إنَّ الحمدَ للهِ نحمدُه ونستعينُه ونستغفرُه ، ونعوذُ بالله من شُرور أنفسنا وسيئاتِ أعمالنا ، مَن يهدهِ الله فلا مُضِلَّ له ، ومَن يُضلل فلا هاديَ له ، وأشهدُ ألاَّ إله إلاَّ الله وحده لا شريك له ، وأشهد أنَّ محمَّداً عبدُه ورسولُه .
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য; আমরা তাঁর প্রশংসা করি, তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি; আর আমাদের নফসের জন্য ক্ষতিকর এমন সকল খারাপি এবং আমাদের সকল প্রকার মন্দ আমল থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে পথ প্রদর্শন করেন, কেউ তাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে না; আর তিনি যাকে পথহারা করেন, কেউ তাকে পথ দেখাতে পারবে না। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল)।
অতঃপর:
মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব; আল্লাহ মানুষকে সুন্দর গঠনে এবং সম্মান ও মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
لَقَدۡ خَلَقۡنَا ٱلۡإِنسَٰنَ فِيٓ أَحۡسَنِ تَقۡوِيمٖ
“অবশ্যই আমরা সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতম গঠনে।”[1] তিনি আরও বলেন:
﴿ ۞وَلَقَدۡ كَرَّمۡنَا بَنِيٓ ءَادَمَ وَحَمَلۡنَٰهُمۡ فِي ٱلۡبَرِّ وَٱلۡبَحۡرِ وَرَزَقۡنَٰهُم مِّنَ ٱلطَّيِّبَٰتِ وَفَضَّلۡنَٰهُمۡ عَلَىٰ كَثِيرٖ مِّمَّنۡ خَلَقۡنَا تَفۡضِيلٗا ٧٠ ﴾ [الاسراء: ٧٠]
“আমি অবশ্যই আদম সন্তানদের মর্যাদা দান করেছি, স্থলে ও সমুদ্রে আমি তাদের চলাচলের বাহন দিয়েছি, তাদেরকে আমি পবিত্র বস্তু থেকে রিযিকের ব্যবস্থা করেছি এবং আমি অন্য যত কিছুই সৃষ্টি করেছি, তার অধিকাংশের উপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।”[2]
এ সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার নিমিত্তে আল্লাহ তা‘আলা মানব জীবনের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ পরিচালনার জন্য কিছু নিয়ম-কানুন দিয়েছেন, যা যুগে যুগে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক মনোনীত নবী ও রাসূল ‘আলাইহিমুস সালামের মাধ্যমে মানুষ জানতে পেরেছে; তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের মাঝে এসেছে সর্বশ্রেষ্ঠ কিতাব ‘আল-কুরআনুল কারীম’ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ, যাতে মানব জীবনের সকল বিষয় সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, বর্ণিত হয়েছে গোটা মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা।
সুতরাং প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি ব্যবহারিক জীবনে কুরআন ও সুন্নায় বর্ণিত আদবসমূহ মেনে চলতে পারলে ব্যক্তিগতভাবে সে দুনিয়ার জীবনে একজন ভদ্র, শালীন ও সভ্য মানুষ হিসেবে সম্মান ও মর্যাদা নিয়ে বসবাস করতে পারবে এবং পরকালীন জীবনে আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণের মিছিলে শামিল হতে পারবে; আর সামগ্রিকভাবে সমাজ, রাষ্ট্র ও গোটা দুনিয়া হয়ে উঠবে শিষ্টাচারপূর্ণ, সুসভ্য, সুশৃঙ্খল, সুন্দর ও কল্যাণময়। আদব-কায়দার এসব গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করেই আমরা “কুরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে মুসলিম জীবনে আদব-কায়দা” শীর্ষক শিরোনামে এ গ্রন্থটি সংকলন শুরু করি, যাতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে:
- ভূমিকা
- প্রথম অধ্যায়: আদব-কায়দা’র পরিচয়, গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- দ্বিতীয় অধ্যায়: নিয়তের আদবসমূহ
- তৃতীয় অধ্যায়: আল্লাহ তা‘আলার সাথে মুসলিম বান্দার আদব
- চতুর্থ অধ্যায়: আল্লাহর বাণী ‘আল-কুরআনুল কারীম’-এর সাথে বান্দার আদব
- পঞ্চম অধ্যায়: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মুমিন বান্দার আদব
- ষষ্ঠ অধ্যায়: স্বীয় নাফসের সাথে মুসলিম বান্দার আদবসমূহ
- সপ্তম অধ্যায়: মানুষ তথা সৃষ্টির সাথে আদব
- অষ্টম অধ্যায়: দীনী ভাইদের সাথে আদব এবং আল্লাহর জন্য তাদেরকে ভালোবাসা ও ঘৃণা করা
- নবম অধ্যায়: বসার ও মাজলিসের আদবসমূহ
- দশম অধ্যায়: পানাহারের আদবসমূহ
- একাদশ অধ্যায়: যিয়াফত তথা আপ্যায়নের আদবসমূহ
- দ্বাদশ অধ্যায়: সফরের আদব
- ত্রয়োদশ অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদের আদব
- চতুর্দশ অধ্যায়: স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে আদবসমূহ
- পঞ্চদশ অধ্যায়: ঘুমানোর আদব
- পরিশিষ্ট
- গ্রন্থপঞ্জি
- সূচীপত্র
অবশেষে বলতে হয়, চেষ্টা করা হয়েছে পবিত্র কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর আলোকে মুসলিম জবীনের প্রয়োজনীয় আদব-কায়দার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার, কিন্তু সকল বিষয় যে তুলে ধরতে পারিনি এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়; তবে বাংলা ভাষাভাষী প্রাজ্ঞ ও অভিজ্ঞ আলেম সমাজ এ বিষয়ে আরও বেশি লেখালেখি করলে এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি একদিন পূর্ণতা লাভ করবে এমন আশা করতেই পারি। পরিশেষে আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াসটুকু আমাদের ও পাঠক সমাজের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির জন্য মহান রাব্বুল ‘আলামীনের দরবারে নিবেদন করছি; আশা করছি তিনি আমাদের এ আবেদন কবুল করবেন এবং আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দাগণের কাতারে শামিল করবেন। আমীন!
ড. মো: আমিনুল ইসলাম,
ডিসেম্বর, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ,
দৌলতগঞ্জ গাজীমুড়া কামিল মাদরাসা,লাকসাম, কুমিল্লা।
>[2] সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭০