রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার ছহীহ হাদীছ সমূহ

রাফ‘উল ইয়াদায়েন করার ছহীহ হাদীছ সমূহ :

عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللهِ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ كَانَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ وَإِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوْعِ رَفَعَهُمَا كَذَلِكَ أَيْضًا وَقَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَكَانَ لَا يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى السُّجُوْدِ.

সালেম ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ছালাত আরম্ভ করতেন, তখন কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। অনুরূপ যখন রুকূ করার জন্য তাকবীর দিতেন এবং যখন রুকূ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ রাববানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলতেন। তিনি সিজদায় এমনটি করতেন না।[1]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ إِذَا قَامَ فِى الصَّلَاةِ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يَكُوْنَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَكَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ حِيْنَ يُكَبِّرُ لِلرُّكُوْعِ وَيَفْعَلُ ذَلِكَ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنْ الرُّكُوْعِ وَيَقُوْلُ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ وَلَا يَفْعَلُ ذَلِكَ فِى السُّجُوْدِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে দেখেছি তিনি যখন ছালাতে দাঁড়াতেন, তখন কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন তিনি রুকূর জন্য তাকবীর দিতেন তখনও এটা করতেন। রুকূ থেকে যখন মাথা উঠাতেন, তখনও দুই হাত উঠাতেন এবং ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন। তিনি সিজদায় এমনটি করতেন না।[2]

عَنْ عَلِىِّ بْنِ أَبِىْ طَالِبٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ أَنَّهُ كَانَ إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ الْمَكْتُوْبَةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَيَصْنَعُ مِثْلَ ذَلِكَ إِذَا قَضَى قِرَاءَتَهُ وَأَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ وَيَصْنَعُهُ إِذَا رَفَعَ مِنَ الرُّكُوْعِ وَلاَ يَرْفَعُ يَدَيْهِ فِىْ شَىْءٍ مِنْ صَلاَتِهِ وَهُوَ قَاعِدٌ وَإِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ كَذَلِكَ وَكَبَّرَ.

আলী (রাঃ) রাসূল (ছাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি যখন ফরয ছালাতে দাঁড়াতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত উত্তোলন করতেন। যখন তিনি ক্বিরাআত শেষ করতেন ও রুকূতে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। যখন তিনি রুকূ থেকে উঠতেন তখনও তিনি অনুরূপ করতেন। তবে বসা অবস্থায় তিনি রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন না। কিন্তু যখন তিনি দুই রাক‘আত শেষ করে দাঁড়াতেন, তখন অনুরূপ রাফ‘উল ইয়াদায়েন করতেন এবং তাকবীর দিতেন। [3]

عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ إِذَا دَخَلَ فِي الصَّلَاةِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا رَكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَفَعَ يَدَيْهِ وَإِذَا قَامَ مِنْ الرَّكْعَتَيْنِ رَفَعَ يَدَيْهِ وَرَفَعَ ذَلِكَ ابْنُ عُمَرَ إِلَى نَبِيِّ اللهِ .

নাফে‘ (রাঃ) বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) যখন ছালাত শুরু করতেন, তখন তাকবীর দিতেন এবং দুই হাত উঠাতেন। যখন রুকূ করতেন তখনও দুই হাত উঠাতেন, যখন ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন এবং যখন দুই রাক‘আতের পর দাঁড়াতেন, তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন। ইবনু ওমর (রাঃ) এই বিষয়টিকে রাসূল (ছাঃ)-এর দিকে সম্বোধন করতেন।[4]

عن عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ افْتَتَحَ التَّكْبِيْرَ فِى الصَّلَاةِ فَرَفَعَ يَدَيْهِ حِيْنَ يُكَبِّرُ حَتَّى يَجْعَلَهُمَا حَذْوَ مَنْكِبَيْهِ وَإِذَا كَبَّرَ لِلرُّكُوْعِ فَعَلَ مِثْلَهُ وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَعَلَ مِثْلَهُ وَقَالَ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ وَلَا يَفْعَلُ ذَلِكَ حِيْنَ يَسْجُدُ وَلَا حِيْنَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنْ السُّجُوْدِ.

আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে তাকবীর দিয়ে ছালাত শুরু করতে দেখেছি। তিনি যখন তাকবীর দিতেন তখন দুই হাত উত্তোলন করতেন এবং কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকূর জন্য তাকবীর দিতেন এবং ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলতেন তখনও দুই হাত উত্তোলন করতেন। তখন তিনি ‘রাববানা ওয়া লাকাল হামদ’ বলতেন। এমনটি তিনি সিজদার সময় করতেন না এবং সিজদা থেকে মাথা উঠানোর সময়ও এমনটি করতেন না।[5]

সুধী পাঠক! মাত্র কয়েকটি বর্ণনা এখানে উল্লেখ করা হল। তবে রাফ‘উল ইয়াদায়েনের হাদীছের সংখ্যা অনেক।[6] রুকূতে যাওয়া ও রুকূ হতে উঠার সময় ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’ করা সম্পর্কে চার খলীফা সহ প্রায় ২৫ জন ছাহাবী থেকে বর্ণিত ছহীহ হাদীছ রয়েছে। একটি হিসাব মতে ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছের রাবী সংখ্যা ‘আশারায়ে মুবাশশারাহ’ সহ অন্যূন ৫০ জন ছাহাবী[7] এবং সর্বমোট ছহীহ হাদীছ ও আছারের সংখ্যা অন্যূন চার শত।[8] এ জন্য ইমাম সুয়ূত্বী, আলবানীসহ প্রমুখ বিদ্বান ‘রাফ‘উল ইয়াদায়েন’-এর হাদীছকে ‘মুতাওয়াতির’ পর্যায়ের বলে স্বীকৃতি দান করেছেন।[9] ফালিল্লা-হিল হামদ।

[1]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৭৩৫, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০২, (ইফাবা হা/৬৯৯-৭০৩, ২/১০০-১০২ পৃঃ); এছাড়া হা/৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯ দ্রঃ; ছহীহ মুসলিম হা/৮৮৭, ৮৮৮, ৮৮৯, ৮৯০, ৮৯১, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৬৮, (ইফাবা হা/৭৪৫-৭৪৯), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৯।

[2]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, ছহীহ বুখারী হা/৭৩৬।

[3]. ছহীহ আবুদাঊদ হা/৭৪৪, ১/১০৯ পৃঃ।

[4]. بَاب رَفْعِ الْيَدَيْنِ إِذَا قَامَ مِنْ الرَّكْعَتَيْنِ -ছহীহ বুখারী হা/৭৩৯, ১/১০২ পৃঃ; মিশকাত হা/৭৯৪ ও ৭৯৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৭৩৮ ও ৭৩৯, ২য় খন্ড, পৃঃ ২৫৩।

[5]. ছহীহ বুখারী হা/৭৩৮, ১/১০২ পৃঃ।

[6]. বুখারী হা/৭৩৫, ৭৩৬, ৭৩৭, ৭৩৮, ৭৩৯= ৫টি; ছহীহ মুসলিম হা/৮৮৭, ৮৮৮, ৮৮৯, ৮৯০, ৮৯১= ৫টি; আবুদাঊদ হা/৭২১, ৭২২, ৭২৩, ৭২৫, ৭২৬, ৭২৮, ৭২৯, ৭৩০, ৭৪১, ৭৪২, ৭৪৩, ৭৪৪, ৭৪৫, ৭৪৬, ৭৪৭,, ৭৬১= ১৬টি; নাসাঈ হা/৮৭৬, ৮৭৭, ৮৭৮, ৮৭৯, ৮৮০, ৮৮১, ৮৮৯, ১০২৪, ১০২৫, ১০২৫৫, ১০৫৬, ১০৫৭, ১০৫৯= ১৩টি; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৮, ৮৫৯, ৮৬০, ৮৬১, ৮৬২, ৮৬৩, ৮৬৮= ১১টি; তিরমিযী হা/২৫৫। শুধু ‘কুতুবে সিত্তাহ্র’ মধ্যেই প্রায় ৫১টি হাদীছ এসেছে।

[7]. ফাৎহুল বারী ২/২৫৮ পৃঃ, হা/৭৩৭-এর ব্যাখ্যা, ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮৪।

[8]. মাজদুদ্দীন ফীরোযাবাদী (৭২৯-৮১৭ হিঃ), সিফরুস সা‘আদাত (লাহোর : ১৩০২ হিঃ, ফার্সী থেকে উর্দূ), ১৫ পৃঃ; গৃহীতঃ প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ছালাতুর রাসূল (ছাঃ), পৃঃ ১০৮।

[9]. তুহফাতুল আহওয়াযী ২/১০০, ১০৬ পৃঃ; ছিফাতু ছালাতিন নবী, পৃঃ ১২৮।