দুই ডালে পা দেয়ার প্রবাদ সম্পর্কে আমরা কমবেশি সবাই জানি। অর্থাৎ একই সময়ে অসম্ভব দুই পন্থা অবলম্বন করা। এ নিয়ে প্রবাদ মনে করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ফলাফল শূন্যতার দিকনির্দেনা করা। জীবনপথের এই বাঁকাগলি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে তো পৌঁছানো সম্ভব হয় না এবং ফলাফল তো আসেই না উল্টো দুই পা দুই দিকে যাওয়ায় জীবনটাই শেষ পর্যন্ত বাঁচানো দায় হয়ে যায়। একটি হাস্যকর ঘটনা দিয়ে বিষয়টাকে পাঠকের সামনে উপস্থাপন করছি। অসংলগ্ন জীবনের বিষ্ফল ‘প্রেমের দুই পা’ মানুষের জন্য কত বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে সে কথাটাই পাঠকদেরকে জানাতে চাই।
বস্তুত প্রেম-ভালোবাসার কোনো পথেই শান্তি নেই। এই পথ মসৃণ নয় এবং ছিলও না কখনও। কিন্তু এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় দুই ডালে পা দেয়ার মতো ঘটনা, তাহলে তো কথাই নেই। এমনি এক ঘটনা ঘটেছিল তথাকথিত সভ্যতার আঁতুড়ঘর ইউরোপের কোনো এক দেশে। ওই দেশের পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি এক ডাক্তার মহিলাকে ভালোবাসতেন। দীর্ঘদিন তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক চলমান থাকার পর হঠাৎ তাতে ভাটা পড়ে। জোয়ারের পানি অন্য নালায় প্রবাহিত হয়। পুরুষ লোকটা দীর্ঘদিনের প্রেমিকাকে ছেড়ে আরেকজনের সঙ্গে প্রেমের নতুন ঘাট বাঁধেন।
এভাবে বেশকিছু দিন চলার পর প্রেমিক লোকটা দন্ত সমস্যায় আক্রান্ত হন। চিকিৎসার জন্য বেছে নেন তার পূর্বের প্রেমিকাকে। বাসি প্রেমিকা একটা সুন্দর সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন। বিনা কষ্টে সেই সুযোগটা হাতে আসায় বেশ পুলকবোধ করেন তিনি। চিকিৎসার জন্য রোগীকে অপারেশন রুমে নিয়ে যান। অতপর মুখ অবশ করার জন্য ইনজেকশন পুশ করেন। অনেকক্ষণ পর রোগীর জ্ঞান ফিরে আসে। তিনি দেখতে পান, মুখে তার ইয়া বড় একটা ব্যান্ডেজ। অনেক ব্যথা পাচ্ছিছেলেন তিনি। আর ব্যান্ডেজটা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় আকারে অনেক বড়। তখনই তিনি সন্দেহে পড়ে যান। একটু পর মুখে আঙুল ঢুকিয়ে দেখেন সেখানে একটি দাঁতও অবশিষ্ট নেই। যেখানে মাত্র দু’তিনটে দাঁত ফেলে দেয়ার কথা সেখানে গুণে গুণে তার বত্রিশটি দাঁতই ফেলে দেয়া হয়েছে!
তিনি অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হলে চিকিৎসক ইছাকৃতভাবেই এরূপ করা হয়েছে বলে জানান। চিকিৎসক আরো জানান, প্রতারক লোকটাকে সামনে পেয়ে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারিনি। তাই সবগুলো দাঁত তুলে ফেলেছি! আদালত তাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিলেও প্রতারণার প্রতিশোধ নিতে পারায় তিনি বেজায় খুশি বলে জানিয়েছেন।
এদিকে প্রেমিকের মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, একজন পেশাদার চিকিৎসক হিসেবে তার কাছে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু সে যে আমার এই সর্বনাশ করবে তা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করতে পারিনি। তার আক্ষেপ এখানে এসে থেমে থাকেনি। দ্বিতীয় প্রেমিকাও দন্তহীন লোকটাকে ছেড়ে গেছেন। ফলে প্রেমে পরাস্ত, পরকীয়ায় ব্যর্থ এই লোকটি আল্লাহপ্রদত্ত ৩২টি দাঁত হারিয়ে নিদারুণ কষ্টেই দিনযাপন করছেন আর কী!
কিছুদিন আগে আরেকটি হাসির গল্প প্রকাশ পেল। সংবাদটির শিরোনাম ‘এসএমএস আড়াল করতে ফোন গিলে খেলো গার্লফ্রেন্ড!’ সংবাদে প্রকাশ, বেশ কিছুদিন আগে অন্তরঙ্গ মুহূর্তে ফোন ধরায় বান্ধবীকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন এক মার্কিন নাগরিক। সেই ঘটনা রীতিমতো ঝড় তোলে গোটা যুক্তরাষ্ট্রে। এই পথ ধরে ঘটলো তার চেয়েও অদ্ভূত ঘটনা। ব্রাজিলিয়ান এক নারী তার বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে মোবাইলের এসএমএস আড়াল করতে পুরো ফোনটাই গিলে ফেলেন!
১৯ বছর বয়সী আদিয়ানার কাছ থেকে তার বয়ফ্রেন্ড এসএমএস চেক করার জন্য মোবাইল চাইলে আদিয়ানা ছুটে পালিয়ে যান এবং কোনো রকম চিন্তা-ভাবনা না করে মোবাইল সেটটাই গিলে ফেলেন। এরপর অপারেশন করে তার পেট থেকে ফোনটি উদ্ধার করা হয়।’
এসব ঘটনায় জীবন বিশ্লেষণের উপকরণ আছে কতটুকু, সেই বিতর্ক হতেই পারে। আমাদের জীবনের সঙ্গে এধরনের ঘটনার সংশ্লিষ্টতাই বা কতটুকু সে প্রশ্নও উত্থাপিত হওয়া অবান্তর নয়। কিন্তু একথা অস্বীকার করার উপায় নেই, এসব হাসি-তামাশার গল্পের ফাঁদেই আটকে আছে আমাদের আধুনিক সভ্যতার এই চলমান যান্ত্রিকজীবন। এই জীবনে দায়বদ্ধতার চেয়ে আবেগ বেশি, সততার চেয়ে বেশি ভ্রষ্টতা। এই ভ্রষ্টতার সম্মোহনে আমরা অনেক আগেই হারিয়ে এসেছি আমাদের মনুষ্যত্বের পরিচয়।
বৃদ্ধ লোকটি প্রেম ও পরকীয়া করতে গিয়ে বত্রিশটি দাঁত হারিয়ে গল্প ও হাসির উদ্রেক করেছেন বটে, তবে এর আড়ালে লুকিয়ে আছে মানবসভ্যতার মনুষ্যত্ব হারানোর বেদনা ও কান্না। ১৯ বছর বয়সী মেয়েটি এক অবৈধ প্রেম বাঁচাতে গিয়ে আরেক অবৈধ প্রেম আড়াল করার চেষ্টা হিসেবে যা করলেন, তা কেবল হাসির উদ্রেককারী ঘটনাই নয়; আমাদের দ্বিচারিণী সমাজ ব্যবস্থার একটি ছোট্টো উদাহরণও বটে। আমাদের জীবন-গল্পের ‘সূচনা’ কি এই হাসি আর ‘পরিণতি’ কান্নার মধ্য দিয়ে শেষ হবে?