‘ইফ এনি ওয়ান ওয়ান্ট টু সেক্স দ্যান ইউ ক্যান কল টু মি পার আওয়ার ফাইভ থাউজেন্ড ওয়ানলি। ডোন্ট মিট টু আউট সাইট।’
ফেসবুকের পাতায় আকর্ষণীয় একটি টু কোয়ার্টার ছবির সঙ্গে এই বাক্য সম্বলিত পোস্ট দিয়েছে একটা মেয়ে। বিষয়টি কৌতূহলের। তাই প্রকৃত রহস্য ও ঘটনা জানার জন্য কল দেন জনৈক সাংবাদিক। ফোন গ্রহণ করে মেয়েটি বলে, নাম্বারটি কোথায় পেয়েছেন? কী নাম লেখা হয়েছে ওখানে? লোপা। কবে আসতে চান? কোথায় আসতে হবে? মিরপুর ১১ ইস্টার্ন হাউজিংয়ে। আমার বাসায়। অন্তত দুই ঘন্টা আগে ফোন দিতে হবে। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাশ তো ভাইয়া! কোথায় পড়ছেন? জবাবে মেয়েটি একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলল। এরপর বলল, এত কথার দরকার নেই, কবে আসতে চান বলুন? এখন তো মাসের মাঝামাঝি। বেতন পাওয়ার পর আসব- বলে লাইন কেটে দেন সাংবাদিক।
সাংবাদিক আরো জানান এরপর ট্যাগ সাইটে মেয়েটির নাম ও বয়স উল্লেখ করে ওয়েব পেজটিতে সার্চ দিলে লোপার ছবি ও ভিই প্রোফাইল আসে। অনুসন্ধান করে দেখা যায় লোপা নামে যে ছবি দেখানো হয়েছে তা আসলে দক্ষিণ ভারতের একজন নায়িকার ছবি। এরপর ফোন দেয়া হলে সে নিশ্চিত হয়ে নেয় এবং লোকেশন বাতলে দেয়। আর বলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। ওখানে নেমে সোজা দোতালায় চলে আসবেন। বাম দরজায় করাঘাত করবেন। নতুবা মিস দেবেন।
সাজকানন বিউটি পার্লারের কাছে দুই মিনিট অপেক্ষা করতে বলা হয়। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছার পর মেয়েটি ওই সাংবাদিককে ঘরে বসতে দেয়। খাতার ওপর লেখা তসলিমা। তসলিমা বলে নেটে লোপা লিখেছি, ছবিটিও আমার নয়। ভারতীয় এক মডেলের। সাংবাদিক জানতে চান, এক ঘণ্টার হিসাব হবে কখন থেকে? এইতো কথা বলা শুরু থেকে! এই এক ঘণ্টায় যতবার ইচ্ছা ততবার....পারবেন।
নেটে আহ্বান জানানোর চিন্তা মাথায় কীভাবে আসল? সাংবাদিক তা জানতে চাইলে মেয়েটি বলল, আগেই বলেছি ইউনিভার্সিটিতে পড়ছি। প্রচুর অর্থের করকার। বিবিএর থার্ড সেমিস্টারে পড়ছি। সামনে আরও ৯ সেমিস্টার বাকি। পুরো কোর্সে আমার খরচ হবে সাড়ে তিনলাখ টাকা। মানিকগঞ্জের একটি ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারমিডিয়েট দিয়েই বন্ধুর হাত ধরে বাড়ি ছেড়ে আসি। কয়েক মাস পর স্বামী উধাও হয়ে যায়। বাবা আর্মি অফিসার তিনি তা মেনে নেননি। আর্থিক অবস্থা ভালো হলেও তার ঘরে আর ফিরে যাইনি। ছেলেবেলার এক বন্ধুর কাছে ত্রিশ হাজার টাকা চাইলে সে বলে আমি টাকা দেবো কিন্তু তুই কী দিবি? ভালোই তো। পৃথিবী হচ্ছে গিভ এন্ড টেকের জায়গা। কিছুটা আঁচ করতে পেরে তাকে বলি কী চাও? সে বলে এক রাত কাটাতে চাই।
নিজের সঙ্গে অনেক বোঝাপড়া করে সিদ্ধান্ত নিই। আমার মনে তখন নতুন করে পড়াশোনা করার আনন্দ! রাত কেটে যায়। স্বামী উধাও হয়ে যাওয়ার পর ওই রাতটি অনেক আনন্দে কেটে যায়। বন্ধু আমাকে সারারাত মাতিয়ে রাখে। তখন মিরপুরের এক বাসায় সাবলেট থাকতাম। পরেরদিন ভাবতে ভাবতেই কেটে যায়। ভাবি, আমিও কি তবে আর দশটা মেয়ের মতো প্রফেশনাল হওয়ার পথে পা বাড়ালাম? এপথে তো আমার নিয়মিত হাঁটাচলা করা সম্ভব নয়। পড়াশোনা আছে! নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে তাছাড়া প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবার সামনেও দাঁড়াতে হবে। পড়াশোনা শেষ করে কোচিং করেও মাসে লাখ টাকা কামাই করছি। আমি ভালো আছি।
সাধারণ মেয়ের মতো এ হোটেল ও হোটেল করলে আমার স্বপ্ন পূরণ হবে না। আগে থেকেই সাইবার ক্যাফে যাওয়া আসা ছিল। অনেকের ফেসবুকে একাউন্ট থাকায় সিদ্ধান্ত নিই কোনো অফ ট্যাকের কোনো সাইটে একাউন্ট খুলব। ডিজিটাল সেক্স বলে রেটটা একটু বেশি রাখি। এতে সুবিধা অনেক। কোথাও যেতে হয় না। একদিনে অনেক পুরুষকে সঙ্গ দিতে হয়ে না। এক ঘণ্টায় একজন পরপুরুষ সাধারণত দুইবারের বেশি মিলিত হতে পারে না। ফলে আমি সেক্সটা এনজয় করতে পারি। অনেক গল্প শোনালাম। আর না। এবার আমার টাকাটা দিন। সে অন্তরঙ্গ হওয়ার চেষ্টা করে। আমি বলি ছবির সঙ্গে আপনার মিল নেই। ওসবের দরকার নেই।’ [হাসান শাফেয়ী ও কাজী সোহাগের রিপোর্ট, মানবজমিন ও অবাক বাংলাদেশ এর সৌজন্যে]
পাঠক! আশা করি পত্রিকার রিপোর্টটি পড়ে যা বোঝার তা বুঝে নিয়েছেন। হয়ত এই ভেবে আহত হচ্ছেন, পশ্চিমা সভ্যতার জীবন বিধ্বংসী সুনামী কত নিপুণ মর্মান্তিকতায় আমাদের এই মুসলিম রাষ্ট্রটিকে জেঁকে ধরেছে। যে শিক্ষার আলোর আশায় দারিদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে সেই শিক্ষাই সাগরের ধ্বংসের উন্মাতাল ঝড়ে পালছেঁড়া তরীর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে!
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। দেয়ালে, বইয়ের পাতায়, ছেলেসন্তানদের পড়াশোনায় আগ্রহী করতে মা বাবাদের কথায়, বড়দের উপদেশ বাণীতে এবং পাঠ্যপুস্তকগুলোর শেষ পৃষ্ঠাসমূহে খুব যত্ন করে কথাগুলো লেখা থাকে। কথাটা সত্য তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হলে সর্বাগ্রে শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন ও বিপ্লব আনতে হয়। একটি বৈপ্লবিক শিক্ষাব্যবস্থা ওই দেশকে বিশ্বমানচিত্রে বিশেষ স্থান ও মর্যাদা দখল করতে বিপুল ভূমিকা রাখে। এর সর্বশেষ প্রমাণ ইরান। বিশ্বমানচিত্রে ইরান আজ বিশেষ জায়গা দখল করে নিয়েছে। বিশ্বের একমাত্র জারজ রাষ্ট্র ইসরাঈল অনেক হম্বিতম্বি করলেও তারা জানে ইরান আজ যে অবস্থানে পৌঁছেছে তাতে তারা ইসরাঈলকে মানচিত্র থেকে মুছে দিতে সক্ষম।
ইরানের মতো একটা দেশের এই অবস্থানে পৌঁছা সহজ হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল শিক্ষাবিপ্লব। এই বিপ্লবসাধন করতে গিয়ে তাদেরকে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছে। পাঁচবছর পর্যন্ত সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ-ইউনিভার্সিটি বন্ধ রেখে দেশের স্বার্থকেন্দ্রিক শিক্ষা প্রণয়ন করে তবেই শিক্ষার দ্বার খুলে দেয়া হয়েছে। এর ফলাফলও তারা আজ হাতেনাতে পাচ্ছে। শিক্ষাবিপ্লবের ফলে তারা এমন কীর্তিবান ও সক্ষম নাগরিক তৈরি করতে পারছে যারা আমেরিকার রাডার ফাঁকি দিতে সক্ষম সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ড্রোন বিমান শুধু অবতরণ করাতেই সক্ষম হয়নি, অনুরূপ ড্রোন তারা নিজেরাও তৈরি করে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছে।
আমি ইরানের ধর্মীয় আদর্শের পক্ষে কথা বলছি না। জাতি ও দেশের কল্যাণ সাধনা-নিমিত্তে প্রণয়ন করা একটি শিক্ষাব্যবস্থা দেশকে কত উঁচুতে নিয়ে যেতে পারে শুধু সে কথাটা বলতে চাচ্ছি। যদি সে ভাবনার আলোকে বলি তবে বলতে হবে, আমাদের দেশেও শিক্ষায় বিপ্লব আনতে হবে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তো চল্লিশ বছরের বেশি গত হলো, এর আগের শিক্ষা ছিল পাকিস্তান শাসনাধীন। তারও আগের শিক্ষা ছিলো বৃটিশ নিয়ন্ত্রিত। ফলে দীর্ঘদিন আমরা শিক্ষাব্যবস্থায় বিপ্লবের যুগান্তকারী ছোঁয়া থেকে বঞ্ছিত হচ্ছি। তাই সামর্থ্যে সীমাবদ্ধ এই ক্ষুদ্র দেশটিতে শিক্ষাবিপ্লবের তীব্র প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। শিক্ষাব্যবস্থায় ঢুকে পড়েছে স্রোতের গতিতে অনৈতিকতা, বেলেল্লাপনা।
সুতরাং আদর্শ ও দেশের সেবার মানসে একটি বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নতুনধারার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি হয়ে উঠেছে। যে শিক্ষার গোড়ায় থাকবে ইসলাম, দেশ ও মানবপ্রেম। থাকবে হাজার বছরের ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রক্ষার দীপ্ত প্রতিজ্ঞা। আজ কেন শিক্ষালয় হয়ে উঠবে নাস্তিকদের আস্তানা? ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য হাজার বছর ধরে হাজার আলেম-উলামা, মুজাহিদীন-শহীদান ও ইসলামপ্রেমীর কুরবানীর নযরানায় প্রতিষ্ঠিত দেশটিতে চর্চা হবে ইসলামবিরোধীতা? কেন শিক্ষালয়গুলো অনৈতিক নগ্নাচারের চর্চা হবে? কেন একজন নারীকে দেহের বদলায় শিক্ষা করতে হবে? কেন এই পরিবেশ সৃষ্টি হলো? কারা শিক্ষাঙ্গনকে অশালীন জিন্দেগির কালিমায় কলঙ্কিত করল? আজ উচ্চশিক্ষার জন্য একজন নারীকে কেন ফেসবুকে দেহ বিক্রির অফার করতে হবে?
শিক্ষাবিহীন একজন মানুষ দেশ ও সমাজের বিরাট বোঝা, একথা সত্য। কিন্তু এরচেয়েও বড় সত্য হচ্ছে একজন চরিত্রবান নারী এই ধরনের চরিত্রওয়ালা শিক্ষিত নারীর চেয়ে হাজারগুণ ভালো। শিক্ষা না থাকলেও চরিত্র দিয়ে এরা দেশের কল্যাণে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু যার শিক্ষা খরচ অর্জিত হয়েছে দেহদানের বদলায় সেই শিক্ষা দেশের কোন খাতে ব্যয়িত হবে? ওই নারী তার জীবনবোধের কোন গল্পের দায়ে দেশ ও মানুষের সেবা করবেন? তার মধ্যে তখন কাজ করবে ঘৃণা, জিঘাংসা ও প্রতিশোধস্পৃহা। যে বাবা তাকে শিক্ষা খরচ থেকে বঞ্ছিত করেছে, যে স্বামী তাকে অসহায় করে ফেলে চলে গেছে, যে পুরুষরা শুধু টাকার জোরে তাকে ব্যবহার করে গেছে হয়ত একে একে এদের সবার বিরুদ্ধে ক্ষোভ, ক্রোধ ও জিঘাংসা জন্ম নেবে। যে সমাজ-সংসারের হাজারজনের বিরুদ্ধে জন্ম নিবে জিঘাংসা ও প্রতিশোধস্পৃহা সেই সমাজকে তিনি কীইবা উপহার দেবেন?
এখানে আরেকটি বিষয় খুবই লক্ষণীয়। ইসলাম আসার পূর্বে ব্যভিচারের মাধ্যমে অর্থ কামানোর রেওয়াজ ছিল। কিন্তু সেটা আজকের মতো এত ব্যাপক ও বিস্তৃত ছিল না। ব্যভিচারসংক্রান্ত পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট অনুসন্ধান করতে গিয়ে হাদীসগ্রন্থগুলো থেকে তৎকালীন পতিতাবৃত্তির কিছু ধারণা লাভ করা যায়। আয়াতটি হলো :
﴿ ٱلزَّانِي لَا يَنكِحُ إِلَّا زَانِيَةً أَوۡ مُشۡرِكَةٗ وَٱلزَّانِيَةُ لَا يَنكِحُهَآ إِلَّا زَانٍ أَوۡ مُشۡرِكٞۚ وَحُرِّمَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٣ ﴾ [النور: ٣]
‘ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে।’ (সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩)
আয়াতটি নাযিলের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হাদীসের বিভিন্নগ্রন্থে অনেক বর্ণনা সংকলিত হয়েছে। যেমন :
عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ يَقُولُ: «كُنَّ بَغَايَا بِمَكَّةَ قَبْلَ الْإِسْلَامِ، فَكَانَ رِجَالٌ يَتَزَوَّجُونَهُنَّ فَيُنْفِقْنَ عَلَيْهِمْ مَا أَصَبْنَ، فَلَمَّا جَاءَ الْإِسْلَامُ تَزَوَّجَهُنَّ رِجَالٌ مِنْ أَهْلِ الْإِسْلَامِ، فَحَرَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَلِكَ عَلَيْهِمْ»
সুফিয়ান ছাওরী রহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি সাঈদ ইবন জুবাইরকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘মক্কায় ইসলাম আগমনের পূর্বে কয়েকজন (নয়জন) ব্যভিচারী ছিল (তারা বাড়ির সামনে লাল পতাকা টাঙিয়ে রাখত যাতে খদ্দেররা সহজে তাদের কাছে আসতে পারে)। কিছু লোক তাদেরকে বিয়ে করেছিল এবং তারা তাদের অর্জিত অর্থের কিছু ওই স্বামীদের পেছনে খরচ করত। ইসলাম আগমনের পর মুসলিমদের কেউ কেউ তাদেরকে বিয়ে করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিয়ে করাকে হারাম বলে ঘোষণা করেন।’ [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা : ১৬৯৩২]
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন,
أَنَّهَا نَزَلَتْ فِي بَغَايَا مُعْلِنَاتٍ كُنَّ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَكُنَّ زَوَانِيَ مُشْرِكَاتٍ، فَحَرَّمَ اللَّهُ نِكَاحَهُنَّ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ.
‘আয়াতটি নাযিল হয়েছে জাহেলী যুগের প্রকাশ্যে ব্যভিচারিণীদের সম্পর্কে। এরা ছিল কিছু ব্যভিচারী মুশরিক মহিলা। আল্লাহ মুমিনদের জন্য এসব মহিলাকে বিয়ে করা হারাম ঘোষণা করেছেন। [সিয়ূতী, আদ-দুররুল মানছূর : ৬/১২৯]
তাফসীর ও হাদীসশাস্ত্রের বক্তব্যানুযায়ী ওই মহিলারা কেবল এলাকাকেন্দ্রিক পাপাচারে লিপ্ত হতো এবং তাদের দ্বারা সমাজের খুব কম সংখ্যক মানুষই খারাপ পথে পা বাড়াতো। উল্লেখিত আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বর্ণনা থেকে তেমনি প্রতীয়মান হয়। তিনি বলেন,
إِنَّمَا كُنَّ نِسَاءً بَغَايًا مُتَعَالِنَاتٍ يَجْعَلْنَ عَلَى أَبْوَابِهِنَّ رَايَاتٍ يَأْتِيهِنَّ النَّاسُ يُعْرَفْنَ بِذَلِكَ
‘জাহেলী যুগে প্রকাশ্যে ব্যভিচারী কিছু নারী ছিল। তারা তাদের দরজার সামনে পতাকা ঝুলিয়ে রাখত, যাতে খারাপ লোকেরা বুঝতে পেরে তাদের কাছে আসতে পারে।’ [প্রাগুক্ত : ৬/১২৯]
কিন্তু জাহেলিয়াতের সীমাবদ্ধতার জাল ছিন্নভিন্ন করে মানুষ এগিয়ে গেছে অনেক দূরে- চাঁদে, মঙ্গলগ্রহে, সাত সমুদ্রের নিচে আর ফেসবুকে প্রস্তাব দিয়ে ব্যভিচারি নারী পৃথিবীর সব নষ্ট পুরুষের কাছে! আনাকরা (মক্কার নয় ব্যভিচারিণীর একজন) জাহেলিয়াতের মূর্খতার সীমাবদ্ধতায় যা করতে পারেনি, আধুনিকতার রণসজ্জিত লোপারা আজ তা নির্বিঘ্নে করতে পারছে!
তবে এখনও কি সময় আসেনি আল্লাহর এই দান বিজ্ঞান ও প্রচার মাধ্যমকে প্রবৃত্তির কাজে ব্যবহার না করে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করার? আজ দাবি উঠছে সবাইকে এক সঙ্গে শোধরাবার। রাজনৈতিক, আত্মকেন্দ্রিক ও ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে এই নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষা ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।
অনৈতিকতা আশ্রিত এই শিক্ষার বোঝা বহন করা সমাজের পক্ষে অসাধ্য হয়ে উঠছে। তাই এই বোঝা কমাতে হবে, শিক্ষার হার বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চরিত্র ভালো করার দিকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, শিক্ষার গুরুত্বের পাশাপাশি শিক্ষালাভের গুরুত্বও বয়ান করা হয়। এপর্যন্ত এসে অনেক মানুষ সত্য থেকে সরে যায়। প্রচলিত এই শিক্ষাব্যবস্থা নিছক ভবিষ্যত উপার্জনের মাধ্যম হওয়া সত্ত্বেও তারা ‘মনুষ্যত্বের জন্য শিক্ষা’ বলে গলাবাজি করে। অথচ এই কপটতা যদি না থাকত, শিক্ষাকে যদি সত্যিই মনুষ্যত্বের মাধ্যম বানাতো তবে সমাজের চিত্র আজ এত কদর্য থাকত না।
অস্বীকার করার সুযোগ নেই, সমাজের ভয়াবহ পাপ, অন্যায়, দুর্নীতি, সুদ-ঘুষ, যেনা-ব্যভিচার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘শিক্ষিত’ লোকদের দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে। একজন অশিক্ষিত রিক্সাওয়ালা না মেটানোর সুযোগ নিয়ে হয়ত পাঁচটাকা ভাড়া বেশি হাঁকান আর তাতেই আমরা তেলেবেগুনে জ্বলে উঠি। এই ‘মহা অন্যায়ের’ প্রতিবাদে তার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করি। কিন্তু বাংলাদেশ ও বিদেশ থেকে পড়ে আসা একজন ডাক্তার যখন টাকা খেয়ে সদ্য ধর্ষিতার মেডিকেল টেস্টকে ভুয়া বলে সার্টিফিকেট দেন কিংবা একজন সচিব যখন নতুন মসজিদে বিদ্যুৎ সংযোগের ফাইল ঘুষের টাকার লোভে আটকে দেন, একজন এমপি যখন নিঃস্ব, অসহায় বৃদ্ধার বয়স্কভাতা কার্ডে ভাগ বসান তখন আমরা তা নিরবে হজম করি! এর কারণ কি একমাত্র এই যে, রিকশাওয়ালার ওই পাঁচ টাকার অনৈতিক দাবির জন্য বিনিয়োগ করতে হয়নি আর এদের অনৈতিকতার দাবিতে বিশাল বিনিয়োগ করা হয়েছে?
জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাই বুঝি মানুষকে এমন নির্দয়, নিষ্ঠুর করে তোলে? আসলে একই সঙ্গে শিক্ষার উদ্দেশ্য সম্পর্কে সমাজ ও পাঠকের স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে, শিক্ষাকে প্রকৃত অর্থেই মনুষ্যত্ব বিকাশের উৎস মনে করতে হবে এবং তা বাস্তবায়ন করতে শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন করে নৈতিকতা ও ধর্মীয় জ্ঞানকে গুরুত্ব দিয়ে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। আনতে হবে শিক্ষাখাতে কার্যকর বিপ্লব।
তা না করলে এই শিক্ষা মানবজাতির সমাধান তো দেবেই না, উল্টো এই শিক্ষাই পুরোজাতির গলার কাঁটা হয়ে আবির্ভূত হবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য যদি মহৎ না হয়, শিক্ষাব্যবস্থা যদি নিছক জাগতিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে গড়া হয়, তবে সেই শিক্ষা কী পরিমাণ অনৈতিকতার জন্ম দেয় তা আজ আমরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি লোপার এই গল্প পড়ে। আল্লাহর একটি বাণী উল্লেখ না করলেই নয়। তিনি ইরশাদ করেছেন,
﴿ وَلَقَدۡ ذَرَأۡنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرٗا مِّنَ ٱلۡجِنِّ وَٱلۡإِنسِۖ لَهُمۡ قُلُوبٞ لَّا يَفۡقَهُونَ بِهَا وَلَهُمۡ أَعۡيُنٞ لَّا يُبۡصِرُونَ بِهَا وَلَهُمۡ ءَاذَانٞ لَّا يَسۡمَعُونَ بِهَآۚ أُوْلَٰٓئِكَ كَٱلۡأَنۡعَٰمِ بَلۡ هُمۡ أَضَلُّۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡغَٰفِلُونَ ١٧٩ ﴾ [الاعراف: ١٧٩]
‘আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ।’ (সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত : ১৭৯)