(৮) আযানের দু‘আয় বাড়তি অংশ যোগ করা :

দু‘আ নির্দিষ্ট ইবাদত। এর সাথে বাড়তি অংশ যোগ করার অধিকার কারো নেই। মানব রচিত কথা রাসূল (ছাঃ)-এর নামে চালিয়ে দিলে এর পরিণাম হবে জাহান্নাম।[1] অথচ সর্বত্র রাসূল (ছাঃ)-এর দু‘আর সাথে মানুষের তৈরি করা শব্দ যোগ করে আযানের দু‘আ পাঠ করা হচ্ছে। যেমন-

(ক) বায়হাক্বীতে বর্ণিত একটি হাদীছের শেষে ‘ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিয়াদ’ কথাটি এসেছে। কিন্তু হাদীছটি ছহীহ নয়। আলবানী (রহঃ) বলেন, وَهِىَ شَاذَّةٌ لِأَنَّهَا لَمْ تَرِدْ فِىْ جَمِيْعِ طُرُقِ الْحَدِيْثِ عَنْ عَلِىِّ بْنِ عَيَّاشٍ ‘এটা অপরিচিত হিসাবে যঈফ। কারণ আলী ইবনু আইয়াশ থেকে কোন সূত্রেই বর্ণিত হয়নি।[2]

(খ) উক্ত বাক্যের পূর্বে ‘ওয়ারযুক্বনা শাফা‘আতাহু ইয়াওমাল ক্বিয়ামাহ’ যোগ করার কোন প্রমাণ নেই। এই বানোয়াট কথা ধর্মের নামে চলছে।

(গ) অনুরূপভাবে ইবনুস সুন্নীর বর্ণিত ‘ওয়াদ দারাজাতার রাফি‘আহ’ বাক্যটিও প্রমাণিত নয়। এটাও বানোয়াট ও অতিরিক্ত সংযোজিত।[3] ইবনু হাজার আসক্বালানী ও আল্ল­ামা সাখাভী বলেন, উক্ত অংশ কোন হাদীছে বর্ণিত হয়নি।[4]

(ঘ) কোন কোন গ্রন্থে ‘ইয়া আরহামার রাহিমীন’ যোগ করার কথা উল্লে­খ করা হয়েছে। এ কথারও কোন ত্তিতি নেই। ইবনু হাজার আসক্বালানী বলেন, فِىْ آخِرِهِ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ وَلَيْسَتْ أَيْضًا فِىْ شَئْ ٍمِنْ طُرُقِهِ ‘শেষে ‘ইয়া আরহামুর রাহিমীন’ যোগ করারও কোন হাদীছ বর্ণিত হয়নি’।[5]

জ্ঞাতব্য : আযান হওয়ার পর দরূদে ইবরাহীম পড়বে।[6] অতঃপর নিম্নের দু‘আ পাঠ করবে। অতিরিক্ত কোন শব্দ যোগ করবে না।

اللهُمَّ رَبَّ هٰذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاَةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيْلَةَ وَالْفَضِيْلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَّحْمُوْدًا الَّذِىْ وَعَدْتَهُ.

উচ্চারণ : আল্ল-হুম্মা রববা হা-যিহিদ দা‘ওয়াতিত তা-ম্মাহ, ওয়াছ ছলা-তিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসীলাতা ওয়াল ফাযীলাহ, ওয়াব‘আছ্হু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া‘আদ্তাহ’।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! আপনিই এই পরিপূর্ণ আহবান ও প্রতিষ্ঠিত ছালাতের প্রভু। আপনি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে দান করুন ‘অসীলা’ (নামক জান্নাতের সম্মানিত স্থান) ও মর্যাদা এবং তাঁকে পৌঁছে দিন প্রশংসিত স্থান ‘মাক্বামে মাহমূদে’ যার ওয়াদা আপনি করেছেন’। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আযান শুনে উক্ত দু‘আ পাঠ করবে, তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আমার শাফা‘আত ওয়াজিব হয়ে যাবে’।[7]

[1]. ছহীহ বুখারী হা/১০৯, ১/২১ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১০)।

[2]. ইরওয়াউল গালীল হা/২৪৩-এর আলোচনা দ্রঃ ১/২৬১ পৃঃ।

[3]. ইরওয়াউল গালীল ১/২৬১ পৃঃ-وهي مدرجة أيضا من بعض النساخ ; আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব, পৃঃ ১৮৯।

[4]. আল্লামা সাখাভী, আল-মাক্বাছিদুল হাসানাহ, পৃঃ ২১২; তালখীছুল হাবীর ১/৫১৮ পৃঃ; ইরওয়াউল গালীল ১/২৬১ পৃঃ-أنها ليست في شئ من طرق الحديث ।

[5]. তালখীছুল হাবীর ১/৫১৮ পৃঃ।

[6]. ছহীহ মুসলিম হা/৮৭৫, ১/১৬৬ পৃঃ, (ইফাবা হা/৭৩৩), ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭; মিশকাত হা/৬৫৭; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৬০৬, ২/১৯৯ পৃঃ।

[7]. বুখারী হা/৬১৪, (ইফাবা হা/৫৮৭, ২/৪৬ পৃঃ), ‘আযান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৮; মিশকাত হা/৬৫৯।