জামা‘আতে সালাত পড়া ওয়াজিব হওয়ার পাশাপাশি তাতে অনেকগুলো ফযীলতও রয়েছে। যা নিম্নরূপ:

১. একা সালাত আদায়ের চাইতে জামা‘আতে সালাত পড়ায় সাতাশ গুণ বেশি সাওয়াব রয়েছে।

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«صَلاَةُ الْـجَمَاعَةِ أَفْضَلُ مِنْ صَلاَةِ الْفَذِّ بِسَبْعٍ وَعِشْرِيْنَ دَرَجَةً».

“জামা‘আতে সালাত পড়া একা সালাত আদায়ের চাইতে সাতাশ গুণ বেশি উত্তম”।[1]

কোনো কোনো হাদীসে আবার পঁচিশ গুণ সাওয়াবের কথাও বলা হয়েছে।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«صَلاَةٌ مَعَ الْإِمَامِ أَفْضَلُ مِنْ خَمْسٍ وَعِشْرِيْنَ صَلاَةً يُصَلِّيْهَا وَحْدَهُ».

“ইমাম সাহেবের সাথে সালাত পড়া একা সালাত আদায়ের চাইতে পঁচিশ গুণ বেশি উত্তম”।[2]

কেউ কেউ উভয় হাদীসের মধ্যে এভাবে সমন্বয় সাধন করেন যে, পঁচিশ গুণের হাদীসে শুধু একা ও জামা‘আতে সালাত আদায়ের মধ্যকার সাওয়াবের ব্যবধানটুকুই উল্লিখিত হয়েছে। আর সাতাশ গুণের হাদীসে একা সালাতের সাওয়াব এবং উভয় সালাতের মধ্যকার সাওয়াবের ব্যবধানটুকু একত্রেই উল্লিখিত হয়েছে।

আল্লামা ইমাম নাওয়াওয়ী রহ. উভয় হাদীসের মধ্যে নিম্নে বর্ণিত তিনভাবেই সমন্বয় সাধন করেন:

ক. উভয় হাদীসের মধ্যে কোনো ধরণের বৈপরীত্য নেই। কারণ, কম সংখ্যা তো বেশি সংখ্যার বিপরীত নয়। বরং কম সংখ্যা বেশি সংখ্যার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে।

খ. হয়তো বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম কমের কথা জেনেই তা নিজ উম্মতকে জানিয়ে দিয়েছেন অতঃপর তাঁকে আবার বেশির কথাই জানানো হলো।

গ. হয়তো বা জামা‘আতে সালাত পড়ুয়া মুসল্লীদের অবস্থার পরিবর্তন তথা সালাতে তাদের ধীরস্থীরতা ও আন্তরিকতা, মুসল্লীদের আধিক্য ও তাদের মর্যাদা এমনকি স্থানের মর্যাদার পার্থক্যের কারণে সাওয়াবেরও পার্থক্য হয়।

জামা‘আতে সালাত পড়া অত্যন্ত সাওয়াবের বিষয় হওয়া তা ওয়াজিব না হওয়া বুঝায় না। কারণ, শরী‘আতে ফরয কিংবা ওয়াজিব কাজ আদায়েরও বিশেষ সাওয়াব রয়েছে। তবে কেউ কোনো ফরয সালাত একা পড়লেও তার সালাতটুকু অবশ্যই আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু সে ইচ্ছাকৃত ওয়াজিব ছাড়ার দরুন অবশ্যই গুনাহ্গার হবে। আর তাতে অন্তত পঁচিশ সাওয়াবের ঘাটতি তো আছেই। তবে কেউ শরী‘আত সম্মত কোনো ওযরের কারণে জামা‘আতে উপস্থিত না হতে পারলে আল্লাহ তা‘আলা তাকে জামা‘আতে সালাত আদায়ের সাওয়াব অবশ্যই দিবেন।

আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ أَوْ سَافَرَ كُتِبَ لَهُ مِثْلُ مَا كَانَ يَعْمَلُ مُقِيْماً صَحِيْحاً».

“যখন আল্লাহ তা‘আলার কোনো বান্দা অসুস্থ কিংবা সফররত অবস্থায় থাকে তখন তার জন্য তার সুস্থ কিংবা মুক্বিম থাকাবস্থার সকল আমলের সমপরিমাণ সাওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়”।[3]

২. আল্লাহ তা‘আলা জামা‘আতে সালাত পড়ুয়াদেরকে শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করেন।

আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন:

«مَا مِنْ ثَلاَثَةٍ فِي قَرْيَةٍ لاَ يُؤَذَّنُ وَلاَ تُقَامُ فِيهِمُ الصَّلاَةُ إِلاَّ اسْتَحْوَذَ عَلَيْهِمُ الشَّيْطَانُ فَعَلَيْكَ بِالْجَمَاعَةِ فَإِنَّ الذِّئْبَ يَأْكُلُ الْقَاصِيَةَ».

“কোনো গ্রাম বা এলাকায় যদি তিন জন মানুষ থাকে অথচ সেখানে আযান-ইক্বামত দিয়ে ফরয সালাত আদায় করা হলো না তাহলে তাদের ওপর শয়তান জেঁকে বসবে। তাই তুমি জামা‘আতে সালাত পড়বে। কারণ, নেকড়ে বাঘ তো একমাত্র দলছুট্ ছাগলটিকেই খেয়ে ফেলে”।[4]

৩. জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের উপস্থিতি যতোই বাড়বে ততোই সাওয়াব বেশি পাওয়া যাবে।

উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে ফজরের সালাত আদায় করলেন। অতঃপর তিনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তিনি আবারো জিজ্ঞাসা করলেন: “অমুক উপস্থিত আছে কি? সাহাবীগণ বললেন: না। তখন তিনি বললেন:

«إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ عَلَى الْـمُنَافِقِينَ وَلَوْ تَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَأَتَيْتُمُوهُمَا وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلَ عَلَى مِثْلِ صَفِّ الْـمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوهُ وَإِنَّ صَلَاةَ الرَّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ وَصَلَاتُهُ مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكَى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَمَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى».

“এ দু’টি সালাত তথা ইশা ও ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করা সত্যিই মুনাফিকদের জন্য খুবই কষ্টকর। তোমরা যদি জানতে তা জামা‘আতের সাথে আদায়ে কি পরিমাণ সাওয়াব রয়েছে তা হলে তোমরা তা আদায়ের জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও মসজিদে উপস্থিত হতে। সালাত আদায়কারীদের প্রথম সারি ফিরিশতাদের সারির ন্যায়। তোমরা যদি জানতে প্রথম সারিতে সালাত আদায়ের কি ফযীলত রয়েছে তা হলে তোমরা খুব দ্রুত সেখানে অবস্থান করতে। একা সালাত আদায়ের চাইতে দু’জন মিলে জামা‘আতে পড়া অনেক ভালো। আবার একজনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায়ের চাইতে দু’জনকে নিয়ে জামা‘আতে সালাত আদায় করা আরো অনেক ভালো। জামা‘আতে সালাত আদায়কারীদের সংখ্যা যতোই বেশি হবে ততোই তা আল্লাহ তা‘আলার নিকট বেশি পছন্দনীয়”।[5]

৪. চল্লিশ দিন একান্ত নিষ্ঠা ও প্রথম তাকবীরের সাথে জামা‘আতে সালাত পড়লে দু’টি মুক্তির সার্টিফিকেট পাওয়া যায়।

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ صَلَّى لِلَّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا فِي جَمَاعَةٍ يُدْرِكُ التَّكْبِيرَةَ الْأُولَى كُتِبَتْ لَهُ بَرَاءَتَانِ : بَرَاءَةٌ مِنْ النَّارِ وَبَرَاءَةٌ مِنْ النِّفَاقِ».

“যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য চল্লিশ দিন যাবৎ প্রথম তাকবীর সহ জামা‘আতে সালাত আদায় করবে তার জন্য দু’টি মুক্তির সার্টিফিকেট লেখা হবে। একটি জাহান্নাম থেকে মুক্তির। আর আরেকটি মুনাফিকী থেকে মুক্তির”।[6]

৫. ফজরের সালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করলে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিরাপত্তা পাওয়া যায়।

জুন্দাব ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ صَلَّى صَلَاةَ الصُّبْحِ فَهُوَ فِي ذِمَّةِ اللَّهِ فَلَا يَطْلُبَنَّكُمُ اللهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ فَإِنَّهُ مَنْ يَطْلُبْهُ مِنْ ذِمَّتِهِ بِشَيْءٍ يُدْرِكْهُ ثُمَّ يَكُبَّهُ عَلَى وَجْهِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ».

“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত (জামা‘আতের সাথে) আদায় করলো সে আল্লাহ তা‘আলার বিশেষ নিরাপত্তায় চলে গেলো। তাই কেউ যেন আল্লাহ তা‘আলার নিরাপত্তাধীন কোনো কিছুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে। কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার নিরাপত্তাধীন কোনো কিছুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত করবে তাকে তিনি পাকড়াও করবেন। অতঃপর তাকে চেহারা নীচু করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন”।[7]

হাদীসটির কোনো কোনো বর্ণনায় জামা‘আতের সাথে কথাটি উল্লিখিত হয়েছে।

৬. ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করলে অতঃপর দু’ রাকাত সালাত পড়লে একটি পূর্ণ হজ ও একটি পূর্ণ উমরার সাওয়াব পাওয়া যায়।

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللَّهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ».

“যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা‘আতে আদায় করে সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার যিকির করে অতঃপর দু’ রাকাত সালাত পড়ে তাকে একটি হজ ও একটি উমরার সাওয়াব দেওয়া হবে। বর্ণনাকারী বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: একটি পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র সাওয়াব। একটি পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র সাওয়াব। একটি পরিপূর্ণ হজ ও একটি পরিপূর্ণ উমরাহ’র সাওয়াব”।[8]

>
[1] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫০

[2] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৯।

[3] বুখারী, হাদীস নং ২৯৯৬

[4] আহমদ, হাদীস নং ২০৭১৯; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৪৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৪৭।

[5] আবু দাউদ, হাদীস নং ৫৫৪; নাসাঈ, হাদীস নং ৮৪৩।

[6] তিরমিযী, হাদীস নং ২৪১।

[7] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৫৭।

[8] তিরমিযী, হাদীস নং ৫৮৬