের। আর আমি তাঁকে লাল চাদর গায়ে জড়ানো অবস্থায় দেখেছি, আমি কখনও তাঁর চাইতে সুন্দর জিনিস দেখিনি।”[13] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহীহভাবে বর্ণিত আছে যে, তিনি সবুজ পোশাক পরিধান করেছেন এবং কালো রঙের পাগড়ী পরিধান করেছেন।[14]
৪. মুসলিম রমনী কর্তৃক এমন লম্বা পোশাক পরিধান করা, যা তার দুই পায়ের পাতাকে ঢেকে দেয় এবং তার ওড়নাকে মাথার উপর এমনভাবে ঝুলিয়ে দেয়া, যাতে তা তার ঘাড়, গলা ও বুক ঢেকে দেয়; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়।”[15] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:
وَلۡيَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّۖ وَلَا يُبۡدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوۡ ءَابَآئِهِنَّ
“আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা ... ছাড়া কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।”[16] তাছাড়া আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
« يَرْحَمُ اللَّهُ نِسَاءَ الْمُهَاجِرَاتِ الأُوَلَ لَمَّا أَنْزَلَ اللَّهُ : (وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ ) شَقَقْنَ أَكْثَفَ مُرُوطِهِنَّ ، فَاخْتَمَرْنَ بِهَا » . (رواه البخاري).
“আল্লাহ তা‘আলা প্রথম সারির মুহাজির রমনীগণের প্রতি রহম করুন, যখন আল্লাহ নাযিল করলেন: (وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ ) [আর তারা তাদের গলা ও বুক যেন মাথার কাপড় দ্বারা ঢেকে রাখে], তখন তারা নিজের কোমরে বাঁধা কাপড় খুলে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ওড়না বানিয়ে ফেলল এবং তা দিয়ে শরীর ঢেকে ফেললো।”[17] আর উম্মু সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
« لَمَّا نَزَلَتْ : ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ﴾ ، خَرَجَ نِسَاءُ الأَنْصَارِ كَأَنَّ عَلَى رُءُوسِهِنَّ الْغِرْبَانُ مِنَ الأَكْسِيَةِ » . (رواه أبو داود).
“যখন নাযিল হল: يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ [হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়], তখন আনসার রমনীগণ তাদের মাথা এমনভাবে কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে বের হত, মনে হয় যেন তাদের মাথার উপর কাক বসে আছে।”[18]
৫. স্বর্ণের আংটি পরিধান না করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বর্ণ ও রেশমের ব্যাপারে বলেন:
« إنَّ هذَيْنِ حَرَامٌ عَلَى ذُكُور أُمّتي » . (رواه أَبُو داود).
“এই দু’টি জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য (ব্যবহার করা) হারাম।”[19] তিনি আরও বলেন:
« حُرِّمَ لِبَاسُ الحَرِير وَالذَّهَبِ عَلَى ذُكُورِ أُمَّتِي ، وَأُحِلَّ لإنَاثِهِمْ » . (رواه الترمذي).
“রেশমের পোশাক ও সোনার জিনিস আমার উম্মতের পুরুষদের জন্য হারাম করা হয়েছে এবং তাদের নারীদের জন্য হালাল করে দেয়া হয়েছে।”[20] আর আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
« إنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَأَى خَاتَمًا مِنْ ذَهَبٍ فِى يَدِ رَجُلٍ ، فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ ، وَقَالَ : « يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَى جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ ، فَيَجْعَلُهَا فِى يَدِهِ ». فَقِيلَ لِلرَّجُلِ بَعْدَ مَا ذَهَبَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : خُذْ خَاتَمَكَ انْتَفِعْ بِهِ ، قَالَ : لاَ ، وَاللَّهِ لاَ آخُذُهُ أَبَدًا ، وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم » . (رواه مسلم).
“একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে একটি সোনার আংটি দেখতে পেলেন; অতঃপর তিনি আংটিটি তার হাত থেকে খুলে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন এবং বললেন: ‘তোমাদের কেউ কি ইচ্ছা করে জ্বলন্ত অংগার হাতে রাখবে!’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর লোকটিকে বলা হল: তুমি তোমার আংটিটি উঠিয়ে নিয়ে অন্য কোন কাজে লাগাও। সে বলল: আল্লাহর কসম! যে জিনিসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন, তা আমি কখনও নেব না।”[21]
৬. মুসলিম ব্যক্তির জন্য রূপার আংটি পরিধান করতে কোন দোষ নেই, অথবা রূপার আংটির পাথর বা বৃত্তে তার নাম অংকন করা এবং তা স্বীয় চিঠি-পত্র ও লেখালেখিতে সীলমোহর হিসেবে ব্যবহার করাতে অথবা তার দ্বারা চেক ও অনুরূপ কিছুতে স্বাক্ষর দানে কোন দোষ নেই; কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ (محمد رسول الله ) খচিত রূপার আংটি ব্যবহার করতেন এবং তিনি তা তাঁর বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলিতে দিয়ে রাখতেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« كَانَ خَاتِمُ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فِى هَذِهِ . وَأَشَارَ إِلَى الْخِنْصَرِ مِنْ يَدِهِ الْيُسْرَى » . (رواه مسلم).
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আংটি ব্যবহার করতেন এ আঙুলে এবং এ কথা বলে তিনি তাঁর বাম হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলির দিকে ইঙ্গিত করেন।”[22]
৭. এমন পোশাক পরিধান না করা, যা তার শরীরের সাথে আঁটসাঁট হয়ে লেগে থাকে এবং তাতে তার দুই হাত বের করার মত কোনো জায়গা রাখা হয় না; কেননা, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ধরনের পোশাক পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। আর এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« لاَيَمشِ أحَدُكُمْ فِي نَعْلٍ وَاحِدَةٍ ، لِيَنْعَلْهُمَا جَمِيعاً ، أو لِيَخْلَعْهُمَا جَمِيعاً » . (رواه مسلم).
“তোমাদের কেউ যেন এক পায়ে জুতা পরে না হাঁটে— সে যেন হয় উভয় পায়ে জুতা পরিধান করে, অথবা উভয় পা খালি রাখে।”[23]
৮. মুসলিম পুরুষ কর্তৃক মুসলিম নারীর পোশাক এবং মুসলিম নারী কর্তৃক মুসলিম পুরুষের পোশাক পরিধান না করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা হারাম করে দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:
« لَعَنَ رسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم المُخَنَّثِينَ مِنَ الرِّجَالِ ، وَالمُتَرَجِّلاَتِ مِنَ النِّسَاءِ » . (رواه البخاري).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের বেশধারণকারী পুরুষ এবং পুরুষের বেশধারণকারী নারীদের প্রতি লানত করেছেন।”[24] আর আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও আবদুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এসেছে:
« لَعَنَ رسُولُ الله صلى الله عليه وسلم الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ المَرْأَةِ ، والمَرْأَةَ تَلْبِسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ كمَا لَعَنَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بالنِّسَاءِ ، والمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بالرِّجَالِ » . (رواه أبو داود و البخاري).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর পোশাক পরিধানকারী পুরুষ এবং পুরুষের পোশাক পরিধানকারী নারীদের প্রতি লানত করেছেন। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীদের অনুকরণকারী পুরুষদের এবং পুরুষদের অনুকরণকারী নারীদের প্রতিও লানত করেছেন”[25]
৯. জুতা পরিধান করার সময় ডান দিক থেকে শুরু করা এবং খোলার সময় বাম দিক থেকে শুরু করা; কেননা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« إِذَا انْتَعَلَ أحَدُكُمْ فَلْيَبْدَأْ بِالْيُمْنَى ، وَإِذَا نَزَعَ فَلْيَبْدأْ بِالشِّمَالِ . لِتَكُنْ اليُمْنَى أوَّلَهُمَا تُنْعَلُ ، وَآخِرُهُمَا تُنْزَعُ » . (رواه البخاري و مسلم).
“তোমাদের কেউ যখন জুতা পরিধান করে, তখন সে যেন ডান দিক থেকে শুরু করে; আর যখন সে জুতা খুলতে চায়, তখন যেন সে বাম দিক থেকে শুরু করে। যাতে ডান দিক (জুতা) পরার দিক থেকে প্রথম হয় এবং খোলার দিক থেকে হয় শেষ।”[26]
১০. কাপড় পরিধান করার ক্ষেত্রে ডান দিক থেকে শুরু করা; কেননা, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন:
« كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يُحِبُّ التَّيَمُّنَ فِى شَأْنِهِ كُلِّهِ : فِى نَعْلَيْهِ ، وَتَرَجُّلِهِ ، وَطُهُورِهِ » . (رواه مسلم).
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সকল কাজে ডান দিকে থেকে শুরু করতে পছন্দ করতেন; যেমন— জুতা পরতে, চুল-দাড়ি আঁচড়ানোতে এবং অযু করতে।”[27]
১১. নতুন কাপড় অথবা পাগড়ী অথবা যে কোনো পোশাক পরিধান করার সময় এ দো‘য়া পাঠ করবে:
« اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أنْتَ كَسَوْتَنِيهِ ، أسْأَلكَ خَيْرَهُ وَخَيْرَ مَا صُنِعَ لَهُ ، وَأَعوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ »
(হে আল্লাহ! তোমারই জন্য সকল প্রশংসা, তুমিই আমাকে এ কাপড় পরিয়েছ। আমি তোমার কাছে এর মধ্যকার কাল্যাণ চাচ্ছি এবং ঐ কল্যাণও প্রত্যাশা করছি তোমার কাছে, যার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি এ কাপড়ের অনিষ্টতা থেকে এবং ঐ অনিষ্টতা ও অকল্যাণ থেকেও আশ্রয় প্রার্থনা করছি, যার জন্য এটি তৈরি করা হয়েছে)। কেননা, এ দো‘য়াটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে।[28] ১২. তার মুসলিম ভাইকে নতুন পোশাক পরিধান করা অবস্থায় দেখলে তার জন্য এ কথা বলে দোয়া করা: " أبل و أخلق " (তুমি এটি পুরান কর ও ছিড়ে ফেল, অর্থাৎ তুমি দীর্ঘজীবী হও); কেননা, যখন উম্মু খালিদ নতুন পোশাক পরিধান করেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এ কথা বলে দো‘য়া করেছেন।[29]
[2] সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ২৬
[3] সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৮১
[4] সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৮০
[5] বুখারী, কিতাবুল লিবাস।
[6] বুখারী, হাদিস নং- ৫৪৯২; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৫৩১
[7] আবূ দাউদ রহ. হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন।
[8] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৭২০
[9] বুখারী, হাদিস নং- ৫৪৫০
[10] আবূ দাউদ ও নাসায়ী।
[11] বুখারী, হাদিস নং- ৩৪৬৫; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৫৭৮
[12] নাসায়ী ও হাকেম এবং তিনি হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন।
[13] বুখারী, হাদিস নং- ৫৫১০
[14] উদ্ধৃত, আবূ বকর আল-জাযায়েরী, মিনহাজুল মুসলিম, পৃ. ১৮১
[15] সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৯
[16] সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩১
[17] বুখারী, হাদিস নং- ৪৪৮০
[18] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৪১০৩
[19] আবূ দাউদ রহ. হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণনা করেছেন।
[20] তিরমিযী, হাদিস নং- ১৭২০
[21] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৫৯৩
[22] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬১০
[23] মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬১৭
[24] বুখারী, হাদিস নং- ৫৫৪৭ ও ৬৪৪৫
[25] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৪১০০; বুখারী, হাদিস নং- ৫৫৪৬
[26] বুখারী, হাদিস নং- ৫৫১৭; মুসলিম, হাদিস নং- ৫৬১৬
[27] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৪০
[28] মুসলিম, হাদিস নং- ৬৪০
[29] বুখারী, হাদিস নং- ৫৪৮৫