উত্তর: অপব্যাখ্যা নিন্দনীয় কাজ, আল্লাহর গুণাগুণের ক্ষেত্রে অপব্যাখ্যা জায়েয নেই। বরং তা যেভাবে এসেছে সেভাবেই সাব্যস্ত করতে হবে, আল্লাহর জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ সেভাবেই এর প্রকাশ্য অর্থ সাব্যস্ত করতে হবে এবং কোনো ধরনের পরিবর্তন পরিবর্ধন, রহিতকরণ, পদ্ধতিকরণ এবং সামঞ্জস্যকরণ ব্যতীতই। আল্লাহ তা‘আলা তার গুণাগুণ এবং নামের ব্যাপারে বলেছেন:
﴿فَاطِرُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۚ جَعَلَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَٰجٗا وَمِنَ ٱلۡأَنۡعَٰمِ أَزۡوَٰجٗا يَذۡرَؤُكُمۡ فِيهِۚ لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ١١﴾ [الشورى: ١١]
“তার মত কোনো কিছু নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন।” [সূরা শূরা/১১]
কাজেই আমাদের উচিৎ হলো, তা যেভাবে এসেছে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করা। আর আহলে সুন্নাত ও জামাতও একই কথা বলেছেন যে, এগুলো যেভাবে এসেছে সেভাবে সাব্যস্ত কর, বিনা পরিবর্তন পরিবর্ধনে, বিনা অপব্যাখ্যায়, বিনা পদ্ধতিকরণে। বরং আল্লাহর জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ সেভাবেই এর প্রকাশ্য অর্থ বিনা অপব্যাখ্যায় ও বিনা পদ্ধতিকরণে স্বীকার করে নাও। কাজেই আল্লাহর বাণী :
﴿ ٱلرَّحۡمَٰنُ عَلَى ٱلۡعَرۡشِ ٱسۡتَوَىٰ ٥ ﴾ [طه: ٥]
তে বলা হবে: রহমান (আল্লাহ) আরশের উপর উঠেছেন। [সূরা তাহা/৫] এখানে ‘ইসতেওয়া’ এবং এ রকম অন্যান্য আয়াতে ‘ইসতেওয়া’ হলো: আল্লাহর জন্য যে রকম থাকা উচিৎ সে রকম, তার সাথে সৃষ্টির কোনো সামঞ্জস্য নেই। আহলে হক্বদের নিকট ‘ইসতেওয়া’র অর্থ হলো: উঁচু এবং উপরে উঠা।
এমনিভাবে কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর গুণাগুণের ব্যাপারে যে সকল গুণ এসেছে যেমন: চোখ, কান, হাত, পা ইত্যাদি, এ সবগুলোই আল্লাহর নিজস্ব গুণ, এতে সৃষ্টির কোনো সামঞ্জস্যতা নেই।
আর সাহাবীগণ এবং তাদের পরবর্তীতে আহলে সুন্নাতের ইমামগণ যেমন: আউযা‘ঈ, সাওরী, মালেক, আবু হানিফা, আহমাদ, ইসহাক এবং অন্যান্য ইমামগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) এর উপরই চলেছেন। যেমন নূহ আলাইহিস সালামের ব্যাপারে আল্লাহর বাণী:
﴿ وَحَمَلۡنَٰهُ عَلَىٰ ذَاتِ أَلۡوَٰحٖ وَدُسُرٖ ١٣ تَجۡرِي بِأَعۡيُنِنَا﴾ [القمر: ١٣، ١٤]
“তখন নূহকে আরোহণ করালাম কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত এক নৌযানে, যা আমার চোখের সামনে চলল।” [সূরা কামার ১৩-১৪]
মূসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে আল্লাহর বাণী:
﴿ وَلِتُصۡنَعَ عَلَىٰ عَيۡنِيٓ ﴾ [طه: ٣٩]
“যেন তুমি আমার চোখের সামনে প্রতিপালিত হও। [সূরা ত্বহা/৩৯]
আহলে সুন্নাতগণ এ দু’টি আয়াতের ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, (تجري بأعيننا) থেকে উদ্দেশ্য হলো: আল্লাহ তা‘আলা তার নিয়ন্ত্রনে একে চালিয়েছেন যতক্ষণ না তা জূদী পাহাড়ে গিয়ে থেমেছে। এমনিভাবে ولتصنع على عيني থেকে উদ্দেশ্য হলো, মূসা আলাইহিস সালামকে যারা লালন পালন করেছে তারা আল্লাহর নিয়ন্ত্রনে এবং তার তাওফীকে করেছে।
তদ্রূপ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে তাঁর বাণী:
﴿ وَٱصۡبِرۡ لِحُكۡمِ رَبِّكَ فَإِنَّكَ بِأَعۡيُنِنَاۖ ﴾ [الطور: ٤٨]
“আপনি আপনার রবের নির্দেশের অপেক্ষায় ধৈর্য্য ধারণ করুন, কেননা আপনি আমার চোখের সামনেই আছেন।” [সূরা তূর ৪৮]
এ সকল ব্যাখ্যা অপব্যাখ্যা নয় বরং আরবী ভাষায় এবং এর পদ্ধতিতে প্রসিদ্ধ ব্যাখ্যা।
এমনিভাবে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহর বাণী:
«من تقرب إلي شبراً تقربت إليه ذراعاً ومن تقرب إلي ذراعاً تقرب إليه باعاً، ومن أتاني يمشي أتيته هرولةً»
“যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিগত পরিমাণ এগিয়ে আসবে আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ এগিয়ে যাই, যে ব্যক্তি আমার দিকে এক হাত এগিয়ে আসবে আমি তার দিকে এক গজ পরিমাণ এগিয়ে যাই এবং যে ব্যক্তি আমার দিকে পায়ে হেটে আসবে আমি তার দিকে দৌড়ে যাই।” এখানে “আল্লাহর আসা” তার যেভাবে আসা উচিৎ বিনা পরিবর্তন পরিবর্ধন, বিনা উদাহরণ এবং বিনা পদ্ধতিকরণে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করে।
এমনিভাবে শেষ রাত্রিতে তার নিম্ন আকাশে নেমে আসা, শোনা, দেখা, রাগান্বিত হওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, হাসি-খুশী ইত্যাদি স্থায়ী গুণাবলীর সবগুলোই তার জন্য যেভাবে সাব্যস্ত করা উচিৎ বিনা পরিবর্তন পরিবর্ধন, রহিতকরণ, উদাহরণ এবং বিনা পদ্ধতিকরণে হুবহু সেভাবেই সাব্যস্ত করে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: (তার মত কোনো কিছু নেই এবং তিনি শুনেন ও দেখেন।) এবং এ অর্থে আরো যে সকল আয়াত রয়েছে, এর উপর আমল করা।
কিন্তু গুণাগুণের অপব্যাখ্যা এবং এর প্রকাশ্য অর্থ থেকে পরিবর্তন করা হচ্ছে জাহমিয়া এবং মু‘তাযিলাদের মত বিদ‘আতীদের কাজ, আর সেটি হচ্ছে বাতিল মাযহাব যা আহলে সুন্নাতগণ নিন্দা করেছেন এবং এ থেকে তারা মুক্ত, এদের থেকে বিরত থাকার জন্য সতর্ক করে দিয়েছেন।