রামাযানের শেষ জুম‘আকে ‘জুম‘আতুল বিদা’ বলা হয়। অথচ শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি নেই। উক্ত মর্মে যে কথা প্রচলিত আছে তা ডাহা মিথ্যা।

مَنْ قَضَى صَلَوَاتٍ مِنَ الْفَرَائِضِ فِىْ أَخِرِ جُمُعَةٍ مِنْ رَمَضَانَ كَانَ ذَلِكَ جَابِرًا لِكُلِّ صَلاَةٍ فَائِتَةٍ مِنْ عُمْرِهِ إِلَى سَبْعِيْنَ سَنَةً.

যে ব্যক্তি রামাযান মাসের শেষ জুম‘আয় ক্বাযা ছালাতগুলো আদায় করবে, তার জীবনের ৭০ বছরের ছুটে যাওয়া প্রত্যেক ছালাতের ক্ষতি পূরণের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।[1]

তাহক্বীক্ব : মোল্লা আলী ক্বারী (রহঃ) বলেন,

بَاطِلٌ قَطْعِيًّا لِأَنَّهُ مُنَاقِضٌ لِلْإِجْمَاعِ عَلَى أَنَّ شَيْئًا مِنَ الْعِبَادَاتِ لاَ يَقُوْمُ مَقَامَ فَائِتَةِ سَنَوَاتٍ ثُمَّ لاَ عِبْرَةَ بِنَقْلِ صَاحِبِ النِّهَايَةِ وَلاَ بَقِيَةَ شُرَّاحِ الْهِدَايَةِ لِأَنَّهُمْ لَيْسُوْا مِنَ الْمُحَدِّثِيْنَ وَلاَ أَسْنَدُوا الْحَدِيْثَ إِلَى أَحَدٍ مِنَ الْمُخَرِّجِيْنَ.

‘এটি চূড়ান্ত মিথ্যা কথা। এটা ইজমার বিরোধী। কারণ কোন ইবাদত বিগত বছরের ছুটে যাওয়া বিষয়ের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না। অতঃপর ছাহেবে ‘নেহায়া’র এই বর্ণনা উল্লেখ করার মধ্যে কোন উপদেশ নেই। অনুরূপ হেদায়ার ভাষ্যকারদের মধ্যেও যের নেই। কারণ তারা মুহাদ্দিছদের অন্তর্ভুক্ত নন। এমনকি তারা এই হাদীছকে হাদীছের কোন সনদ বিশ্লেষণকারীর দিকে সম্বন্ধ করেননি।[2]

مَنْ صَلَّى فِىْ آخِرِ جُمُعَةٍ مِنْ رَمَضَانَ الْخَمْسَ الصَّلَوَاتِ الْمَفْرُوْضَةَ فِى الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ قَضَتْ عَنْهُ مَا أَخَلَّ بِهِ مِنْ صَلاَةِ سَنَتِهِ.

যে ব্যক্তি রামাযান মাসের শেষ জুম‘আয় দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত আদায় করবে তার ঐ বছরের (ত্রুটি মুক্ত) ফওত হয়ে যাওয়া ছালাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।[3]

তাহক্বীক্ব : উক্ত বর্ণনা সম্পর্কে ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন,

هَذَا مَوْضُوْعٌ لاَ إِشْكاَلَ فِيْهِ وَلَمْ أَجِدْهُ فِىْ شَيْءٍ مِنَ الْكُتُبِ الَّتِىْ جَمَعَ مُصَنِّفُوْهَا فِيْهَا الْأَحَادِيْثَ الْمَوْضُوْعَةَ وَلَكِنَّهُ اشْتُهِرَ عِنْدَ جَمَاعَةٍ مِنَ الْمُتَفَقِّهَةِ بِمَدِيْنَةِ صَنْعَاءَ فِىْ عَصْرِنَا هَذَا وَصَارَ كَثِيْرٌ مِنْهُمْ يَفْعَلُوْنَ ذَلِكَ وَلاَ أَدْرِىْ مَنْ وَضَعَهُ لَهُمْ فَقَبَّحَ اللهُ الْكَذَّابِيْنَ.

‘এটা যে জাল তাতে কোন জটিলতা নেই। লেখকগণ জাল হাদীছের গ্রন্থে যে সমস্ত হাদীছ জমা করেছেন সেই গ্রন্থ সমূহের মধ্যে আমি এই বর্ণনা পায়নি। তবে মদ্বীনার ছান‘আ অঞ্চলের ফক্বীহ শ্রেণীর লোকের মাঝে এটি খুব প্রসিদ্ধ। আর এটা বহু মানুষ আমলও করে থাকে। আমি জানি না কোন্ ব্যক্তি তাদের জন্য এটি জাল করেছে। তাই আল্লাহ মিথ্যুকদের উপর গযব বর্ষণ করুন।[4]

সুধী পাঠক! সম্পূর্ণ একটি মিথ্যা ও উদ্ভট বিষয়কে নিয়ে সারা বিশ্বে ‘জুম‘আতুল বিদা’ পালন করা হয়। ঐ দিন মুছল্লীরা মসজিদে মসজিদে এত ভীড় জমায় তা কল্পনা করা যায় না। ভিত্তি না থাকা সত্ত্বেও আলেমগণ যদি শরী‘আতের দোহায় দিয়ে প্রচারণা চালান, তবে তাদের অবস্থা কী হবে? সাধারণ শিক্ষিত মানুষগুলোও এই মিথ্যা স্রোতে ভেসে যান। যাচাইয়ের কোন প্রয়োজন মনে করেন না।

[1]. মোল্লা আলী আল-ক্বারী, আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতুল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ১৯১, হা/৩৫৮; মাওযূ‘আতুল কুবরা, আব্দুল হাই লাক্ষ্ণৌবী হানাফী, আল-আছারুল মারফূ‘আহ্ ফিল আখবারিল মাওযূ‘আহ্ ১/৮৫; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ১/৫৪, নং ১১৫; আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ...।

[2]. আল-মাছনূ‘ ফী মা‘রেফাতুল হাদীছিল মাওযূ‘, পৃঃ ১৯১, হা/৩৫৮।

[3]. মুহাম্মাদ বিন আলী বিন মুহাম্মাদ আশ-শাওকানী, আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ (বৈরুত : আল-মাকতাবুল ইসলামী, ১৪০৭), হা/১১৫, পৃঃ ৫৪।

[4]. আল-ফাওয়াইদুল মাজমূ‘আহ ফিল আহাদীছিল মাওযূ‘আহ হা/১১৫-এর আলোচনা দ্রঃ, পৃঃ ৫৪।