রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় দশম হিজরীতে রিদ্দা শুরু হয়েছিল। তখন অনেকেই ইসলামের শক্তিতে ভীত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
মুরতাদ তারাই যারা নিয়ত, কথা ও কাজের মাধ্যমে ইসলামকে পরিত্যাগ করে। ভন্ড নবীদের আবির্ভাব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়েই হয়। তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে কিছুসংখ্যক লোক মূর্তি পূজায় ফিরে যায়। কিছু গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করে। তাদের যুক্তি ছিল, এখন যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নেই, যাকাত দেবারও প্রয়োজন নেই।
আবু বকর খলিফা হওয়ার পর এই গোত্রগুলি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল পাঠান সমঝোতার জন্য। তাদের পক্ষে ওমরের মত সাহাবীও সুপারিশ করেছিলেন-কারণ তারা ছিল মুসলিম। কিন্তু আবু বকরের কথা ছিল: ‘‘আল্লাহর কসম, যে কেউ সালাত ও যাকাতের পার্থক্য করবে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো। এমনকি যদি তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় দিয়ে থাকত এমন একটি উটের গলার রশিও না দেয়.....।”
তাঁর দৃঢ়তায় সকলে বুঝতে পারেন যে দ্বীনের মৌলিক ভিত্তিসমূহ প্রতিষ্ঠা করা কতখানি জরুরী। তাদের আক্রমণের আশংকা করে তিনি সকলকে মদীনা রক্ষার জন্য তৈরী হতে বললেন। বিভিন্ন প্রস্তুতি নিলেন। মসজিদে নববীতে সকলকে জড়ো করলেন। মদীনার প্রবেশপথে বিভিন্ন সাহাবীর নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ করলেন। মিত্র গোত্রগুলির সাহায্য চাইলেন।
তিন দিনের মধ্যেই বিদ্রোহী গোত্রগুলি আক্রমণ করল। প্রথম দিকে তারা কিছুটা সফল হলেও পরবর্তীতে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেল। একই রাত্রে কিছু গোত্র যাকাত নিয়ে এল। একদিনেই পরিস্থিতি বদলে গেল। আরও যুদ্ধ হল, তিনটিতে আবু বকর নেতৃত্ব দিলেন।
বিভিন্ন গোত্র বিদ্রোহ করল ও যুদ্ধ শুরু করে দিল। আবু বকরের মত এত নির্বিকারভাবে এ সমস্ত সংবাদ গ্রহণ করতে কেউ দেখে নি। তিনি শুধুমাত্র হিজরতের সময় গুহায় অবস্থানকালে বিচলিত হয়েছিলেন, আর কখনো নয়।
বিভিন্ন জায়গায় তিনি ১১টি বাহিনী পাঠালেন। কোথাও কোনো সম্পূর্ণ গোত্র মুরতাদ হয়েছিল, কোথাও অধিকাংশ, কোথাও অল্পসংখ্যক। সেক্ষেত্রে তিনি তাদের মধ্য থেকেই মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে ইসলাম ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করা হবে না।
এ সব কঠোর যুদ্ধ ইসলামকে শির্ক মিশ্রিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছে। আশংকা ছিল যে দ্বীন পরিবর্তিত হয়ে যাবে। আবু বকর বলেছিলেন: এখন জিবরীল ওহী নিয়ে আসবেন না এবং দ্বীন সম্পূর্ণ হয়েছে। এখন আমি একে কিছুতেই বিচ্যুত হতে দিতে পারি না।
তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় যে ইসলাম ছিল, পরবর্তীতেও তাই থাকবে। সমগ্র আরব এটা বুঝে নিল।
সবার জন্য সমভাবে, পূর্ণভাবে, শির্কবিহীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হল। যা পরবর্তীতে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল নিবেদিতপ্রাণ বিশ্বস্ত সাহাবীগণের মাধ্যমে। এসব সংস্কারের মধ্য দিয়ে পরীক্ষিত মুমিনরাই দুনিয়া জুড়ে ইসলামী সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন।
আবু বকরের আগে সঠিক অর্থে রিদ্দা ছিল না তাদের বিরুদ্ধে সঠিক পদক্ষেপ কি হবে তিনি তা বুঝিয়ে দিলেন।