১. চার রাকা‘য়াত বিশিষ্ট সালাতকে ‘কসর’ করা; সুতরাং সে শুধু দুই রাকা‘য়াত দুই রাকা‘য়াত করে সালাত আদায় করবে; তবে মাগরিবের সালাত তিন রাকা‘য়াতই আদায় করবে। আর সে যে শহরে বা গ্রামে বাস করে, তা থেকে প্রস্থান করা থেকে ‘কসর’ শুরু করবে এবং সেখানে পুনরায় ফিরে আসা পর্যন্ত ‘কসর’ করবে; তবে যে শহরে সে সফর করেছে, সেখানে চার দিন বা তার বেশি অবস্থান করার নিয়ত করলে সে অবস্থায় পূর্ণ সালাত আদায় করবে, ‘কসর’ করবে না; কিন্তু যখন সে নিজ শহরে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করবে, তখন আবার ‘কসর’ শুরু করবে এবং বাড়িতে পৌঁছা পর্যন্ত ‘কসর’ চালিয়ে যাবে; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

وَإِذَا ضَرَبۡتُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ فَلَيۡسَ عَلَيۡكُمۡ جُنَاحٌ أَن تَقۡصُرُواْ مِنَ ٱلصَّلَوٰةِ

“তোমরা যখন দেশ-বিদেশে সফর করবে, তখন সালাত ‘কসর’ করলে তোমাদের কোনো দোষ নেই।”[1] তাছাড়া আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

« خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْمَدِينَةِ إِلَى مَكَّةَ ، فَكَانَ يُصَلِّى (الرباعية ) رَكْعَتَيْنِ رَكْعَتَيْنِ حَتَّى رَجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মদীনা থেকে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলাম; আমরা মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত তিনি (চার রাকা‘য়াত বিশিষ্ট সালাতকে ‘কসর’ করে) দুই রাকা‘য়াত দুই রাকা‘য়াত করে সালাত আদায় করতেন।”[2]

২. তিনদিন তিনরাত মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ; কেননা, আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

« جَعَلَ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثَلاثَةَ أَيَّامٍ وَلَيَالِيَهُنَّ لِلْمُسَافِرِ ، وَلِلْمُقِيمِ يَوْمًا وَلَيْلَةً الْمَسْحَ عَلَى الْخُفَّيْنِ » . (رواه أحمد و مسلم و النسائي و ابن ماجه).

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে মোজার উপর মাসেহ করার বিধান দিয়েছেন— মুসাফির তথা পর্যটকের জন্য তিনদিন তিনরাত এবং মুকীম তথা নিজ বাসস্থানে বসবাসকারীর জন্য একদিন একরাত।”[3]

৩. তায়াম্মুম করা বৈধ, যদি সে পানি না পায়, অথবা পানি সংগ্রহ করা তার জন্য কষ্টকর হয়ে যায়, অথবা তার জন্য পানির দাম অনেক বেশি হয়; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

﴿ وَإِن كُنتُم مَّرۡضَىٰٓ أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوۡ جَآءَ أَحَدٞ مِّنكُم مِّنَ ٱلۡغَآئِطِ أَوۡ لَٰمَسۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُمۡۗ ﴾ [النساء: ٤٣]

“আর যদি তোমরা পীড়িত হও অথবা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ শৌচস্থান থেকে আসে অথবা তোমরা নারী সম্ভোগ কর এবং পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম কর; সুতরাং মাসেহ কর তোমরা তোমাদের চেহারা ও হাত।”[4]

৪. সাওম ভঙ্গ করার সুযোগ বা অবকাশ প্রদান; কেননা, আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٖ فَعِدَّةٞ مِّنۡ أَيَّامٍ أُخَرَۚ

“অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করে নিতে হবে।”[5]

৫. বাহনের উপর বসে যে কোনো দিকে ফিরে নফল সালাত আদায় করার বৈধতা; কেননা, আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:

« إنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُصَلِّى سُبْحَتَهُ (النافلة ) حَيْثُمَا تَوَجَّهَتْ بِهِ نَاقَتُهُ » . (متفقٌ عَلَيْهِ).

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাহনে (নফল) সালাত আদায় করতেন, তাঁর উট তাঁকে নিয়ে যে দিকেই ফিরে থাকুক না কেন।”[6]

৬. যোহর ও আসর, অথবা মাগরিব ও এশা’র সালাতকে একত্র করে আদায় করা বৈধ; সুতরাং সে যোহর ও আসরের সালাতকে একত্র করে যোহরের ওয়াক্তে আদায় করবে এবং মাগরিব ও এশা’র সালাতকে একত্র করে মাগরিবের ওয়াক্তে আদায় করবে; অথবা যোহরের সালাতকে আসরের প্রথম ওয়াক্ত পর্যন্ত বিলম্বিত করে যোহর ও আসরকে এক সাথে আদায় করবে এবং মাগরিবকে এশা’র সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করে এক সাথে আদায় করবে। কেননা, মু‘য়ায রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

« خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِى غَزْوَةِ تَبُوكَ ، فَكَانَ يُصَلِّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا ، وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ جَمِيعًا » . (رواه مسلم).

“আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তাবুকের যুদ্ধে বের হলাম; তারপর তিনি (আমাদেরকে নিয়ে) যোহর ও আসরের সালাতকে একত্রে আদায় করতেন এবং মাগরিব ও এশার সালাতকে একত্রে আদায় করতেন।”[7]

>
[1] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১০১

[2] বুখারী, হাদিস নং- ১০৩১; মুসলিম, হাদিস নং- ১৬১৮

[3] আহমাদ, মুসলিম, নাসায়ী ও ইবনু মাজাহ।

[4] সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৩

[5] সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৪

[6] বুখারী, হাদিস নং- ৯৫৫; মুসলিম, হাদিস নং- ১৬৪৪

[7] মুসলিম, হাদিস নং- ১৬৬৫